পি. আর. প্রফেশনাল হতে চায়লে

পাবলিক রিলেশনস (পিআর) একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রোমোট করে এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডেরইমেজ’-কে রক্ষা করে। বর্তমানের অনেক চাহিদা সম্পকৃর্ণ পেশে এটা। বিম্তারিত: শামস্ বিশ্বাস

 

বর্তমানে বাজার অর্থনৈতিক কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি মিডিয়াতে তা প্রকাশ-প্রচারের ব্যবস্থা করতে হয়। এই চাহিদা মাথায় রেখেই সৃষ্টি হয়েছে পাবলিক রিলেশনস বা জনসংযোগ কার্যক্রম।

জনসংযোগ হচ্ছে একটি সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত বিরামহীন কর্মপ্রয়াস। যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনগণ, স্টেক হোল্ডার তথা টার্গেট গ্রুফের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়ে পারস্পরিক সমঝোতা বা সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।

‘জনসংযোগ’ শব্দটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ১৮০৭ সালে তাঁর কংগ্রেস ভাষণের খসড়ায় প্রথম ব্যবহার করেন। তখন থেকেই জনসংযোগ একটি আধুনিক, জরুরী এবং মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে বিকশিত হতে শুরু করে। একটি সৃজনশীল ও কূশলী বিদ্যা হিসেবে ‘জনসংযোগ’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব পেতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বহু স্থানে ‘জনসংযোগ’ একটি পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

 

কেন পিআর?

আপনার কমিউনিকেশন স্কিল কি জবরদস্ত? বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা করে, মিষ্টি কথায়, আকর্ষক আদব-কায়দায় তাদেরকে পটিয়ে ফেলতে কি আপনার জুড়ি নেই? তা হলে পি. আর. (পাবলিক রিলেশনস) কেরিয়ার আপনার পক্ষে আদর্শ হতে পারে। আপনি যদি সৃজনশীল মানুষ হন, আবার ৯-৫ ডেস্ক জব যদি আপনার কাছে চক্ষুশূল হয়, তা হলে পি. আর. হয়ে উঠতে পারে আপনার ড্রিম জব। কী এই পি.আর.? পাবলিক রিলেশনস আর কিছুই নয়, একটি ব্র্যান্ডকে বিশ্বের জনতার কাছে প্রোমোট করা এবং সমাজে সেই ব্র্যান্ডের ‘ইমেজ’-কে রক্ষা করার কাজ। পি. আর. এজেন্টদের কারসাজিতে যে কোনও সেলেব বা সংস্থার খ্যাতি মূহূর্তে আকাশ ছুঁতে পারে বা কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে। এমনই হচ্ছে পি.আর.-এর ক্ষমতা!

 

কেরিয়ার হিসেবে কেমন?

আপনি যদি আত্মবিশ্বাসী হন, নানা ধরনের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে আপনি যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো, আবার একই সঙ্গে আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) এবং প্রবলেম সলভিং ক্ষমতা থাকে তা হলে এর চেয়ে যোগ্য কেরিয়ার খুঁজে পাওয়া মুশকিল! একটি সংস্থা বা সেলেবের ইমেজ বা খ্যাতিকে গড়ে তোলার দায়িত্ব হবে আপনার। আবার একই সঙ্গে তাঁদের ইমেজকে সবরকম কলঙ্ক বা ‘নেগেটিভ’ পাবলিসিটি থেকে রক্ষা করার দায়িত্বটিও আপনার। এর জন্য আপনাকে নানা খবরের কাগজ, নিউজ় চ্যানেল ও বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

 

কাজের সুযোগ

সরকারি, বেসরকারি ও প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি – যে কোন প্রতিষ্ঠানে একজন পাবলিক রিলেশনস অফিসারের প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে প্রচারণার এ যুগে পদটির গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।

সরকারি পর্যায়ে আপনি মূলত কাজ করার সুযোগ পাবেন একজন তথ্য কর্মকর্তা হিসাবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো সরকারি কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো।

জনসংযোগ দপ্তর যেকোন প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিচে একটি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ দপ্তরের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনগণকে জানানো
  • প্রেসরিলিজ তৈরি, প্রকাশ ও প্রচার
  • সময়পোযোগী বিজ্ঞাপন ম্যাটার তৈরি ও প্রচার করা
  • জনসংযোগমূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করা
  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গণমানুষের মতামত যাচাই
  • সেমিনার, ডায়ালগ, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি নিয়মিত আয়োজন
  • শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ
  • গবেষণা পরিচালনা

 

কাজটা কী

সাধারণত পি. আর. এজেন্টদের দুই ধরনের দায়িত্ব থাকে— ব্র্যান্ড প্রোমোশন এবং ব্র্যান্ড প্রোটেকশন। ব্র্যান্ড প্রোমোশনের ক্ষেত্রে আপনাকে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষের ইমেজ গড়ে-পিটে তুলতে হবে। আমজনতা এবং আপনার ক্লায়েন্টের মধ্যিখানে আপনি হবে মিডলম্যান। কীভাবে জনসাধারণকে আপনার ক্লায়েন্টের প্রতি আরও উৎসাহিত করা যায়, কীভাবে একটি সংস্থা বা সেলেবকে জনতার কাছে একটি রোমাঞ্চকর ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করা যায়, তার দায়িত্ব আপনার। তার জন্য আপনাকে নানারকম মিডিয়া হাউজ় বা চ্যানেলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তারা আপনার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে যাতে ভাল-ভাল খবর লেখে, যাতে মেপেজুপে আপনার ক্লায়েন্টের সমালোচনা করে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নানাধরনের প্রেস রিলিজ়, কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে আপনার ক্লায়েন্ট যাতে প্রচারের আলোয় থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার ক্লায়েন্টের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের মধ্য দিয়ে তাদের ইমেজকে ‘ম্যানেজ’ করারও দায়িত্ব নিতে হবে। কোনও সেলেবের পি. আর.-এর দায়িত্ব যদি নেন, তা হলে তাকে জনসমক্ষে কীভাবে আরও বেশি ‘সমাজ-সচেতন’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা যায়, তার দায়িত্বও আপনার। আবার একইসঙ্গে আপনার ক্লায়েন্টের সুনাম যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সে ব্যবস্থাও করতে হবে আপনাকে। কোনও রকম কলঙ্ক, বির্তক থেকে রক্ষা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া, রিভিউ বা রেটিং সাইট বা বিভিন্ন মিডিয়ায় আপনার ক্লায়েন্টের ‘ইমেজ’ যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে আপনাকে। কোনও সংস্থা যদি কোনওরকম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যায়, সেই সংস্থাকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও আপনার।

 

কী স্কিল লাগবে

পি. আর.-এর কেরিয়ারে সফল হতে হলে সর্বপ্রথম দরকার উৎকৃষ্ট মানের কমিউনিকেশন স্কিল। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলামেশা করতে আপনি যত সক্ষম হবে ততই পি. আর. এজেন্ট হিসেবে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়াও দরকার গবেষণা করার ক্ষমতা। আপনার ক্লায়েন্ট সংস্থা বা সেলেবটির ব্যাপারে নিঁখুত এবং বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে। সে কোন কনজ়িউমার বা দর্শকদের এন্টারটেইন করছে, তার ইউ এস পি ( ইউনিক সেলিং পয়েন্ট) কী, সে সম্বন্ধে আপনার অবগত থাকতে হবে, না হলে ভাল ব্র্যান্ড গ়ড়ে তুলতে পারবে না। তা ছাড়াও লাগবে ভাল লেখার ক্ষমতা। আপনার ক্লায়েন্টের জন্য প্রেস রিলিজ় আপনার দক্ষ ভাবে লিখতে হবে, যাতে সেটা দর্শকের নজর কাড়ে।

 

আয়রোজগার

আর পাঁচটা পেশার মতোই এই পেশাতেও আপনার উপার্জন কীরকম হচ্ছে, তা নির্ভর করবে আপনসার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর। সাধারণত বছরে ৪-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে পি. আর. প্রফেশনালদের আয়রোজগার।

 

ক্যরিয়ার গ্রাফ

একজন পাবলিক রিলেশনস অফিসারের ক্যারিয়ার কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে আপনার ক্যারিয়ার ভিন্ন হবে।

সরকারি কার্যালয়ে সাধারণত সহকারী তথ্য কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদ হতে পারে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

প্রাইভেট ফার্ম বা কোম্পানিগুলোতে পাবলিক রিলেশনস অফিসার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এন্ট্রি লেভেলে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর কমিউনিকেশন ম্যানেজারের পদে উন্নীত হতে পারেন। এ ক্যারিয়ারে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে চীফ কমিউনিকেশনস অফিসার বা কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর হিসাবে নিয়োগ পান।

 

ডিগ্রির প্রয়োজন আছে কি?

সাধারণত পি. আর. সংস্থারা যে-কোনও বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন চায়। কোনও বিষয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কাজটা যেহেতু মূলত সৃজনশীল, তাই আপনি  যদি সাহিত্য, মাস-কমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক হন, তা হলে সেটি অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ!

এখন যখন জেনেই গেলেন যে পি. আর. হতে গেলে কী করা উচিত, তা হলে আপনাকে দ্য নেক্সট পি. আর. ম্যাজিশিয়ান হতে রুখছে কে?


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *