পেট্রল বোমা

পেট্রল বোমা
বর্তমানে এক বিভীষিকার নাম ‘পেট্রল বোমা’। যার সাহায্যে আঘাতে মুহূর্তের মধ্যেই ঝলসে দেয়া হচ্ছে  মানুষকে। পেট্রল বোমার বিভীষিকায় প্রায় প্রতিদিন হারাচ্ছে মানব সন্তানের জীবন, ঘটছে অঙ্গহানি, আহাজারি বাড়ছে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে, চোখের সামনে পুড়ে যাচ্ছে জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন, নিমিষে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এই বোমা আতঙ্কে স্থবির হয়ে আছে সাধারণ মানুষের জীবন। স্বাধীনতার ৪৪ বছরের এসে স্বাধীন দেশের নাগরিকদের নেই স্বাধীন ভাবে চলা ফেরার নিরাপত্তা। পেট্রোল বোমার ধ্বংস লীলায় ধুকছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু কি এই পেট্রল বোমা? কিভাবে এলো এটা?

মলটভ ককটেইল
পেট্রল মূল উপাদান বলে আমাদের দেশে এই ভয়ঙ্কর অস্ত্রের নাম ‘পেট্রল বোমা’ হলেও বিশ্ব এটি মলটভ ককটেইল (ইংরেজি: Molotov cocktail), আগ্নেয় বোমা, গরীবের গ্রেনেড বা শুধু মলটভ নামেও পরিচিত। এ জাতীয় বোমা বিভিন্ন ধরণের কাঁচের বোতল ও তরল দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। সহজ প্রস্তুত প্রণালী ও তাৎক্ষনিক ভাবে তৈরি করা যায় বিধায় বিক্ষোভকারী এবং অপেশাদার গেরিলা যোদ্ধাদের মাঝে এই জাতীয় বোমার ব্যাবহার বেশি দেখা যায়। মূলত লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করে ফেলার চাইতে দ্রুত তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার উদ্যেশ্যেই মলটভ ককটেইল বা পেট্রল বোমা ব্যাবহার করা হয়।

