বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার নাম বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও। বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে এই বিপিও খাত। কাজের সুযোগ থাকায় প্রতিনিয়তই বিপিও সেক্টরে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। তরুণদের মধ্যে পছন্দসই খণ্ডকালীন চাকরির যত ক্ষেত্র আছে, বিপিও সেক্টর তার অন্যতম।
বিপিও কী? : বিপিওর পূর্ণ রূপ হচ্ছে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং। বিপিও মূলত আউটসোর্সিংয়েরই একটি ধরন, যাতে নির্দিষ্ট কোনো বিজনেস প্রসেসের পরিচালনাগত কিছু দায়িত্ব তৃতীয় কোনো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়া হয়। বিপিও কাজের একটি বড় অংশ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, এগুলো সাধারণত ITES (ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবল্ড সার্ভিস) বিপিও নামে পরিচিত। আউটসোর্সিং বলতে কেবল কল সেন্টার আউটসোর্সিং নয়। টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংক, বিমা, হাসপাতাল, হোটেলের ব্যাক অফিসের কাজ, এইচআর, আইটি অ্যাকাউন্ট সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার বিষয়টি সাধারণভাবে বিপিও বলে পরিচিত।
কাজের সুযোগ : ২০০৮ সাল থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশে যে বিপিও সেক্টরের সূচনা হয়েছিল, তা এরই মধ্যে একটি সম্মানের জায়গা সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং নিজেদের সমতা ও উল্লেখযোগ্যতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বিপিও সেক্টর বাংলাদেশের এক নতুন সম্ভাবনার নাম। আমাদের দেশে কল সেন্টার ও ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমেই মূলত বিপিওর ধারাটির সূচনা ঘটে। প্রথমে ছোট আকারে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন এটি বেশ বড় আকারে ধারণ করেছে। আইসিটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের যে সাফল্য, তার উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে বিপিও খাতের। বছরে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসে আইসিটি খাত থেকে। সরকার আইসিটি সেক্টর থেকে ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আশা করা যায়, তার বেশিরভাগই আসবে বিপিও থেকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) হিসাবমতে, বর্তমানে দেশে কল সেন্টারসহ বিভিন্ন আউটসোর্সিং কোম্পানিতে কাজ করছে প্রায় ৩৫ হাজার তরুণ। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির কারণে দেশে বিপিও সেক্টরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি পড়াশোনার পাশাপাশি সুবিধামতো সময়ে কাজের সুযোগ থাকায় প্রতিনিয়তই এ খাতে তরুণদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বিপিওর জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ বাংলাদেশ। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান ও শ্রমের নিম্নব্যয়ের কারণে বাংলাদেশ বিপিও মানচিত্রে দ্রুত অগ্রগতি করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করছে। এদের বিরাট অংশ বিপিও সেক্টরে কাজ করতে পারে। যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
যোগ্যতা : বাংলাদেশের তরুণদের বিরাট অংশ বিপিও সেক্টরে কাজ করতে পারে। এ খাতে যারা কাজ করবে তাদের মাত্র দুটি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। প্রথম যোগ্যতা – ‘অ্যাবিলিটি টু লার্ন’ অর্থাৎ আমি জানি না, জানতে চাই – এই মনোভাব থাকতে হবে। দ্বিতীয় যোগ্যতা – ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ তথা যোগাযোগে দক্ষতা।
সব বয়সীদের এ সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগও। বিপিওতে দুই ধরনের কাজ হয়ে থাকে। একটি হলো ভয়েসের মাধ্যমে, আরেকটি লিখিত কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভয়েসের মাধ্যমেই বেশি কাজ করা হয়ে থাকে। যারা বিপিওতে ভয়েসের মাধ্যমে কাজ করে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ধরাবাঁধা কোনো নিয়মের কম নেই। এখানে অল্প শিক্ষিতরাও কাজ করতে পারে। আর যারা লিখিত বিষয় নিয়ে কাজ করে তারা শিক্ষিত হলে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষার্থীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছে, বিপিও কী, এখানে কাজের সম্ভাবনা কতটুকু। অনেকেরই ধারণা ছিল, বিপিও মানেই কল সেন্টার। এ ভুল ধারণাটি গত বছরের প্রচার-প্রচারণার ফলে অনেকটা দূর হয়েছে।
বিপিও কাজের ধরন বা কল সেন্টারের ধরন এবং তারা যে সেবা দেয় তার ওপর মূলত নির্ভর করে আবেদনকারীর শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা। কল সেন্টারের বেশিরভাগ কাজই খ-কালীন। তবে পাশাপাশি পূর্ণকালীন কাজের জন্যও কল সেন্টারগুলোয় প্রচুর লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। আর তাই কল সেন্টারে খ-কালীন ও পূর্ণকালীন চাকরির জন্য যোগ্যতাগুলোও হয় ভিন্ন।
খণ্ডকালীন চাকরির জন্য আবেদন করতে আবেদনকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে অনার্স বা ডিগ্রি পড়ুয়া হতে হবে। পূর্ণকালীন চাকরি করতে আবেদনকারীকে কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আবেদনকারীকে শুদ্ধ করে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলা, সুন্দর উপস্থাপনা, কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা, স্মার্ট, উপস্থিত বুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বাড়তি যোগ্যতা থাকা দরকার। যদি সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনার আওতায় এ নিয়ে কাজ করতে পারি, তাহলে অল্পদিনে বাংলাদেশকে বিপিওর বিশ্ববাজারে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আয়রোজগার : বিপিওতে যারা কাজ করছে, প্রথম দিকে বেতন মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আয়রোজগার।
প্রশিক্ষণ : বিপিওতে যারা কাজ করছে, তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্যও যে কেউ নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে। এ জন্য এখন যারা বিপিওতে কাজ করছে, তাদের গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। না হলে নতুন কাজ সৃষ্টি হবে না।
Leave a Reply