সেলস ম্যানেজার | সেলসে ক্যারিয়ার | পেশা পরামর্শ | ক্যারিয়ার টিপস

বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ভোক্তাবাজারের আকার। বিশাল এই ভোক্তাবাজারের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় উৎপাদক কিংবা বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর প্রতিযোগিতা থাকে ক্রেতার যতটা সম্ভব কাছে যাওয়ার – তাদের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করার। বাজার ধরার জন্য সবকটি প্রতিষ্ঠানই সেলসম্যান/সেলসগার্ল এবং সেলস এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর তাদের সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ দেয়া হয় সেলস ম্যানেজার। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে সেলস ম্যানেজারদের প্রচুর কর্মসংস্থান এবং উন্নতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

সেলস ম্যানেজার কে?

সেলস ম্যানেজার সেলস টিম পরিচালনা করে থাকে নেতৃত্ব, প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে, বিক্রয় কোটা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করে, বিক্রয় পরিকল্পনা তৈরি, ডেটা বিশ্লেষণ, সেলস টেরিটরি নির্ধারণ এবং সেই টেরিটরির সেলর টিম গঠনের মাধ্যমে।

সেলস ম্যানেজারের কাজের সুযোগ

সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট সেলস টিম বা ব্রাঞ্চে সেলস ম্যানেজার নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

সেলস ম্যানেজারের কাজ এবং দায়িত্ব

সেলস ম্যানেজারের মূল দায়িত্ব হল সেলসম্যান/সেলসগাল, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, সেলস এক্সিকিউটিভ বা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভদের কাজ তত্ত্বাবধান করা। এর সাথে সাথে সেলস টিম বা ব্রাঞ্চের মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বাৎসরিক বিক্রয় টার্গেট পূরণ করা। এই প্রধান দুই দায়িত্বের সাথে সাথে সেলস ম্যানেজার কে আরো যে সব দায়িত্ব পালন করতে হয় তা হল:

• কোম্পানির পণ্য বা সেবার অর্ডারের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও কর্মসূচি তৈরি;

• মাসিক, ত্রৈমাসিক, এবং বাৎসরিক বিক্রয় টার্গেট বিশ্লেষণ করা।

• পণ্য বা সেবার প্রচারণার জন্য কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেয়া;

• ইউনিট অনুযায়ী বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানো

• পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেয়া;

• প্রয়োজনে ডিলার অন্তর্ভুক্তি বাতিলকরন।

• টেরিটোরি সেলস অফিসার এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং সমন্বয় করা।

• টেরিটোরি ইন চার্জকে বিভিন্ন ডিলারদের বিক্রয়ের ধারা এবং পরিমাণ বিবেচনায় ডিলার এবং সাব-ডিলার নির্বাচনে সহযোগিতা করা।

• টেরিটরি ইন-চার্জকে পণ্যের ব্যাপারে অভিযোগ, বিক্রয় বা পাওনা ব্যালেন্স অথবা অন্যান্য ব্যাপারে ডিলারদের সাথে দ্বন্দ্ব নিরসনে সহযোগিতা করা।

• পণ্য বা সেবা বিক্রির রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করা;

• সেলস টিমের সামগ্রিক কাজের তদারকি করা;

• মার্কেটিং টিমের সাথে কাজের সমন্বয় রাখা;

• টেরিটোরির প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা এবং সে অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক বিক্রয়ের কৌশল প্রণয়ন

• কীভাবে বাজারে কোম্পানির পণ্য বা সেবা প্রসার ঘটানো যায়, সে ব্যাপারে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা;

• খরচ কমানো এবং বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রস্তাবনা

• নিজের টেরিটোরিতে বিক্রয়ের পরিমাণ বা গ্রোথ-এর ব্যাপারে রেসপন্সিবিলিটি নেওয়া।

• কার্যকরী পর্যালোচনার একটি সিস্টেম দাঁড় করানো, যাতে করে টাইমলাইনের সাথে প্রোগ্রেস তুলনা করা যায়।

• সেলস টিমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;

• নতুন কাস্টমারদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করা।

একজন সেলস ম্যানেজারের যোগ্যতা

প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার উপরে নির্ভর করে সেলস ম্যানেজারের যোগ্যতার ধরন আলাদা হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: অধিকাংশ কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজারের পদের জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত ন্যূনতম ব্যাচেলর ডিগ্রির দরকার হয়। তবে মাস্টার্স ডিগ্রির প্রাধান্য রয়েছে। অন্যদিকে শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল হয়ে থাকে এবং তাদের প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।

বয়স: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত বয়স কমপক্ষে ৩৫ – ৪০ বছর হয়ে থাকে।

অভিজ্ঞতা: সেলস ম্যানেজারের চাকরিতে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য থাকে। সাধারণত ৩ – ৪ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে। বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫ – ৮ বছরের অভিজ্ঞতাও চাওয়া হতে পারে।

সেলস ম্যানেজারের দক্ষতা ও জ্ঞান

সেলস ম্যানেজার হিসাবে উন্নীত হবার জন্য সেলসের দক্ষতা থাকা আবশ্যক। এর সাথে সাথে রয়েছে:

• নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা;

• সেলস টিম বা ব্রাঞ্চ পরিচালনার সক্ষমতা।

• দুর্দান্ত লিখিত এবং মৌখিক যোগাযোগের দক্ষতা। বাংলা ও ইংরেজি – দুই ভাষাতেই ভালো যোগাযোগ করতে পারা;

• আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা করার দক্ষতা;

• প্রোডাক্ট ডিস্ট্রিবিউশন সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা থাকা;

• নতুন ডিলার/ডিস্ট্রিবিউশন সৃষ্টির সক্ষমতা।

• কার্যকর সেলসের উপায় বের করতে পারার সক্ষমতা।

• ব্যবসায়িক সুযোগ নির্ণয় করার ক্ষমতা;

• খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ করার দক্ষতা;

• বিক্রয় কৌশল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা।

• কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞতা।

• দ্রুত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা;

• কর্মী ও কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা।

• প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন জানা।

সেলস ম্যানেজারের আয়রোজগার

সেলস ম্যানেজারের মাসিক বেতন প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। সাধারণত একজন সেলস ম্যানেজার গড়ে ৪০- ৬০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া পণ্য বা সেবার বিক্রির উপর লভ্যাংশ অর্জনের সুযোগ রয়েছে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে।

সেলস ম্যানেজারের ক্যারিয়ার গ্রাফ

সাধারণত সেলস বা মার্কেটিং বিভাগের এন্ট্রি লেভেলে চাকরি শুরু হয়: সেলসম্যান/সেলসগাল, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, সেলস এক্সিকিউটিভ বা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসাবে। এর পরে পারফরম্যান্স ভালো হলে ৫ – ৬ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের পরে সেলস ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পাওয়া যায়। এর পরে পারফরম্যান্স বজায় থাকলে ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবচেয়ে উঁচু পদ সেলস বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ হতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *