ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (ডিবিএ) একটি প্রতিষ্ঠানের সকল ডাটার রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করে থাকেন। বর্তমানে এটি একটি চাহিদাসম্পন্ন পেশা।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কি?
ডেটাবেজ মানে হচ্ছে তথ্যভান্ডার। কম্পিউটার আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ফাইলের স্তুপে জমা থাকতো তথ্য, এখন তথ্য সংরক্ষণ করা হয় ডেটাবেজে। একটা কোম্পানির অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ করা, এর মাধ্যমে ট্রানজেকশন, ইনভেন্টরি সহ আরও অনেক তথ্য জমা করে রাখতে হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ সাধারণত এক বা একাধিক ডাটাবেজ নিয়ে সেট করা হয়। আর এ পুরো কাজটিই নিয়ন্ত্রণ করে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর একটি প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজের সব বিষয় সম্পর্কে দায়িত্বশীল। এরা অনেকগুলো ডাটাবেজের বা নির্দিষ্ট একটি ডাটাবেজের দায়িত্বে থাকেন, এটা অনেকটা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আকার এবং ডাটাবেজের সংখ্যার ওপর।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে কাজের সুযোগ
- সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রজেক্ট যেমন: সরকারি ডাটা ম্যানেজমেন্ট খাত;
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন: এনজিওর ডাটা ম্যানেজমেন্ট খাত;
- ব্যাংক ও আর্থিক সেবার প্রতিষ্ঠান;
- আইটি বা আইটিএস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান;
- আউটসোর্সিং ফার্ম।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কী ধরনের কাজ করেন?
অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডাটাবেজের উপাত্ত ঠিকভাবে চলছে কি না তা নজরদারিতে রাখেন এবং ডাটা ওভারইউজ হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করেন। তারা ক্লিন-আপ এবং প্যাচিং প্রতিরোধক কাজগুলো বাস্তবায়ন করেন। এছাড়া ডাটাবেজের নকশা ও তথ্যানুসন্ধানের রিপোর্টে কোনো ধরনের উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে কি না, সেটা নিয়ে কাজ করেন। তারা ডাটাবেজের ব্যবহারকারীদের সেটআপ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সেটিংয়ের কাজ করেন। তথ্যানুসন্ধান, ডাটাবেজ নকশা করা, নিরাপত্তা, কর্মক্ষমতা ও পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি সব বিষয়ে একজন ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বিশেষ দক্ষতা থাকতে হয়।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সাধারণ যেসব কাজ বা দায়িত্ব পালন করে থাকে সেগুলো হল
- প্রতিষ্ঠানের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা;
- বিদ্যমান ডাটাবেজ আপডেট করা;
- ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা;
- সকল ডাটাবেজের ব্যাকআপ নিশ্চিত করা।
- ডাটাবেজের ব্যবহার তদারকি করা;
- ডাটাবেজ সার্ভারের সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করা।
- ডাটাবেজের নিরাপত্তা নিয়মিত যাচাই করা;
- ডাটাবেজে সমস্যা থাকলে তার সমাধান করা;
- ডাটাবেজের উপর রিপোর্ট তৈরি করা;
- আইটি ম্যানেজার ও ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা।
- তথ্যের প্রতিলিপি ব্যবস্থাপন এবং পর্যবেক্ষণ।
- ডাটাবেজের তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও নিরাপত্তা প্রদান করা।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের যোগ্যতা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকধারীদের চাওয়া হয়। এছাড়া কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান হতে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি অথবা ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকলেও এ পদের জন্য আবেদন করা যায়। প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত তা ২৫ থেকে ৩৫ বছর। এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণত ২-৩ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
- ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা;
- ডাটাবেজ সম্পর্কের তত্ত্বিক জ্ঞান,
- ডাটাবেজ অবজেক্ট (ট্রিগার সম্পর্কে, ভিউ, ও অন্যান্য অবজেক্ট সম্পর্কে জানতে হবে।)
- ডাটাবেজ ডিজাইন (ডাটাবেজ চালানোর জন্য কার্যকর ডিজাইন জানতে হবে এবং ভালোভাবে কাজ করে কি না তা নিশ্চিত করা।)
- রিলেশনাল ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরডিবিএমএস) সম্পর্কে জ্ঞান (যেমন: মাইক্রোসফ্ট এসকিউএল সার্ভার বা মাইএসকিউএল)
- স্ট্রাকচার্ড কুয়েরি ল্যাংগুয়েজ (এসকিউএল) সম্পর্কে জ্ঞান (যেমন: এসকিউএল/পিএসএম অথবা ট্রান্স্যাক্ট-এসকিউএল)
- ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং আর্কিটেকচার সম্পর্কে ধারণা (যেমন: ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল)
- উইন্ডোজ বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভালো ধারণা,
- অ্যাডভান্স এসকিউএল (জটিল ফিচারগুলো সম্পর্কে বেশি করে জানতে হবে, যেমন- রিকারসিভ কোয়েরি, সাব কোয়েরি, কার্সরস, টেম্পোরারি টেবিল ও ডাটা ওয়্যারহাউজিং অথবা ইটিএল প্রসেসিং।)
- স্টোরেজ টেকনোলজি এবং নেটওযার্ক সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো জ্ঞান।
- সার্ভার, নেটওয়ার্কিং ও অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কিত জ্ঞান;
- খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারা;
- ধৈর্যের সাথে মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা;
- অটোমেশন কনফিগারেশন নিয়ে কাজ করা।
- কোয়েরি অপটিমাইজেশন (কীভাবে কোয়েরি, সূচি ব্যবহার করা যায়, বিদ্যমান কোয়েরি কীভাবে উন্নত করা যায়।)
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হতে হলে কোথায় পড়বেন?
বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারী অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়।
সার্টিফাইড ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর
সার্টিফাইড ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হওয়ার জন্য অনেক সার্টিফিকেশন আছে। এর মধ্যে রয়েছে বেশকিছু ভেন্ডর সার্টিফিকেশন। ডাটাবেস বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তার নির্দিষ্ট কোর্সের ওপর পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক বা প্রকৃত দক্ষতা যাচাই করে ভেন্ডর সার্টিফিকেশন দেয়। অনেক কম্পিউটার টেনিং সেন্টার এবং ইন্সটিটিউটও ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপরে ট্রেনিং নিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর-এর উল্লেখযোগ সার্টিফিকেশন হল:
- আইবিএম সার্টিফাইড অ্যাডভান্সড ডেটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর – লিনাক্স, ইউনিক্স এবং উইন্ডোজের জন্য ডিবি২ ১০.১
- আইবিএম সার্টিফাইড ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর – লিনাক্স, ইউনিক্স এবং উইন্ডোজের জন্য ডিবি২ ১০.১
- ওরাকল ডাটাবেজ ১২সি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সার্টিফাইড প্রোফেশনাল
- ওরাকল মাইএসকিউএল ৫.৬ ডেটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সার্টিফাইড প্রোফেশনাল,
- এমসিএসএ এসকিউএল সার্ভার ২০১২/২০১৪
- এমসিএসই ডেটা প্ল্যাটফর্ম সলিউশনস এক্সপার্ট
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের আয়রোজগার
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বেতন প্রতিষ্ঠানেভেদে আলাদা। তবে ২-৩ বছর জুনিয়র ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসিক বেতন ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকা হয়ে থাকে। ৬-১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসিক বেতন লাখ টাকার উপরে হয়ে থাকে।
ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের ক্যারিয়ার গ্রাফ
এন্ট্রি লেভেলে ক্যারিয়ার শুরু হবে জুনিয়র ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে। সাধারণত ৫ বছরের মধ্যে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে প্রমোশন হবে। নিজের কাজে দক্ষ হলে ১৫-২০ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগের প্রধান পদে নিযুক্ত হবার সুযোগ রয়েছে।
Leave a Reply