প্যারেন্ট কোম্পানির নাম বদলেও খারাপ সময় যায়নি ফেসবুক (Facebook)-এর। তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত মেটা (Meta) প্ল্যাটফর্মসের কর্তাব্যক্তিরা। বিশ্বের শীর্ষ সোশ্যাল মিডিয়া DAU (Daily Active User) বা দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী কমছে। গত ১৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত কম DAU ফেসবুকের!
এই বিষয়ে মেটা জানিয়েছে, গত বছরের শেষ তিনমাসে ফেসবুকের দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা নেমে এসেছে ১.৯২৯২ বিলিয়নে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১.৯২৯ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে আরও একটি পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। সেখানে তারও আগের তিনমাসে ফেসবুকের DAU ছিল ১.৯৩০ বিলিয়ন।
একটি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বিবিসি মেটার বরাতে জানিয়েছে, টিকটিক (Tiktok) এবং ইউটিউব (Youtube)-এর সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে ফেসবুক কে। টিকটক ও ইউটিউবের তুলনায় ফেসবুকের আয় কমেছে। এছাড়াও ফেসবুকের বিজ্ঞাপন দাতারা বিজ্ঞাপন দেওয়া অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে লাভও কমেছে সংস্থাটির। শেয়ার বাজারে ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে তাদের শেয়ার। যার মূল্য প্রায় ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শেষ দুই ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ ২০২১ সালের অগাস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ব্যবহারকারী হারিয়েছে ফেসবুক। এদিকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত Facebook এর মুনাফা হয়েছে ১০.৩ বিলিয়ন। অর্থাৎ ১ হাজার ৩০ কোটি। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কম।
মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকের ব্যবসা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণরা ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। তারা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করায় ফেসবুক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গুগলের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের প্ল্যাটফর্ম মেটা। প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছে, অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন হওয়ার জন্যও ফেসবুকের বিজ্ঞাপন কমেছে। তবে ভিডিও ও ভার্চুয়াল থেকে ফেসবুকের আয় বাড়বে বলে আত্মবিশ্বাসী জাকারবার্গ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় বিশ্বব্যাপী ২০০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। সেই তুলনায় ১০ লাখ DAU কমে যাওয়া তেমন কোনও বিষয় নয়। যদিও সংস্থার কর্মকর্তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁদের বক্তব্য, গুগল (Google)-এর থেকে ডাউনলোডে এগিয়ে গেছে টিকটক। ফলে স্বভাবতই ফেসবুকেও ছাপিয়ে গেছে তারা। এই কারণে তাদের DAU বাড়ছে এবং ফেসবুকের কমছে।
বিভিন্ন ডেটা অ্যানালিসিসের মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ফেসবুক একটি ক্রমবর্ধমান প্ল্যাটফর্ম হলেও বর্তমানে জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। তার কারণ তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মের দিকে বেশি ঝুঁকছে। টিকটকের অন্যতম শীর্ষ মার্কেট ভারতের অ্যাপটি নিষিদ্ধ, কিন্তু এর পরিবর্তে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম (Instagram)-এর শর্ট ভিডিয়ো শেয়ারিংয়ের দিকেই বেশি করে ব্যবহার করছে তারা।
শর্ট-ফর্ম ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম মিউজিক্যাল লিপ-সিঙ্ক এবং ডান্সিং অ্যাপ টিকটক, যা চীনে ডুইয়িন নামেও পরিচিত। প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মধ্যে ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। ২০২০ সালের সবচেয়ে ডাউনলোড করা অ্যাপে ছিল টিকটক। টিকটকের মিশন “to inspire creativity and bring joy.”
প্রথম দেখায় মনে হবে, টিকটক অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মতো এটাও ফিড ও ফলোয়ার নির্ভর প্ল্যাটফর্ম। অন্যান্য নেটওয়ার্কের মতো এখানে অনেক বড় সেলেব্রিটিও রয়েছে। কিন্তু টিকটিক অন্যদের তুলনায় একটু ভিন্ন ধাঁচের। এর মূল পার্থক্য হচ্ছে ব্যবহারকারী ফিড। যেটা অ্যাপটিকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ নিজের সবচেয়ে ভদ্র ও সুন্দর রূপটি প্রকাশে আগ্রহী থাকে। কিন্তু মিম কালচার প্রভাবিত হওয়ায় টিকটকে উদ্ভট ও অপ্রচলিত অনেক কনটেন্ট পাওয়া যায়।
মূলত পছন্দের ফিল্টার এবং পার্সোনালাইজ রেকমেন্ডেশন ফিডের কারণেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ব্যবহার হচ্ছে এই অ্যাপটি।
২০২১ সালের নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ বিলিয়ন। যারা বয়েসে অত্যন্ত তরুণ: ৬৯% ব্যবহারকারীর বয়স ১৩-২৪ এর মধ্যে। মিলেনিয়ালদের ব্যবহারও বাড়ছে। চীন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের অডিয়েন্স সবচেয়ে বেশি। অ্যাপটির ৫০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহারকারী চীনের। শর্ট ভিডিয়ো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে টিকটক।
আমার লেখা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বইটি রকমারি থেকে নিতে লিংক ক্লিক করুন।
Leave a Reply