সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসাবে ক্যারিয়ার

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসাবে ক্যারিয়ার

 

বর্তমান সময়টাই এখন সোশ্যাল প্লাটফর্ম ও অনলাইন মার্কেটিং-এর। কাস্টমার যখন দিনের বড় একটা সময় সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এক্টিভ থাকে তখন একটি নয়, বরং বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়াকিং সাইটে নিয়মিত নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখতে হয় প্রতিটি ব্র্যান্ডকে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ের মত সোশ্যাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে এবং তা রক্ষা করে থাকে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি মার্কেটিং বিভাগের স্পেশালাইজড একটি পদ।

 

কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গড়তে চান?

ক্যারিয়ার হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বেছে নেওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিন যে এই সেক্টরটি আপনার জন্য সঠিক কিনা।

দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে ‘অফিসে ফেসবুক ইউজ করে উল্টো টাকা পাওয়া যায়’! বাইরে থেকে দেখে অনেক সহজ মনে হলেও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে যারা কাজ করে তাদের কাজ শুধু ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম স্ক্রল করা, কমেন্টের রিপ্লে বা পোস্ট তৈরিতেই সীমাবদ্ধ নয়। একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার  ম্যানেজার সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা তদারকির মূল দায়িত্বে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে সেল হয় সেটার সাথে সাথে রয়েছে কাস্টমার সার্ভিসও রয়েছে। এ জন্য তাঁদের আরও অনেক ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে হয়। ব্র্যান্ডের সোশ্যাল প্রেজেন্স এবং রিপোটেশন পুরোটা সমলাতে হয়। সপ্তাহে সাত দিনই ইন্টারনেটে এক্টিভ থাকতে হয়। একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারের অনলাইনে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখার দক্ষতা থাকতে হয়, ইন্ডাস্ট্রির নতুন সব ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে ও দ্রুততার সাথে অংশগ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হয়, বিশ্লেষণাত্মক মনোভাব থাকতে হয় এবং খুব ভালো কপিরাইটিং জানতে হয়।

আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন আইডিয়ার জন্ম দিতে হবে – এবং কখনোই আপনি শতভাগ নিশ্চিত হতে পারবেন না যে আইডিয়াটি কাজ করবে কিনা। একটা বেস্ট সেলিং বই বা সুপার হিট সিনেমার যেমন প্রুভেন ফর্মুলা নেই – তেমনি আইডিয়াটি ‘ভাইরাল’হবে তার নিশ্চয়তা নেই। এ ধরনের একটি চাকরিতে আপনাকে প্রতিদিন কি ধরণের চাপের মুখে তো থাকতে হবে বুঝতেই পারছেন। পাশাপাশি আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী, আন্তরিক, সক্রিয় এবং যে কোনো পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম।

 

কাজের সুযোগ

এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক হয়ে উঠছে। তাই প্রায় সকল ছোট-বড় সব ধরণের কোম্পানিগুলোতেই এই পেশার চাহিদা রয়েছে। এইসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার প্রচারের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং টিমে বা মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের নিয়োগ দেয়া হয়। অপরদিকে এখনকার দিনে সেলিব্রেটিরা এবং নন-প্রফিটরাও নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ চালানোর জন্যও লোক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রজেক্টে এ পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। ছকবাঁধা চাকরি ছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রচুর কাজের সুযোগ আছে। এক কথায়, এই পেশার কাজের ক্ষেত্র অসংখ্য। তাই চাহিদাও বেশি।

একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ কী?

