ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটর

 

বিশাল এই পৃথিবীতে আছে হাজার হাজার ভাষা। ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বা সমাজের মাঝে এই ভাষা পার্থক্য দূর করাই ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটরের কাজ। ইন্টারপ্রেটার ভিন্নভাষী মানুষের মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা আমাদের দেশে দিনদিন বাড়ছে  অনুবাদক এবং দোভাষীর কাজের সুযোগ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটর হিসেবে আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে এ খাতে খুব বেশি মানুষের আগ্রহ এখনো তেমন তৈরি হয়নি। ফলে এ খাতে ক্যারিয়ার গড়ার অনন্য সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে বলাই চলে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন: শামস্ বিশ্বাস।

 

ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটর

 

ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী

কোন নির্দিষ্ট ভাষার মূল বক্তব্য নতুন কোন ভাষায় প্রাসঙ্গিক ভাবে উপস্থাপন করে থাকেন একজন ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষী। সময় ও ধরনের ভিত্তিতে কাজ আলাদা হলেও মূলত দুই ক্যাটাগরির ইন্টারপ্রেটার হওয়া সম্ভব।

  • সাইমালটেনাস ইন্টারপ্রেটার: বক্তা কথা বলার সময় সাথে সাথে তার অনুবাদ করতে হয় সাইমালটেনাস ইন্টারপ্রেটার কে।
  • কন্সেকিউটিভ ইন্টারপ্রেটার: বক্তার বক্তব্য শেষ হবার পর তার অনুবাদ করেন কন্সেকিউটিভ ইন্টারপ্রেটার।

 

ট্রান্সলেটর বা অনুবাদক

সাধারণত একজন ট্রান্সলেটর বা অনুবাদক কোন বক্তব্যকে অন্য ভাষায় লিখিতভাবে অনুবাদ করেন।

 

ইন্টারপ্রেটার ও ট্রান্সলেটরের মধ্যে পার্থক্য

ভিন্নভাষীদের মধ্যে ভাষাগত সীমাবদ্ধতা দূর করা নিয়ে কাজ করলেও ইন্টারপ্রেটার ও ট্রান্সলেটরের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, একজন ইন্টারপ্রেটার উৎসের ভাষাকে মৌখিকভাবে অনুবাদ করেন, আর ট্রান্সলেটর অনুবাদ করেন লিখিতভাবে।

 

কাজের সুযোগ

লেখক, অনুবাদক, শিক্ষক, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপ্টর, কোর্ট রিপোর্টার, ট্যুর গাইড ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুবাদক এবং দোভাষীর চাহিদা রয়েছে।

আমাদের দেশে সাধারণত গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, কন্সট্রাকশন কোম্পানি, হাচারি বা কৃষি প্রতিষ্ঠান;

আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটর কাজ করে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে চুক্তির ভিত্তিতে অনেকে ব্যক্তিগত ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটর হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে থাকেন।

 

দায়িত্ব

একজন ইন্টারপ্রেটারের মূল দায়িত্ব হলো দুজন ভিন্ন ভাষী মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা। লিখিত, মৌখিক, তাৎক্ষণিক – প্রতিষ্ঠান ও কাজভেদে যোগাযোগের ধরন আলাদা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদন লেখার দায়িত্বও থাকে।

 

যোগ্যতা

  • ইন্টারপ্রেটারের শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাধারণত যেকোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা অথবা স্নাতক পাশ হতে হবে।
  • ভাষাগত যোগ্যতা: প্রয়োজনীয় ভাষা ভালোমতো লিখতে, পড়তে, বুঝতে ও বলতে জানতে হবে। এক্ষেত্রে সে ভাষার উপর কোর্স করা থাকলে বা সার্টিফিকেট থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে।
  • বয়স: সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর।
  • অভিজ্ঞতা: বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য সাধারণত ২-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়াও নিয়োগ দেয়া হয়।
  • বিশেষ যোগ্যতা: যে ভাষার ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজ করবেন, সে ভাষার দেশে কয়েক বছর অস্থায়ীভাবে বাস করলে বা পড়াশোনা করলে তা খুব কাজে আসবে।
  • বিশেষ শর্ত: এ কাজের জন্য প্রায় সময় বিভিন্ন জায়গায় যাবার দরকার হয় বলে বহু বিজ্ঞপ্তিতে পুরুষ প্রার্থীদের নিয়োগ দেবার কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকে।

 

দক্ষতা ও জ্ঞান

একজন ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজ করতে চমৎকার ভাষাজ্ঞানের কোন বিকল্প নেই। এর বাইরেও কিছু দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। দুই পক্ষের মধ্যে ঠিকভাবে যোগাযোগ রাখার জন্য ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটরেরকে যেসব বিষয়ে দক্ষ হতে হবে তা হলো:

  • ইন্টারপ্রেটার বা ট্রান্সলেটার হিসেবে কাজ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আত্মবিশ্বাস থাকাটা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • একজন ইন্টারপ্রেটার মূলত শোনা, একাগ্রতা, বিশ্লেষিত দক্ষতা, উভয় ভাষায় অনর্গল কথা বলা, প্রখর স্মৃতিশক্তি এবং বক্তব্যের অর্থ স্পষ্ট ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করার গুণাবলি থাকতে হবে।
  • দোভাষী হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে থাকতে হবে অন্যকে কোনোকিছু ভালোভাবে বোঝানোর ক্ষমতা।
  • বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সাথে মেশার ক্ষমতা প্রয়োজন। মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে না পারলে এ পেশায় টিকে থাকা দুষ্কর হবে কিছুটা।
  • কমপক্ষে দুটি ভাষায় কথা বলা, পড়তে পারা এবং সুস্পষ্টভাবে লিখতে পারা। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ব্যবহার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
  • উৎস ভাষার ধারণাকে লক্ষ্যভাষায় সমতুল্য ধারণায় রূপান্তর করা। আক্ষরিক অনুবাদ না করে ভাবগত ও প্রাসঙ্গিক অনুবাদ করা;
  • অনুবাদের ক্ষেত্রে মূল ভাষাশৈলী এবং ভঙ্গিমা রক্ষা করা।
  • স্পষ্ট, দ্রুত এবং শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারা এবং লিখতে পারা।
  • অনুবাদ করার পূর্বে উভয় ভাষাভাষীদের সংস্কৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করা। এই জ্ঞান প্রয়োগ করে মূল বার্তাটির একটি সঠিক এবং অর্থপূর্ণ অনুবাদ তৈরি করা।
  • কোন পক্ষ কঠিন ভাষা ব্যবহার করলেও অনুবাদের সময় সহজভাবে তা অন্য পক্ষের কাছে ব্যাখ্যা করা;
  • কর্মীদের মনোভাব অনুধাবন করে তাদের বক্তব্যকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা;
  • যোগাযোগের ক্ষেত্রে কারো কোন সমস্যা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনোযোগ দেয়া।
  • নিজের প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা;
  • কথোপকথনের মূল বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা;
  • ভিন্নভাষী মানুষদের আচার-আচরণ, প্রথা আর অভ্যাস সম্পর্কে জানা;
  • কোন কারণে ভুল বোঝাবুঝি হলে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি সামাল দেয়া।
  • ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজ করতে কারিগরি জ্ঞান থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে হয় বলে অফিস প্রোগ্রামে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।
  • শব্দকোষ এবং পরিভাষা ডাটাবেজে অনুবাদ করতে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং টেকনিক্যাল টার্মস সংকলন করা।

 

প্রশিক্ষণ

  • দেশের বিভিন্ন ইন্সটিটিউটে বিদেশী ভাষার ওপর কোর্স করার সুযোগ রয়েছে:
  • আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট (IML), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, আরবি, স্প্যানিশ, চীনা, জাপানি, জার্মান, ফার্সি, রাশিয়ান
  • আলিয়ঁস ফ্রসেজ (Alliance Francaise): ফ্রেঞ্চ
  • গ্যেটে ইন্সটিটিউট (Goethe-Institute Bangladesh): জার্মান
  • ব্রিটিশ কাউন্সিল (British Council): ইংরেজি

 

ক্যারিয়ার গ্রাফ

সাধারণত চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয় বলে এ ক্যারিয়ারের কোন নির্দিষ্ট পদোন্নতির সুযোগ নেই।

 

আয়রোজগার:

একজন ইন্টারপ্রেটারের আয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। সাধারণ হিসাব অনুযায়ী মাসিক আয় ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। অনলাইনে আয়েরও সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর ফিল্যান্সিং ওয়েবসাইট আছে। এসব সাইট থেকেই অনেক অনুবাদের কাজ পেতে পারেন। যারা অনুবাদে ভালো তারা ঘরে বসেই অনলাইনে আয় করতে পারেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *