কেরিয়ার প্রস্তুতি এই সময়ে ‘গ্রুমিং’

একে বারে শৈশবে স্বপ্ন থাকে পাইলট হবার। তার পরে সময়ের আবর্তে কখনও গায়ক, কখনওবা মারদাঙ্গা সিনেমার নায়ক, রঙ-তুলির সম্রাজ্যোর পটুয়া, শৈশব থেকে কৈশোর স্বপ্ন তখন – কবি, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, ব্যবসায়ি, কর্পোরেট কর্তা সহ আরো কত কিছু। স্কুল, কলেজ ডিঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় তাও ঠিক হয় না কি হবো, কি করবো! পড়াশুনা শেষ, বেকারের সনদ জুটে যায়। তাও ‘কনফিউশন’ শব্দটা আমাদের জীবনে আঠার মতো সেঁটে থাকে। আর সঙ্গে লেজুড়ের মতো কেরিয়ার শব্দটা যখন জুড়ে যায়, তখন তো মাথার চুল হাতে, হাতের নখ দাঁতে, রাতের ঘুম… কোথায় কে জানে! কিন্তু এখনকার লাইফস্টাইল ডিকশনারিতে একটা শব্দের ভারী রমরমা। গ্রুমিং। সময় থাকে একে ভালো করে ফেলতে পারলে এভারেস্টই হোক বা কিওকারাডং যেখানে যাই, জয় করে ফিরে আসার কনফিডেন্স থাকবেই।
তবে হ্যাঁ, আপনারও তো একটা প্রেফারেন্স বলে কিছু আছে নাকি। মানে, আপনি হতে চান আর্কিটেকচার অথচ বাবার ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার। আপনি – কি একটুও প্রতিবাদ করবেন না? এই প্রতিবাদ প্রতিরোধের সিনেই এন্ট্রি নিচ্ছি। একেবারে লিস্ট করে ফেলে দিচ্ছি কোন কেরিয়ারের জন্য কী ধরনের গ্রুমিং দরকার, তার ফান্ড। নিজের পছন্দমতো বেছে নেওয়া যেতেই পারে। তবে একটা কথা প্রায় বেদবাক্যের মতো এবেলা মেনে নেওয়া ভালো। কথাটি হল, কেরিয়ার যাই হোক না কেন, প্রত্যেকটির জন্য কিন্তু গ্রুমিং ভীষণ দরকারি। নাহ, আর ভূমিকা নয়। এবার সরাসরি টেক্সটে ঢুকে পড়া যাক।
যে কোনও ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেই যা যা মাথায় রাখতে হবে:

  • মোটামুটি ক্লাস টেনের গণ্ডি পেরনোর পরই যদি ভেবে ফেলা যায়, কোন লাইনে আপনি এগোতে পারেন, তা হলে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধে হয়।
  • ক্যারিয়ার যা-ই হোক, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্বন্ধে জানতে হবে।
  • কাজ এবং প্যাশন, দু’টো জিনিষ সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন, আমি পড়াশুনা করেছি ‘ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে অথচ আঁকছি কার্টুন। সে ক্ষেত্রে সহপাঠীদের মোটা মাইনে দেখে মনের দুঃখে মারা যাই – কেন আমি সহপাঠীদের মত করলাম না। তাহলে ক্যারিয়ারের সাড়ে বারোটা বাজতে বাধ্য। কেন পোস্ট মডার্ন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ে মাল্টি ন্যাশনালের কেরানি কিংবা ক্লাসিক্যাল মিউজিকে এক্সপার্ট, অথচ টিভিটিতে জিঙ্গেল, বিয়ে-গায়ে হলুদে গাইতে হচ্ছে বিদেশী ডান্স নাম্বারে, তা হলেও দুঃখ করলে চলবে না। কাজটা কাজের জায়গায় এবং প্যাশন থাকবে প্যাশনের জায়গায়। দু’টোকে ঘেঁটে না দেয়ার নামই হচ্ছে প্রফেশনালিজম।
  • যে সেক্টরেই এগোবার চেষ্টা করেনা কেন, সবার প্রথম প্রয়োজন মাতৃভাষার উপর শক্তিশালী ভিত। মাতৃভাষায় দুর্বল হলে তো নিজের জাতীয় পরিচয়ই অপূর্ণ থেকে যায়। বেড়ে হয়ে উঠা হয় বনসাইয়ের মত। এরপর প্রয়োজন ইংরেজির উপর দক্ষটা। এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগে জব মার্কেটে ইংরেজিতে বলিয়ে- পাবলিকের কদর বেশি।
  • আত্মবিশ্বাস শব্দটা ক্লিশে হলেও খুব দামি। যেখানেই কাজ করতে যাবেন, সেটা আপনার পছন্দের লাইনে না হলেও, আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে সেখানে আমি ভালো কাজ করব।
  • অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল কখনওই মারবেন না।
  • আপনার ঊর্ধ্বতনের চেয়ে আপনার জ্ঞান অনেক বেশি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য কখনই এটা ভাববেন না যে, তাঁর আন্ডারে আপনার কাজ করা উচিৎ নয়। মেনে নিতে হবে যে, কোনও একটা দিকে উনি নিশ্চয়ই আপনার চেয়ে এগিয়ে আছেন এবং সেই কারণেই তিনি আপনার উপরে রয়েছেন।
  • পলিটিক্স ব্যাপারটা যে কোনও জায়গাতেই খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। স্কুল, কলেজ, বাড়ী এমনকি বন্ধুত্বের সম্পর্কেও পলিটিক্স রয়েছে। তাই অফিস পলিটিক্স নিয়ে একেবারেই ঘাবড়ে যাব না। অফিসে ঢুকলে এর মুখোমুখি হতে হবে এবং প্রয়োজন পড়লে আপনাকেও একটু-আধটু অংশ নিতে হতে হবে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নেন।
  • অযথা লোকের কাছে নিজেরে জ্ঞান জাহির করতে যাবেন না। দু’দিন লোকে বাহবা দিলেও তিনদিনের দিন জনতার হাসির খোরাক হয়ে যেতে পারেন।
  • সুপিরিয়রটি বা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে একেবারেই ভুগবেন না। সিনিয়রদের যথাযোগ্য সম্মান দিবেন এবং জুনিয়রদের সঙ্গে অকারণে দুর্ব্যবহার করবে না।
  • ইন্টার্ভিউ বোর্ড যে কোনও ক্যারিয়ারের চাকরির ক্ষেত্রেই প্রায় একই রকম। কাজেই গুছিয়ে সিভি বানানো থেকে শুরু করে ফর্মালি ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়া, ঠাণ্ডা মাথায় বোর্ডকে ফেস করা, তর্ক না করা, যেটা জানি না সেটা স্পষ্ট বলে দেওয়া ইত্যাদি নিয়মকানুন প্রায় সব চাকরির ক্ষেত্রেই একই রকম। তবে যেখানেই চাকরি করতে যান না কেন, সেই সংস্থা সম্পর্কে ফুল ইনফো মাথায় সেভ করে রাখবেন।
  • নিজেকে ফিটফাট রাখা, ইস্ত্রি করা জামা কাপড় পরা, ওয়্যাক্সিং করে হাতের বড় বড় লোম তুলে ফেলা বা নিজেকে প্রোজেন্টেবল করে তোলার সঙ্গে ভাল স্টুডেন্ট হওয়ার কোন বিরোধ নেই।

প্রতিযোগিতামূলক যে, নিজেকে সবদিকে এগিয়ে রাখলেই অ্যাডভান্টেজ বেশি। ঘামের গন্ধ ছিল বলে চাকরিটা পেলাম না, এটা কি ভালো লাগবে? মামা-চাচাকে ধারা চেয়ে নিজের বলে বলিয়ান হয়ে কিছু করতে পারাটা যে অনেক বেশী আত্মসম্মানের। তাই ক্যারিয়ার প্রস্তুতির সময়টা যে হেলায় নষ্ট না হয়। আবার মনে করিয়ে দিয় বৃক্ষের পরিচয় যেমন ফলে, মানুষের পরিচয় তার কাজে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *