ইরানের মিসাইল কীভাবে পৌঁছাল ইসরাইলে?
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা এবং এই সংঘাতে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নয় বিশ্ব দেখছে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের দুই দেশের মধ্যে আকাশযুদ্ধের নতুর যুদ্ধ কৌশল। এই সংঘাত শুধুমাত্র অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির প্রমাণ নয়, বরং “ব্যাটলফিল্ড বিয়ন্ড বর্ডারস” নামে নতুন যুদ্ধকৌশলের প্রকাশ। আজকের বহুরৈখিকে আমরা ইরান ও ইসরাইলের হামলার কৌশল, প্রযুক্তি, আঞ্চলিক প্রভাব এবং অনুরূপ ঐতিহাসিক যুদ্ধের তথ্য বিশ্লেষণ করব।
প্রায় ১,৭২৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ইরান-ইসরায়েল। এই দুই দেশের মধ্যে ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব এবং কিছু ক্ষেত্রে কুয়েতের আকাশসীমা রয়েছে। এই বিশাল ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করে ইরান ২০২৫ সালের ১৩ জুন রাতে ইসরাইলের তেল আবিব, জেরুজালেম, রামাদগান এবং হাইফায় ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পালটা জবাবে ইসরাইল তেহরান, ইসফাহান এবং সিরিয়ার দামেস্কে আঘাত হেনেছে। এই হামলাগুলো শুধুমাত্র অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির প্রমাণ নয়, বরং নতুন ধরনের ভয়বহ যুদ্ধকৌশলে।
১. সংঘাতের শুরু
২০২৫ সালের জুনে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সমরাকি কর্মকর্ত -বিজ্ঞানিসহ নিহত হন শতশত বেসমারিক জনগন। এর জবাবে ইরান “অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩” নামে তিন ধাপের হামলা শুরু করে: প্রথমে ব্যালিস্টিক মিসাইল, তারপর ক্রুজ মিসাইল এবং শেষে ড্রোন।
২. ইরানের তিন স্তরের কৌশল
ইরানের হামলার সাফল্যের পেছনে তিনটি মূল কৌশল কাজ করেছে, যা প্রযুক্তি, প্রক্সি বাহিনী এবং আঞ্চলিক সমন্বয়ের সমন্বয়ে কার্যকর হয়েছে।
ক. উচ্চ কক্ষপথের ব্যালিস্টিক মিসাইল
ইরান মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (MRBM) যেমন শাহাব-৩, ফাতেহ-১১০, এবং খাইবারশেকান ব্যবহার করেছে। এই মিসাইলগুলোর সীমা ১,৫০০ থেকে ২,০০০ কিলোমিটার, এবং এগুলো মহাকাশে উচ্চ কক্ষপথে (sub-orbital trajectory) উঠে যায়। এই পথে চলার ফলে মিসাইলগুলো ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান বা সৌদি আরবের আকাশসীমায় প্রবেশ না করেই ইসরাইলে পৌঁছায়। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর গতি ম্যাক ৫ বা তার বেশি, এবং বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় এগুলোর উচ্চ গতি ইসরাইলের আইরন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং এরো সিস্টেমের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এই মিসাইলগুলোর নির্ভুলতা এবং প্রতিরক্ষা-ভেদন ক্ষমতা ইরানের সামরিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা প্রকাশ করে।
খ. ছায়াযুদ্ধ ও ড্রোন কৌশল
ইরানের শাহেদ-১৩৬ এবং মোহাজের-৬ ড্রোন নিচু উচ্চতায় উড়ে চলে, যা রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কমায়। এই ড্রোনগুলো সরাসরি ইরান থেকে ছোড়া হয় না, বরং ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস (PMF), সিরিয়ার ইরানপন্থী মিলিশিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হাউথি বাহিনীর ঘাঁটি থেকে নিক্ষেপ করা হয়। এই প্রক্সি বাহিনীগুলো ইরানের কৌশলগত সম্প্রসারণের অংশ, যারা ইরানের নির্দেশে ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল (যেমন সৌমার) লঞ্চ করে। এই ড্রোনগুলো জর্ডান বা সৌদি আরবের আকাশসীমা পেরিয়ে ইসরাইলে পৌঁছায়। ড্রোনের নিচু গতি এবং উচ্চতা রাডারের জন্য শনাক্ত করা কঠিন করে, এবং এগুলো প্রায়শই রাতের অন্ধকারে বা ভূখণ্ডের আড়ালে চলাচল করে।
গ. জ্যামিং ও রাডার ব্লাইন্ড স্পট
ইরান অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশল (Electronic Warfare) ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- জিপিএস স্পুফিং: ইরান শত্রুর জিপিএস এবং স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমে ভুয়া সংকেত পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করে। এর ফলে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুল লক্ষ্যবস্তুতে ফোকাস করে বা ড্রোন/মিসাইলের অবস্থান সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
- রাডার ব্লাইন্ড স্পট: রাডারের স্ক্যানিং সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে ইরান ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল পাহাড়, ভূখণ্ড বা সংকেত প্রতিফলনের ফাঁকে পাঠায়। এই অদৃশ্য এলাকাগুলো ব্যবহার করে মিসাইল ও ড্রোন রাডারের নজর এড়ায়।
- ডিকয় ও ছলনা: ইরান ডিকয় মিসাইল বা ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করে। এই ডিকয়গুলো ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মনোযোগ আকর্ষণ করে, যার ফলে আসল মিসাইলগুলো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
৩. ইসরাইলের পালটা হামলা
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়াও তাদের এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেট, জেরিকো-৩ ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ড্রোন ব্যবহার করে তেহরান, ইসফাহান এবং সিরিয়ার দামেস্কে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইলের হামলার কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- স্টিলথ প্রযুক্তি: এফ-৩৫ জেটগুলো রাডারে ধরা পড়ে না, যার ফলে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এগুলো শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
- সাইবার যুদ্ধ: ইসরাইল ইরানের রাডার, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কমান্ড সেন্টারে সাইবার হামলা চালিয়েছে, যা ইরানের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে।
- সুনির্দিষ্ট হামলা: ইসরাইলের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং রেভল্যুশনারি গার্ডের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরাইলের হামলাগুলো প্রধানত সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে ইরানপন্থী বাহিনী থাকলেও তারা বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে থেকে অনেকটা কোণঠাসা এছাড়া ইসরাইলের বিমান বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সেদেশে অভিযান চালিয়ে আসছে।
৪. আঞ্চলিক আকাশসীমা ও নীরব অনুমতি
ইরানের মিসাইল ও ড্রোন ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব এবং কুয়েতের আকাশসীমা পেরিয়েছে। এই দেশগুলোর ভূমিকা নিম্নরূপ:
- ইরাক: ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইরাকের আকাশসীমা ইরানের জন্য উন্মুক্ত। পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস (PMF) ড্রোন ও মিসাইল লঞ্চে সহায়তা করেছে।
- সিরিয়া: ইরানের দীর্ঘদিনের মিত্র সিরিয়ার আকাশসীমা ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে, ইসরাইলও সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে।
- জর্ডান ও সৌদি আরব: এই দেশগুলো ইসরাইলের সাথে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করলেও, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের মিসাইল বা ড্রোনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল না। এটি “নীরব অনুমতি” হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যেখানে তারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করে ইরানের হামলাকে পথ দিয়েছে।
- কুয়েত: কুয়েত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে, তবে তাদের আকাশসীমা সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫. অনুরূপ ঐতিহাসিক যুদ্ধের উদাহরণ
ইরান-ইসরাইল সংঘাতের এই আকাশযুদ্ধ আধুনিক যুদ্ধকৌশলের একটি নতুন নজির স্থাপন করেছে। তবে, ইতিহাসে এমন কিছু যুদ্ধ রয়েছে যেখানে দূরপাল্লার মিসাইল, ড্রোন এবং প্রক্সি বাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হলো:
ক. ইরাক-ইরান যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮): শহরের যুদ্ধ
১৯৮০-এর দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় উভয় দেশ ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে একে অপরের শহরে হামলা চালিয়েছিল, যা “শহরের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। ইরাকের স্কাড মিসাইল এবং ইরানের প্রাথমিক ব্যালিস্টিক মিসাইল তেহরান ও বাগদাদে আঘাত হেনেছিল। এই যুদ্ধে দূরপাল্লার মিসাইলের ব্যবহার আধুনিক আকাশযুদ্ধের ভিত্তি তৈরি করে।
খ. ইয়েমেন যুদ্ধ (২০১৫-বর্তমান): হাউথি ড্রোন ও মিসাইল
ইরান-সমর্থিত হাউথি বাহিনী সৌদি আরবের তেল স্থাপনা এবং শহরগুলোতে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের আরামকো তেল স্থাপনায় হাউথিদের ড্রোন হামলা বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে ধাক্কা সৃষ্টি করেছিল। এই হামলাগুলো ইরানের প্রক্সি কৌশল এবং ড্রোন প্রযুক্তির প্রাথমিক প্রয়োগ প্রদর্শন করে।
গ. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২-বর্তমান): ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে। এই ড্রোনগুলো নিচু উচ্চতায় উড়ে ইউক্রেনের অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনও তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এই যুদ্ধে ড্রোন ও মিসাইলের সমন্বিত ব্যবহার আধুনিক যুদ্ধের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
ঘ. ২০২০ আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ: ড্রোন যুদ্ধ
নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজান তুরস্ক ও ইসরাইলের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে আর্মেনিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছিল। এই যুদ্ধে ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার আধুনিক যুদ্ধে ড্রোনের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
৬. প্রযুক্তি নাকি কৌশল?
ইরান ও ইসরাইলের এই আকাশযুদ্ধে প্রযুক্তি ও কৌশল উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল, ড্রোন এবং জ্যামিং প্রযুক্তি দূরত্ব ও আকাশসীমার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছে। তাদের প্রক্সি বাহিনী ব্যবহার এবং রাডার ব্লাইন্ড স্পট কাজে লাগানোর কৌশল হামলাকে আরও কার্যকর করেছে। ইসরাইলের স্টিলথ প্রযুক্তি, সাইবার যুদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট হামলার কৌশল তাদের প্রতিরক্ষা ও পালটা হামলার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এই সংঘাতে প্রযুক্তি ও কৌশলের সমন্বয় যুদ্ধের নতুন ধরনকে সংজ্ঞায়িত করেছে।
৭. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখে বিশ্ব?
এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মিসরের নেতৃত্বে ২১টি মুসলিম দেশ ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দিলেও, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে কথা বলেছেন। রাশিয়া ও চীন ইরানের পক্ষে পরোক্ষ সমর্থন জানিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তেলের দাম বেড়েছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে, যদি বৃহৎ শক্তিগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়ে।
৮. যুদ্ধের নতুন ধরন: বিয়ন্ড বর্ডারস
ইরান-ইসরাইল সংঘাত যুদ্ধের ঐতিহ্যগত ধারণাকে বদলে দিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে সৈন্য প্রবেশ বা বিমান যুদ্ধের পরিবর্তে, দূরপাল্লার মিসাইল, ড্রোন এবং সাইবার কৌশল এখন যুদ্ধের মূল হাতিয়ার। ইরান ও ইসরাইল উভয়ই প্রমাণ করেছে যে ভৌগোলিক দূরত্ব এবং প্রতিবেশী দেশের আকাশসীমা আর বাধা নয়। এই “ব্যাটলফিল্ড বিয়ন্ড বর্ডারস” ধারণা যুদ্ধের গাণিতিক সমীকরণকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি, প্রক্সি বাহিনী এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশল মিলে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে।
এই ধারণার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- দূরপাল্লার অস্ত্র: ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন ব্যবহার করে হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা।
- প্রক্সি বাহিনী: তৃতীয় পক্ষ বা মিত্র গোষ্ঠী ব্যবহার করে সরাসরি দায় এড়ানো এবং হামলার পরিসর বাড়ানো।
- ইলেকট্রনিক ও সাইবার যুদ্ধ: জ্যামিং, জিপিএস স্পুফিং এবং সাইবার হামলার মাধ্যমে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করা।
- অ-প্রচলিত পথ: রাডার ব্লাইন্ড স্পট, নিচু উচ্চতার পথ এবং ভূখণ্ডের আড়াল ব্যবহার করে শনাক্তকরণ এড়ানো।
ইরান-ইসরাইল সংঘাত এই ধারণার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে ইরান পাঁচটি দেশের আকাশসীমা অতিক্রম করে এবং প্রক্সি বাহিনী ব্যবহার করে ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলও সিরিয়ার আকাশসীমা এবং সাইবার কৌশল ব্যবহার করে পালটা হামলা করেছে।
৯. ব্যাটলফিল্ড বিয়ন্ড বর্ডারসের ভবিষ্যৎ
ব্যাটলফিল্ড বিয়ন্ড বর্ডারস ধারণা ভবিষ্যৎ যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিকে বদলে দেবে। এই ধারণার কিছু সম্ভাব্য প্রভাব হলো:
- ড্রোন ও এআই-এর প্রাধান্য: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-চালিত ড্রোন ও অস্ত্র ব্যবস্থা যুদ্ধে আরও বেশি ব্যবহৃত হবে। এই ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত করতে পারবে।
- সাইবার যুদ্ধের উত্থান: সাইবার হামলা যুদ্ধের একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠবে, যেখানে শত্রুর যোগাযোগ, রাডার এবং অবকাঠামো অকার্যকর করা হবে।
- প্রক্সি যুদ্ধের প্রসার: প্রক্সি বাহিনী ব্যবহার করে দেশগুলো সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে পরোক্ষভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
- আঞ্চলিক জোটের জটিলতা: নীরব অনুমতি এবং আঞ্চলিক জোট ভবিষ্যৎ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
১০. উপসংহার
ইরান ও ইসরাইলের এই আকাশযুদ্ধ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং নতুন যুদ্ধকৌশলের এক অভূতপূর্ব সমন্বয়। ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল, ড্রোন, জ্যামিং প্রযুক্তি এবং প্রক্সি বাহিনীর ব্যবহার তাদের দূরত্ব ও আকাশসীমার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সক্ষম করেছে। ইসরাইলের স্টিলথ প্রযুক্তি, সাইবার যুদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট হামলা তাদের প্রতিরক্ষা ও পালটা হামলার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। ঐতিহাসিক যুদ্ধগুলোর সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, এই সংঘাত আধুনিক যুদ্ধের একটি নতুন মডেল। তবে, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বেড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এই সংঘাত আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী সংঘাতের দিকে ধাবিত হতে পারে। বেজেঠতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা।
Leave a Reply