আয়করের নথিপত্র তৈরি, রিটার্ন জমা দেওয়া, আইনি পরামর্শ ইত্যাদি সেবা দেওয়া আইনজীবীদের বলা হয় আয়কর আইনজীবী বা ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার (আইটিপি)।
আয়কর আইনজীবী হতে হলে
যাঁরা আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু অ্যাডভোকেট না, তাঁরাও চাইলে আয়কর আইনজীবী বা ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার (আইটিপি) হিসেবে প্র্যাকটিসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ট্যাক্স বারের সদস্য পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও আয়কর আইনজীবী হওয়ার জন্য এনবিআরে আবেদন করতে পারেন। একই সঙ্গে তাঁদের ট্যাক্স বারের সদস্য হতে হয়। অ্যাডভোকেট এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর ট্যাক্স বারের সদস্য হতে হবে। আবেদন করতে হবে নির্ধারিত ফরমে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৭৪ ধারায় করদাতার মনোনীত প্রতিনিধি হতে হলে তাঁকে আইনজীবী হতে হবে বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা কস্ট ম্যানেজমেন্টে বা আইন বিষয়ের ডিগ্রিধারীরা রাজস্ব বোর্ডের স্বীকৃত রেজিস্টার ট্যাক্সেস বারের সদস্য হতে হবে। ফলে দুইভাবে আইটিপি, আয়কর বা কর আইনজীবী হওয়া যায়। একটি হলো বার কাউন্সিলের সনদ নিয়ে, দ্বিতীয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইটিপি সনদ নিয়ে।
আয়কর আইনজীবী’র কাজের সুযোগ
আয়কর আইনজীবীরা আয়কর, সম্পদ, আমদানি শুল্ক, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি বিষয়ে মামলা পরিচালনা করেন। আয়কর সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একজন আয়কর আইনজীবীর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিয়োগের বাইরেও একজন আয়কর আইনজীবী নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। তবে আয়কর সংক্রান্ত হিসাবরক্ষণ ও সমস্যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ সাধারণ হওয়ায় আয়কর আইনজীবীর চাহিদা বাংলাদেশে অনেক। সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই সাধারণত আয়কর আইনজীবীদের কাজ করতে দেখা যায়। তবে একজন আয়কর আইনজীবীকে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক, চুক্তিভিত্তিক আবার কেসভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সাময়িক বিবেচনায়। সাধারণত আয়কর আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে থাকে –
- বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা,
- কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান,
- ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এমন ব্যক্তি,
- ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন এমন ব্যক্তি
- আয়কর নিয়ে সমস্যায় পড়েছে এমন প্রতিষ্ঠান।
সাধারণত বড়ো আকারের সব প্রতিষ্ঠানেই একজন আয়কর আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে যেক্ষেত্রে তাকে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও ধার্য করসহ সামগ্রিক হিসাবরক্ষণের কাজের পাশাপাশি প্রয়োজনে আয়কর মামলায় প্রতিষ্ঠানের হয়ে লড়তে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আয়কর আইনজীবীর কাজ হয় মামলা ও চুক্তিভিত্তিক।
আয়কর আইনজীবী’র দায়িত্ব
একজন আয়কর আইনজীবী কে আয়কর সংক্রান্ত মামলা লড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের সামগ্রিক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এর সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর পরিকল্পনা তৈরি করতে হয় এবং ব্যক্তির আয়কর সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে হয়।
আয়কর সংক্রান্ত সকল সম্ভাব্য এবং ঘটে যাওয়া অনিয়ম ধরা পড়লে সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে অবগত করতে হয়। এর সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আয়কর সংক্রান্ত মামলা বিশেষ করে আয়কর ফাঁকির মামলা হলে সে মামলা লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কাজে সহযোগীতা করতে হয়। আয়কর আইনজীবীকে আয়কর সংক্রান্ত মামলা লড়ার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ সমন্বয়, তথ্য বিনিময় ও ব্যবস্থাপনার কাজ করতে হয়। আয়কর সংক্রান্ত অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত ও সরকার কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে সেক্ষেত্রে আপিলের কাজ ও পরবর্তীতে মামলা লড়ার কাজ করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বা ভলান্টিয়ার হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের কাজ করতে হয়।
আয়কর আইনজীবী’র যোগ্যতা ও দক্ষতা
আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় আইন এবং আয়কর সংক্রান্ত সকলবিষয়াদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত পড়াশোনা করা এবং নিয়মিত জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। আইন ব্যাখ্যার ব্যাপারে পারদর্শিতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। ক্লায়েন্ট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দক্ষ ও বিচক্ষণ হতে হবে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ সমন্বয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। ফলাফলভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে নিবিষ্টচিত্তে হওয়া জরুরি একটি বিষয়। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ ও আয়করের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে দক্ষ হতে হবে। আর্থিক তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল তাই এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করতে হলে দায়িত্বশীল হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্বত্বাধিকারী এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তিকে তথ্য অধিগ্রহণের প্রয়োজনের ব্যপারে আশ্বস্ত করতে হবে।
আয়কর আইনজীবী’র আয়
আয়কর আইনজীবীদের আয়ের বিষয়টি নির্ভর করে অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত দক্ষতা, সামাজিক যোগাযোগ, মামলার ধরন ও মক্কেলের ওপর। সাধারণত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়কর আইনজীবীর আয়রোজগার বা কেসভিত্তিক সম্মানী বৃদ্ধি পায়।
Leave a Reply