আইটি ম্যানেজা | পেশা পরামর্শ | ক্যারিয়ার টিপস

প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পেশা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পেশাগুলোর মাঝে অন্যতম একটি হচ্ছে আইটি ম্যানেজার। বিশেষ করে ব্যাংকিং, আমদানি-রপ্তানি, আউটসোর্সিং ফার্ম আর প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে এ পেশার চাহিদা লক্ষণীয়। 

আইটি ম্যানেজা

বর্তমান সময়ে সব কিছু চলে গেছে কম্পিউটারের দখলে। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সংক্রান্ত কাজ রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে আলাদা আইটি বিভাগও রাখা হয় এসব কাজের জন্য। আইটি সংক্রান্ত যেকোন প্রজেক্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকে একজন আইটি ম্যানেজার। ম্যানেজার শব্দের মধ্যেই বোঝা যায়, প্রযুক্তিপণ্য থেকে শুরু করে আইটির বিভিন্ন সেবার পরিচালনা করাই একজন আইটি ম্যানেজারের কাজ। গতানুগতিক পেশার মতো পেশা এটি মোটেও নয়। এ পেশায় অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, সামলাতে হয় অনেক জটিল বিষয়। প্রতিদিনের বদলে যাওয়া প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট রাখতে হয় সবসময়। অনেকগুলো কাজ একসাথে করার মানসিকতা থাকতে হয়, সাথে থাকতে হয় ঠান্ডা মাথায় সমস্যা সমাধানের মানসিকতা। একজন মানুষ একটু চেষ্টা করলেই সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডাটাবেজ অ্যাডমিন, ওয়েব ডেভেলপার, অ্যানিমেটর বা কমপিউটার সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হতে পারবে, কিন্তু আইটি ম্যানেজার হতে তাকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এই পেশায় সফল হওয়ার নজির রয়েছে অনেক।

 

কাজের সুযোগ

একজন আইটি ম্যানেজার কাজ করেন: সরকারি প্রতিষ্ঠানে বা প্রজেক্টে, যেমন: সরকারি ওয়েবসাইটের ম্যানেজমেন্ট, মেইনটেন্যান্স ও ডাটা ম্যানেজমেন্টে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেমন: এনজিওর ওয়েবসাইটের ম্যানেজমেন্ট, মেইনটেন্যান্স ও ডাটা ম্যানেজমেন্টে।

ব্যাংক ও আর্থিক সেবার প্রতিষ্ঠানে;

আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে;

আউটসোর্সিং ফার্মে।

 

দায়িত্ব

  • প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হওয়া সিস্টেমগুলো যেগুলো চলমান তা চালু রাখার ব্যবস্থা করা, সীমিত পরিমাণ যে রিসোর্সগুলো আছে তা কর্মচারীদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত ও প্রদান করা;
  • প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সফটওয়্যার সিস্টেম সচল রাখা;
  • প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনার সিস্টেম চাহিদা অনুযায়ী সময়ের মধ্যে দেয়া।
  • বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশন ও প্রজেক্টগুলোর উন্নয়ন ও কীভাবে তা আরও বেশি কার্যকর করা যায় তার ব্যবস্থা করা।
  • বিক্রেতা ও ঠিকাদারদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা যাতে সিস্টেমের সব সার্ভিস সঠিকভাবে চলতে পারে
  • ডকুমেন্টেশন তৈরি করা ও রেকর্ড রাখা;
  • প্রতিবছর বা বছরে দুইবার সিস্টেম প্ল্যান তৈরি করা। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের কৌশল অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা।
  • প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার, অটোমেশন, কনফিগারেশন ম্যানেজমেন্ট, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণের জন্য গাইডলাইন তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা।
  • প্রতিষ্ঠানের পুরো সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা;
  • অটোমেশন কনফিগারেশন নিয়ে কাজ করা;
  • প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সক্ষমতা এবং উন্নতির জন্য সুযোগ শনাক্তকরণ।
  • আইটি দলের প্রোগ্রামার ও ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা;
  • কর্মস্থলে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান।
  • ম্যানেজার বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট দেয়া।
  • নতুন কর্মীদের আইটি বিষয়ে জ্ঞানদান এবং প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম সম্পর্কে ধারণা দেয়া।

 

যোগ্যতা

সাধারণত আইটি ম্যানেজার পদে কাজ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা হয় ইনফরমেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি। এছাড়া ব্যবস্থাপনার উপর কোর্স কিংবা এমবিএ ডিগ্রি থাকলে চাকরিক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।

আইটি ম্যানেজার পদে প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। তবে সাধারণত বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হয়।

এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণত ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে।

 

অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও জ্ঞান

  • একজন আইটি প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে হয়। ডাটা ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে, বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান, সাইবার সিকিউরিটি, নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা ও বাস্তব ধারণা থাকতে হবে। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল ইনফরমেশন খাতের সাথে নিজেকে আপডেটেড রাখতে হবে।
  • প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, সাথে সময় এবং বাজেটের মধ্যে কাজ শেষ করার ক্ষমতা থাকতে হবে যা কিনা স্টেকহোল্ডার নির্ধারণ করবে।
  • নিজে নিজে কাজ করার ক্ষমতা ও স্বাধীনভাবে এবং একাধিক কাজ একসাথে করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • প্রশাসন, ভেতরের এবং বাইরের সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগের জন্য লিখিত এবং মৌখিক সব স্তরে দক্ষ হতে হবে।
  • দ্রুত বিন্যস্ত, গতিশীল কাজের পরিবেশ তৈরি এবং ডায়নামিক চিন্তা করা।
  • প্রতিষ্ঠানের আইটিবিষয়ক সমস্যা সমাধানে বৈচিত্র্যপূর্ণ মতামত দেয়ার সক্ষমতা এবং ক্রিয়েটিভ চিন্তা, স্বচ্ছতা এবং টিমের নেতৃত্বে সমর্থ।
  • প্রকল্প ব্যবস্থাপনার স্বীকৃত প্রমাণপত্র।
  • পুরো প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা-ব্যবসায় কনসালট্যান্সি, প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির অভিজ্ঞতা।
  • জটিল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা, ঝুঁকি কমিয়ে টিমের নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা।
  • স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজের চমৎকার ব্যবস্থাপনার সাথে বাণিজ্যিক অন্তর্দৃষ্টি। প্রজেক্টের সাথে জড়িত সদস্য ও ক্লায়েন্টদের সাথে দক্ষভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারা।
  • ম্যাট্রিক্স এনভায়রনমেন্ট প্রকল্প পরিচালনা ও কাজের অভিজ্ঞতা।
  • প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্প পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা।
  • আলোচনা করে প্রজেক্টের প্রয়োজনীয়তা, সুযোগ, খরচের বিষয়ে ধারণা থাকা।
  • স্বপ্রণোদিত এবং উৎসাহী।
  • প্রজেক্ট সংক্রান্ত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করার দক্ষতা;
  • আইটি প্রজেক্টের বাজেট তৈরি করতে পারা;
  • আইটি বিষয়ক রিপোর্ট তৈরির ধারণা;
  • আইটি বিষয়ক শিক্ষাদানের দক্ষতা;
  • প্রজেক্ট দলকে নেতৃত্ব দিতে পারা;
  • সময় ব্যবস্থাপনা;

 

পড়াশোনা

বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির উপর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

 

আয়রোজগার

আইটি ম্যানেজার পদের নির্ধারিত কোনো পারিশ্রমিক বলা খুব কঠিন। প্রতিষ্ঠানভেদে তা নির্ভর করবে। বর্তমান সময়ে এই পেশার বেশি কদর আছে বলে ভালো পারিশ্রমিক দিয়েই একজন আইটি ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের সময় বেশ সময় নিয়েই যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ করে থাকে। সাধারণত একজন আইটি ম্যানেজারের বেতন সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ওপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেতন আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তবে বেসরকারি পর্যায়ে বেতন ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে। সরকারি পর্যায়ে বেতন স্কেল ও প্রজেক্ট অনুযায়ী বেতন আলাদা হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *