দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য আমরা খুব নিরাপদ ভেবে গ্রহণ করি। সেসব পণ্যের মান সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই বললেই চলে। আমরা শুধুমাত্র পণ্যের ব্র্যান্ড বা লেভেলের উপর বিশ্বাস করেই আমরা তা ব্যবহার করি। আমাদের এই বিশ্বাসটুকু শতভাগে উন্নীত করেন মান নিয়ন্ত্রক বা কোয়ালিটি কন্ট্রোলার। সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে উন্নত মানের পণ্যের প্রতি ভোক্তর আগ্রহ এবং চাহিদা। সেই চাহিদার উপরে ভিত্তি করে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ার প্রচুর সুযোগ।
কোয়ালিটি কি?
কোয়ালিটি হল একটি পণ্যের গ্রহণযোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত মান এবং ত্রুটিমুক্ত অবস্থা যাহা ক্রেতার চাহিদা পূরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম। বায়ার ও ম্যানুফেকচারার উভয়ের জন্যই কোয়ালিটি প্রয়োজন ।
অন্যভাবে বলা যায়-পণ্যের বৈশিষ্ট্য সমূহ ক্রেতার কাঙ্ক্ষিত চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়াকে গুনগত মান বলে ।
কোয়ালিটি কন্ট্রোলের উপাদান:
- কোয়ালিটি অব প্রোডাক্ট।
- কোয়ালিটি অব প্রসেস।
কোয়ালিটি অব প্রোডাক্ট: কোয়ালিটি অব প্রোডাক্ট বলতে বুঝায়- এ্যাপিয়ারেন্স, ফেব্রিক, ডিজাইন, মিজারমেন্ট, স্টিচিং, ক্লিনলিনেস, প্রেজেন্টেশন, সেফটি, প্রাইজ, সহজ প্রাপ্যতা।
কোয়ালিটি অব প্রসেস: কোয়ালিটি অব প্রসেস এর অন্তর্ভুক্ত উপাদান হচ্ছে –
- ম্যান (Man)
- মেশিন (Machine)
- ম্যাটারিয়াল্স (Materials)
- মেথোড (Method)
- মানি (Money)
কোয়ালিটি কন্ট্রোলের প্রয়োজন কেন?
- বায়ার বা কাস্টমারের সন্তুষ্টি অর্জন।
- কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করন।
- ডিফেক্টের হার কমানো ও উৎপাদন বাড়ানো।
- বায়ার এবং কাস্টমারের মধ্যে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা।
- কোম্পানির সুনাম ও সুখ্যাতি অক্ষুণ্ণ রাখা।
- উৎপাদন খরচ কমানো এবং বেশি মুনাফা অর্জন।
- প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে থাকা।
নিম্নমানের কোয়ালিটির ফলে কি সমস্যা হতে পারে?
- নিম্ন মানের প্রোডাক্ট কাস্টমারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়
- নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা যায় না
- ডিফেক্ট বেশি হলে উৎপাদন কমে যায়
- নিম্ন মানের প্রোডাক্টের ত্রুটি সংশোধনের জন্য সময় ও অর্থের অপচয় ঘটে
- উৎপাদন কম হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে শিপমেন্ট করা সম্ভব হয় না
- ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমান সম্পন্ন প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের কারণে বায়ার জরিমানা ধার্য করে থাকে
- নিম্নমানের প্রোডাক্ট সরবরাহ করার ফলে কোম্পানির উপর কাষ্টমারের আস্থা থাকেনা ।
কোয়ালিটি কন্ট্রোলার কে?
যে পদ্ধতিতে মান নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ, যাচাই, বাছাই করা হয় তাকে কোয়ালিটি কন্ট্রোল বলা হয়। কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের কাজ হল উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারণত কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে যে সব পজিশন থাকে সেগুলো হল – কোয়ালিটি এসোরেন্স অর্থ মান নির্ণয়কারী, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্থ নিয়ন্ত্রণকারী, কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর, কোয়ালিটি সুপারভাইজার এবং কোয়ালিটি ইনচার্জ।
কোয়ালিটি কন্ট্রোলার-এর দায়িত্ব
ইন্ডাস্ট্রিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে পণ্যের নির্দিষ্ট মানগুলো সঠিকভাবে বুঝে নেয়। উক্ত অর্ডারের নির্দিষ্ট মানদণ্ড (যেমন-পণ্যের ডিজাইন, আকার, কোয়ালিটি ও আনুষঙ্গিক জিনিস) মেটানোর জন্য তারা শ্রমিকের কাজ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারাই মূলত: পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ফ্যাক্টরি শ্রমিক দ্বারা পণ্য তৈরির কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।
আরো বিস্তারিত ভাবে বললে বলা যায় যে, উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় একজন কোয়ালিটি কন্ট্রোলারকে। প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্য থেকে শুরু করে ফিনিশিং পর্যন্ত যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা হল:
প্রডাক্টের স্টার্ট থেকে ফিনিশিং পর্যন্ত সঠিক উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার প্রয়োগ। নমুনা অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। প্রডাক্টের কোনো ভুল ত্রুটি থেকে গেল কিনা তা বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। যদি কোনো ত্রুটি থাকে তা পুনরায় দ্রুত ত্রুটিমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও তার বাস্তবায়ন করা। পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সঠিক ও নির্ভুল কোয়ালিটি ইন্সপেকশন রিপোর্ট তৈরি করে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট পেশ করা। কোয়ালিটি কন্ট্রোল সম্পর্কে বলা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড ভ্যালু নির্ভর করে একজন দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন কোয়ালিটি কন্ট্রোলারের কাজের উপর।
কোয়ালিটি সুপারভাইজার এবং কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর কাজ হল যে সেকশন ইন্সপেক্টর হয় কাজ করতে চায় সেই সেকশনের ডিফেক্ট ক্যালসিফিকেশন জোগাড় করে বুঝে বুঝে মিলিয়ে তা মুখস্থ রাখতে হবে। রিপোটিং বসকে প্রতিদিন রিপোর্ট করতে হবে।
কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইনচার্জ কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সার্বিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে একজন ব্যক্তি কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান উক্ত পদের জন্যে কিছু বিশেষ বিষয়ে ডিগ্রীধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যেমন-রসায়ন-এ স্নাতক, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ইত্যাদি। প্রাথমিক অবস্থায় একজন সদ্য স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ইন্টার্ন, ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অথবা জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট অফ কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ক্যারিয়ার সূচনা করে থাকে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার এবং কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হতে হলে কমপক্ষে এসএসসি পাশ হতে হবে।
আয়-রোজগার
ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অথবা জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট অফ কোয়ালিটি কন্ট্রোলারদের বেতন কাঠামো ১২-১৫ হাজার হয়ে থাকে। এবং ৬-৭ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে প্রায় ৯০,০০০-১,২০,০০০ টাকা আয় করতে পারে। এ পেশায় কাজ করতে হলে একজন কর্মীকে দৃঢ় ও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
Leave a Reply