হেমাটোলজিস্ট

হেমাটোলজি হল মেডিসিনের একটি শাখা যেখানে ডিসঅর্ডার রক্ত ও বোন মেরোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান করা হয়। এই বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তাকে বলা হয় হেমাটোলজিস্ট। হেমাটোলজিস্ট রক্তের ডিসঅর্ডার জনিত রোগ ম্যালিগন্যান্টে আক্রান্ত বহু লোককে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে হেমাটোলজিস্ট সংখ্যা রোগীর অনুপাতে কম। সেই হিসেবে হেমাটোলজিস্টের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যারিয়ার হিসাবে হেমাটোলজিস্ট কেমন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শামস্ বিশ্বাস।

 

হেমাটোলজিস্ট

 

হেমাটোলজিস্ট কে?

হেমাটোলজি হল চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে রক্ত এবং রক্তে সংক্রামিত কোন অসুখের নিরাময় সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠ দান করা হয়। এবং এর মাধ্যমে ডিসঅর্ডার রক্ত ও বোন মেরোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান করা হয়। হেমাটোলজি বিভাগ রক্তের ডিসঅর্ডার জনিত রোগ ম্যালিগন্যান্টে আক্রান্ত বহু লোককে আধুনিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা প্রদান করে থাকে। এই বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ তাকে বলা হয় হেমাটোলজিস্ট। একজন হেমাটোলজিস্ট থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার সহ রক্ত সংক্রান্ত অনেক প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসা করেন।

 

কাজের সুযোগ

যে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হেমাটোলজি বিভাগ আছে সেখানে হেমাটোলজিস্ট কাজ করেন। ব্লাড ক্যান্সার এবং থ্যলাসেমিয়ার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে হেমাটোলজিস্টের সব চেয়ে বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে হেমাটোলজিস্ট সংখ্যা রোগীর অনুপাতে কম। সেই হিসেবে হেমাটোলজিস্টের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 

দায়িত্ব

একজন হেমাটোলজিস্ট থ্যালাসেমিয়া, অ্যানিমিয়া, ব্লাড ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের সাথে জড়িত থাকেন। রোগীকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডাক্তারদের টিমের সাথে কাজ করে থাকেন। সার্জন, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট এবং অন্যান্য স্পেশালিস্টদের সাথে একত্রে কাজ করে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিচালনা করেন।

হেমাটোলজিস্ট নিম্নে বর্ণিত রক্তে সংক্রামিত রোগসমূহ নির্ণয় ও নিরাময় করে থাকেন।

  • প্রয়োজন অনুসারে রক্ত থেকে কিছু উপাদান বের করে নেওয়া বা যোগ করা।
  • থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন।
  • বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট রক্ত জনিত সমস্যার জন্য বায়োলজিক্যাল থেরাপি।
  • হেমোফিলিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করেন।
  • কেমোথেরাপি।
  • হেমাটলজিক ম্যালিগ্যানসিস, যেমন লুকেমিয়া ও লিমফোমা।
  • হোমোগ্লোবিনোপ্যাথিস নির্ণয় ও নিরাময়।
  • ডিপ-ভেইন ট্রমবসিস।
  • নিউট্রোপেনিয়া।
  • গ্রোথ ফ্যাক্টর ড্রাগস।
  • ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগস।
  • ডিসানের হেমাটোলজি বিভাগ, রেডিয়েশন অঙ্কোলজি, ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ও অনান্য বিশেষ চিকিৎসা বিভাগের সাথে মিলে কাজ করে ।
  • অ্যানিমিয়া
  • রক্তপাত(ব্লিডিং) ও রক্ত জমে যাওয়া (ক্লটিং) সম্পর্কিত যেকোন সমস্যা।
  • এনলার্জড লিম্ফ নোডস বা স্পিলেন।
  • হেমাটোলজিক ম্যালিগন্যান্সিস।
  • হাইপারকোঅ্যাগুএবেল স্টেটস ও প্ল্যাটেলেট ডিসওর্ডার।
  • ইমিউন সাইটোপেনিয়াস।
  • লিউকেমিয়াস।
  • লিম্ফপ্রোলিফেরেটিভ ডিসওর্ডার।
  • মনোক্লোনাল গ্যামোপ্যাথিস।
  • মিলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম।
  • মিলয়েড মেটাপ্লাসিয়া সহ মিলোফাইব্রোসিস।
  • মাল্টিপেল মিলোমা।
  • মিলোপ্রলিফেরাটিভ ডিসওর্ডার।
  • পরফাইরিয়া।
  • প্রাইমারি অ্যামিলয়েডোসিস।
  • থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া।
  • রোগ নির্ণয় ও নিরাময় ছাড়াও একজন হেমাটোলজিস্ট ইমিউনোলজিক, হেমোস্ট্যাটিক এবং ভ্যাস্কুলার সিস্টেম নিয়েও কাজ করে থাকেন।

 

শিক্ষাগত যোগ্যতা

হেমাটোলজিস্ট হতে চাইলে অবশ্যই এমবিবিএস পাশের পর হেমাটোলজিতে   এফসিপিএস/এফআরসিএস/এমএস/এমডি/পিএইচডি ডিগ্রী থাকতে হবে। উচ্চতর ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই একজন হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলবার সুযোগ পায়।

 

দক্ষতা ও জ্ঞান

  • হেমাটোলজিস্ট মূলত থ্যালাসেমিয়া, লিউকোমিয়া, অ্যানিমিয়া, ব্লাড ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। তাই এই রোগ নির্ণয় এবং সুপরিকল্পিত চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।
  • চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান এবং ব্যবহারের দক্ষতা প্রয়োজন।
  • অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং দলগতভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের দক্ষতা।
  • নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা
  • গবেষণায় মনোনিবেশ করা এবং বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করা
  • হেমাটোলজিস্টকে সব সময় আধুনিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া চিকিৎসা বিপ্লব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া সহ অন্যান্য রোগের নিত্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বদা আপডেটেড থাকতে হবে।

 

পড়াশোনা

এমবিবিএসের পর হেমাটোলজিতে এমডি করার সুযোগ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। হেমাটোলজিতে এফসিপিএস করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জনস থেকে। এছাড়াও দেশের বাইরে গবেষণা এবং উচ্চতর ডিগ্রি অনেক সুযোগ রয়েছে।

 

 

আয়রোজগার

সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত একজন হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক হিসেবে গ্রেড-৩, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৪ ও সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড- ৬ এর বেতন পান। সরকারি চাকুরিতে সহকারী অধ্যাপক/জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে গ্রেড-৬ অনুযায়ী বেতন ৩৭-৬৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে দক্ষ হেমাটোলজিস্ট বেতন আরো বেশি হয়, বিশেষ করে যেসব হাসপাতাল থ্যালাসেমিয়ার মত বিশেষ রোগের চিকিৎসা করে থাকে।

এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখে ও চিকিৎসা করে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন সম্ভব।

 

ক্যারিয়ার গ্রাফ

দক্ষ, পরিশ্রমী ও অভিজ্ঞ হলে হেমাটোলজিস্ট হিসেবে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।

একজন হেমাটোলজিস্ট বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সহকারী অধ্যাপক/জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট, সহযোগী অধ্যাপক/সিনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট এবং সর্বশেষে অধ্যাপক হিসেবে উন্নিত হন। মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান হবার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হবারও সুযোগ আছে।

দেশার বাইরে হেমাটোলজিতে প্রচুর গবেষণার সুযোগ রয়েছে। হেমাটোলজি বিষয়টি এখনো অনেকাংশে গবেষণা নির্ভর। তাই গবেষণা নির্ভর ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে ক্যারিয়ার হিসেবে হেমাটোলজি অসাধারন একটি বিষয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *