জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি হতে পারে ভবিষ্যৎ পেশা

বায়োলজিক্যাল টেকনোলজির সংক্ষিপ্ত রূপ বায়োটেকনোলজি। বায়োলজিক্যাল টেকনোলজির আভিধানিক অর্থ জৈবপ্রযুক্তি। বায়োটেকনোলজি যার কাজ জেনেটিক্স, প্রাণরসায়ন, টিস্যু কালচার, মাইক্রোবায়োলজি ইত্যাদির সমন্বিত প্রক্রিয়া। ‘জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বাংলায় জিনতত্ত্ব প্রকৌশল। বর্তমানে চিকিৎসাক্ষেত্রে ও কৃষিতে সমানভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহৃত হচ্ছে। যে বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ব্যবহার করে জীবের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা হয় তাকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জেনেটিক মডিফিকেশন বলে। ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’র বাংলাদেশে বিস্তার ঘটছে ভালোভাবেই। আর বিশ্বজুড়ে চাহিদা ব্যাপক।

ইতিহাস

১৯৫১ সালে সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ‘ড্রাগন’স আইল্যান্ড’-এ ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন জ্যাক উইলিয়ামসন। তার এক বছর আগে ডিএনএ যে বংশগতির বাহক তা নিশ্চিত করেন আলফ্রেড হের্শেয় ও মার্থা চেজ। রবার্ট বুইয়ার ও রবার্ট সয়ানসন ১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ‘জেনেটেক’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক বছর পর জেনেটিক ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া থেকে মানব প্রোটিন সোমাটোস্ট্যাটিন উৎপাদন করে, যা হিউম্যান ইনসুলিন হিসেবে সুপরিচিত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে চীন ভাইরাস প্রতিরোধকারী তামাকগাছের প্রবর্তনের মাধ্যমে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক রূপ দান করে। বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে ধরা হয় পাট এবং এর পরজীবী ছত্রাকের জিন নকশা আবিষ্কার।

কেন পড়বেন

বর্তমান বিশ্বে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন, মানুষের মৃত্যুকে জয় করার ইচ্ছা, শিল্প উৎপাদন, পরিবেশ রাসহ মানবজীবনের নানা চাহিদা মেটাতে কাজ করছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি। মেডিক্যাল সায়েন্স এবং ফার্মাসিউটিক্যালস ও কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রির জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন, অ্যানজাইম ও হরমোন উৎপাদনে এ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এ বিষয়ে দ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আণুবীণিক জীব যেমন – ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট অথবা ইনসেক্টম্যামালিয়ান সেল ইত্যাদি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। জিন প্রযুক্তি দ্বারা উন্নীত ফসল (জিএমসি) ও জিনগত পরিবর্তন সংবলিত জীব (জিএমও) হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি বিতর্কের বিষয়। তবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত কৃষিকে ঘিরেই বেশি পরিচালিত হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে কৃষিতে জিন প্রযুক্তি দ্বারা উন্নীত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য হচ্ছে- পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে শস্যকে রা করা, শস্য থেকে সম্পন্ন নতুন উপাদান উৎপাদন করা, শস্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা, শস্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি ।

কী পড়ানো হয়

অ্যাপ্লায়েড বায়োলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয়ে পাঠদান করা হয়। বিশেষ কিছু বিষয় হিসেবে পড়ানো হয় প্লান্ট বায়োটেকনোলজি, অ্যানিমেল বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোবায়াল বায়োটেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি, ফুড বায়োটেকনোলজি, এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োটেকনোলজি, মেডিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস বায়োটেকনোলজি, প্লান্ট টিস্যু কালচার, অ্যানিমেল সেল টেকনোলজি, বায়োপ্রসেস টেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। সহায়তা বিষয় হিসেবে পড়ানো হয় অ্যানিমেল সায়েন্স, এগ্রিকালচারাল বোটানি, মাইক্রোবায়োলজি, কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োস্ট্যাটিসটিকস, মলিকুলার বায়োলজি ও জেনেটিকস।

ভর্তির যোগ্যতা

এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থাকতে হবে। সাবজেক্টের তালিকায় অবশ্যই বায়োলজি থাকতে হবে। দেশের একাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’তে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ উল্লেখযোগ্য।

ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে অনেক প্রসারিত। সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা কর্মরত। বাংলাদেশের কিছু ওষুধ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বায়োটেক ড্রাগ উৎপাদন শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও পেশা গড়ার সুযোগ রয়েছে এ বিষয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের। উন্নত বিশ্বেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা ও কাজের সুযোগ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *