
সবাই জানেন, মূলত তিন ধাপে এই পরীক্ষা হয়ে থাকে? প্রাথমিকভাবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, তারপর লিখিত এবং সব শেষে হয় মৌখিক পরীক্ষা। নতুন নিয়মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের। সময় দুই ঘণ্টা। হিসাব করে দেখলে বোঝা যায় প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য গড়ে ৩৬ সেকেন্ড করে সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি খেয়াল রাখা দরকার, ভুল উত্তরের জন্য প্রতি প্রশ্নে আধা নম্বর করে কাটা যাবে। সেই কারণেই একেবারে নিশ্চিত না হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াই ভালো। এবার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নতুন যুক্ত করা হয়েছে ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন। এছাড়া পরিবর্তন এসেছে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রেও। তাই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি। হিসাব করে প্রস্তুতি নিলে সহজেই সেরাদের সেরা হওয়া যায়।
বিসিএস প্রস্তুতি : যা মাথায় রাখতে হবে
সাধারণ মানের ছাত্রদের কম করে ৩ বছর নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। কেননা সঠিক পরিমাণে পড়াশোনা না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। কোনো একটি বিশেষ বিষয়কে গুরুত্ব না দিলেই ভালো। কেননা এই পরীক্ষার জন্য সব বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। না হলে কোনো একটি অংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। কেবল একবার পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হলে দমে যাওয়া উচিত নয়। এই পরীক্ষার জন্য অনেকদিন সময় পাওয়া যায়। তাই একবার পরীক্ষা দিয়ে থেমে না গিয়ে, বারকয়েক পরীক্ষা দেওয়াই যেতে পারে। পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রবল মনোযোগ দরকার। বিসিএস পরীক্ষার পূর্ববর্তী সময়ে পড়াশোনা কেবল এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই হওয়া উচিত। অন্য কোনো পরীক্ষায় এই সময় মনোযোগ না দেওয়াই ভালো। পরীক্ষার সিলেবাসটি পুরোটা পড়া উচিত। সাজেশনভিত্তিক পড়া নয়। আগে গোটা সিলেবাসটি ভালো করে জেনে নিতে হবে। তারপর মূল অংশগুলো ভালো করে পড়তে হবে। প্রথমেই বাদ দিয়ে পড়ার অভ্যাস একেবারেই কাজের কথা নয়। আলাদা করে কোচিং খুবই প্রয়োজনীয়। ব্যক্তিগত স্তরে হোক বা প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে, আলাদা করে পড়াশোনা করলে উপকার হতেই পারে। কেননা নির্দিষ্ট পথে পড়াশোনা না করলে, এত বড় সিলেবাস সব সময় সামলানো যায় না। প্রথমত বিসিএস-এর ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক পড়াশোনা বিপুল মাত্রায় প্রয়োজন। কেননা বিপুল সিলেবাসে নিয়মমাফিক পড়াশোনা না করলে অল্প সময়ে একে সামলানো মুশকিল। পরীক্ষা সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত দরকারি। ঠিক কত বয়স থেকে কত বয়স পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়া যায়, তাও মাথায় রাখা দরকার। অনেক সময়েই দেখা যায়, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে উঠতে পারেন না, ফলে ব্যর্থতায় হতাশা বাড়ে। নিয়মমাফিক পড়ুন, হিসাব করে পড়ুন।
কেমন করে সাফল্য আসতে পারে
বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করা মূলত নির্ভর করে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলা – এ চারটি বিষয়ের ওপর। যে প্রশ্নগুলো কঠিন মনে হবে, সেগুলো একাধিকবার পড়ুন। যদিও নতুন নিয়ম, তবু পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিগত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলুন। চার-পাঁচ মাস পড়েই পরীক্ষায় বাজিমাত করে দেবেন ভাবলে ভুল ভাবছেন? গোটা সিলেবাসটা পুরোপুরি গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে ন্যূনতম ১৫ মাস। তাই অপেক্ষা করুন, ধৈর্য হারাবেন না। এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নজর দিতে হবে। বাংলা সাহিত্যের প্রধান লেখকদের সব বইয়ের নাম ও বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। রোজকার খবর রাখুন। সংবাদপত্র ভীষণ মন দিয়ে পড়ুন। গাণিতিক যুক্তির জন্য অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির গণিত বইগুলো চর্চা করা দরকার। নিয়মিত গণিত চর্চার বিকল্প নেই। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, নতুন সংযোজিত বিষয়, যেমন – ভূগোল, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, মানসিক দক্ষতা সম্পর্কে কিন্তু আগেও প্রশ্ন আসত। বর্তমানে শুধু বিষয়বস্তুগুলো আলাদা করে নম্বর বণ্টন করা হয়েছে। অতএব প্রস্তুতি একইভাবে নিলেই চলবে।
এই লেখাটি “প্রস্তুতির সময় এখনই :: সামনে বিসিএস” এই শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময়ের ক্যারিয়ার সময় পাতায় ২৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।