শুধু ডিগ্রির জোরে চাকরি ইন্টারভিউ তে উতরানো সম্ভব?

শুধু ডিগ্রির জোরে চাকরি ইন্টারভিউ তে উতরানো সম্ভব?

সার্টিফিকেট কি চাকরির ইন্টারভিউ তে সাফল্য নির্ধারণ করে? মার্কসিটে ভালো ভালো নম্বরই কি ভালো চাকরির নিশ্চয়তা?

বর্তমানের চাকরির বাজার কিন্তু এমন বলে না। বহু ক্ষেত্রেই চাকরিপ্রার্থীদের অভিজ্ঞতা উলটো। বাঁধাধরা স্ট্র্যাটেজি বা ফরমুলায় বাজিমাত আজকাল মুশকিল। কিন্তু, কেন?

নিয়েগদাতারা এখন আর সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ খুব একটা আগ্রহী নয়! কোন স্কুলে গিয়েছিলেন? বা কোন ইউনিভার্সিটির এলুমনি ওগুলো জেনে নিয়েগদাতার লাভ নেই কোনো! আপনি তার প্রোডাক্ট/সার্ভিস বেচতে পারলেই তার লাভ! তাদের দরকার কাজের মানুষ। দেশের নামী স্কুল-কলেজ থেকে পাশ করা পড়ুয়ার থেকে সাধারণ স্কুল থেকে পাশ করা বেশি অভিজ্ঞতার প্রার্থীর কদর অনেক বেশি ইন্টারভিউ টেবিলে।

প্রায় দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের মধ্যে একটা বড় অংশের পড়াশোনা অন্য বিষয়ে। আজকের যুগে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির দু’টি কারণে প্রয়োজন। এক. সরকারি চাকরি বা শিক্ষাকতার মতো কোনো ক্ষেত্রের জন্য যোগ্যতা নির্ণায়ক হিসেবে। দুই. পরিকল্পনামাফিক কোনো বিশেষ ফিল্ডে কাজ করার জন্য।

মার্কশিটে কটা ‘এ প্লাস’ আছে, তার থেকে বেশি প্রয়োজন কোম্পানির জন্য আপনি কী করতে পারছেন। প্রফিটেবিলিটি কত বাড়াতে পারবেন। মানুষ হিসেবে আপনার দক্ষতাই আপনার যোগ্যতা। আপনাকে দিয়ে প্রতিষ্ঠান কি পাবে এটা গুরুত্বপূর্ণ। কাগজের নম্বরের গুরুত্ব সেখানে খুব একটা নেই। তাই নম্বর বা ডিগ্রির তুলনায় না গিয়ে দক্ষতা অর্জন করুন।

আবেদনকারীদের ভিড়ে নিজেকে আলাদা করে দেখাতে পেশাদারি হওয়া বেশি প্রয়োজন। কারণ, আপনার যে নম্বর। তার থেকে বেশি নম্বর বা সমান ডিগ্রি অন্য কারোরও থাকতে পারে। ফুলটাইম চাকরির আগেও অভিজ্ঞতা বাড়াতে কলেজ জীবনে পার্টটাইম জব শুরু করুন। চেইনশপে কাজ করতে পারেন। অর্জন করতে পারেন সেল্সম্যান কিংবা কোনো রিটেল সংস্থায় মার্কেটিং-এর অভিজ্ঞতা। চাকরির টেবিলে এই সব ছোট ছোট অভিজ্ঞতার দাম অনেক বেশি।

কোনো বিশেষ বিষয়ে ডিগ্রির গুরুত্ব আছে। ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তাও আছে। কিন্তু যখন সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাকে কাজ করতে হবে। যেখানে সেখানে ডিগ্রি দেখিয়ে খুব একটা লাভ নেই। ধরুন আপনি মার্কেটিংয়ে এমবিএ। সিজিপিএ প্রায় চার ছুঁই ছুঁই। কিন্তু আপনি কাস্টমারের সঙ্গে কম্যুনিকেশন করতে পরছেন না। বছর শেষে আপনার এচিভমেন্ট নেই। আপনার সেলস টার্গেট ফুল হচ্ছে না। তখন কিন্তু ডিগ্রি এবং সিজিপিএর গুরুত্ব হারিয়ে যায়। নিজেকে দক্ষ করাতে না পারলে মার্কসিটের নম্বর আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।

আপনি কতটা দক্ষ- সেটা আপনার বোঝা খুব প্রয়োজন। আপনি মাল্টিটাস্কিং কিনা। কারণ সহ প্লাস পয়েন্ট-মাইনাস পয়েন্ট। ইন্টারভিউ-এর ধরনও সম্পূর্ণ পেশাদারি। তাই উত্তরও সেরকমই আশা করা হয়।

ডিগ্রি মানেই কিন্তু চাকরি নয়। সেই সুসময় আজ নেই! রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। শুধু রাশভারী ডিগ্রিধারী হয়ে লাভ নেই। তার থেকে বেশি প্রয়োজন আরও বেশি পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা। তবে এর মানে এই নয়, যে কলেজ ইউনিভার্সিটির প্রয়োজনীয়তা নেই। স্কুল-কলেজ জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যা মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার আবশ্যিক বিষয়। নিজেকে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী না হয়ে পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা অর্জনের প্রতিও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *