বিশ্বের শীর্ষ ১০ জনবহুল শহর

বিশ্বের শীর্ষ ১০ জনবহুল শহর

 

২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ-এর প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বে শীর্ষ দশ জনবহুল শহরের তালিকায় ৮টি দেশই এশিয়া মহাদেশের। বাঁকি ২টা উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের। এই তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর টোকিও। এরপরে রয়েছে: দিল্লি, সাংহাই, সাও পাওলো, মেক্সিকো সিটি, কায়রো, ঢাকা, মুম্বাই, বেইজিং এবং ওসাকা। 

 

পৃথিরীর জনবহুল শহর

আশ্চর্যজনক যে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল শহরগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বের দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ, চীন এবং ভারতে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংহাই এবং বেইজিং, যার জনসংখ্যা যথাক্রমে ২৫ এবং ২২ মিলিয়ন, দিল্লি (২৭ মিলিয়ন), এবং মুম্বাই (২১.৫ মিলিয়নের বেশি)।

যাইহোক, টোকিও হল বিশ্বের বৃহত্তম শহর যদি সমগ্র টোকিও মেট্রো এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেখানে মোট ৩৮ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা রয়েছে। আরেকটি জাপানি শহর ওসাকাতেও প্রায় ২০.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা রয়েছে। এছাড়াও মেক্সিকো সিটি (২১ মিলিয়নের বেশি), কায়রো (প্রায় ১৯.৫ মিলিয়ন), এবং বুয়েনস আইরেস (প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন) সহ উচ্চ জনসংখ্যা সহ বেশ কয়েকটি নন-এশিয় শহর রয়েছে।

ইউরোপীয় শহরগুলির মধ্যে, ইস্তাম্বুল সবচেয়ে জনবহুল, যেখানে ১৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা রয়েছে। এর পরে মস্কো (১২ মিলিয়নেরও বেশি) এবং প্যারিস (প্যারিস মেট্রো এলাকা সহ ১১ মিলিয়ন)। এই শহরগুলি অবশ্যই সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই শহরগুলো তে বেড়াতে আসেন।

বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহর রয়েছে যেগুলির জনসংখ্যা কম, প্রায়শই তাদের বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ জীবনযাত্রার মান তৈরি করে। বার্সেলোনা, সিডনি, বার্লিন এবং ভ্যাঙ্কুভারে পাঁচ মিলিয়নেরও কম বাসিন্দা আছে, কিন্তু শহরের বসবাসের জন্য খুবই জনপ্রিয় পছন্দ। বড় সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক খ্যাতি সহ কিছু তুলনামূলকভাবে খুব ছোট শহরও রয়েছে, যেমন সারাজেভো (৩১৪,০০০), এডিনবার্গ (৫০২,০০০), এবং ভেনিস (৬৩১,০০০), এটি দেখায় যে ছোট শহরগুলি তাদের জনসংখ্যার আকার নির্বিশেষে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

 

 

 

১. টোকিও (Tokyo)

পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী টোকিও হ’ল বিশ্বের বৃহত্তম শহর যার জনসংখ্যা ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯১। টোকিওর জনসংখ্যা প্রায় পুরো কানাডার মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি (৩ কোটি ৮২ হাজার ৪৬ হাজার ১০৮)! বর্তমানে টোকিও জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র। এছাড়া শহরটি বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাপানের প্রধান সংযোগ বিন্দু।

টোকিও শহরের কেন্দ্রে বহু দেশী ও আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর অবস্থিত।

 

২. দিল্লি (Delhi)

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর। এর জনসংখ্যা ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৪১ জন। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে দিল্লি নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটি জনবসতি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে। ইতিহাসের অধিকাংশ সময় দিল্লি ছিল বিভিন্ন রাজ্য ও সাম্রাজ্যের রাজধানী। এই শহরটি বহুবার শত্রু কর্তৃক অধিকৃত, লুণ্ঠিত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। এই ঘটনাগুলি মূলত ঘটেছিল মধ্যযুগে।

আধুনিক দিল্লি একটি মহানগর অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত একাধিক শহরের একটি নগরপুঞ্জ।

 

৩. সাংহাই (Shanghai)

গণচীনে অবস্থিত প্রদেশের সমমর্যাদাবিশিষ্ট ও সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারশাসিত চারটি পৌরসভার একটি। সাংহাই একটি অতিমহানগরী, যার জনসংখ্যা ২ কোটি ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ১০৪ জন। সাংহাই মধ্য চীনের একটি বৃহৎ, জনবহুল ও অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল পৌর অঞ্চল গঠন করেছে। এটি চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক খাতের কেন্দ্রবিন্দু, অন্যতম বৃহৎ শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। সাংহাই একটি বিশ্বমানের শহর; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, পোশাকশৈলী, প্রযুক্তি ও পরিবহনে এটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে।

এটি সমগ্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং জাহাজের মালামালের বাক্স তথা কন্টেইনারের হিসেবে বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। এছাড়া বর্তমানে উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এটি চীনের অন্যতম অগ্রগণ্য কেন্দ্র।

 

 

৪. সাও পাওলো (Sao Paulo)

জনসংখ্যার বিচারে ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর। একই সাথে এটি দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম শহর। শহরটি ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে সাও পাওলো প্রদেশে অবস্থিত। এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে সম্পদশালী শহর। সাও পাওলো হল সাধু পলের পর্তুগিজ নাম। আশেপাশের শহরতলী নিয়ে গঠিত বৃহত্তর সাও পাওলো নগরীতে ২ কোটি ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৭ জন লোক বাস করেন।

সাও পাওলো শহরের অধিবাসীদেরকে পাউলিস্তানু ডাকা হয়।

 

৫. মেক্সিকো সিটি (Mexico City)

উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল স্থান। এটি উত্তর আমেরিকার জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি। এটি আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। এটি মেক্সিকো উপত্যকায় (ভ্যালে দে মেক্সিকো) অবস্থিত, যা মধ্য মেক্সিকোর সবচেয়ে উচ্চ মালভূমির একটি বৃহত উপত্যকা। এর উচ্চতা ২২৪০ মিটার বা ৭৩৫০ ফুট। মেক্সিকো সিটি ১৬টি বোরোতে বিভক্ত। মেক্সিকো সিটির জনসংখ্যা ২ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৯০৮ জন।

এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্প্যানিশ-ভাষী শহর।

 

৬. কায়রো (Cairo)

কায়রো মিশরের রাজধানী। এই শহরের খুব কাছেই প্রাচীন মিশরীয় ব্যাবিলন শহর অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। নীল নদের ব-দ্বীপ এর শীর্ষ ভাগে এই শহরের অবস্থান। নদীর অপর তীরে ছিল মিশরের প্রাচীন রাজধানী মেমফিস। গ্রেটার কায়রো আফ্রিকার বৃহত্তম মহানগর অঞ্চল। এটি কায়রো গভর্নরেট, গিজা গভর্নরেটের কিছু অংশ এবং ক্লেয়ুবিয়া গভর্নরেটের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। কায়রোর জনসংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৫।

 

৭. ঢাকা (Dhaka)

বাংলাদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি ঢাকা জেলার প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল এলাকাতে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির শহর। ২০২০ সালের হিসেবে ঢাকার জিডিপি ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ঢাকার পিপিপি ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২০ সালের হিসেবে)। ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি; ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটি ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫২ জন। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর; ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ হাজার লোক বাস করে।

ঢাকা শহর “মসজিদের শহর” নামে সুপরিচিত। এখানে এক হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র।

 

৮. মুম্বাই (Mumbai)

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী। মুম্বই ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ জনবহুল শহর এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল শহরগুলিরও অন্যতম। এই শহরের জনসংখ্যা  ২ কোটি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪ জন। নবি মুম্বই ও থানে সহ মুম্বাই মহানগরীয় অঞ্চল বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চলগুলির অন্যতমও বটে। ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মুম্বই একটি স্বাভাবিক সমুদ্রবন্দর।

যে সাতটি দ্বীপকে কেন্দ্র করে আধুনিক মুম্বই মহানগরী গড়ে উঠেছে, সুদূর অতীতে সেই সাতটি দ্বীপ ছিল মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বসতি।

মুম্বাই বিশ্বের একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং বলিউড ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক শিল্পের আবাসস্থল।

 

৯. বেইজিং (Beijing)

চীনের রাজধানী। প্রদেশের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত বেইজিং নগরীটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের অধীনে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা হিসেবে পরিচালনা করা হয়। সামগ্রিকভাবে বেইজিংকে চীনের রাজনীতি, শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বিপরীতে সাংহাই ও হংকং চীনের অর্থনৈতিক জীবনে আধিপত্য বিস্তারকারী দুই মহানগরী। বেইজিংয়ের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৫ হাজার ৪৫৫ জন।

এই শহরকে বিশ্বের বিলিয়নেয়ার ক্যাপিটাল হিসাবে বর্ণনা করা হয় কারণ অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় বেইজিংয়ে বেশি সংখ্যক বিলিয়নেয়ার বাস করেন।

 

১০. ওসাকা (Osaka)

ওসাকা জাপানের একটি প্রধান নগর, হোনশু দ্বীপের পশ্চিমে অবস্হিত এবং ওসাকা উপসাগরের সঙ্গে সম্মুখীন, প্রাচীনকালে ছিল কিয়োটোর বহির্বন্দর। এই শহরের লোকসংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ২২ হাজার ৬৬৫ জন। এটি জাপানি সংস্কৃতি, অর্থ এবং গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়।

 

সূত্র: বিশ্ব নগরায়নের সম্ভাবনা – জাতিসংঘের জনসংখ্যা অনুমান এবং প্রধান নগর সমষ্টির অনুমান


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *