সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বই-পুস্তক, খাতা-কলমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও এর সংশ্লিষ্ট দফতরও বাড়ছে। কাজেই বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা প্রভৃতি বাঁধানোর জন্য বাঁধাই ব্যবসা হতে পারে চমৎকার ব্যবসার উদ্যোগ।
কেন বাঁধায় ব্যবসা?
তুলনামূলক কম পুঁজি দিয়ে বাঁধায় ব্যবসা শুরু করা যায়। এছাড়া বাঁধাই উপকরণ সহজলভ্য। যোগাযোগ ক্ষমতা প্রয়োগ করে কাজের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। দোকান করার জন্য তুলনামূলক কম জায়গা প্রয়োজন।
বাজার সম্ভাবনা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত, ব্যাংক সবখানেই নানা ধরনের বই ও আনুষঙ্গিক সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এসব প্রয়োজনীয় উপকরণ সুন্দর ও মজবুত করার জন্য বাঁধাইয়ের দরকার হয়। বই বাঁধাই না করলে তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে যেতে পারে। বছরজুড়ে বই ও খাতা বাঁধানোর কাজ চলে। ভোক্তার চাহিদামত অর্ডার নিয়ে প্রয়োজনীয় বই-খাতা প্রভৃতি বাঁধিয়ে দিয়ে এর বিনিময়ে মজুরি নেওয়া হয়। সাধারণত ছাত্রছাত্রীরাই বেশি বই-খাতা বাঁধায়। ছাপাখানা বা প্রকাশনা কর্তৃক অর্ডার অনুযায়ী তাদের বই, খাতাপত্র, রেজিস্টার প্রভৃতি বাঁধানোর কাজ করা যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করে তা দিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টার, শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের খাতা, অফিস ফাইল, ফাইল বোর্ড, থিসিস, জার্নাল, রিপোর্ট প্রভৃতি তো আছেই। যদি বাঁধায়ের দোকানটি এমন জায়গায় স্থাপন করা যায় যেখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি সংখ্যায় আছে তাহলে ব্যবসা আরও ভালো চলবে৷
প্রশিক্ষণ
বাঁধায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা প্রয়োজন এ জন্য অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকেও এ ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে হবে এর সাথে সাথে দক্ষ কারিগরের কাছ থেকে কাজটা শিখে নেওয়া ভালো। এছাড়া
পুঁজি
বাঁধানোর ব্যবসার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। তাই এই চাকরির আকালে যে কেউ মোটামুটি অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসায় নেমে পড়তে পারেন। কারণ পেশা হিসেবে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন আনার জন্য এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাঁধানোর ব্যবসায় শুরুর জন্য পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার মূলধনের প্রয়োজন। যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তবে পরিবারের কারো কাছে থেকে কিংবা আত্মীয় স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক, সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।
উপকরণ
যেকোনো আকারের বই বাঁধাই করার জন্য বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন হবে৷ সেইসাথে দোকান করার জন্যও সবসময় লাগবে এমন কিছু জিনিস দরকার৷ এ সব উপকরণের মধ্যে রয়েছে – ধারালো ছুরি, কাঁচি, স্কেল, কাঠের ফ্রেম, সুচ, ভ্রমর, হাতুড়ি প্রভৃতি। কাঁচামালের মধ্যে রয়েছে আঠা, কাপড়, সুতা, রেক্সিন প্রভৃতি।
সাবধানতা
বই অথবা খাতা কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে সব পাতা যেন সমানভাবে কাটা হয়। সেলাই মজবুত না হলে বা আঠা ভালো করে না শুকালে পাতা খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোদের তেজ কম হলে আঠা শুকাতে সময় লাগে। তাই একটু সময় নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে বাতাসে আঠা শুকাতে হবে সুচ, সুতা, ভ্রমর, হাতুড়ি, কাটার, কাঁচি প্রভৃতি ব্যবহার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন হাত না কেটে যায়
কিভাবে বাঁধাই করতে হবে
অন্যান্য জার্নাল বা রিপোর্ট বাঁধাই করার মত বই বাঁধাই করার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠার সংখ্যাকে কিছুটা হলেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বই বাঁধাই করতে যে সময় লাগবে ২০০ পৃষ্ঠার একটি বই বাঁধাই করতে একই সময় নাও লাগতে পারে৷ এক কথায় বলা যায়, পৃষ্ঠার উপর নির্ভর করে একই বই বাঁধাই করার সময় নিচের ৩টি বিষয়ে পার্থক্য দেখা দিতে পারে: (১) সময় বেশি লাগতে পারে, (২) রেক্সিন বেশি লাগতে পারে, এবং (৩) সেলাই বেশি লাগতে পারে।
আয়রোজগার
বই বাঁধানোর পর তার মজুরি নিয়ে অর্থ উপার্জন করা যাবে। নিজেরা বিভিন্ন ধরণের খাতা, অফিস ফাইল, ফাইল বোর্ড বিভিন্ন মাপের খাম এরকম বিভিন্ন স্টেশনারি দ্রব্যাদি বিক্রয় করে তা থেকে আয় করা সম্ভব। বই বাঁধানোর ব্যবসায় লাভের পরিমাণ নির্ভর করে বিনিয়োগ ও ক্রয়াদেশের ওপর। ছোট আকারে শুরু করলে প্রাথমিক অবস্থায় সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে গড়ে আট থেকে দশ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। তবে পর্যায়ক্রমে আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। স্থানভেদে আয় কম-বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় জিনিসপত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য।
Leave a Reply