শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং কে ঘিরে। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টির মতো জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান তো বিদেশেও আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ রফতানি করছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে বাজার বাড়ায় দেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত দক্ষ শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার খুঁজতে হচ্ছে। ফলে জাহাজশিল্পে দিন দিন কাজের সুযোগ বাড়ছে।

জলযান বা জাহাজের স্ট্রাকচার, নতুন ডিজাইন ও ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজগুলোই হচ্ছে শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ। শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশে বেশ পুরনো পেশা। এই পেশার চাহিদা শুরু থেকেই লোভনীয়। এখানে খাটাখাটুনি অন্য আর দশটা পেশার চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের টাকা পকেটে পুরতে পারেন শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা।

 

Shipbuilding Engineering | শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং
Image Source : Wikipedia

শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং কি?

শিপ হচ্ছে একটি গুরুত্ব স্ট্রাকচারস। কারণ এটি হচ্ছে নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং চলমান স্ট্রাকচার। শিপ এবং বোটই হচ্ছে জলপথের একমাত্র বাহন। নিত্য-নতুন ডিজাইন, শিপ আপগ্রেড ও মেরামতের কাজই হচ্ছে একজন শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের কাজ। শিপ-বিল্ডিং কাজকে সাধারণত ৭ ভাগে ভাগ করা যায়। ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন, প্লেনিং, ওয়ার্কপ্রিয়র টু কিল লায়িং, শিপ ইরেকশন, লঞ্চিং, ফাইনাল আউটফিটিং, সি-ট্রায়ার। সব ধাপে জাহাজের ডিজাইন ইভালুয়েশন এবং ক্যালকুলেশন করা, কনভারশন রিবিল্ডিং, মর্ডানাইজেশন এবং জাহাজ রিপেয়ারিং ও শিপ-বিল্ডিংয়ের আওতাভুক্ত।

 

কাজের ধরন

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মালামাল নৌপথে পরিবহন করা হয়। সে অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপানসহ অনেক দেশই জাহাজ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। আমাদের দেশেও এ শিল্পের মাধ্যমে অর্থনীতিকে জোরদার করা সম্ভব। তাই এই জাহাজ বা শিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পৃথিবীব্যাপী প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। পাল্টাচ্ছে এর স্ট্রাকচার। আর এই স্ট্রাকচারই হচ্ছে নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিপ এবং বোটই হচ্ছে জলপথের একমাত্র বাহন। নিত্যনতুন ডিজাইন, শিপ আপগ্রেড ও মেরামতের কাজই হচ্ছে শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাজ। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী একজন নেভাল আর্কিটেক্ট জাহাজের ডিজাইন তৈরি করেন। পুরো জাহাজের ডিজাইনকে আবার কয়েকটি অংশে ভাগ করা হয়। এরপর শিপ-বিল্ডিং প্রকৌশলী ডিজাইন অনুযায়ী জাহাজের ওয়েলডিং, ফিটারিং, প্রিন্টিং ও গুণগত যন্ত্রাংশের ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। পুরো কাজটি করতে হয় নিখুঁত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। কারণ, গ্রাহকেরা আন্তর্জাতিক জাহাজ নির্মাণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গুণগতমান নিশ্চিত করার দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। সে জন্য জাহাজটিতে কী ধরনের মালামাল বহন হবে, কোন নৌপথে চলবে ও কোন মৌসুমে চলবে ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখেই জাহাজ তৈরি করতে হয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি সহকারী প্রকৌশলী, সুপারভাইজার ও মান নিয়ন্ত্রক কর্মকতা হিসেবেও কাজ করার সুযোগ আছে।

Shipbuilding Engineering | শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং
Image Source : Wikipedia

পড়ার সুযোগ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারিভাবে পরিচালিত নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিপ-বিল্ডিং টেকনোলজি ও দুই বছর মেয়াদি শিপ-বিল্ডিং, শিপ ফেব্রিকেশন ও শিপ-বিল্ডিং অ্যান্ড মেকানিক্যাল ড্রাফটসম্যানশিপ কোর্স চালু রয়েছে। ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সে পড়ার সুযোগ রয়েছে কেমব্রিজ মেরিটাইম কলেজে (সিএমসি)ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি, ওয়েস্ট ওয়ে মেরিটাইম একাডেমি, ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমি, শাহ মেরিন বিজনেস ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি-এ। এখানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদেরও ভর্তির সুযোগ আছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতেও (এমসিইটি) ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি বা সমমানের পাস হতে হবে।

 

প্রশিক্ষণের বিষয়

শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ জাহাজ নির্মাণসংক্রান্ত প্রশিক্ষণে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা দুটোতেই জোর দেয়া হয়। এখানে জেনারেল শিপ নলেজ, বেসিক ইলেকট্রিসিটি, শিপ-বিল্ডিং ড্রয়িং, মেকানিক্যাল ড্রয়িং, নেভাল আর্কিটেকচার, বেসিক ওয়েল্ডিং, শিপইয়ার্ড প্র্যাকটিস, বেসিক ওয়ার্কশপ প্র্যাকটিস, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, বেসিক ইলেকট্রনিক, ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স, শিল্প ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি, পরিবেশ বিজ্ঞান, নিরাপত্তা প্রভৃতি সম্পর্কে পড়ানো হয়। ব্যবহারিক জ্ঞানের জন্য বিভিন্ন জাহাজ নির্মাণ কারখানায় কাজ করতে হয়। আমাদের শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়াররা নাম কুড়িয়েছেন পৃথিবীজুড়ে।

Image Source : Wikipedia
Image Source : Wikipedia

আয়রোজগার

শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শেষ করে শিপ কনস্ট্রাকশন ফিল্ডের প্রোডাকশন, প্ল্যানিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের যে কোনো বিভাগেই কাজ শুরু করতে পারেন। শিপ-বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধরনের ওপর বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। সাধারণত ৩০-৪০ হাজার দিয়ে বেতন কাঠামো শুরু হলেও যারা তৈলাক্ত ও ভেজা জায়গায় কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, স্বভাবতই তাদের বেতন কাঠামো অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাদের চাহিদাও বেশি। বেতন থাকে অন্যদের চেয়ে বেশ ওপরে। আর নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা দিয়ে ৬ থেকে এক বছরের মধ্যে বেতন টেনে লাখের ঘরে নিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই। বিদেশেও ভালো বেতনে এ পেশার ব্যাপক চাহিদা ও কাজের সুযোগ আছে। অনেক নামি কোম্পানি তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দক্ষ শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার খোঁজে বাংলাদেশে। তাই এখানে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন অনায়াসে। তবে নিজেকে খুব সহজেই বদলে নিতে পারেন পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে। আর এই পরিশ্রম ও দক্ষতা দেখিয়ে নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান খুলে বসতে পারেন। চাকরি দিতে পারেন অন্যদেরও!


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *