১০টি আজব বিয়ের রীতি

বিশ্বজুড়ে অঞ্চল ভেদে বিয়ে নিয়ে আছে নানা রকম ভিন্ন ভিন্ন প্রথা। একজনের কাছে যা মনে হতে পারে আজবঅন্যের কাছে হয়তো সেটাই সব চাইতে জরুরি ব্যাপার। আসুনদেখা যাক ১০টি দেশের মজার কিছু বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা।

০১.ভারত: যে ব্যক্তির উপর মঙ্গল গ্রহের প্রভাব আছে, তার মঙ্গলদোষ আছে বলে ধরা হয়ে থাকে। আর সেই ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে মাঙ্গলিক। এই কুসংস্কার অনুযায়ী মাঙ্গলিক এবং অমাঙ্গলিক ব্যক্তির মাঝে বিবাহ ঘটলে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনে। যারা এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, তারা মনে করেন যে মাঙ্গলিক কনে তার বরের শীঘ্র মৃত্যু ঘটাতে ভূমিকা পালন করে। এজন্য, তাকে বিয়ের পূর্বে গাছ, প্রাণী বা জড়বস্তুকে বিয়ে করতে হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, গাছ, প্রাণী বা জড়বস্তুর সাথে বিয়ের মাধ্যমে কনের মঙ্গলদোষ দূর হয়ে যায় এবং এর ফলে সে তার বরের সাথে সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারে। শুনতে অবাস্তব লাগছে? ভারতের জনপ্রিয় নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনও কিন্তু মাঙ্গলিক ছিলেন, আর তার প্রথম বিবাহ গাছের সাথেই হয়েছিল!

০২. চীন: চীনের তুইজা গোষ্ঠীর মেয়েরা বিয়ের ঠিক একমাস আগে থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা ধরে কাঁদে। বিয়ের যখন ২০ দিন বাকি তখন তার সাথে প্রাকবিবাহ কান্নায় যোগ দেয় তার মা। এরপর ২০ দিনের মাথায় যোগ দেয় কন্যার নানি। শেষের দিনগুলোতে পরিবারের বাকি সব মেয়েরাও এতে যোগ দেয়। আসলে ‘প্রাকবিবাহ কান্না’ হল নিচু স্বরে এক ধরনের গান যা আসলে কান্নার মতই শোনায়।

০৩. মঙ্গোলিয়া: মঙ্গোলিয়ান গোষ্ঠীর কারো বিয়ের তারিখ ঠিক করতে হলে হবু বর-বধূকে একটি ছুরি নিয়ে একসাথে একটি মুরগির ছানা মারতে হয়। মৃত মুরগির ছানাটির কলিজার রঙ যদি তা টাটকা এবং শুদ্ধ মনে না হয়, তবে বিয়ে আর হবে না। অপেক্ষা করতে হবে এভাবে যতদিন না দুজন মিলে একটি মুরগির ছানা মারতে পারে যার কলিজার দেখতে লাগবে টাটকা। এর পরেই বিয়ের তারিখ আর বিয়।

০৪. উত্তর বরনিও: উত্তর বরনিওর তাইডং উপজাতির রীতি অনুয়ায়ী বিয়ের পর নব দম্পতিকে তিন দিন এবং তিন রাত পর্যন্ত ঘরে আটকে রাখা হয়। এই ৩ দিন এবং ৩ রাত তাদের প্রাকৃতিক কাজকর্মে সাড়া দেবার জন্যও ঘরের বাইরে যেতে দেয়া হয় না।

০৫. ফিজি: ফিজিতে শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তিই কন্যার পিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবে যার হাতে থাকবে তিমির একটি দাঁত। পৃথিবীর বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমি বেশিরভাগ সময় সমুদ্রের নিচেই থাকে। তাই তিমির দাঁত সংগ্রহ করার কাজটা একটু জটিলই বটে। ফলে বিয়ে করতে হয় যেতে হবে ব্ল্যাক মার্কেটে, নতুবা সমুদ্রে।

০৬. কেনিয়া: কেনিয়ার মাসাই উপজাতির বাবারা তাদের মেয়ের বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে বিদায় দেবার সময় পুরানো রীতি অনুযায়ী মেয়ের মুখে থু ছিটান। তাদের রীতি অনুযায়ী কারো নজর না লাগে এ জন্য বিয়ের শেষে মেয়ের বাবা আশীর্বাদের জন্য তার মুখে এবং বুকে থু ছিটিয়ে দেয়!

০৭.সুইডেন: সুইডেনে যখনই নববধূ বা বর বাথরুমে যাবার জন্য তাদের টেবিল থেকে উঠে যায়, বসে থাকা তার সঙ্গীকে বিপরীত লিঙ্গের মেহমানরা এসে চুম্বন করার সুযোগ পায়। মানে নতুন বর যদি অন্যদের মাঝ থেকে উঠে বাথরুমে যায়, তবে তার নববধূকে অন্য লোকেরা এসে চুম্বন করে যাবে। আর নববধূ যদি তার বরকে রেখে যায়,তবে অন্য নারীরা এসে তাকে আদর করে রেখে যাবে। বোঝাই যাচ্ছে যে বর বাথরুমে যাবে, এমনটাই সবাই আশা করে।

০৮. স্পারটা: দক্ষিণ গ্রীসের প্রাচীন নগরী স্পারটা তে হবু বউয়েরা মাথার চুল কামিয়ে ছেলেদের মতন পোশাক-আশাক পরে তৈরি থাকতো। এর পরের কাজটুকু ছিল মূলত হবু বরের অগ্নি পরীক্ষা। বিয়ের ইচ্ছে থাকলে সবার চক্ষু ফাকি দিয়ে এই ছেলে সেজে থাকা তার হবু স্ত্রীকে চুরি করে নিয়ে পালাতে হতো তাকে। তবেই কেবল সে নিজেকে বিয়ের উপযুক্ত বলে প্রমাণ করতে পারতো।

০৯. আয়ারল্যান্ড: আয়ারল্যান্ডের নববধূ এবং বর বধূ যখন নাচবে, তখন নববধূর খেয়াল রাখতে হয় যেন তার পা অবশ্যই মাটিতে থাকে। নইলে কিন্তু দুষ্ট পরীরা এসে ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাদের বিশ্বাস, পরীরা সুন্দর জিনিস ভালবাসে, আর নববধূ হল সব চাইতে সুন্দর আর আকর্ষণীয়। সুযোগ পেলেই, পরীরা নববধূকে নিয়েই যাবে। পা মাটির স্পর্শে থাকলে দুষ্ট পরিরা এই সুযোগ পাবে না।

১০. দক্ষিণ সুদান: দক্ষিণ সুদানে নেওউর গোষ্ঠীর লোকেরা বিবাহিত দম্পতিদের কমপক্ষে দুইটি সন্তান না হলে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করে না। দুইটি শিশু নিয়ে হাসি খুশি পরিবার মানে, এতদিনে সেই দম্পতির বিবাহ সম্পন্ন হল।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *