রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার

একজন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন দেশী-বিদেশী এনজিও, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন। বাংলাদেশের মত উন্নয়ণশীলদেশে রিসার্চ অফিসার হিসেবে কাজের সুযোগ অনেক। বিস্তারিত জানাচ্ছেন: শামস্ বিশ্বাস

 

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার

 

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার অফিসার বা রিসার্চ স্পেশালিস্ট গবেষণার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও সঠিক নিয়মে ব্যবহার নিশ্চিত করেতে গবেষণা প্রকল্পে কাজ করেন।

 

কাজের সুযোগ

বাংলাদেশের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য অনেক দেশী-বিদেশী এনজিও, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, বহুজাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংস্থায় স্থায়ী ভাবে কিংবা বিভিন্ন প্রকল্পে চুক্তির ভিত্তিতে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। তাই বাংলাদেশে রিসার্চ অফিসার হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন দেশী-বিদেশী এনজিও, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগ অনেক।

 

কাজের ধরণ

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসারের কাজ ছোটবড় সব প্রতিষ্ঠানে প্রায় একই ধরণের। সাধারণ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার যে সব দায়িত্ব পালন করে থাকে তা হলো:

  • রিসার্চের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও অন্যান্য কাঠামো নির্দিষ্ট করে প্রজেক্ট বা সংস্থার কর্তৃক নিদ্ধারিত গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দেয়া।
  • গবেষণা প্রকল্পের প্রোপোজাল তৈরি করা।
  • রিসার্চ টিমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা এবং গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর সাথে সমন্বয় করা।
  • বাজেট তৈরিতে এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা করা।
  • কর্মী নিয়োগ, অভিযোজন, প্রশিক্ষণ, কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন, পদোন্নতি এবং ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা।
  • তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্বাচন করা এবং সঠিকভাবে অনুসারণ করচ্ছে কি না তা মনিটরিং করা।
  • সংগৃহীত তথ্য থেকে উপযুক্ত তথ্য নির্বাচন করে তা বিন্যাস ও বিশ্লেষণ করা।
  • রিসার্চের ওয়ার্কের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, রিপোর্ট তৈরি করা।
  • রিসার্চের টিমের সদস্যদের কাজ মনিটর করা এবং সময়মত কাজ আদায় করে নেওয়া। নিয়মিত এক্টিভিটির রিপোর্ট তৈরি করা।
  • গবেষণার ডাটাবেস এবং সংস্থার ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা।
  • আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা, ইনভয়েস প্রসেসিং, খরচ অনুমোদন।
  • গবেষণা শেষে রিসার্চ পেপার প্রকাশ করা।

যোগ্যতা

প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিস ভেদে যোগ্যতার ধরন আলাদা হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার কাজ করতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চাওয়া হয়।

বয়স: সাধারণত চুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রামে বয়সের সীমা থাকেনা। তবে স্থায়ী হিসেবে নিয়োগের জন্য ২৫-৪০ বছরের প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

অভিজ্ঞতা:

পড়াশোনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়, পরিসংখ্যান ও পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, পরিবেশ বিজ্ঞান, অর্থনীতিতে পড়াশোনার সুযোগ আছে। এর পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞানের বেশ কিছু বিষয়ের উপর স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

দক্ষতা ও জ্ঞান

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসারের মূল দক্ষতা হলো উন্নয়নখাত সম্পর্কে ধারণা, গবেষণা পদ্ধতির জ্ঞান, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে দক্ষতা। এর সাথা সাথে প্রয়োজন: তথ্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা, যোগাযোগ এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা।

 

একজন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে সফল হতে হলে যে সব বিষয়ে দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয় তা হলো:

  • বাংলাদেশের উন্নয়ন গবেষণা খাত সম্পর্কে ধারণা।
  • প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা কাজের পরিকল্পনা তৈরি করতে পারা।
  • বাংলাদেশের বাস্তবতায় গবেষণা করার বিভিন্ন পদ্ধতি, প্রপোজালের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গবেষণা বাস্তবায়নে দক্ষতা।
  • গবেষণা পত্র লেখায় দক্ষ।
  • যোগাযোগের দক্ষতা।
  • বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষার উপর দক্ষতা।
  • তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও যাচাই এ দক্ষ।
  • বাজেট তৈরি এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ।
  • আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা, ইনভয়েস প্রসেসিং, খরচ অনুমোদন।
  • তথ্য বিন্যাস, বিশ্লেষণ এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা।
  • কর্মী নিয়োগ, অভিযোজন, প্রশিক্ষণ, কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন, পদোন্নতি এবং ধরে রাখায় দক্ষতা।
  • গবেষণা কর্মীদের তদারকি করার দক্ষতা।
  • সমগ্র গবেষণার বিভিন্ন টিমের মধ্যে সমন্বয় করে সময়মত নির্ভুল পদ্ধতিতে গবেষণা বিশ্লেষণ ও সমাধান করার সামর্থ্য।

আয়রোজগার

ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টের বেতন প্রতিষ্ঠানভেদে ১০-২০ হাজার টাকা। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কয়েকটি প্রকল্পে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে যেকোন বেসরকারি সংস্থা বা প্রকল্পে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এ পদে বেতন প্রতিষ্ঠানভেদে ২০-৫০ হাজার টাকা। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকল্পগুলো বেতনের অংক দাঁড়াল লাখ টাকায়। এর সাথে থাকে নানা সুযোগসুবিধা।

ক্যারিয়ার গ্রাফ

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ শুর করতে হলে ক্যারিয়ারের শুরু করতে হবে শিক্ষানবিশ বা গবেষণা সহকারি হিসেবে। কোন প্রকল্পে বা গবেষণা সংস্থার সাথে যুক্ত থেকে কয়েক মাস সহকারি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এই সেক্টরের কোন ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র রিসার্চ অফিসার পদে কাজ করা সম্ভব। ৫-১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আন্তর্জাতিক মানের সংস্থায় কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে। কাজের অভিজ্ঞতা এ পেশায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করার পরে  রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার অফিসার এবং পরবর্তীতে সিনিয়র রিসার্চ অফিসার বা রিসার্চ স্পেশালিস্ট হিসেবে পদোন্নতি হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *