ভ্যানিটি ভ্যান | vanety Van

বলিউড তারকাদের ভ্যানিটি ভ্যান

 

শুটিং স্পর্টে বলিউড স্টারদের সর্বক্ষণের সঙ্গী তাঁদের ভ্যানিটি ভ্যান। নিজস্ব চাহিদা, প্রয়োজন আর রুচির পর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এই চলমান প্রাসাদ। কী কী আছে এই ভ্যানে? বলার চেয়ে বলা ভালো কি কি নেই এই খানে। বিশেষ এই ভ্যানের প্রতি এই বলিউডের রথি-মহারথিদের আবেগ কীরকম? কত টাকা খরচ হয়েছে এক একটি ভ্যানিটি ভ্যান তৈরিতে? ইন্টারনেট অবলম্ব তারই তত্ত্ব তালাশ করলেন শামস্ বিশ্বাস।

 

চলমান প্রাসাদ

মহিলাদের ব্যাগের মতোই বলিউড তারকাদের নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে উঠেছে ভ্যানিটি ভ্যান। এক একটি ভ্যান মানে চাকার ওপরে চলমান প্রাসাদ বা ‘প্যালেসেস অন হুইলস’। কী নেই এই চলমান প্রাসাদে! আছে শোবার ঘর, বাথরুম, খাবার ঘর, কনফারেন্স রুম, জিমÑ সবকিছুই। থাকবে নাই বা কেন! তারকাদের যখন দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই শুটিঙের প্রয়োজনে থাকতে হয় বাড়ির বাইরে, কখনও কখনও শুটিং করতে হয় রাতভর, তখন নিজেদের প্রিয় বাহনটিকে বাড়ির মতো আরামদায়ক করে তুলতে হবে বইকি! তাই বলিউড তারকাদের ইমেজ আর স্ট্যাটাস নিয়ে দিনদিন বলিউডে বেড়ে চলেছে এই ভ্যানিটি ভ্যানের সংখ্যা।

 

শাহরুখ খান

শাহরুখ খান ছাড়া বলিউডের কোনও স্টারের ভ্যানিটি ভ্যানই নয় মিটারের লম্বা নয়। শাহরুখের ভ্যানিটি ভ্যানটি ১৪ মিটার লম্বা। বাড়তি এই দৈর্ঘ্যে ভ্যানিটি ভ্যানটির চলাফেরায় যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, ছোট্ট জায়গায় যাতে প্রয়োজনমতো বাঁক নেওয়া যায়, প্রয়োজনীয় গতি নেওয়া যায় তার জন্য হাইড্রোলিক সিস্টেমের ব্যবস্থা আছে এই ভ্যানে। একটা বোতাম টিপলেই প্রয়োজনমতো ছোট বাড় করে নেওয়া যায় একে। ভলভোর স্যাসিতে তৈরি এই ভ্যানিটি ভ্যানটিই বলিউডের সবচেয়ে দামী। অন্দর সজ্জা স্পেস শিপের মতো। তৈরি করতে খরচ পড়েছিল মাত্র পাঁচ কোটি রূপি বা প্রায় ছয় কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। শাহরুখের নির্দেশ আর নকশা মেনে এই ভ্যান তৈরি করেছিলেন দিলীপ ছাবিরিয়া। সময় লেগেছিল প্রায় চার মাস। বলিউডের প্রায় সব তারকারা ভ্যানিটি ভ্যানই এই দিলীপ ছাবরিয়ার তৈরি। স্টিল গ্রে রঙের এই ভ্যানিটি ভ্যানের অন্দরে আছে ৫২ ইঞ্চি প্লাজমা টিভি, ডলবি ডিজিটাল হোম থিয়েটার, স্যাটেলাইট রিসিভার, রান্নাঘর, মাইক্রোওয়েভ গ্রিলার, ওয়ার্ডরোব,সু-র‍্যাক, লাইব্রেরী, একটা ফোল্ডিং মাল্টিজিম। এছাড়াও পানির সরবরাহ ঠিক রাখতে এই ভ্যানে আছে একটি পানির ট্যাঙ্কও।

 

সঞ্জয় দত্ত

‘মুন্না ভাই’খ্যাত এ তারকার ভ্যানিটি ভ্যানটি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি রূপি বা প্রায় চার কোটি ৪০ লক্ষ। এর অন্দর সজ্জ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানের মতো। এই ভ্যানটি আসলে ৩০০ হর্সপাওয়ারের একটি ভলভো-১২ বাস। সেটিকেই প্রয়োজনমতো ভেঙেচুরে তাকে ভ্যানিটি ভ্যানের অদল এনে দিয়েছেন দিলীপ ছাবরিয়া। ভ্যানের অন্দরে আছে আলাদা দুটি কামরা। আছে একটি ৪২ ইঞ্চির প্লাজমা টিভি, একটি সাজানো গোছানো বার, আন্টারনেট, ফোন, ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা। আছে হাইড্রোলিক সিস্টেম। বোতাম টিপলেই এই ভ্যানিটি ভ্যানের সমস্ত আসবাবপত্র নিমেষে হাওয়া হয়ে যায়। পুরো ভ্যানিটি ভ্যানটি পরিণত হয় সোফা আর সেন্টার টেবিল সমেত একটা লম্বা হলঘরে। এই ভ্যানিটি ভ্যানের সোফা আর টেবিলগুলোতেও আছে হাইড্রোলিক ব্যবস্থা। এই ভ্যানের বাইরের রং কালো কিন্তু ভেতরে নানা রঙের জেল্লা।

 

সালমান খান

ফ্রিজ, মিনি মডিউলার কিচেন, কফি মেশিন, মাল্টি জিম, বিশাল কনফারেন্স রুম নিয়ে সালমান খানের ভ্যানিটি ভ্যান। আছে এমন একটা দরজা যেখান দিয়ে গাড়ি নিয়েই সোজা ভ্যানিটি ভ্যানের মধ্যে ঢুকে পড়া যায়। অর্থাৎ বিশ্রামগৃহর পাশাপাশি এই ভ্যানিটি ভ্যানটি একটি গ্যারেজও বটে। এছাড়াও আছে একটি ডবল বেডরুম, ওয়ার্ডরোব, প্লজমা টিভি, মিউজিক সিস্টেম। ভ্যানটি তৈরি করেছে মরফেস কোম্পানি। ৯২ লক্ষ রূপিতে বা এক কোটি ১৫ লক্ষ টাকায়  তৈরি এই ভ্যানিটি ভ্যান প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে পাঁচ মাস। সালমান খানের আবার একটা অবসেসন আছে এই ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে। তিনি একদমই কাছছাড়া করতে চাননা এটি। সাধারণত যশরাজ স্টুডিওতে ভ্যানিটি ভ্যান ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু ‘দশ কা দম’-এর শুটিঙের সময় এটিকে বাইরে রেখে আসতে রাজি হননি সালমান। অনেক হমুকর পরে নিজের ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে স্টুডিওর মধ্যে ঢুকেছিলেন সালমান। যা আজ পর্যন্ত একটি ব্যতিক্রম ঘটনা।

 

ঋত্বিক রোশন

সাদা আর কালো রঙের সাজানো ঋত্বিক রোশনের ভ্যানিটি ভ্যানটি তৈরিতে খরচ পড়েছে তিন কোটি রূপি বা তিন কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা। ভ্যানে আছে চারটি ঘর। অফিস, মেক-আপ রুম, বেরুম আর টয়লেট। অন্দরমহলের সজ্জ পুরোটাই কাঠ আর কাচ ফিনিস। মেক-আপ রুমে আছে একটা জায়েন্ট মিরর। সেখানেই কস্টিউম পওে মেক-আপ নিয়ে নতুন ছবির নতুন চরিত্রের নিয়মিত ড্রেস রিহার্সাল দেন ঋত্বিক রোশন।

 

বিবেক ওবেরয়

বিবেক ওবেরয়ের ভ্যানিটি ভ্যানটি সেজেছে প্রায় কোটি রূপিতে বা এক কোটি ২৬ লক্ষ টাকায়। পুরো ভ্যানটিকেই সাজানো হয়েছে লাল, নীল ও স্টিল গ্রে রঙের কম্বিনেশনে। ভ্যানের সামনের অংশে রয়েছে একটি জায়েন্ট প্লাজমা স্ক্রিন। রয়েছে আধুনিকতম ভিডিও গেমের ব্যবস্থা। স্ক্রিনের সামনের আসনটি বিমানের পাইলটের মতো। এছাড়াও রয়েছে একটি লাইব্রেরিও।

 

অভিষেক বাচ্চন

নিজের টাকায় নয়, অভিষেক বচ্চনের ভ্যানিটি ভ্যানটি এসেছে বিগ বি-এর তরফ থেকে। বায়নাবাজ ছেলেকে যেমন বাবা খেলনা গাড়ি দিয়ে শান্ত করেন, অনেকটা সেরকমই। অমিতাভ বচ্চনের তত্ত্বাবধানে দিলীপ ছাবরিয়া তৈরি করে দিয়েছেন তাঁর ছেলের ভ্যানিটি ভ্যান। সমুদ্র নীল রঙের ভ্যানিটি ভ্যানটি আকারে ছোট হলেও দেখতে বেশ। রয়েছে বড়সর একটা থিয়েটার রুম। অন্দরসজ্জ পুরোটাই লেদার ফিনিশ।

 

রীতেশ দেশমুখ

ভ্যানিটি ভ্যানের প্রকাণ্ডতার দিক দিয়ে হিসাবেই আসবে না রীতেশের ভ্যানিটি ভ্যান। কিন্তু অন্দরসজ্জায় সব ভ্যানিটি ভ্যানের সেরা রীতেশের ভ্যানই। এমনটাই মত বলিউডের সব তারকারা। আসলে রীতেশ নিজেই একজন আর্কিটেক্ট। স্বয়ং শাহরুখ খানও তাঁর প্রথম ভ্যানিটি ভ্যানটির ডিজাইন করিয়েছিলেন রীতেশকে দিয়েই। আর রীতেশের ভ্যানিটি ভ্যানে স্বাভাবিকভাবেই যোগ হয়েছে দুটি ক্ষুরধর মস্তিষ্ক। একটি রীতেশের অন্যটি দিলীপ ছাবরিয়ার। মোট খরচ পড়েছে দুই কোটি রুপি বা দুই কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। লেদার ফিনিশ অন্দরসজ্জার এই ভ্যানিটি ভ্যানটিকে দেখতে দেখতে অনেকটা জেট প্লেনের মতো।

 

নায়িকাদের ভ্যান

এতো গেল নায়কদের কথা। এবার আসা যাক নায়িকাদের কথায়। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, একমাত্র জুহি চাওলা আর মনীষা কৈরালা ছাড়া আর কোনও নায়িকারই নিজস্ব ভ্যানিটি ভ্যান নেই। কারিনা কাপুর থেকে শুরু করে ক্যাটরিনা কাইফ, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রনি মুখার্জি বা আসিন থোত্তুমকল প্রত্যেকেই ব্যবহার করনে ভাড়া করা ভ্যানিটি ভ্যান। এই ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে বলিউডময় ছড়িয়ে আছে অনেক গুজবও। ঐশ্বর্য রাই ও বিবেক ওবেরয় প্রেম কাহিনীর মধ্যে হঠাৎ যখন গোঁত্তা খেয়ে পড়লেন সালমান খান, তখন নাকি সালমানকে এড়াতে একদিন এই ভ্যানিটি ভ্যানের মধ্যেই নাকি ঝাড়া ঘণ্টা দেড়েক লুকিয়ে ছিলেন বিবেক। নিজের ভাড়া করা ভ্যানিটি ভ্যানের মধ্যেই নাকি জয়া বচ্চনের সঙ্গে অভিষেককে নিয়ে বেশ আকচা আকচিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন রানি মুখার্জি। আবার ভাড়া করা ভ্যানিটি ভ্যানের মধ্যে এসিতে একটি বিষাক্ত পোকা আটকে দম বন্ধ হওয়ার যোগাড় হয়েছিল অসিনের।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *