Insurance Agent, বীমা প্রতিনিধি

চ্যালেঞ্জিং পেশা বীমা প্রতিনিধি

বীমা হল এমন একটি চুক্তি যেখানে বীমা কোম্পানি নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বীমার গ্রহীতার ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঝুঁকি। সেই সঙ্গে বাড়ছে বীমা কোম্পানির পরিধি। বাংলাদেশে ইনস্যুরেন্স শিল্প অতি বর্ধনশীল শিল্প হিসেবে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে তৈরি হচ্ছে বীমা প্রতিনিধি হিসাবে কাজের সুযোগ।

 

কাজের সুযোগ
বীমা শিল্প বীমা ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো হলেও বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও বীমা শিল্প শুধুই প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ভাবে বহুল পরিচিত ছিল। বর্তমানে দেশে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে বীমা শিল্পে কাজের আওতা ব্যাপক বেড়েছে। বীমা গ্রাহক বাড়ার সাথে সাথে বীমা কোম্পানিও বাড়ছে। বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬১টি বীমা কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে সরকারের জীবন বীমা কর্পোরেশনসহ ১৯টি জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ ৪২টি সাধারণ বীমা সেবা দেয়। কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে বীমা শিল্পকে কেন্দ্র করে। এসব কোম্পানিতে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী নিয়োজিত। এ সব বীমা কোম্পানিগুলোর অন্যতম কাজ হচ্ছে পলিসি গ্রাহক সৃষ্টি করা। আর এ কাজ করে থাকে বীমা প্রতিনিধিরা। পরিশ্রম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তিই তার কর্মজীবন বীমা প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করতে পারে। বীমা প্রতিনিধি হিসেবে একজন ব্যক্তির জন্য তাই অপেক্ষায় রয়েছে সাফল্যের অবারিত দুয়ার।

 

যোগ্যতা
বীমা প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে অবশ্যই যে কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। কেননা, পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ ঘটাতে পারলেই বীমা শিল্পে সহজে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। ধৈর্যশক্তি ও কাজের প্রতি কমিটমেন্ট এ পেশায় একজন ব্যক্তির মূল পাথেয় হিসেবে বিবেচিত হয়!

 

প্রশিক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় বীমা কোম্পানিগুলো থেকে বীমা প্রতিনিধিদের ৩- ৭ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ব্যক্তিগত গুণাবলি এবং কোম্পানির বিভিন্ন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত এই ট্রেনিংয়ে শেখানো হয়।

 

দায়িত্ব
বীমা কোম্পানিগুলো জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা-এ দুই ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। সাধারণ বীমা মূলত গ্রহণ করে থাকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে লাইফ ইনস্যুরেন্স ব্যক্তির জন্য হয়ে থাকে। বীমা গ্রহীতাদের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন স্কিম থাকে। বীমা প্রতিনিধি তার গ্রাহদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তাদের কোম্পানি প্রদত্ত বিভিন্ন পলিসি উপস্থাপন করেন। পলিসি গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম প্রদান পর্যন্ত সব কাজই একজন বীমা প্রতিনিধিকে করতে হয়। বীমার পলিসি গ্রহণ করানোর সঙ্গে সঙ্গে একজন বীমা প্রতিনিধির টার্গেটের হিসাব শুরু হয়। ফলে একজন বীমা প্রতিনিধি সারা মাসে নিশ্চিতভাবেই তার টার্গেট পূরণ করতে পারেন। এখানে কাজের সময় সাধারণত সরকারি নিয়মানুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে সত্যিকার অর্থে এই সেক্টরে কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। বীমা প্রতিনিধি হিসেবে কাজের পদ্ধতি অনেকটা স্বাধীন ব্যবসার মতো।

 

আয়–রোজগার
বীমা প্রতিনিধিদের কাজ মূলত টার্গেট ওরিয়েন্টেড জব। এখানে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। চাকরিতে প্রবেশের পর যোগ্যতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে কোম্পানি কর্তৃক মাসে সুনির্দিষ্ট ইনস্যুরেন্স পলিসি করানোর টার্গেট দেওয়া হয়। ফলে সাধারণত, যে কেউ মাস শেষে তার কাঙ্ক্ষিত টার্গেট পূরণ করতে সক্ষম হন। এ পেশায় প্রথমে তিনটি পলিসি গ্রাহক জোগাড় করে একটি এজেন্সি কোড নিয়ে মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে কোম্পানিগুলো কমিশনের পাশাপাশি বেতন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বেতন পাওয়ার জন্য বীমা প্রতিনিধি সহকারী কন্ট্রোলার হিসেবে পদোন্নতি নিতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে পদবী নির্ধারণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে বীমা প্রতিনিধি থেকে তিন ধাপ অতিক্রম করার পর বেতনভুক্ত হয়। সাধারণত, কোম্পানি ভেদে ২০-২৫ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে এ পেশায়। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় এ আয় হতে পারে ৩৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া জীবন বীমা কর্পোরেশনের এজেন্ট থেকে ডেভেলপমেন্ট অফিসার হলে সরকারি বেতন স্কেলে মাসিক বেতন পাওয়া যায়, সেই সঙ্গে কমিশনও।

 

সাফল্যের সিঁড়ি
বীমা প্রতিনিধিরা প্রথমে এজেন্ট পরবর্তীতে প্রথমত এমও ম্যানেজার, সহকারী কন্ট্রোলার, ডেপুটি কন্ট্রোলার, জেএভিপি, এভিপি, ভিপি ইভিপি এবং সর্বশেষ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার যোগ্যতাও রাখে। বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্নভাবে পদবী ব্যবহার করে থাকে। এ পেশায় সম্মান থাকার পাশাপাশি রয়েছে অধিক পরিমাণে কমিশন। বীমা প্রতিনিধিদের কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতি মাসে পলিসি গ্রাহক সৃষ্টির জন্য প্রতিনিধিদের নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে থাকে। কাজের সুবিধার্থে মোটরসাইকেল প্রাইভেটকারও দিয়ে থাকে।

 

তথ্যসূত্র

  • বীমা ?
  • বীমা ?
  • List of Insurance Companies in Bangladesh ?
  • Insurance Development and Regulatory Authority (IDRA) ?
  • Bangladesh Insurance Academy ?
  • চ্যালেঞ্জিং পেশা ইন্স্যুরেন্স প্রতিনিধি ?
  • ইন্স্যুরেন্স শিল্পে স্বাগতম ! ?
  • আকর্ষণীয় পেশা বীমা প্রতিনিধি ?

 

Comments

One response to “চ্যালেঞ্জিং পেশা বীমা প্রতিনিধি”

  1. […] যে কোনো ব্যক্তিই তার কর্মজীবন বীমা প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করতে পারেন। বীমা […]

Leave a Reply to চ্যালেঞ্জিং পেশা ইন্স্যুরেন্স প্রতিনিধি । পেশা পরামর্শ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *