মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি অনেকেই জটিল ও স্বতন্ত্র মনে করেন। কারণ, সাধারণ মানুষের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় না। বরং, এটি ইলেক্টোরাল কলেজ (United States Electoral College) নামের এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে, যা ঐ রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
কে হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হয় না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে।
ইলেক্টোরাল কলেজ কী?
‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হলো এক ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য সরাসরি ভোট না দিয়ে বিশেষ নির্বাচকদের ভোট প্রদান করে। এই নির্বাচকরা তাদের ভোটটি সেই প্রার্থীর পক্ষে প্রদান করেন যিনি রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন। একটি প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে হলে তাকে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
কিভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ?
প্রতিটি রাজ্যের জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে সেখানে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট থাকে। বৃহৎ জনসংখ্যার রাজ্য যেমন ক্যালিফোর্নিয়া সর্বাধিক ৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে থাকে, এবং ভায়োমিং, আলাস্কা এবং নর্থ ডাকোটা (এবং ওয়াশিংটন ডিসি)-র মতো যেসব অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা খুবই কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট পায়। সাধারণত যে প্রার্থী কোনো অঙ্গরাজ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ভোট পান, তিনি সেই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোট লাভ করেন।
উদাধারণ স্বরূপ বলা যায়, টেক্সাসে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলিই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও, তাহলেও জয়ী প্রার্থী অতগুলি ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন।
যদিও মাইন এবং নেব্রাসকা এই দুটি রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে ভোটগুলো অনুপাতে ভাগ হয়ে থাকে। অর্থাৎ মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কারা?
‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ বলতে সেই ব্যক্তিদের দলকে বোঝানো হয়, যারা কোনো অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে ভোট প্রদানের অধিকারী।
‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ আসলে এক ধরনের কর্মকর্তা পরিষদ, যাদের ‘ইলেক্টরস’ বা নির্বাচকমণ্ডলী বলা হয়। প্রতি চার বছর পর এই পরিষদ গঠন করা হয়, এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বেছে নেন।
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টরের সংখ্যা কংগ্রেসে তার প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এটি গণনা করা হয় রাজ্যের সেনেটরদের সংখ্যা (প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে দুইজন) এবং জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি পরিষদের প্রতিনিধিদের যোগফল থেকে।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে বেশি জনসংখ্যার রাজ্যগুলির ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি হয়।
যে প্রার্থী কোনো অঙ্গরাজ্যে জয়ী হন, সাধারণত নির্বাচকরা তাকেই ভোট দেন। তবে কিছু অঙ্গরাজ্যে নির্বাচকদের আইনি স্বাধীনতা আছে—তারা চাইলে জনগণের ভোটের সঙ্গে মিলিয়ে না গিয়ে নিজেরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তবে রাজ্যের ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট দেওয়া একেবারেই বিরল। ইউএস অফিস অফ ফেডারেল রেজিস্ট্রার অনুসারে, মার্কিন ইতিহাসে “৯৯ শতাংশেরও বেশি ইলেক্টোরাল ভোটাররা তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ীই ভোট দিয়ে এসেছেন”।
প্রকৃতপক্ষে, নির্বাচকরা সাধারণত সেই প্রার্থীকেই ভোট দেন, যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন। তবে কোনো নির্বাচক যদি অঙ্গরাজ্যে নির্বাচিত প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দেন, তাকে ‘ফেইথলেস’ বা অবিশ্বাসী নির্বাচক বলা হয়।
২০১৬ সালের নির্বাচনে এভাবে সাতটি ইলেক্টোরাল ভোট দেওয়া হয়েছিল, যদিও তা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি। কিছু অঙ্গরাজ্যে ‘ফেইথলেস’ নির্বাচকদের বিরুদ্ধে জরিমানা বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
এই পদ্ধতি শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সব নির্বাচনে সরাসরি জনগণের ভোটের ভিত্তিতেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল?
১৭৮৭ সালে, ব্রিটেন থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ার পর মার্কিন সংবিধান যখন রচিত হচ্ছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা ক্ষমতাকে একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে না। রাজতন্ত্রের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে এমন ব্যবস্থা থেকে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এই ব্যবস্থার প্রণয়নকারীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে ভোটাররা যথেষ্ট জানাশোনার মাধ্যমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট শিক্ষিত কিনা। তখন জাতীয় সাক্ষরতার হার কম ছিল এবং সেই সময়ে অন্য কোন দেশই জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে নেতাদের বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।
এছাড়া সে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত ছিল না। ফলে বিশালাকার দেশটিতে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা অসম্ভব ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ফাউন্ডিং ফাদার্সরা সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটো ধারণাই বাতিল করে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের বদলে নির্বাচনী প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এর মাধ্যমে ছোট রাজ্যগুলোও তাদের প্রভাব বজায় রাখতে পারে এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব অব্যাহত থাকে। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।
ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার ভাল-মন্দ
ইলেক্টোরাল কলেজের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এর অন্যতম সুবিধা হলো, এটি ছোট ছোট রাজ্যগুলোকেও নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে সহায়ক করে, যা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবার, এতে করে প্রার্থীরা শুধুমাত্র বড় রাজ্যগুলোর দিকেই নজর দেন না, বরং ছোট রাজ্যগুলোকেও মনোযোগ দিয়ে প্রচারণা চালান। প্রার্থীদের গোটা দেশ ঘোরার দরকার হয় না, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতি নজর দিলেই চলে। এছাড়া, পুনর্গণনা সহজতর, কারণ নির্বাচন কর্মকর্তারা একটি অঙ্গরাজ্যের সমস্যা সহজে চিহ্নিত করতে পারেন।
তবে এর অসুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো, সাধারণ ভোটে সর্বাধিক ভোট পেয়েও কোনো প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ভোটারদের একাংশের মনে হয় যে তাদের ব্যক্তিগত ভোটের কোনও মূল্য নেই এবং কথিত ‘সুইং স্টেট’গুলির হাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অত্যধিক ক্ষমতা পেয়ে যায়।
‘সুইং স্টেট’ এবং এর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কিছু অঙ্গরাজ্য ধারাবাহিকভাবে একই দলকে ভোট প্রদান করে আসছে। মর্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’। প্রেসিডেন্টপ্রার্থীদের এসব রাজ্য নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না বা মনোযোগ দিতে হয় না।
তবে কিছু ‘সুইং স্টেট’ আছে যেখানে ভোট প্রার্থীর ওপর নির্ভর করে ভিন্ন দলের পক্ষে যেতে পারে। এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয় পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি। এই রাজ্যগুলোতেই হয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই ধরনের রাজ্যগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে ‘বেগুনি রাজ্য’।
কম ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট
কম পপুলার ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পাঁচবার ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রার্থীরা ইলেকটোরাল কলেজে জয়ী হলেও পপুলার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। ঘটনাগুলো হলো:
- ২০১৬: ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও তিনি হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েছিলেন।
- ২০০০: জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে আল গোরকে পরাজিত করেন, যদিও গোরের পপুলার ভোট ছিল ৫ লাখ বেশি।
- ১৮৮৮: রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন ২৩৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এক লাখ ৪৫৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
- ১৮৭৬: রিপাবলিকান রাদারফোর্ড বি হেইজ ১৮৫টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্যামুয়েল জে টিলডেন দুই লাখ ৬৪ হাজার পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
- ১৮২৪: ইলেকটোরাল কলেজ চারজন প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে হাউজ জন কুইন্সি অ্যাডামসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, যদিও এন্ড্রু জ্যাকসন তার চেয়েও বেশি পপুলার ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন।
ইলেক্টোরাল ভোটে টাই হলে কী হবে?
কোনো প্রার্থী যদি ২৭০ ভোটের স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করতে পারেন, তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার দায়িত্ব মার্কিন কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভসের উপর বর্তাবে।
এই ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে ১৮২৪ সালে। ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট চারজন প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান নি।
বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দুটির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওইরকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই।
ইলেক্টোরাল কলেজের পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক
ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এর সমর্থকরা বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারালিস্ট প্রকৃতিকে সমর্থন করে এবং ছোট রাজ্যগুলোর মূল্যায়ন বাড়ায়। অন্যদিকে এর সমালোচকরা মনে করেন যে এটি জনপ্রিয় ভোটের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো অযোগ্য প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর সুযোগ তৈরি করে।
ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দেশটির রাজনৈতিক ঐতিহ্যেরও প্রতিফলন ঘটায়। তবে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তা এই ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা ও কার্যকারিতা নিয়ে এক বিশেষ আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে।
Leave a Reply