  • কাস্টমারদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সোশ্যাল মিডিয়া সংযোগ গড়ে তোলার জন্য স্ট্রাটেজি তৈরিতে সহায়তা করা
  • প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে সোশ্যাল মিডিয়াতে কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা বানানো
  • সোশ্যাল মিডিয়াতে চলমান কোম্পানির প্রেজেন্স প্লানিং মনিটরিং এবং অডিট।
  • কোম্পানি এবং ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে অপ্টিমাইজ অনলাইন এডভার্টাইজমেন্ট চালু করা
  • প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের জন্য স্টান্ডার কন্টেন্ট তৈরি ও সেগুলো নিয়মিত পোস্টিং করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তদারকি এবং কন্টেন্ট পারফরম্যান্স নিয়মিত পরীক্ষা করা
  • কনটেন্ট মার্কেটিং এবং ওয়েবসাইট আপডেটের জন্য ক্রিয়েটিভ আইডিয়া প্রদান
  • ইউজার এক্সপিরিয়েন্স উন্নত করতে ডিজাইনারদের সাথে সহযোগিতা করা
  • সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, এডিটর ও কাস্টমার সাপোর্ট কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া
  • সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য বাজেট ও কাজের পদ্ধতি ঠিক করা
  • বিভিন্ন ওয়েব অ্যানালিটিক্স টুলস (গুগল অ্যানালিটিক্স, ওয়েবট্রেন্ডস ইত্যাদি) ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রচেষ্টার কার্যকারিতা পরিমাপ করা
  • অনলাইন মার্কেটিং ট্রেন্ডের ইনসাইটস জানা এবং স্ট্রাটেজিগুলি আপ-টু-ডেট রাখা
  • সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষেণ করা ও এর উপর রিপোর্ট তৈরি করা
  • সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের অন্যান্য কর্মী ও সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রাখা
  • মিডিয়া এজেন্সি এবং বিক্রেতাদের সাথে পার্টনারশিপ বজায় রাখা

 

একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিস ও আকার অনুযায়ী যোগ্যতার ধরন আলাদা হয়।

 

যোগ্যতা

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ: যে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করা যায়। তবে, কর্পোরেট হাউসগুলো মার্কেটিং, ম্যাস কমিউনিকেশন বা পাবলিক রিলেশন, অথবা এগুলোর সাথে রিলেটেড বিষয়ের ওপর ব্যাচেলর্সদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের চাকরি পেতে শুধুমাত্র ডিগ্রি বা কোর্স যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি আবশ্যকও নয় – যদি আপনি এই অবস্থানের জন্য নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করার ক্ষমতা রাখেন।

এ জন্য আপনাকে নতুন সব সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড ও যে কোনো পরিবর্তনের দিকে খেয়াল তো রাখতে হবেই, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় টুল যেমন: SEO টুল, কন্টেন্ট তৈরি ও কিওয়ার্ড বিশ্লেষণ (keyword analysis) সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। আপনার জানার আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে অনলাইনে প্রচুর রিসোর্স পাবেন।

বয়স: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত আপনার বয়স কমপক্ষে ২৮ বছর হতে হবে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যেকোনো বয়সের মানুষই কাজ করতে পারে। তবে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

অভিজ্ঞতা: সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বা ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসাবে ২ – ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে কাজে দেয়।

 

একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আইডিয়া এবং বেস্ট প্র্যাকটিসের চমৎকার বোঝাপড়া
  • সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচিত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা
  • ওয়েব অ্যানালিটিক্স টুল সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা (যেমন, Google Analytics, NetInsight, WebTrends ইত্যাদি)
  • এড সার্ভিং টুল নিয়ে কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা (যেমন, DART, Atlas ইত্যাদি)
  • বাংলা ও ইংরেজি – দুই ভাষাতেই ভালো যোগাযোগ করতে পারা
  • বিশ্লেষণাত্মক মানসিকতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তা
  • দল পরিচালনা করার দক্ষতা
  • ব্যবসায়িক ধারণা
  • ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট লেখায় দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা
  • ডিজাইন সম্পর্কে ধারণা
  • চমৎকার যোগাযোগ এবং সোশ্যাল স্কিল

 

চাকরি পাবো কীভাবে?

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারের চাকরিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয়তার সাথে সাথে বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। তাই ডিজিটাল বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের উপরে কোর্স করে ইন্টার্নশিপ বা ভলান্টিয়ারিং অবস্থানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করার মাধ্যমে চাকরিদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। অথবা একটি ব্যক্তিগত ব্লগ শুরু করে নিজের সোশ্যাল প্লাটফর্মের প্রোফাইলগুলো ম্যানেজ করেও আপনার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন।

কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে অনুযায়ী নিজের সিভি আপডেট করার পর লিংকডইন এবং জব সার্চিং পোর্টাল বা অ্যাপে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বা ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুঁজতে থাকুন। এর সাথে সাথে আপনার পছন্দের কোম্পানিগুলোর সোশ্যাল প্লাটফর্মের পেজেগুলোতে চাকরির সুযোগ খুঁজে দেখতে ভুলবেন না!

 

আয়রোজগার

মাসিক আয়টা পুরোপুরি নির্ভর করে কাজ ও প্রতিষ্ঠানের উপরে। তবে সেটা গড়ে ৳২০,০০০ – ৳৪০,০০০ বেতন হয়। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথে সাথে বাড়তে থাকে অংকের পরিমাণটা এর সাথে যোগ হয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। ফ্রিল্যান্সিং করেও বেশ ভালো পরিমাণের আয় করা সম্ভব। তবে এর জন্য নিজের কাজের খুব ভালো পোর্টফোলিও থাকা প্রয়োজন।

 

ক্যারিয়ার গ্রাফ

সাধারণত মার্কেটিং বিভাগের এন্ট্রি লেভেলে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, জুনিয়ার এক্সিকিউটিভ (ডিজিটাল মার্কেটিং), সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বা ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসাবে কয়েক বছর কাজ করার পর ধাপে ধাপে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, এসিসটেন্ট ম্যানেজার, ম্যানেজার, সিনিয়ার ম্যানেজার পদে উন্নীত হবেন। পারফরম্যান্স ভালো হলে ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবচেয়ে উঁচু পদ পেতে পারেন মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের পরিচালক বা প্রধান হিসাবে।

প্রস্তুতি

চাকরি পেয়ে থেমে থাকলে তো হবে না। ক্যারিয়ারে যদি উন্নতি করতে চান, তাহলে নিজের স্কিলকে আরও বাড়াতে হবে। আপনার ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পর্কিত নতুন সবকিছু নিয়ে পড়াশোনা করুন, থট লিডারদের ফলো করুন , ইন্ডাস্ট্রি লিডার ও গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে হয়তো একদিন আপনি আপনার স্বপ্নের কোম্পানিতে ডিপার্টমেন্ট হেড হিসেবে কাজ করতে পারবেন। অথবা চাইলে এই অভিজ্ঞতা ও পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কনসালটিং ফার্মও খুলতে পারবেন।

অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আপনি যা শিখতে চান, যা জানতে চান – সবই রয়েছে আপনার হাতের নাগালে। তাই আর দেরি না করে প্রস্তুতি শুরু করে দিন। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে আগ্রহ আর একটু প্রচেষ্টা থাকলেই আপনি হয়ে যেতে পারবেন একজন সফল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের সাথে এক্সেল করার জন্য, নতুন পন্থা, উদীয়মান চ্যানেল এবং মার্কেটিংয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আপডেট থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

  • সোশ্যাল মিডিয়াতের ইমেজের আকার সম্পর্কে আপ-টু-ডেট তথ্য পেতে চেক করুন: sproutsocial.com/insights/social-media-image-sizes-guide/
  • জরিপ, পোল, প্রশ্নপত্র তৈরি করুন: www.surveymonkey.com/curiosity/topic/polling/
  • প্রেজেন্টেশন তৈরি করুন: slideshare.net
  • বিভিন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করার টেমপ্লেট: canva.com/templates/

 

পডকাস্ট, ইমেইল নিউজলেটার এবং পাবলিকেশনগুলি খুঁজুন যা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কভার করে যা আপনি নিয়মিতভাবে রেফারেন্স করতে পারেন এগিয়ে থাকর জন্য।

  • ডিজিডে – digiday.com
  • মার্কেটিং ডাইভ – marketingdive.com
  • সোশ্যাল মিডিয়া টুডে – socialmediatoday.com
  • সোশ্যাল মিডিয়া এক্সামিনার – socialmediaexaminer.com

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *