প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর

একজন প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর বা প্রোগ্রাম সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যে কোন প্রোজেক্টের সমন্বয় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধায়নে নিয়োজিত থাকেন। এই পদে যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রোজেক্ট ভিত্তিক চাকরির সুযোগ রয়েছে তেমনি বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও তে রয়েছে সর্বাধিক কাজের সুযোগ। 

 

প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর

 

প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম অফিসার বা প্রোজেক্ট ম্যানেজার সক্রিয়ভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রোজেক্ট ভিত্তিক বা বেসরকারি সংস্থার পক্ষে সফল পরিকল্পনা এবং শিক্ষাগত, পেশাদার বা দাতব্য প্রোগ্রামের সমাপ্তির তত্ত্বাবধানের কাজ করেন। তাদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে নেতৃস্থানীয় প্রোগ্রাম স্টাফ এবং তাদের মধ্যে দায়িত্ব অর্পণ করা, প্রোগ্রামের বাজেট পর্যবেক্ষণ করা এবং কীভাবে তহবিলকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায় তা নির্ধারণ করা এবং স্থানীয় কমিউনিটির সাথে জড়িত থাকার জন্য আউটরিচ দায়িত্ব পালন করা।

 

 

কাজের সুযোগ

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখন আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। এসকল প্রোজেক্টের দেখভাল ও সমন্বয় এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটরের।

বাংলাদেশে সাধারণত বেসরকারি সংস্থার বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে সবসময় মানবতার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জনসাধারণের নীতি, সামাজিক, মানবাধিকার, পরিবেশগত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলমান থাকে। এইসব প্রোজেক্ট এর অধীনে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছে প্রচুর কাজের সুযোগ। এর সাথে সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা অধিদপ্তর, আই সি টি বিভাগ এর অধীনে রয়েছে প্রোজেক্ট ভিত্তিক সরকারি কাজের সুযোগ।

এছাড়াও প্রাইভেট সেক্টরে যেসব প্রোজেক্ট হচ্ছে সেখানেও সঠিক উপায়ে প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করার গুরুত্ব অসীম। তাই কাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র প্রচুর রয়েছে।

 

দায়িত্ব

◉ প্ল্যান, অর্গানাইজিং ও ম্যানেজমেন্টের সাথে সম্পৃক্ত থেকে টেকনিক্যাল গাইডেন্স প্রদান ও প্রোজেক্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।

◉ ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট স্টাফ, সাবজেক্ট রিলেটেড স্পেশালিষ্ট এবং কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া

◉ স্টেকহোল্ডারদের সাথে চুক্তি।

◉ মনিটরিংয়ের জন্য সাইট ভিজিট।

◉ এজেন্ডা, ডিসকাশন ম্যাটেরিয়াল এবং মিটিং নির্ধারণ করাসহ এডভাইজর কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন।

◉ প্রজেক্ট প্রোগ্রেস রিপোর্ট, টার্মিনাল রিপোর্ট ও প্রজেক্ট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি।

◉ একটি প্রোগ্রাম এবং তার কার্যক্রমের পরিকল্পনা এবং সমন্বয় সমর্থন।

◉ নীতি এবং অনুশীলনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

◉ বাজেট বজায় রাখা এবং খরচ/লেনদেন ট্র্যাক করা।

◉ মিডিয়া সম্পর্ক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ পরিচালনা।

◉ দল এবং বহিরাগত দলগুলোর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করা।

◉ সভা/ইভেন্টের সময়সূচী নির্ধারণ এবং সংগঠিত করা এবং এজেন্ডা বজায় রাখা।

◉ সমস্ত ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত করা (ভিডিও কনফারেন্সিং, উপস্থাপনা ইত্যাদি)।

◉ কাগজপত্র এবং অর্ডার ম্যাটারিয়াল প্রস্তুত।

◉ আপডেট রেকর্ড রাখা এবং প্রতিবেদন বা প্রস্তাব তৈরি করা।

◉ গ্রোথ এবং প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট।

 

 

যোগ্যতা

বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও তে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে যোগদান করতে চাইলে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যে কোন বিষয় যেমন: অর্থনীতি, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা বা সরকারি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোজেক্টে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতে হলে এমবিবিএস বা পাবলিক হেলথ এর উপর ডিগ্রী থাকতে হবে।

 

 

দক্ষতা ও জ্ঞান

◉ ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় লেখা ও কথা বলার দক্ষতা।

◉ দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।

◉ পল্লী ও দুর্গম অঞ্চলে কাজ করার আগ্রহ থাকতে হবে।

◉ টেকনিক্যাল ও ফাংশনাল স্কিল থাকতে হবে।

◉ লোকাল অথরিটি, ফোকাস গ্রুপের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

◉ রিপোর্ট প্রদান, প্রেজেন্টেশন, ও ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতাগুলো থাকতে হবে।

◉ জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

◉ প্রোজেক্ট সম্পর্কে সকল প্রকার জ্ঞান থাকতে হবে।

 

 

পড়াশোনা

দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান পড়বার সুযোগ আছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ পড়ার সুযোগ আছে।

পাবলিক হেলথ এর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-চট্টগ্রাম সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

 

আয়রোজগার

সাধারণত বেসরকারি সংস্থায় মাসিক বেতন ৩০-৮০ হাজার টাকা। সরকারি বড় ধরনের প্রোজেক্টে কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্ষেত্রে মাসে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব।

 

ক্যারিয়ার গ্রাফ

প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হল মিড লেভেলের চাকরি। এটি একটি প্রোগ্রাম এবং এর কার্যক্রমের সংগঠনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের কাজ করেন। এর সাথে দল পরিচালনা এবং জনসংযোগের মতো কাজগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চায়লে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর একটি রাস্তা। ক্যারিয়ার হিসেবে প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর খুবই আকর্ষণীয়, কেননা এই পেশায় রয়েছে বিদেশী সংস্থার সাথে কাজ করার সুযোগ। এছাড়া অধিকাংশ চাকুরী প্রোজেক্ট নির্ভর, তাই নতুন অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ সর্বদা বিদ্যমান। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে দেশের বাইরেও কাজের সুযোগ রয়েছে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *