গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা | ব্যবসা উদ্যোগ | ক্যারিয়ার টিপস

আমাদের দেশের গর্মেন্টস শিল্প রপ্তানি নির্ভর। আর এ খাতে কাজ করছে লাখ লাখ শ্রমিক। প্রতিনিয়তই দেশের অর্থনীতিকে তারা করছেন সমৃদ্ধ। রপ্তানি নির্ভর এ গার্মেন্টস শিল্পে বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু কারণে অনেক ফ্যাক্টরিতে শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যায়। আর বাতিল হয়ে যাওয়া শিপমেন্টের সকল পণ্যই হয়ে যায় স্টক। যে সকল কারণে গার্মেন্টস এ ষ্টক লটের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে অন্যতম হল শিপমেন্ট ক্যানসেল, শিপমেন্ট ডিলে কন্টিনুয়াস রি-চেক, এলসি সমস্যা ইত্যাদি। কিছু কিছু সময় বায়ার বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে শিপমেন্ট ক্যানসেল করে, যাতে করে সে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কম মূল্যে পণটি ক্রয় করতে পারে। মূলত কোন পণ্য ষ্টক হয়ে গেলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দাম কমে যায়। কম পুঁজি ও যারা শোরুম কিংবা সাধারণ দোকান দেওয়ার চিন্তায় আছেন, তাদের জন্য গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা হতে পারে অন্যতম ব্যবসা।

t-shirt tee clothing garment shirt fashion unisex woman - image source: pxhere.com
t-shirt tee clothing garment shirt fashion unisex woman – image source: pxhere.com

বাজার সম্ভাবনা
বর্তমানে বিদেশী বায়াররা ষ্টক লটের প্রতি খুব বেশি ঝুঁকে পরেছে। তার কারণ কম মূল্যে গার্মেন্টস ষ্টক ক্রয় করতে পারে তারা। ষ্টক লট বিভিন্ন সংখ্যার হতে পারে। হতে পারে শর্ট কোয়ান্টিটি স্টক লট অথবা লং কোয়ান্টিটি স্টক লট। সংখ্যার অনুপাতে এটা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের কাপড় এনে শহরের মার্কেট, শোরুম ও দোকানে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পোশাকের দোকানেও বিক্রি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে লোকভেদে বিক্রির কয়েকদিন পর দাম পরিশোধের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
যদি লোকাল মার্কেটের ক্রেতা পরিচিত থাকে তাহলে গুণগত মানে সেরা পণ্য বাজারদরের চেয়ে কম দামে কিনে ওই ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে এর স্যাম্পল নিয়ে লোকাল মার্কেটে গিয়ে দেখাতে পারেন। এতে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক ধারণাও বৃদ্ধি পাবে। এসব পণ্যের চাহিদা সব সময় থাকে।
তবে যাই হোক না কেন, এই খাতে বিনিয়োগ খুবই লাভজনক এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত এই পণ্য পঁচে না, যত্ন নিলে নষ্টও হয় না। উপরন্তু গার্মেন্ট স্টক লটের চাহিদাও অত্যধিক।

সুবিধা
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা বড় সুবিধি হল বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায়। দাম কম, পরিমাণে বেশি কেনা যায় এবং লাভ তুলনামূলক বেশি হয়।

অসুবিধা
না জেনে, না বুঝে গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সেলাই খরচ হতে পারে। এর সাথে সাথে সাইজে ভুল থাকতে পারে। আবার একসঙ্গে অনেক বেশি কিনে রাখতে হয়।

image source: pxhere.com
image source: pxhere.com

কোথায় পাওয়া যাবে
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসার জন্য খোঁজখবর রাখুন। দেখুন ও বুঝুন। বিভিন্ন বায়িং হাউজ, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি এবং অনেকে ছোট লটে গার্মেন্ট আইটেম বিক্রি করেন। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী লোকাল পার্টির কাছে বিক্রি করেন। তাদের কাছে ভালো মানের কালেকশন থাকে। কোনো বায়িং হাউজ কিংবা লোকাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সরাসরি গার্মেন্টস থেকে মাল নামানোর চেয়ে এটা কম ঝামেলার। কোথায় এবং কাদের কাছে কী পরিমাণ মাল আছে তা জানুন। ধীরে ধীরে গার্মেন্টসের দিকে হাত বাড়ান। পরিচিত কিংবা কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিন। এক্ষেত্রে ব্যবসার অগ্রগতি দ্রুততর হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটাই সবচেয়ে ভালো।

স্থান
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। তা না হলে আপনার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। বেশি ঝামেলায়ও পড়তে হবে না। দোকান, শোরুম বা অফিস না থাকলে, আপনার বাসায় শুরু করতে পারেন ব্যবসাটি। এজন্য বেশি কিছু লাগবে না। একটা টেবিল, দুইটা চেয়ার, কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় কাপড়। এতেই আপনার অফিস ভালো চলবে, যা দিয়ে প্রাথমিক কাজ সহজেই সম্পন্ন করতে পারবেন।

পুঁজি
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা করতে প্রাথমিক অবস্থায় দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে পরিবারের কারো কাছে থেকে কিংবা আত্মীয় স্বজন, সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।

ধারণা
প্রথমে আপনি স্টক লটের ধারণা নিয়ে, জেনে ও বুঝে তারপর ছোট গার্মেন্ট থেকে স্টক কিনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি শুরু করুন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন। গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা শুরুর আগে যারা পুরাতন তাদের সাথে থেকে কিছু দিন ব্যবসা শিখতে হবে হুট করে কিছুই করা ঠিক নয়।

closet increase clothing factory stock industry fashion fabric storage image source: pxhere.com
closet increase clothing factory stock industry fashion fabric storage
image source: pxhere.com

যে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসার ক্ষত্রে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করুন। বায়ার পেয়ে আবেগী হওয়া যাবে না, ভালো করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিন। কোথা থেকে নেয়, কি পরিমাণ নেয়, কাদের সাথে লেনদেন করে তাদের খোজ খবর নিন। কিছু কিছু বায়ার প্রথমে টাকা লেনদেন ভালো করলেও পরে বড় লটের মাল নিয়ে টাকা দেয় না, তাই সাবধানে কাজ করুন। বাকিতে মাল দেয়া যাবে না। কারণ মূলধন একবার হারালে তা আর পাবেন না।
ম্যাক্সিমাম লট রিজেক্টশন এর কারণ হলো লিড টাইম বা টাইমলি দিতে না পারা, এর সাথে অনেক সময় ডাইং এবং গার্মেন্টস ফল্টস থাকতে পারে তাই নেয়ার আগে দেখে নিতে হবে। প্রাইস ফেক্ট হলে হতাশ হওয়া যাবে না। স্টক লট ব্যবসার সহজ থিউরি হলো যা কেনার সময় লাভ হয় না তা বেচার সময়ও লাভ হয় না এই ব্যবসার মুল বিষয় হলো প্রোডাক্ট প্রাইজ। তাই ব্যবসা করার আগে প্রাইস আর কোয়ালিটি নিয়ে ভাবুন। লটের রিজেক্টশন এর কারণ জেনে নিন । বড় ভলিউমের লট কেনার পর জন্য সাথে হায়ার করা এক্সপার্ট রাখতে পারেন, এতে আপনার রিক্স মিনিমাইজ হবে। স্টক লট কেনার আগে তার পার্টি হাতে রাখুন। অর্থাৎ, এই সেক্টর এর ব্যবসা নির্ভর করে বায়ার এর উপর তাই আগে বায়ার খুঁজুন পরে ব্যবসা। এতে রিস্ক কমে যাবে আপনার।
কাপড় আর গার্মেন্টস এর কোয়ালিটি সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা থাকা চাই কারণ নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের কিছু যায়গায় বিদেশী গার্মেন্টস এর ডিজাইন কপি করে নামি দামি ব্র্যান্ডের স্টক বলে চালিয়ে দেয় । তাই এই ধরনের স্টক ক্রয় করা থেকে সাবধান থাকা চাই। স্টক লট মানে তা ১০০% কোয়ালিটিফুল নয়, ১০০% ওকে হলে তা স্টক হতো না, স্টক লট মানে ৪০% পিউর। তাই কেনার সময় ১০০% ওকে বললে তা ঠিক নয়। বস্তা করা স্টক এর ক্ষেত্রে একটা সমস্যায় অনেকেই পরেন । অনেক সময় বিক্রেতা ভালো বস্তার সাথে গোপনে খারাপ বস্তা ঢুকিয়ে দেয়। অনেকেই এই ভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে। আর মাল পলি করার মানে এই নয় যে এটি ১০০% ভালো, মনে রাখতে হবে ভালো মাল কখনো স্টক হয়না। স্টক মানে ধরেই নিতে হবে ৬০% খারাপ তাই কেনার সময় আবেগী কম হতে হবে। বায়ার এর জেনুইন কপি অনেক সময় ১০০% কপি করে লোকালি প্রডিউস করা হয় একে মাস্টার কপি করা হয়, একে বোঝা খুব কষ্টকর, বায়ার মাস্টার কপি কিনতে চায় না।
প্রোডাক্ট দেখে কিনুন যেমন বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে চলার মতো লট কিনুন যেমন: ডেনিম, প্যান্ট শার্ট, পোলো শার্ট, টি শার্ট। অপ্রচলিত কিছু প্রডাক্ট যা আমাদের বাংলাদেশের মার্কেটের সাথে বা কালচার এর সাথে যায় না যেমন লিঞ্জারি, বিকিনি, সুইম সুট, সেক্সি সর্টস এমন প্রডাক্ট গুলি না কেনাই ভালো। কারণ। এগুলির জন্য আমাদের মার্কেট সীমিত।
এই ব্যবসা করার আগে স্টক লট এর সোর্স কোথায়, তার ধারনা থাকতে হবে কারণ আপনি সোর্স না জানলে আপনাকে মিডিয়ার ভায়া হয়ে কিনতে হতে পারে । আর ভায়া মানে প্রফিট কম আর রিক্স বেশি। স্টকের পরিমাণ কম হলে প্রাইস বেশি হওয়া স্বাভাবিক। খুব বেশি সমস্যা না হলে বায়ারদের কম প্রাইস বলবেন না। তার কারণ হলো একবার কম প্রাইস হলে পরের বার তারা বেশি প্রাইসে নিতে চায় না। যদি পারেন ডিরেক্ট ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল কিনুন, এতে লাভের পরিমাণ বেশি।
গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা বরতে হলে আপনার হাতে দেশী বায়ার ছাড়াও বিদেশী বায়ার থাকতে হবে, আর বায়ার দের ঠিকানা বা ডিরেক্টরি নেট থেকে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।

লাভ
স্টক লট ব্যবসায় লাভের কোনো লিমিট নেই। আপনি যদি পলো শার্ট ১৩০ করে এক হাজারটি মাল কিনে বিক্রি করতে পারবেন প্রতিটি ১৪০ টাকায়। টি-শার্ট ১২০ টাকা করে এক হাজারটি কিনে ১৩০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন। জিন্স প্যান্ট ২০০ থেকে ২২০ করে এক হাজারটি কিনে বিক্রি করা যাবে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ১৪০ থেকে ১৭০ করে এক হাজারটি কিনে বিক্রি করা যাবে ১৯০ টাকা করে। ছোটদের পোশাক এক সেট ২৫০ থেকে ৩০০ করে এক হাজারটি বিক্রি করা যাবে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। পণ্যের মান অনুযায়ী দাম কম-বেশি হতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *