ইন্টারভিউ নেয়ার যত কৌশল
চাকরির ইন্টারভিউ মানে, টেবিলের একপাশে থাকা চাকুরীপ্রার্থী অন্যপাশে থাকা এক বা একাধিক নিয়োগকর্তার প্রশ্নবাণের মুখে পড়েছেন। চিরায়ত এই ইন্টারভিউতেও অনেক বদল এসেছে। প্রার্থী বাছায়ে এসেছে অনেক রকমফের। একেক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন বুঝে একেক পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন।
ইন্টারভিউ তে ডাক পাওয়ার অর্থ হচ্ছে, আপনার নিয়োগকর্তাদের প্রাথমিক ক্রাইটোরিয়া পূরণ করেছেন। এবার ইন্টারভিউ নিজেকে চাকুরীর জন্য উপযুক্ত প্রমাণ করার পালা। ইন্টারভিউতে অল্প সময়ের কথোপকথন এবং প্রশ্নোত্তরের মধ্যদিয়ে প্রার্থীকে পরখ করে নিয়োগকর্তারা। সুতরাং এতে সফল হতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
এবার জেনে নেওয়া যাক, ইন্টারভিউ কত প্রকার ও কী কী।
ওয়ান টু ওয়ান ইন্টারভিউ
এ ধরনের ইন্টারভিউ তে প্রত্যেক আবেদনকারীর আলাদা আলাদা ইন্টারভিউ হয়। টেবিলের ওপাশে থাকে প্রতিষ্ঠানের এইচআর বা মানবসম্পদ বিভাগ এবং সরাসরি পদ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কোনো শীর্ষ কর্তাব্যক্তি অথবা স্বয়ং নিয়োগকর্তা বা নিয়োগকারী সংস্থার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি। প্রত্যেক আবেদনকারীর আলাদা ইন্টারভিউ নেওয়ার পর নিয়োগকর্তারা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেন। সাধারণত নিয়োগ প্রক্রিয়ার একেবারে শুরুতে বা চূড়ান্ত পর্যায়ে এই ধরনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্যানেল ইন্টারভিউ
এই ধরণের ইন্টারভিউতে নির্বাচকমণ্ডলীতে থাকেন কমপক্ষে তিনজন সদস্য। তাঁরা একে একে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একেক প্রশ্নকারী একেক বিষয়ে সওয়াল করেন। প্যানেল ইন্টারভিউতে এমন সদস্য থাকতে পারেন, যিনি কোনো প্রশ্ন না করে, আবেদনকারীর ব্যাপারে নোট নিতে পারেন। তবে যখন যিনি প্রশ্ন করবেন, তাঁর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার আত্মবিশ্বাসকে এবং প্রশ্নকারীর প্রতি আপনার পূর্ণ মনোযোগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। একজন প্রশ্নকারী নিয়োগকর্তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়, সচেতন ভাবে প্যানেলের অন্য সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনানুষ্ঠানিক ইন্টারভিউ
সাধারণত নিয়োগ প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে এ ধরনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো সব আবেদনকারীকে নিয়ে একসঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সুতরাং অন্য চাকুরীপ্রার্থীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। অনানুষ্ঠানিক ইন্টারভিউতে নিয়োগকর্তা ও আবেদনকারী দুই পক্ষেরই পরস্পরের সম্পর্কে বেশি তথ্য জানার সুযোগ থাকে। এ ধরনের ইন্টারভিউতে চাকরিপ্রার্থীরই বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। অনানুষ্ঠানিক হলেও এই ইন্টারভিউয়ের জন্যও নিতে হয় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি।
গ্রুপ ইন্টারভিউ
এই ধরণের ইন্টারভিউ তে সব আবেদনকারীদের এক সঙ্গে নিয়ে বসেন নিয়োগকর্তারা। তাঁরা দেখতে চান চাকুরীপ্রাথীদের একে-অন্যের আলাপচারিতা। কখনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দিতেও বলা হয়। এভাবেই তুলনামূলক বিচারে বেছে নেওয়া হয় উপযুক্ত প্রার্থীকে। সুতরাং কম্যুনিকেশনে স্কিলের চমক দেখাতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে আলাদাভাবেও প্রশ্ন করা হতে পারে। তাই সব মিলিয়েই প্রস্তুতি নিতে হবে।
টেলিফোনে ইন্টারভিউ
‘ফোন ইন্টারভিউ’ হয় স্ট্রাকচার ইন্টারভিউ ম্যাথড মেনে। এই পদ্ধতিতে আবেদনকারীর সিভি দেখে পছন্দ হলে, তাকে প্রাথমিক ইন্টারভিউটা দিতে বলা হয় ফোন মারফতই। এই ফোন ইন্টারভিউ উতরে গেলে কর্মপ্রার্থীকে ডাকা পরবর্তী পর্যায়ের জন্য। অনেকে ফোন ইন্টারভিউকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চান না। ভাবেন লিখিত পরীক্ষায় এবং সশরীরে ইন্টারভিউ বোর্ড-এ গিয়ে বাজিমাত করবেন। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে সব সংস্থা ফোন ইন্টারভিউ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের চাকরি করতে হলে এই ইন্টারভিউয়ের চৌকাঠ না পেরলে চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন প্রথমেই দফারফা হয়ে যেতে পারে। টেলিফোন সাক্ষাৎকারে কারও মুখের অভিব্যক্তি বোঝা সম্ভব নয়। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে এবং শুধু কণ্ঠস্বর দিয়েই চাকরি ও নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার আগ্রহ বোঝাতে হবে। টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অপেক্ষাকৃত নীরব স্থান বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সে ইন্টারভিউ
হালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেয়ার প্রবণতা দিনকে দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় স্কাইপ বা অন্য ভিডিও কনফারেন্স টেকনোলজি। ইন্টারভিউ বোর্ডের কোনো কোনো সদস্য দূর থেকেই ভিডিওর মাধ্যমে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে। সাধারণত দেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে হয় এভাবে। এসব ক্ষেত্রে ক্যামেরা থেকে কত দূরে থাকতে হবে, গলার স্বর কোন পর্যায়ে থাকবে, এসব অনুশীলন করে নিতে হবে। আর ভিডিওতে আপনার মুখের ভাব কেমন রাখতে হবে, এসব বিষয়ও জেনে নিন। এ ধরনের সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই আপনার কম্পিউটারের অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করে নিতে হবে। দেখে নেবেন, ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক আছে কি না। নেটের লাইনে সমস্যা থাকলে ব্যাকআপ লাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অন্য সব ইন্টাভিউয়ের মতো, এখানেও আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ ও অভিব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ইন্টারভিউয়ের সময় ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়ে, ক্যামেরার দিকে তাকান। তা না হলে দেখা যাবে, নিয়োগকর্তা তাকিয়ে আছেন আপনার দিকে, আর আপনি অন্য দিকে! এই ধরণের ইন্টারভিউ নিয়োগকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী-উভয়ের জন্যই সাশ্রয়ী।
এভাবে সাধারণত নেয়া হয় ইন্টারভিউ। ভালো সংস্থাগুলো অনেক যাচাই-বাছাই করে সর্বোত্তম আবেদনকারীকে বেছে নেয়। তার এ সব প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের এসেট হিসাবে চাই। লায়াবিলিটি হিসাবে নয়।
Leave a Reply