ভাড়াটে যোদ্ধা – যারা অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধ করে | মার্সেনারি | Mercenary

কোনো দেশ বা জাতির কিংবা কোনো আদর্শের জন্য সশস্ত্র সৈনিক নয় মার্সেনারি বা ভাড়াটে যোদ্ধারা। যে বেতন দেয় তার প্রতিই তাদের আনুগত্য। সাম্প্রতিক হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়েস নিহত হয়েছে মার্সেনারিদের হাতে। ফলে পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম এই পেশা নিয়ে দুঃচিন্তা দেখা দিয়েছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে। 

ভাড়াটে যোদ্ধা - যারা অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধ করে | মার্সেনারি | Mercenary
Private military contractor in Badakhshan Province, Afghanistan, 2006.

মার্সেনারি

 

পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন পেশা

ভাড়াটে যোদ্ধাদের ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেকের মতে, এটি দ্বিতীয় প্রাচীন পেশা। সব শাসক থেকে শুরু করে দিকবিজেতার নিজেদের নিয়মিত সৈনিকদের বাইরেও ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহার করতেন। পি ডাব্লিউ সিঙ্গারেরকরপোরেট ওয়ারিয়র্স: দি রাইজ অফ দি প্রাইভেটাইজড মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি “ বইতে আছে, ‘প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার উর রাষ্ট্রের সুমেরীয় রাজা শুলঘি (খ্রিস্টপূর্ব ২০৯৪-২০৪৭) ভাড়াটে সৈন্যদের কাজে লাগান। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের বিখ্যাত সুইস গার্ড বাহিনীতেও ভাড়াটে সৈন্য ছিল।

আধুনিককালের মার্সেনারি বা ভাড়াটে যোদ্ধারা এসেছে ব্রিটিশদের হাত ধরে। ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর এক দল সাবেক কর্মকর্তা গড়ে তোলেন ওয়াচগার্ড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সত্তরের দশকে লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফিকে উত্খাতের ব্যর্থ চেষ্টাসহ অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

এরপর স্নায়ুযুদ্ধের আমলে সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সামরিক বিশেষজ্ঞ শন ম্যাকফেট তাঁর বিখ্যাত বই “দ্য মডার্ন মার্সেনারি: প্রাইভেট আর্মিস এন্ড হোয়াট দে মিন ফর ওয়ার্ল্ড অর্ডার”-এ বলছেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্বে নিরাপত্তা ঠিকাদারের সংখ্যা আগের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেড়েছে। মূলত যুদ্ধের কৌশল বদলে যাওয়ায় এমনটি ঘটছে।

 

কাদের হয়ে কাজ করে ভাড়াটে মার্সেনারি?

বিভিন্ন দেশের সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা ভাড়াটে সৈনিকদের বেশি কাজে লাগায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা নিরাপত্তা ঠিকাদারদের প্রধান ক্লায়েন্ট। দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে সৈন্যদের মৃত্যুর হার দেখেই বিকল্প সৈন্যদের বেছে নিচ্ছে রাষ্ট্রগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের ১০ শতাংশ ছিল ভাড়াটে; কিন্তু ইরাক ও আফগান যুদ্ধে এই সংখ্যা বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ। বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই ভাড়াটে সৈন্যদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে এদের ছাড়া কোনো যুদ্ধের কথা চিন্তাও করে না।

মার্সেনারি সংগঠনগুলোর তত্পরতা সবচেয়ে বেশি থাকে অনেকটা অন্তরালে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বল্প সামরিক শক্তির দেশগুলোও তাদের ভাড়া করে। আবার পরাশক্তি বা ধনী দেশগুলোও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য মার্সেনারিদের ভাড়া করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বলা হয়, তাদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে মার্কিন সৈন্য। যদিও অধিকাংশই এসেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে। ছয় বছর ধরে বোকো হারামের সঙ্গে প্রথাগত লড়াই চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে নাইজেরিয়া। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে মার্সেনারিদের শরণাপন্ন হয় আফ্রিকার দেশটি। এ ভাড়াটে যোদ্ধারা আবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোকো হারামকে দমন করতে সক্ষম হয়েছে।

লিবিয়ার যুদ্ধ এখন অনেকটাই রূপ নিয়েছে ভাড়া করা যোদ্ধাদের লড়াইয়ে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদের একটি প্রতিষ্ঠান লিবিয়ায় বারোশর বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে যারা জেনারেল খলিফা হাফতারের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। লিবিয়ার এই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। রিপোর্টটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে যাতে দেখা যাচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি নেটওয়ার্ক লিবিয়ায় এসব সৈন্য পাঠিয়েছে। জাতিসংঘের এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই সেটি গিয়ে পৌঁছোয় বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকদের হাতে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি রুশ নেটওয়ার্ক লিবিয়াতে এসব ভাড়াটে সৈন্যদের পাঠিয়েছে। বলা হচ্ছে, এসব যোদ্ধারা সেখানে লিবিয়ার বিদ্রোহী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের হয়ে চোরাগোপ্তা হামলাকারী এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছে।

গত বছরের শুরুর দিকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন যে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে এই রুশরা যদি যুদ্ধ করে থাকে, তারা রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছে না। তবে এরকম ভাড়াটে সৈন্যরা এর আগে সিরিয়া ও ইউক্রেনে রুশ সৈন্যদের হয়ে লড়াই করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে যুদ্ধকৌশল অনেকটা চোরাগোপ্তা রূপ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মার্সেনারিদের মতো ভাড়াটে যোদ্ধারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়ার দখল নিয়েছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত উপায়ে। এজন্য মস্কো ওয়াগনার গ্রুপের মতোই বড় মার্সেনারি সংগঠন স্পেটসনাজ স্পেশাল ফোর্সেস, গ্রিন মেন ও তথাকথিত রুশপন্থী মিলিশিয়াদের কাজে লাগায়। এর আগে ব্যাপক মাত্রায় প্রচার-প্রচারণা-প্রোপাগান্ডাসহ আরো তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াটে বাতাবরণ তৈরি করা হয়। ফলে পশ্চিমারা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্রাইমিয়া দখলে নিতে সক্ষম হয় রুশরা।

বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের বড় করপোরেশনগুলোকেও বিভিন্ন সময়ে মার্সেনারিদের সহায়তা নেয়ার নজির পাওয়া যায়। এমনকি জাতিসংঘও তাদের কিছু কাজে ভাড়াটে সৈন্য ব্যবহার করে। গিনির সরকার উচ্ছেদে ব্রিটিশদের সৈন্য ভাড়া করা নিয়ে বহু কথাবার্তা হয়েছে। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে যুদ্ধের সবচেয়ে সহজলভ্য ও বড় উপকরণ হয়ে উঠতে পারে ভাড়াটে যোদ্ধারা।

 

যেভাবে তৈরি হয় ভাড়াটে যোদ্ধা

গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী ভাড়াটে যোদ্ধাদের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন করপোরেশন এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও তাদের কাজে লাগানোর হচ্ছে। শত্রু রাষ্ট্রে কে অস্থিতিশীল করে তোলা কিংবা ছায়াযুদ্ধ চালানোর জন্য ভাড়া করা হচ্ছে মার্সেনারি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদদের হত্যার ক্ষেত্রেও তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। এছাড়া আড়ালে থেকে সামরিক সুবিধা আদায় করে নেয়ার জন্যও মার্সেনারিদের ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন দেশ।

বেসরকারি ও সামরিক অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আছে বিশ্বজুড়ে। সামরিক প্রশিক্ষণ আছে কিংবা অস্ত্র চালাতে জানে এমন লোকদের সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কখনো বা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেরাই যোদ্ধা তৈরি করে। মাসিক, বার্ষিক বেতন কিংবা অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক পারিশ্রমিকে নিয়োগ করা হয় এই যোদ্ধাদের। বিশ্বের একটি নামি সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘একাডেমি’। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। শুরুতে এর নাম ছিল ‘ব্ল্যাকওয়াটার’। মার্কিন নেভি-সিল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা এরিক প্রিন্স এর প্রতিষ্ঠাতা। উত্তর ক্যারোলাইনায় সাত হাজার একর জায়গায় একাডেমির প্রশিক্ষণকেন্দ্র। ২০০৭ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে, একাডেমির সৈনিক সংখ্যা ২০ হাজার। এয়ারক্রাফট আছে ২০টি, আছে অনেক যোদ্ধা কুকুর। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আফগান ও ইরাক যুদ্ধে লড়েছে একাডেমির সৈনিকরা। জাপানের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও রক্ষণাবেক্ষণ করে একাডেমি। বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে এর সৈনিকরা অংশ নিচ্ছে।

 

যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সও বেশ নামকরা সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টর। ২০০৩ সালে বাগদাদে আটকে পড়া ছয়জন ব্রিটিশ আইনজীবীকে অক্ষত উদ্ধার করে আলোচনায় এসেছিল প্রতিষ্ঠানটি। রাশিয়ার স্লাভোনিক কর্প আর যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারস্ক্যানও এখনকার আলোচিত নিরাপত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিরিয়া, লিবিয়া, ইউক্রেন আর ইয়েমেন যুদ্ধেও সক্রিয় আছে সিকিউরিটি কন্ট্রাক্টররা।

 

প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও মার্সেনারি সংগঠনগুলো এখন সামরিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণার চেয়েও বেশি। এমনকি সাইবার যুদ্ধের জন্য আলাদা মার্সেনারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের অভিহিত করা হয় হ্যাক ব্যাক কোম্পানি হিসেবে।

 

আর্থিক হিসাবনিকাশ

যুদ্ধবিগ্রহের মতো রাষ্ট্রীয় বিষয়কেও ব্যক্তিবাণিজ্যিক খাতে নিয়ে এসেছে মার্সেনারি ব্যবসা। গড়ে উঠেছে বহুজাতিক মার্সেনারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠিনও। ভাড়াটে যোদ্ধা পেশাটির সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহের সম্পর্ক যতটা ততটাই সম্পর্ক অর্থের। সংঘাত আর যুদ্ধ যত বাড়ে, ততই মুনাফা বাড়ে নিরাপত্তা ঠিকাদার কম্পানিগুলোর।

গত কয়েক শতকে বিশ্বব্যাপী ভাড়াটে যোদ্ধাদের ব্যবহার বন্ধের জন্য বেশ কয়েকটি দেশ চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করেই মার্সেনারিরা আবার পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসে। বড় দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্সেনারিদের পেছনে ব্যাপক মাত্রায় বিনিয়োগ শুরু করে। বিশ্বব্যাপী মার্সেনারিদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক মার্কিন মুল্লাক। প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর (পিএমসি) বা ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানের অধীনে তাদের নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কেউ কেউ এটিকে বলেন ‘যুদ্ধের ব্যবসায়’। ২০১০ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এসব কন্ট্রাক্টরের পেছনে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এ অর্থ যুক্তরাজ্যের মতো দেশেরও গোটা সামরিক বাজেটের পাঁচ গুণ।

অভিযোগ আছে, মুনাফার জন্য এই ঠিকাদারি কম্পানিগুলো যুদ্ধ বাধিয়ে রাখে। ‘একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন, ‘সৈন্যরা নয়, ঠিকাদাররাই আফগানিস্তানে যুদ্ধ টিকিয়ে রাখবে।’ ম্যাকফেট এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘ভাড়াটে সৈন্যরা তাদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধ আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে, তারা যুদ্ধকে সমাপ্তিহীন করে তুলতে পারে।’

ভাড়াটে সৈন্যদের বিষয়ে জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং কমিটির প্রধান হোসে এল গোমেজ ডেল পারডো তাঁর রিপোর্টে বলেছিলেন, মার্সেনারি ও প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে শুধু মুনাফার জন্যই। প্রায়ই তারা বিপজ্জনক ও নাজুক পরিস্থিতিতেও নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামায়। ফলে বিপর্যয়েরও বড় আশঙ্কা তৈরি হয়। এছাড়া জবাবদিহিতা না থাকার বিষয়টিই তাদের ব্যবসার সবচেয়ে বড় জায়গা। কোনো দেশ নিজ সেনাদের পরিবর্তে তাদের ব্যবহার করে যুদ্ধে নিজের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ভালোভাবেই অস্বীকার করে যেতে পারে। আবার যাদের শক্তিমত্তার অভাব রয়েছে, তাদের জন্যও বড় শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে মার্সেনারিরা।

 

বর্তমানে মার্সেনারি ব্যবসার বাজার ব্যাপ্তি কত, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই কারোরই। তবে একটি বিষয়ে সমরিক পর্যবেক্ষকদের সবাই একমত, পৃথিবীজুড়ে মার্সেনারি ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে।

 

সহিংসতা ও বিতর্ক

জবাবদিহিতা না থাকায় মার্সেনারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ নানাবিধ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। মার্কিন কংগ্রেসের এক নথিতে বলা হয়েছে, ‘একাডেমি’র সদস্যরা ২০০৫ সাল  থেকে অন্তত ২০০ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ২০০৭ সালে তারা ইরাকের একটি মার্কেটে গুলি চালিয়ে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এল-৩ নামের আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা কুখ্যাত আবু গারিব কারাগারে বন্দি নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত।

চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, রাশিয়ার মার্সেনারিরা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের বাম্বারি শহরের তাকওয়া মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে

বাম্বারির মতো আরও অনেক ঘটনা আছে আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে। সিএনএনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব ঘটনার জন্য রাশিয়ার মার্সেনারিদের দায়ী করা হচ্ছে। দ্য সেন্ট্রি নামের একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা অনেক দিন ধরেই কঙ্গোর সহিংসতার কারণ অনুসন্ধানে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। তাদের মতে, প্রাণভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চায় না। সিএনএন ও সেন্ট্রি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে। কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ইউনিট এমআইএনইউএসসিএ বলছে, ‘বাম্বারিতে এফএসিএ, রাশিয়ান ও সিরিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধারা যুদ্ধাপরাধ করছে। বিশেষত তাদের হাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হচ্ছে।’ এ ছাড়া কঙ্গোতে বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার রাশিয়ান মার্সেনারি রয়েছে বলেও দাবি করে ইউনিটটি। বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, সিরিয়ান অনেক মার্সেনারিই রাশিয়ান কন্ট্রাক্টরের হয়ে কাজ করছে। লিবিয়া থেকে ওই মার্সেনারিদের পাঠানো হয়। এমআইএনইউএসসিএ’র দলটি গত মার্চের একটি ঘটনার তদন্ত করছে এখন। ওই ঘটনায় এফএসিএ/রাশিয়ান যোদ্ধাদের হাতে তিনজন নিরস্ত্র নিহত হয়।

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইজেকে তার বাসভবনে ঢুকে হত্যা করে মার্সেনারিরা। হাইতি পুলিশ বলছে, ২৮ বিদেশী মার্সেনারি এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এরই মধ্যে তাদের অনেককেই আটক করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। বাকিরা এখনো পলাতক। এ মার্সেনারিদের মধ্যে কলম্বিয়ার সাবেক কয়েকজন সেনাসদস্যও রয়েছে। বাড়তি অর্থ উপার্জনের আশায় সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে মার্সেনারির পেশায় এসেছিলেন তাদের কেউ কেউ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবিগ্রহে ভাড়াটে সৈনিকদের পা পড়ার কারণে তা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এবং সংঘাতকে আরো প্রাণঘাতী ও দীর্ঘতর করছে।

 

 


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *