সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশা জগতে এসেছে নানা পরিবর্তনের ছোঁয়া। বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তাই রাজা। আর তাদের কৃপা পেতে উদ্ভব ঘটেছে নানা পেশার। তেমনই একটি পেশা হচ্ছে পণ্যের বিপণন ব্যবস্থাপনা। একজন প্রডাক্ট ম্যানেজারের কাজ – ভোক্তার কাছে পণ্যটি পরিচিত করে তোলা থেকে শুরু করে, পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণ করা। একজন ভোক্তার কাছে পণ্যকে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে একজন প্রডাক্ট ম্যানেজার তার মেধা ও
মননের সমন্বয় ঘটান।
প্রডাক্ট ম্যানেজার কে
প্রডাক্ট ম্যানেজারের মূল কাজ হলো – সম্ভাব্য পণ্য শনাক্ত করে পণ্য উন্নয়ন করা, বাজার গবেষণা করা, পণ্য চাহিদা তৈরি, বিবরণ নির্দিষ্টকরণ, উৎপাদন সময়সূচি তৈরি, মূল্য নির্ধারণ, পণ্য পরিচিতির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন। পণ্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব পর্যায়ে জড়িয়ে থাকেন প্রডাক্ট ম্যানেজার। প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে কাজের স্বাধীনতা অনেক। রয়েছে নিজেকে সৃষ্টি করার সুযোগ।
দায়িত্ব
একজন প্রডাক্ট ম্যানেজার এবং তার টিমকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ প্রডাক্টের ব্র্যান্ডিং একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা ক্ষণিকের জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি দিয়ে মাপ করা যাবে না। আর ব্র্যান্ডিং তো কেবল চাকচিক্য বিজ্ঞাপন নয়, এর সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু। পণ্যের মান আর সেবাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ দিকটাও একজন প্রডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে তত্ত্বাবধান করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশে মূলত নব্বইয়ের দশকের পর থেকেই আমাদের দেশীয় করপোরেট হাউসে ব্র্যান্ডিং কথাটা জনপ্রিয় হতে থাকে। এর মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানের একটা বাড়তি ইমেজ তৈরি হয়, ভালো ধারণার জন্ম হয়, এটা উপলব্ধি করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তুতি
প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টে যারা ক্যারিয়ার গড়াতে চায় তাদের মনে রাখতে হবে যে, এই পেশায় সৃজনশীলতার চর্চার বিকল্প নেই। এখানে সব সময়েই প্রয়োজন হবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের সর্বোচ্চ প্রচার নিশ্চিত করা এবং পণ্যটিকে টার্গেট কাস্টমারের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। আর এই কাজে একটি স্থানে আটকে থাকলে চলবে না কোনোভাবেই। একেক ধরনের পণ্যের টার্গেট কাস্টমার একেক ধরনের। তাই ভোক্তাদের মনস্তত্ত্বটা বুঝতে হবে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্টে নিয়ে তত্ত্বীয় জ্ঞানটা পাবেন। তবে এর বাইরে প্রতিষ্ঠিত প্রডাক্ট এবং ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে নিজ দায়িত্বেই পড়ালেখা করে যেতে হবে। চাইলে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া যাবে। প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে রয়েছে প্রচুর অনলাইন কোর্সও।
যোগ্যতা
বিবিএ ও এমবিএতে মার্কেটিংয়ে মেজর করলে বা পড়াশোনা করলে প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ও ব্র্যান্ডিংয়ের অনেক কিছুই জানা হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে তাকে অবশ্যই কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। তবে এ পেশায় শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করলেই চলবে না, পাশাপাশি থাকতে হবে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস এবং সৃজনশীল চিন্তাশক্তির অধিকারী হতে হবে। প্রডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে উন্নতি লাভ করতে হলে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সঠিক বাস্তবায়নের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটায় সক্ষম হতে হবে তা হলো পরিশ্রম করার মানসিকতা, যা এই পেশার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। নতুনরা যারা চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী এবং কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে, তারা এ পেশায় ভালো দক্ষতা প্রমাণ করতে পারবে।
কাজের সুযোগ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের করপোরেট সেক্টরে প্রডাক্টের মার্কেটিং নিয়ে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। উন্মুক্ত হয়েছে সম্ভাবনার সব দুয়ার। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে মার্কেটিংয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত করে থাকে এবং প্রথমে সাধারণত এক্সিকিউটিভ অথবা ট্রেইনি অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কাজের দক্ষতার মাধ্যমে নিজ যোগ্যতা অনুসারে দু-তিন বছরের মধ্যে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এবং এরপর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ও পরে ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি লাভের সুযোগ রয়েছে।
আয়-রোজগার
এক্সিকিউটিভ হিসেবে একজন প্রার্থীকে প্রতিষ্ঠানের আকার এবং ব্যবসা অনুসারে প্রথমেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়। কাজে সফলতা অর্জন করতে পারলে তিন-চার বছরের মধ্যে বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। আর যদি পদোন্নতি লাভ করতে পারলে পাঁচ-সাত বছর পর বেতন দাঁড়াবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাল্টিন্যাশনাল বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় অবশ্য আরও ভালো বেতন কাঠামো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে ভালো কাজ দেখাতে পারলে বছর তিন-চারেকের মধ্যেই বেতন লক্ষাধিক টাকা হয়ে যেতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ভালো অফার আসতেই থাকবে। মোট কথা, এ পেশায় দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে ‘স্কাই ইজ লিমিট’। এই পেশায় কাজকে ভালোবেসে নিজের মনে করে কাজ করলে সফলতা আসবেই।
Leave a Reply