ফিরে দেখা
পেট্রল বোমার সর্ব প্রথম ব্যবহার শুরু হয় স্পেনের গৃহযুদ্ধে (জুলাই ১৯৩৬ থেকে এপ্রিল ১০৩৯ পর্যন্ত)। সে সময় এই বোমা ‘মলটভ ককটেইল’নামে খ্যাত হয়নি। গৃহযুদ্ধের শুরুতে বেকায়দায় পড়লে স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয়তাবাদী বাহিনী স্প্যানিশ রিপাবলিকান বাহিনীর সোভিয়েত টি-২৬ ট্রাঙ্কের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে দুই পক্ষই এই অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে।
ইতিহাসের পাতায় এ জাতীয় বোমার দ্বিতীয় ব্যবহারটি দেখা যায় মঙ্গোলিয়ার খালখা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে খালিখন গোল যুদ্ধে ( ১১ মে – ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯)। মঙ্গোলিয়া এবং মাঞ্চুরিয়াদের মধ্য এই যুদ্ধ হলেও, মূল যুদ্ধ ছিল রাশিয়ার সাথে জাপানের। এই যুদ্ধে ছোট ট্রাঙ্কবিধ্বংসি অন্ত্র হিসাবে জাপানি পদাতিক বাহিনী পেট্রল-ভরা বোতল ব্যবহার করে। জাপানি বাহিনীর দাবি ছিল এই সাধারণ অস্ত্র দিয়ে তারা শতাধিক সোভিয়েত ট্রাংক ধ্বংস করে দেয়। তবে, সোভিয়েত বাহিনী জাপানিদের এই দাবি খারিজ করে দেয়।
‘মলটভ ককটেইল’ নামটির প্রচলন ঘটে ফিন্সদের দ্বারা সংগঠিত শীতকালীন যুদ্ধের সময়। সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভিয়াচেস্লাভ মলটভ (ইংরেজি: Vyacheslav Molotov) কে ব্যাঙ্গ করে এই বোমার নামকরণ করা হয়। ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে, মলটভ ফিনল্যান্ডকে তৎকালীন নাৎসি জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মলটভ-রিবেনট্রপ চুক্তির মাধ্যমে ভাগ করে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চুক্তিতে ১৯৩৯ সালের নভেম্বরে মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে বাল্টিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত রাষ্ট্র ফিনল্যান্ড আক্রমণ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়। 30 ৩০ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিবেশি ফ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করে। পরের বছর ১২ মার্চ মস্কো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হলে; ১৩ মার্চ এই যুদ্ধ শেষ হয়। ১০৫ দিন ধরে চলে এই যুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় শীতকালীন যুদ্ধ (রুশো ফিনিশ যুদ্ধ) নামে পরিচিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে তারা ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে বিশাল বিশাল ক্লাস্টার বোমা দিয়ে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মলটভ (দায়িত্ব কাল: ৩ মে ১৯৩৯ – ৪ মে ১৯৪৯) রেডিওতে ব্যাপারটা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘শত্রুরা যেটা বোমা বলে প্রচার চালাচ্ছে তা আসলে বোমা না, তার সরকার আকাশপথে ক্ষুধার্ত ফিনল্যান্ডবাসীদের জন্য খাবারের ঝুড়ি ফেলছে যা অনেকটা বোমার মতোই দেখতে।’ পরবর্তীতে এই ক্লাস্টার বোমাগুলো মলটভ ব্রেড বাস্কেট নামে পরিচিতি পায়। পাল্টা জবাবে ফিনিশরা ঠিক করলো তারাও সোভিয়েতদের এমন কিছু উপহার দিবে যা হবে ব্রেড বাস্কেটস বা রুটির ঝুড়িগুলোর মতোই অপরিহার্য এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ। ককটেলের ইংলিশ মানে হলো এলকোহল জাতীয় দুই বা ততোধিক দ্রবণ মিশিয়ে নতুন কিছু একটা আকর্ষণীয় পানীয় তৈরি করা। সেজন্যই ফিনিশরা তখন সোভিয়েত ট্যাঙ্কগুলোর উপর মলটভ ককটেল ছোড়া শুরু করলো। এই মলটভ ককটেলই হলো আজকের যুগের ‘পেট্রল বোমা’। ১৯৪০ সালে ব্রিটেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটিশ বিরোধী আক্রমণ প্রস্তুতি হিসাবেও পেট্রোল ব্যবহার শুরু হয়। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধ (২১ জানুয়ারি ১৯১৯-১১ জুলাই ১৯২১) আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) ব্রিটিশ সেনা ব্যারাকে গেরিলা আক্রমণের জন্য ঘাসের চাপড়া আর প্যারাফিন তেল দিয়ে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করতো। তারা এই বোম ছুড়ে মারা জন্য হ্যান্ডেল ব্যবহার শুরু করে।
পোলিশ হোম আর্মি ১৯৪২-১৯৪৫ পর্যন্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পস দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় এই বোমায় বেশ কয়েকটি উন্নত সংস্করণ নিয়ে আসে। পেট্রোল বোমার আধুনিক ব্যবহার দেখা যায়, ইরাকে দ্বিতীয় ফাল্লুজাহ যুদ্ধের (৭ নভেম্বর – ২৩ ডিসেম্বর ২০০৪) সময়। মার্কিন সেনারা ইরাকী বিদ্রোহী এবং ইরাকী আল-কায়েদা (একিউআই) দমনের জন্য ‘এক অংশ তরল লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, দুটি অংশ গ্যাস’ দিয়ে তৈরি মলটভ ককটেইল ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক উত্তর আয়ারল্যান্ডের দাঙ্গায় সময়, ২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণজাগরণে বিশেষ করে মিশরে, বাহরাইনের বিদ্রোহে (২০১১ – বর্তমান) এবং 2014 ২০১৪ ইউক্রেরিয়ান বিপ্লবে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মলটভ ককটেইলের ব্যবহার দেখা যায়। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান ও লেবাননসহ অধিক সহিংসতাপূর্ণ অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গি সংগঠনগুলো পেট্রল বোমা ব্যবহার করছে। গত বছর খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্গুসন শহরের দুই দাঙ্গায় পুলিশের ধোঁয়া বোমা এবং টিয়ার গ্যাসের বিরুদ্ধ বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীরা মলটভ ককটেইলের ব্যবহার করে।

যেভাবে তৈরি হয় পেট্রল বোমা
জীবনঘাতী ভয়াবহ মলটভ ককটেইল বা পেট্রল বোমা তৈরিতে ভঙ্গুর কাঁচের বোতল ব্যাবহার করা হয়। বোতল পূর্ণ করা হয় গ্যাসোলিন, পেট্রোল কিংবা নাপামের মত তরল জ্বালানীর সাথে খানিকটা মোটর তেলের মিশ্রন ঘটিয়ে প্রস্তুতকৃত একধরণের ত্বরিত দাহ্য তরল পদার্থ দিয়ে। বোতলের ছিপির স্থানে একটি অগ্নিদাহ্য পলিতা ব্যাবহার করা হয়। ব্যাবহারের পূর্বে পলিতাটিকে এলকোহল অথবা প্যারাফিন জাতীয় তরল দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া হয়। ব্যাবহারের সময় পলিতায় অগ্নি সংযোগ করে বোতলটিকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে নিক্ষেপ করা হয়। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে বোতলটি ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে বোতলে থাকা দাহ্য তরলের ছিটকে পড়া ফোঁটায় ও উৎক্ষিপ্ত বাষ্পে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয় ও স্ফুলিঙ্গ থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া অবশিষ্ট তরল জ্বালানীতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে পেট্রোল বোমা
পেট্রোল বোমার ইতিহাস ঘাটলে যতুটু জানা যায় তা, এই বোমা গত ৭৬ বছর ধরে ব্যবহার হয়েছে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারী সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে, দাঙ্গায় বর্ণবাদি পুলিশের স্মোক বোমা-টিয়ার গ্যাসের বিপক্ষে, গৃহযুদ্ধে, জঙ্গি কিংবা বিদ্রোহী দমনে। শুধু মাত্র বাংলাদেশেই দেখা যাচ্ছে পেট্রোল বোমার লক্ষ্যবস্তু সাধারণ জনগণ এবং গণপরিবহন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া পেট্রল বোমার নাশকতা বছরের শেষ দিকে এসে ভয়াবহতায় রূপ নেয়। আতঙ্কিত করে তোলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে। নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরুনো মানুষকে তাড়া করেছে এই প্রাণঘাতী পেট্রল বোমা। মানুষসহ পেট্রল বোমার আগুনে পুড়েছে গাড়ি-বাড়ি, অফিস, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সে বছর হরতাল-অবরোধে পেট্রল আর পেট্রল বোমার আগুনে দগ্ধ ১৪৯ জন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০ জন। আহতরা এখনও বিভিষিকাময় জীবন যাপন করছে। ২০১৪ সালে পেট্রোল বোমাতঙ্ক কিছুটা কমে আসলেও ২০১৫ সালের শুরুতে তা ভয়াবহতায় রূপ নেয়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে এখন পর্যন্ত (৭ মার্চ) বোমায় দগ্ধ  হয়ে নিহত হয়েছে ৬৬ জন। পুড়েছে ৮৩৭টি যানবহান।

কেন  পেট্রল বোমা 
পেট্রল বোমার ভয়াবহতা খুব সহজেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। তাছাড়া ককটেল বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দ হলে জনতা কিংবা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু পেট্রল বোমার ক্ষেত্রে সে আশঙ্কা কম। কারণ বোতল ভাঙার শব্দ ছাড়া এতে তেমন কোনো শব্দই হয় না। ফলে নির্দিষ্ট স্থানে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা খুব সহজেই সটকে পড়তে পারছে। তাই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় জেনেও এগুলো ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা। এদিকে একটি ককটেল তৈরি করতে যা খরচ হয় তার চেয়ে একটি পেট্রলবোমা বানাতে খরচ কম হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ককটেলসহ অন্যান্য বোমার চেয়ে পেট্রল বোমা তৈরি, বহন ও ব্যবহার সহজ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু ককটেলের মতো পেট্রল বোমা বানিয়ে সরবরাহ দিতে হয় না, সেক্ষেত্রে যে এলাকার চাহিদা সেখানেই কারিগর চলে যাচ্ছেন এবং চাহিদা অনুযায়ী পেট্রল বোমা বানিয়ে হাতে তুলে দিচ্ছে। প্রথম দিকে পেট্রলসহ অন্যান্য উপকরণ দোকান থেকে স্বাভাবিকভাবেই কিনে নিত নাশকতাকারীরা। সম্প্রতি খুচরা পেট্রল বিক্রেতাদের দোকানে পুলিশের নজরদারি শুরু হয়। কড়াকড়ির কারণে বোতল ভর্তি পেট্রল দোকান থেকে এখন কেনা কষ্টকর।  এ ছাড়া প্রতিটি পেট্রল পাম্পে পুলিশের পাহারা থাকায় পেট্রল বোমা প্রস্তুতকারীরা নিজেদের মোটরসাইকেল নিয়ে পেট্রল পাম্পগুলো থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পেট্রল কিনে টঙ্কিতে ভরছেন, পরে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের সাহায্যে ট্যাঙ্কি থেকে পেট্রল সংগ্রহ করে নিচ্ছেন। একবার মোটরসাইকেলে পেট্রল ভর্তি করলে ৩০-৩৫টি বোমার পেট্রল পেয়ে যায়। ফলে ইদানীং পুলিশ মোটরসাইকেলে পেট্রল নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে বলে পেট্রল পাম্পগুলো সূত্রে জানা গেছে। পেট্রল বোমা প্রস্তুতকারীরা অন্য উপাদানগুলো পরিচিত দোকান থেকে সংগ্রহ করে থাকে। ডিবির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বোমাবাজরা চুক্তিভিত্তিক নাশকতা করছে। কোনো বোমা ছোড়ার পর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলে বোমাবাজদের পারিশ্রমিকও বেশি দেওয়া হয়। আর বোমা ছোড়ার অভিযান সফল হলে নগদ তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়। ঘটনাস্থলে বোমা ফাটানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোমাবাজ সবাই গোপন জায়গায় একত্রিত হয়। সেখানেই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়। বোমাবাজ গ্রুপের কোনো সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাদের সহযোগিতার জন্যও রয়েছে আলাদা ফান্ড। কয়েকটি গ্রুপে রয়েছে নারী বোমাবাজ।

