আগর-আতর শিল্প

আগর-আতর শিল্প

আগর গাছ থেকে তৈরি হয় মূল্যবান ‘আতর’। এক কেজি আগর তেলের মূল্য কয়েক লাখ টাকা। ১ হাজার চারা রোপণ করে মাত্র ১৩ বছরে দেড় কোটি টাকা উপার্জন সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশেই চড়া দামে রফতানি হচ্ছে আগরজাতপণ্য। বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে উৎপাদিত এসব আতর রফতানি করে প্রতি বছর ৪০০-৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে আতর সংগ্রহ করা গেলে এটি দেশের রফতানি পণ্যের অন্যতম বৃহৎ খাত হয়ে উঠতে পারে।

আগর থেকে আতর

আগর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Aquilaria agalloa’। এটি একটি চিরসবুজ বৃক্ষ। এ গাছের উচ্চতা ৫০ ফুট থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত হয়। পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে হলে ২০ বছর লাগতে পারে। প্রাকৃতিক উপায়ে আগর গাছ শিকড়সহ উপড়ে নেয়া হয়। দুই উপায়ে আগর থেকে সুগন্ধি জাতীয় আতর বা পারফিউম উৎপাদন করা সম্ভব। প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উপায়ে আতর তৈরি করা যায়। আগর গাছের ডালপালা হঠাৎ মোটা হয়ে গেলে সে গাছ থেকে আতর উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। আবার কৃত্রিম উপায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সুগন্ধি বা আতর উৎপাদন করা সম্ভব।

আগর গাছের কোনো অংশই ফেলনা নয়। এগুলোর ছাল-বাকলসহ সব অংশই মূল্যবান। বেশি আতর পেতে প্রতিটি আগর গাছে ২ ইঞ্চি পর পর পেরেক মারা হয়ে থাকে। গাছ বড় হওয়ার পর সেটি ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এসব টুকরো তিন মাস পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে চুলার মাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ তাপ দিলে সেখান থেকে এক ধরনের রস বের হয়। ওই রসের উপরিভাগের তৈলাক্ত অংশ হাত দিয়ে তুলে উৎপাদন করা হয় আতর। এক কেজি আগর তেলের বাজারমূল্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। একটি পূর্ণবয়স্ক আগর গাছের মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। তেল তৈরির পর এ গাছের কাঠের টুকরোগুলো সুগন্ধি জ্বালানি হিসেবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি টুকরোর মূল্য ১০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। আর ১৩ বছরের পূর্ণবয়স্ক একটি আগর গাছ থেকে প্রক্রিয়া শেষে ২৫ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। ১ হাজার চারা রোপণ করে ১৩ বছর পর দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। অথচ এ পরিমাণ চারা তৈরি ও বনায়নের ব্যয় মাত্র ২৫ হাজার টাকা। এ গাছ থেকে আগরবাতি ছাড়াও তৈরি হয় তেল। আর এ তেল ব্যবহার হয় লোশন, আতর, সুগন্ধি তেল ও সুগন্ধি তৈরিতে। আগর তেলের ঔষধি গুণের কথাও অনেকের অজানা। চর্ম, অ্যাজমা ও বাতের চিকিৎসায় অনেক আগে থেকেই এটি ব্যবহৃত হয়।

শুরুটা যে ভাবে

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়- আগর, আতর ব্যবসায় সম্পর্কিত তথ্য বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত উপন্যাসিক অসকার ওয়াইলড এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘পিকচার অব ডবিয়ান প্রে’ তে আগরের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ আগর ইউরোপের জার্মান, বেলজিয়াম, আমেরিকা, কানাডা ও এশিয়ার জাপানের ঔষধ শিল্পে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের আসাম, মনিপুর, নাগাহিল, তেজপু, ভুটান ইত্যাদি অঞ্চলে উৎকৃষ্ট মানের আগর পাওয়া যেত। সেই সময়ে মহাল আকারের আসামের আগর গাছ নীলাম হত এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার সুজানগরের প্রায় শতকরা পঁচানব্বই ভাগ লোকই আগর আতর ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। সুজানগরের প্রবীণ আগর ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ভারত থেকে আগার-আতর কাঠ আমদানি করে ব্যবসার মাধ্যমে বংশের ধারাবাহিকতায় সফলতা পেয়েছি। সেই সময় এলাকায় প্রায় চার শতটির উপরে আতর তৈরির ডেগ বা প্লান্ট ছিল বলে তারা জানান। সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৪০০ বছরের পুরাতন আগর চাষের অনেকটাই বিলুপ্তি ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে। স্বাধীনতার পর থেকে পুনরায় চাষাবাদ শুরু হয় সিলেটের বড়লেখা ও সুজানগরে। পরে তা ধীরে ধীরে প্রায় পুরো সিলেটেই ছড়িয়ে পড়ে। বৃহত্তর সিলেটের সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আগর চাষ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সিলেট বন বিভাগ মূল্যবান বৃক্ষ প্রজাতি আগরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, নতুন বাগান সৃজন করে পরীক্ষামূলক আগর উৎপাদনের মধ্যে এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের অধীনে বৃহত্তর সিলেটে আগর চাষের পরিকল্পনা  নেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনে গত কয়েক বছর যাবৎ ব্যক্তিগত সহ বন বিভাগের উদ্যোগে সৃজন করা হচ্ছে আগর গাছের ছোট-বড় অনেক বাগান। আগর বাগান সৃজনের পাশাপাশি আগর-আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অন্তর্গত মারিশ্যাতে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের দুইটি কারখানা। এর বাইরে ময়মনসিংহ, মধুপুর ও টাঙ্গাইলে ব্যক্তি উদ্যোগে আগর বাগান করা হয়েছে।

বর্তমানে, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরে ৩৫০টির বেশি ছোট-বড় আতর তৈরির কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে জড়িত ৩০-৩৫ হাজার নারী-পুরুষ। সুজানগর, রফিনগর, বকথল ও হালিজপুর গ্রামে আগর চাষ হচ্ছে। মৌসুমি ব্যবসা হওয়ার কারণে এখানকার নারী-পুরুষরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। দেশে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ আগর তেল উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।

সম্ভাবনা

সুজানগরের আগর-আতর ক্লাস্টারের সমাদর রয়েছে আরবজাহান থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে। রফতানি হচ্ছে ইউরোপেও। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে সিলেট তথা মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে আগর চাষ করার উপযোগী জায়গা রয়েছে। গতানুগতিক বা সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে কৃত্রিম পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বেশি পরিমাণ আগর ও আগরজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন করা সম্ভব। সনাতন পদ্ধতিতেই বছরে প্রায় ১৫শ’ লিটার আগর উৎপাদন করা হয়। এ শিল্প ১০০ ভাগ রফতানিমুখী। যা দেশের প্রথম কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ক্লাস্টার হিসেবে একটি মডেল হতে পারে। যার ফলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য এলাকায়ও একই ধরনের ক্লাস্টার স্থাপনের মাধ্যমে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি ও ব্যাপক কর্মসংস্থান করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি শতভাগ স্থানীয় কাঁচামালে তৈরি বাংলাদেশের একটি প্রিমিয়াম পণ্য হতে পারে। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেলে আগর-আতর হতে পারে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আরেকটি নির্ভরযোগ্য রফতানিমুখী শিল্প। যার মাধ্যমে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রতিবন্ধকতা

বিদেশে আতরের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তারা সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে হচ্ছে না। আবার যতটুকু উৎপাদন করছেন, তাও সরবরাহ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের রফতানি পণ্যের শীর্ষে যেতে পারছে না।

সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও আগর শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আগর গাছ ক্রয় করে আহরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে Transit permit (TP) প্রাপ্তি অত্যন্ত জটিল, ফলে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  আগর রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো CITES (the Convention on International Trade in Endangered Species of Wild Fauna and Flora) ও NOC (No Objection Certificate) সনদ পাওয়া। নানা শর্তের মধ্যে অনেক আতর ব্যবসায়ী আটকা পড়ছেন। ফলে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন চোরাই পথে আতর রপ্তানি করতে।

বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে যানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার আতর রফতানি হয়ে থাকে। আগর শিল্পে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সমস্যা হলো আধুনিক কারিগরি জ্ঞানের অভাব। সনাতন চাষ পদ্ধতি ও নিম্ন মানের পণ্য। একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো তা হলো, বাংলাদেশে উৎপাদিত আগর আতর তেল রিফাইনিং (পরিশোধিত) করার ব্যবস্থা নাই। অপরিশোধিত আগর আতর অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বিক্রি করতে হয় এবং এই সুবিধাটুকু মধ্যপ্রাচ্যের অনেক প্রতিষ্ঠান কাজে লাগিয়ে শুধু রিফাইনিং করেই কয়েকগুণ বেশি টাকা আয় করে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আগর আতর রিফাইনিং ব্যবস্থাপনার অভাব একটা বড় সমস্যা। এছাড়া কারখানাগুলোয় গ্যাস সরবরাহ সমস্যার কারণে তাদের উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের কথায় যানা যায়, আগর থেকে আতর উৎপাদনে আধুনিক কোনো পদ্ধতি এখনো ব্যবহার হচ্ছে না। এখানে কোনো আধুনিক পরীক্ষাগার নেই। আগর থেকে উৎপাদিত প্রতি তোলা আতরের দাম ৬ হাজার টাকার বেশি। তবে বাজারে যেসব আতর পাওয়া যায়, তা মূলত কৃত্রিম সুগন্ধি।

এখানকার উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আতর ও আগর বিক্রি করে থাকেন। যেহেতু আগে এ পণ্যের কোনো এইচএস কোড ছিল না তাই তারা দাফতরিকভাবে রফতানি করতে পারেনি। ফলে লাগেজে করে অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছানো হতো। একই পদ্ধতিতে টাকা গ্রহণ করতে হতো। সরকারিভাবে রফতানির প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমদানিকারক দেশ উচ্চহারে আমদানি শুল্ক দিতে হয়। ফলে বিকল্প পথকেই উত্তম মনে করেন তারা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সরকার এই রফতানি পণ্যের জন্য একটি এইচএস কোড নির্ধারণ করে দেয়। যার ফলে কিছু পরিমাণে দাফতরিক রফতানি হতে শুরু হয়েছে।

উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিক কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতা, বাজারজাতকরণ সহায়তা না পাওয়া, আধুনিক ই-মার্কেটিং, ই-বিজনেস সম্পর্কে ধারণা না থাকা ইত্যাদি এই শিল্পের অন্যতম বড় সমস্যা।

সরকারি উদ্যোগ

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজারের সুজানগরে আগর ক্লাস্টার পরিদর্শনে এসে এটিকে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেন। তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক অবদানের কথা বিবেচনা করে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে এ শিল্পে কর্মরত প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক ও সাড়ে ৩শ কারখানা মালিকরা শিল্পখাতে সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের পুনর্জীবনের উদ্দেশ্যে এবং দেশজ ১০০ ভাগ কাঁচামাল ভিত্তিক রপ্তানীখাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পণ্যটিকে মৌলভীবাজার জেলার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক গৃহীত One District One Product (ODOP) কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় আগরকে শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়। আতর রপ্তানিতে প্রথমবারের মতো পৃথক এইচএস কোডও প্রবর্তন করা হয়। তখন থেকেই আতর রপ্তানি পণ্য হিসেবে পরিচিতি পায় এবং আনুষ্ঠানিক বা দাপ্তরিকভাবে রপ্তানি শুরু হয়। ২০১০ সাল থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন মাঠপর্যায়ে এ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে আতর উৎপাদনকারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতায় সহযোগিতা ও এ শিল্পের অধীনে তিন কোটি টাকার সহজ শর্তেও ঋণ অনুমোদন করেছে। যা ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সরকারিভাবে আগর গাছ সৃজন, কৃত্রিম উপায়ে আগর গাছে আগর সৃষ্টিসহ বিবিধ উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বন বিভাগ এ শিল্পের কাঁচামাল “আগর বৃক্ষ সৃজন প্রকল্প” নামে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এর কাঁচামাল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট বিভাগের ১১টি এলাকায় ৩১৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ লক্ষ আগর চারা লাগানো হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রেমা বন বিট, সাতছড়ি রেঞ্জের সাতছড়ি বন বিট, রঘনন্দন রেঞ্জের শাহপুর বিট; মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া এবং সিলেটের খাদিমপাড়ায় সরকারিভাবে আগর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সরকারিভাবে আতর উৎপাদন করা হচ্ছে।

প্রয়োজন যে সব পদক্ষেপের

আতর ব্যবসায়ীরা জানান, বিমানবন্দরে নানা জটিলতায় অনেকে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এ পণ্য রফতানি করছেন। এসব জটিলতা এড়ানো গেলে রফতানি আরো গতি পাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বৈধ পথে রফতানি করতে সরকারের পক্ষ থেকে রফতানির ওপর নগদ প্রণোদনার দাবি করেন তারা।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তথ্যানুসারে, আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের পণ্য নিয়ে দরকষাকষি করা যায় না। কারণ এখানকার আগরের মান নির্ণয়ে কোর ল্যাব নেই। এটি স্থাপন করা দরকার। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সাইটিস সার্টিফিকেট ইস্যু করা জরুরি। কারণ আগর গাছ বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ নয়। এ শিল্পের অগ্রগতির জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা দরকার। তা ছাড়া আগর পণ্য রপ্তানির জন্য সাইটিস সার্টিফিকেট ঢাকা বন অফিস থেকে ইস্যু করার স্থলে বড়লেখা বা মৌলভীবাজার বন অফিস থেকে দেয়ার ব্যবস্থা করলে এ শিল্প উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এ শিল্প শতভাগ রপ্তানিমুখী। এটি হতে পারে বাংলাদেশের তরল সোনা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *