অডিটর হিসাবে কাজের সুযোগ রয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কনসালটেন্ট হিসাবে। ব্যবসা প্রশাসনে বা বাণিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীরা কিংবা চার্টার্ড একাউন্টেন্টরা চাইলেই এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যা অত্যন্ত সম্মানের ও ভালো আয়ের সুযোগ করে দেয়।
অডিটর, নিরীক্ষক বা হিসাবপরীক্ষক হ’ল ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক নিরীক্ষা চালানোর জন্য নিযুক্ত নিযুক্ত ব্যক্তি। সাধারণত, অডিটর হিসাবে কাজ করার জন্য, অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিংয়ের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যয়িত বা নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়।
কাজের সুযোগ
সরকারি এবং বেসরকারি অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সহ বিনিয়োগ-বীমা কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠানে অডিটরের প্রয়োজনীয়তা অসীম। প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের শৃঙ্খলা ও নির্ধারিত বিধি অনুসরণ করে একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অর্থব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন একজন অডিটর।
অডিটর হিসাবে কাজের সুযোগ রয়েছে যে কোন ধরণের শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে, আর্থিক লেনদেনকারী সকল প্রতিষ্ঠান যেমন: ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন; সকল সরকারি, আধ-সরকারি ও স্বায়িত্বশাসিত বিভাগ, বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ সংস্থা, কর ও শুল্ক বিভাগে।
দায়িত্ব
নিরীক্ষার প্রকার, পদ্ধতি ও কার্যপ্রণালী নিরীক্ষাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: যেমন, বিধিগত (রেগুলারটি) অডিট, আর্থিক বিবরণী (ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট) অডিট এবং কৃতি (পারফরমেন্স) অডিট। নিয়ম মাফিক নিরীক্ষা খুবই প্রথাগত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক রীতিনীতি, আইন ও কার্যপ্রণালী মেনে চলেছে কিনা দেখার জন্য নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তি ও ব্যয়, আর্থিক ব্যবস্থা ও লেনদেনের পরীক্ষা করা হয়। আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা হলো আর্থিক বিবরণীগুলি নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের গঠিত আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন করছে কি-না সে সম্পর্কে মতামত দেওয়ার জন্য আর্থিক বিবরণীর পরীক্ষা করা। এই নিরীক্ষা সরকারি এবং সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বণ্টন ও আর্থিক হিসাবের নিরীক্ষাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। কৃতি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো সম্পদ ব্যবহারে কার্যকর, দক্ষতা ও মিতব্যয় স্তর অর্জন করা হয়েছে কি-না তা দেখা। এ লক্ষ্যে কৃতি নিরীক্ষককে সংগঠনের কার্য পরিকল্পনা, কার্যকারিতা, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কার্যপ্রণালী পরীক্ষা করতে হয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কৃতি নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
একজন অডিটর কে নিয়মিত যে সব দায়িত্ব পালন করতে হয় সেগুলো হল:
বিল ভাউচার যাচাই বাছাই করা।
ক্যাশ বুক, ব্যাংক বুক, পার্টি লেজার, মানি রিসিট, চালান ইত্যাদি সমন্বয় করা।
সকল ইউনিটের অভ্যন্তরীণ অডিট ও বিভিন্ন বিল প্রি-অডিট কাজ সম্পাদনা করা
আর্থিক বিধি মোতাবেক আর্থিক কার্যাবলী পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা।
সরকারী নিয়মনীতি ও সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক জারীকৃত নিয়ম ও বিধি যথাযথভাবে কর্পোরেশনে অনুসরণ হচ্ছে কি না উহা খতিয়ে দেখা।
অভ্যন্তরীণ ও বাণিজ্যিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আলোকে বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ ও উচ্চতর কর্তৃপক্ষ সমীপে প্রতিবেদন পেশকরণ।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারকরণে ভুল-ত্রুটি নিরসনপূর্বক যাবতীয় আর্থিক-কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায়/ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা।
যোগ্যতা, দক্ষতা ও জ্ঞান
অ্যাকাউন্টস অথবা ফিন্যান্স বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট বা সি.এ. সি.সি. পাস।
অডিটর হিসাবে কাজ করতে চায়লে হিসাববিজ্ঞান, হিসাব নিরীক্ষা, আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত নিয়মকানুনের
কর ও কর সংক্রান্ত আইনসমূহের উপরে যথেষ্ট দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হবে।
পড়াশোনা
দেশের স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে একাউন্টস/ফিন্যান্স বিভাগে পড়ে কাজ করা যায়। এ ছাড়া চাটার্ড একাউন্টেন্ট (সিএ) পড়তে চাইলে প্রথমে যুক্ত হতে হবে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠানের (ফার্ম) সঙ্গে। এই ফার্মগুলোর কাজ হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব যাচাই করা। হাতে-কলমে নিরীক্ষা কাজের সুযোগ এই ফার্মগুলো দিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে ফার্ম থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করানো হয়। দেশে ১৭০টি সিএ ফার্ম রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটেও রয়েছে কিছু নিবন্ধিত ফার্ম। নতুন শিক্ষার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ফার্ম পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এইচএসসি পাসের পরই ব্যবসায় শিক্ষা বা ব্যবসায় প্রশাসনে আন্ডরগ্রাজুয়েশন কিংবা সিএ কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যায়।
আয়রোজগার
জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী অডিটর পদে বেতন ১২,৫০০-৩০,২৩০ টাকা। আর বেসরকারি সংস্থায় ২০-২৫,০০০টাকা। এর সাথে রয়েছে অন্যান্য সুযোগসুবিধা।
ক্যারিয়ার গ্রাফ
সরকারি বিভিন্ন দপ্তর যেমন বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর, স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষা অধিদপ্তর, পূর্ত অধিদপ্তর, পূর্তপরিদপ্তর, বৈদেশিক সাহায্যাধীন প্রকল্পের নিরীক্ষা অধিদপ্তর, বেসামরিক নিরীক্ষা, রেলওয়ে নিরীক্ষা অধিদপ্তর, ডাক, টেলি ও টেলিফোন নিরীক্ষা অধিদপ্তর, প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা অধিদপ্তর, মিশন নিরীক্ষা অধিদপ্তরে অডিট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও অভিজ্ঞতা ও কাজের বয়স বাড়লে পদোন্নতি পেয়ে অডিটর জেনারেল পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ আছে। পাশাপাশি ভালো কাজ জানলে ব্যক্তিগতভাবে নিজের ফার্ম খুলেও অনেকে ভালো আয়ের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন, তাই এ পেশায় সততা ও পরিশ্রম এনে দিতে পারে সাফল্য ও উন্নত আয়ের সুযোগ।
Leave a Reply