পেট্রোল বোমা থেকে বাঁচতে করণীয়
দেশের এই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই কারও না কারও ঠাঁই হচ্ছে হাসপাতালে। কেউ আবার জীবন হারাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচাতে প্রত্যেককেই কিছু অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিজে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে জানা দরকার জরুরি কিছু বিষয়। আসুন জেনে নিই সেগুলো-
যানবাহন চালানোর সময় গাড়ির জানালার কাঁচ বন্ধ রাখুন।
নিজের শরীরের পোশাকে আগুন লাগলে তৎক্ষণাৎ দুই হাতে মুখ ঢেকে মাটিতে গড়াগড়ি দিন। দৌঁড় দিলে আগুন বেড়ে যাবে।
আগুনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভেজা অথবা মোটা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরুন, এতে আগুন নিভে যাবে।
পোড়া জায়গায় পর্যাপ্ত পানি ঢালুন। এ জন্য গাড়িতে সব সময় পানি সংরক্ষণ করুন এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
প্রতিটি গাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স সংরক্ষণ করুন। এছাড়া বড় গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখুন।
বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সচিত্র ব্যবহারবিধি টাঙিয়ে রাখুন। রাস্তার পাশে কিংবা অরক্ষিত স্থানে গাড়ি পার্ক করে ঘুমাবেন না।
গাড়ি বেশি সময় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখবেন না। চলমান রাখুন। গন্তব্যে পৌঁছলে নিরাপদ জায়গায় পার্ক করুন।
গাড়িতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর (০২-৯৫৫৫৫৫৫ অথবা ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯) দৃশ্যমান স্থানে বড় অক্ষরে লিখে রাখুন। এতে যত তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। একই সাথে জরুরি অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করুন এবং সাহায্যের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে খবর দিন।

আইনের চোখে বৈধতা
বিশ্বজুড়ে সুনির্দিষ্ট কারণে কিংবা প্রয়োজনে অনেক ধরণের আগ্নেয় অন্ত্রের বৈধতা থাকলেও, পেট্রোল বোমার উৎপাদন এবং সংরক্ষণ অবৈধ। অস্ত্র উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র আইন এবং ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এটিএফ (অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যুরো)-এর নিয়মানুযায়ী পেট্রোল বোমা বা ককটেইলকে ‘ধ্বংসাত্মক ডিভাইস’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানান হয় পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়েছে,‘সন্ত্রাস বিরোধী আইনে (২০০৯ ) পেট্রলবোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যাকারীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনে এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের সহযোগিতা প্রদানও কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত। এছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় উস্কানিমূলকভাবে প্রচারের জন্যও যাবজ্জীবন কারাদন্ড, তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত করারও বিধান রয়েছে।‘
তথ্য বিবরণীতে সন্ত্রাস বিরোধী আইন- ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারা-উপধারা হলো—
ক) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ বা কোনো অস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যে ব্যবহার করলে বা এ উদ্দেশ্যে নিজ দখলে রাখলে ইহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- ও তদুপরি অর্থদণ্ড [ধারা-৬ (২) (উ)]
খ) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা অথবা গুরুতর জখম করলে বা চেষ্টা করলে ইহার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড [ধারা-৬ (২) (অ)]।
গ) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা অথবা গুরুতর জখম করার ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করলে ইহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- ও তদুপরি অর্থদণ্ড [ধারা-৬ (২) (আ)]।
ঘ) কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন উক্তরূপ সন্ত্রাসী কার্যে আর্থিকভাবে সহায়তা করলে ইহার শাস্তি ২০ বত্সরের কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড [ধারা-৭ (৩) (৪)]।
ঙ) কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন পেট্রল বোমা বহনকারী বা প্রস্তুতকারী বা প্রয়োগকারী কোনো অপরাধীকে আশ্রয় প্রদান করলে ইহার শাস্তি ৫ বত্সরের কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড [ধারা-১৪ (১) (ক)]।
চ) পেট্রলবোমা বা কোনো দাহ্য পদার্থ দ্বারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগকারী কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উস্কানিমূলক সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত যদি কোনো ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন তাহলে ইহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড ([ধারা-১৩]।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *