২০১৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা
ফোর্বস ম্যাগাজিন
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের পাহাড়সম অঢেল সম্পদের খবর জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টানো। ফোর্বস মিডিয়ার মালিকানাধীন এই দ্বি-সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটি ১৯১৭ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই বিজনেস ম্যাগাজিনটি আমেরিকার সর্বাধিক (নয় লাখের বেশি) প্রচারিত ম্যাগাজিন। এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে এবং ল্যাটিন আমেরিকায়ও এর আন্তর্জাতিক সংস্করণ বের হয়ে থাকে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির জন্য বিখ্যাত এই ম্যাগাজিনটি মূলত ব্যবসা সংক্রান্ত নানা নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। বর্তমানে স্টিভ ফোর্বস ম্যাগাজিনটির এডিটর-ইন-চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৫ সালে ধনীদের তালিকা
সম্প্রতি ফোর্বস তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে ২০১৫ সালের শীর্ষ ধনীদের তালিকা। এতে দেখা যায় এই বছর বিলিয়নারের সংখ্যা আরও বেড়েছে। মোট সম্পদ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, এমন ধনীর সংখ্যা এবার এক হাজার ৭৪১ জনে উন্নীত হয়েছে। এবার ২৬৮ জন ধনীর নাম যোগ হয়েছে তালিকায়। ফোর্বস-এর এবারের তালিকায় নারী বিলিয়নারের সংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে ১৯৭ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭ জনই যুক্তরাষ্ট্রের। এ ছাড়া জার্মানির ১৯ ও ব্রাজিলের ১৩ জন। গত বছর নারী বিলিয়নার ছিলেন ১৭২ জন। শীর্ষ ১,৭৪১ জন ধনীর সম্মিলিত সম্পদের মূল্যমান ৭.৪ ট্রিলিয়ন কোটি ডলার (এক ট্রিলিয়ন = এক লাখ কোটি)। গত বছর ১,৬৪৫ জনের সম্পদমূল্য ছিল ৬.৪ ট্রিলিয়ন। গত বছরের তালিকা থেকে এবার বাদ পড়েছেন ১০০ জন এবং আরও ১৬ জন মারা গেছেন। এ বছরও বিশ্বসেরা ধনীর তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে। দেশটির ৪৯২ জন আছেন তালিকায়। ১৫২ জন ধনী নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন। আর ১১১ জন নিয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছে রাশিয়া। নতুন দেশ আলজেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, তাঞ্জানিয়া ও উগান্ডা থেকে প্রথমবারের মতো একজন করে তালিকায় উঠে এসেছেন।
০১. বিল গেটস
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানি মাইক্রোসফটের কর্ণধর এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম জনক উইলিয়াম হেনরি বিল গেটস শুধু বিশ্বের সেরা মেধাবীদের অন্যতম নন, শীর্ষ ধনীদেরও একজন। থাকেন ওয়াশিংটনের মিদিনায়। বর্তমানে তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৭৯ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৫৫ সালে তিনি ওয়াশিংটনের এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন গেটস। কোনো একটা বিষয় তার মাথায় ঢুকলে সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ করতেন না। গত ২০ বছর ধরে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ১৬ বারই প্রথম স্থানটি ছিল তাঁর দখলে। অ্যাপল ও গুগলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাজারে পিছিয়ে পড়তে থাকায় বেশ ক’বছর দাতব্য ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যস্ত থাকার পর গেটস ২০১৩ সাল থেকে তার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের সঙ্গে সময় দিয়েছেন বেশি। ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জনক এই প্রযুক্তিবিদ তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে কাজ করে যাচ্ছেন মানবকল্যানে।
০২. কার্লোস স্লিম হেলু এবং পরিবার
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সম্পদের পরিমাণ নিট সম্পদমূল্য ৭৭ দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কার্লোস স্লিম এর পিতা একজন অভিবাসী লেবানিজ, যিনি ১৯০২ সালে কপর্দকহীন অবস্থায় উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে পালিয়ে মেক্সিকোতে আসেন এবং কার্লোস স্লিম এর মা একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের লেবানিজ-মেক্সিকান। ১৯৪০ সালে মেক্সিকোতে জন্ম নেয়া কার্লোস এই টেলিকম ব্যবসায়ী হোটেল ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারি কাজে চুক্তিবদ্ধ হন ফ্রান্স টেলিকম এবং সাউথ ওয়েস্টার্ন বেল কর্পোরেশনের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে এই কাজের সুবাদে অন্যান্য বেসরকারি টেলিফোন সংস্থাও তার দিকে হাত বাড়ায়। ধীরে ধীরে তার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে গোটা লাতিন আমেরিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। টেলিকম ব্যবসায়ে সর্বচ্চ সাফল্য পেলেও এখনও রয়েছে তাঁর হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বেশ কয়েকটি হাউজিং কোম্পানি। ৭৫ বছর বয়স্ক কার্লোস ছয় সন্তানের জনক, থাকেন মেক্সিকো সিটিতে।
০৩. ওয়ারেন বাফেট
ব্যবসা জগতে ‘ওমাহার বিচক্ষণজন’ বলে পরিচিত হলেন ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট। তাঁকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মাল্টি-বিলিয়ন ডলার কনগ্লোমারেট ‘বার্কশায়ার হ্যাথাও’-এর মূল মালিক এবং চেয়ারম্যান। বর্তমানে তাঁর নিট সম্পদমূল্য ৭২ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ ভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওমাহা শহরে জন্ম নেয় বাফেটে ব্যবসায় প্রশাসনে গ্রাজুয়েশন করেন ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কায় থেকে আর মাস্টার করেন অর্থনীতিতে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। তিনি জীবনে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। ছোটবেলায় তিনি প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে পেপার বিলি করতেন। তা থেকে যা সঞ্চয় হতো, মাত্র ১৪ বছর বয়সে তা দিয়ে তিনি একটি ছোট্ট খামার কিনেছিলেন। বিপুল ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ওয়ারেন বাফেট অত্যন্ত মিতব্যয়ী। ১৯৫৮ সালে বাফেট যে বাড়িটি কিনেছিলেন, এখনো তিনি ওমাহার সেই বাড়িতেই বাস করেন।
০৪. অ্যামেচিও ওর্তেগা
রীতিমতো ফ্যাশন বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই স্প্যানিশ ধনকুবের। তিন সন্তানের জনক ৭৯ বছর বয়স্ক অ্যামেচিও ওর্তেগার নীট সম্পদের পরিমাণ ৬৪ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন স্পেনের লা করুনায়। জন্ম ১৯৩৬ সালে, নর্থ স্পেনে। বাবা রেলওয়ে বিভাগে শ্রমিক ছিলেন। মা বিভিন্ন বাসায় কাজ করে অর্থ উপার্জন করতেন। পড়াশোনায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহী ছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই অর্থের অভাবে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছিল। ১৯৭২ সালে অ্যামেচিও ওর্তেগা প্রথম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। চালু করেন একটি ফ্যাশন হাউস। যেখানে শুধু বিভিন্ন ধরনের শার্ট বিক্রি হতো। যা পরবর্তী সময়ে ‘জার’ ব্রান্ড নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। ‘জারা’র সারা বিশ্বে এক হাজার ৭২১টি শোরুম আছে। ২০১১ সালের তিনি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ইন্ডিটেক্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে ফ্যাশনের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে পা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর মালিকানায় রয়েছে এপিক হোটেল, একটি ৫৪তলার বিলাসবহুল ভবনসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।
০৫. ল্যারি এলিসন
তার পুরো নাম লরেন্স জোসেফ এলিসন। তিনি ওরাকল কর্পোরেশনের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করা ল্যারি, তার শিক্ষাজীবনে ছিলেন অত্যন্ত অমনোযোগী। বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত সফলভাবে তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে পড়ার সময়ে তিনি প্রথম পরিচিত হন কম্পিউটার ডিজাইনের সাথে। ১৯৬৪ সালে তিনি স্থায়ীভাবে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন। সত্তরের দশকে তিনি এমডাল কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। এখানে তার একটি কাজ ছিল সিআইএ’র জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করতে। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ। পরে ১৯৭৯ সালে এরই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ওরাকল’। দুই সন্তানের জনক ৭০ বছর বয়স্ক ল্যারি এলিসনের নিট সম্পদমূল্য ৫৪ দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইডে।
০৬. চার্লস কোচ
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভাই হলেন কোচ ভাইয়েরা। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রাইভেট কোম্পানির কোচ শিল্পগোষ্ঠীটি মালিক তাঁরা। কোচ ভাইদের মধ্যে বড় চার্লস ডি গানাহ কোচ বা চার্লস কোচ ‘কোচ ইন্ড্রাস্টি’র সহ-স্বত্বাধিকারী, বোর্ড চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এমএসসি করেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন আন্তর্জাতিক ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট ফর্ম অরথুর ডি. লিটিলে। ১৯৬১ সালে তিনি ফিরে আসেন উইচিতায় এবং বাবার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রক আইল্যান্ড ওয়েল এন্ড রিফাইনিং কোম্পানিতে যোগদান করেন। কোচের ব্যবসায় দর্শন হল বাজার-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা (এমবিএম)। যা তিনি ২০০৭ সালে বিষাদ ভাবে তুলে ধরেন তার গ্রন্থ ‘সাইন্স অফ সাকসেস’-এ। সর্বশেষ তথ্যানুসারে দুই সন্তানের জনক ৭৯ বছর বয়স্ক চার্লস কোচের সম্পদের পরিমাণ ৪২ দশমিক নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের উইচিতা শহরে। ব্যবসার পাশাপাশি জনদরদি হিসেবেও চার্লসের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন হিসেবে তাকে বিবেচিত করা হয়।
০৬. ডিভিড কোচ
শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বড় ভাই চার্লস কোচের পরেই রয়েছেন ডিভিড হ্যামিলটন কোচ বা ডিভিড এইচ. কোচ। মার্কিন এই দাপটে ব্যবসায়ী, মানবমিত্র, রাজনৈতিক কর্মী এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের উইচিতা শহরে ১৯৪০ সালে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। বড় ভাই চার্লস কোচের সাথে তিনিও ‘কোচ ইন্ড্রাস্টি’র সহ-স্বত্বাধিকারী। কোচ ইন্ড্রাস্টিতে দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের খনি, জ্বালানি ও রাসায়নিক খাতে কানসালটেন্ডভিত্তিক কোচ শিল্পগোষ্ঠীটির বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে তিন সন্তানের জনক ৭৫ বছর বয়স্ক চার্লস কোচের নিট সম্পদমূল্য ৪২ দশমিক নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। দানবীর হিসাবে ডিভিড কোচ যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। লিংকলন সেন্টার, নিউইয়র্ক প্রেসব্রাইটান হাসপাতাল, আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিসহ বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের তহবিল যোগান। মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে কোচ ভাইদের রয়েছে যথেষ্ট প্রভাব। রিপাবলিকান দলের সমর্থক কোচ ভাইয়েরা তহবিল যোগান দলীয় তহবিলেও।
০৮. ক্রিস্ট ওয়ালটন এবং পরিবার
৪১ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক এক সন্তানের জননী ৬০ বছর বয়সী ক্রিস্ট রূথ্ ওয়ালটন। তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। ২০০৫ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মার্কিন চেইন স্টোর জায়েন্ট ওয়াল-মার্ট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের ছেলে জন টি. ওয়ালটন মারা গেলে তাঁর স্ত্রী ক্রিস্ট ওয়ালটন ১৫ দশমিক সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন। ছেলে লুকাস ওয়ালটনকে নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন । ১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া ক্রিস্ট ওয়াল্টনের আয়ের উৎস বিশ্বের সবচেয়ে বড় চেইন স্টোর ওয়াল-মার্ট ও ফার্স্ট সোলার কোম্পানি। বর্তমানে ওয়াল-মার্টের রয়েছে ১১,০০০টি স্টোরে রয়েছে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন কর্মচারী। দাতব্য কর্মকাণ্ডে ক্রিস্ট ওয়ালটন যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বর্তমানে তিনি বেশকিছু সামাজিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ও তহবিল গঠনে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকেন। শীর্ষ ধনীর তালিকায় আসার পরে বেশ কিছু অসাধু ব্যক্তি ইন্টারনেটে ক্রিস্ট ওয়ালটনের ভুয়া ইমেইল ঠিকানা দিয়ে প্রতারণা করে থাকে।
০৯. জিম ওয়ালটন
জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্কানসাস অঙ্গরাজ্যের নিউটাউনে ১৯৪৮ সালের। সর্বশেষ তথ্যানুসারে চার সন্তানের জনক ৬৭ বছর বয়স্ক জিম ওয়ালটনের নিট সম্পদমূল্য ৪০ দশমিক ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাকেন আর্কানসাসের বেনটোনভিলে। মার্কিন চেইন-স্টোর জায়েন্ট ওয়াল-মার্ট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের ছোট ছেলে জিম ইউনিভারসিটি অফ আর্কানসাস থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে গ্রাজুয়েশন করে ১৯৭২ পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে ওয়ালটন এন্টারপ্রাইজের প্রেসিডেন্ট নিযুক্তহন। ওয়াল-মার্টের বোর্ড অফ ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান ২০০৫ সালে। বর্তমানে তিনি পারিবারিক মালিকানাধীন আরভেস্টে ব্যাঙ্কের সিইও। জিম ওয়ালটনের মালিকানায় রয়েছে সংবাদপত্র ফার্ম কম্যুনিটি পাবলিসার্স ইন্টারকর্পোরেশন (সিপিআই)। ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ওয়াল-মার্টের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; সেখান থেকে ট্যাক্সবাদ দিয়ে জিমের আয় হয় ৪৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্যবসার পাশাপাশি জনদরদি হিসেবেও তাঁর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ২০০৮-২০১৩ পর্যন্ত তিনি তাঁর ভাই-বোনদের সাথে মিলে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন ওয়ালটন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন থেকে।
১০. লিলিয়ান বেতেনক্যুয়ো
৯২ বছর বয়স্ক এই নারীর নীট সম্পদেও মূল্য ৪০ দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী নারী। একই সাথে ফ্রান্সের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর পুরোটাই বিনিয়োগ করা আছে বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী নির্মাতা লরেল কোম্পানিতে। এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি অংশ- ৩০ শতাংশের মালিক লিলিয়ান আর তাঁর একমাত্র সন্তান। প্রসাধনী বিক্রি করে শ্রেষ্ঠ ধনীর খেতাব অর্জনও এই প্রথম ব্যক্তি। কোম্পানিটি পেয়েছিলেন উত্তরাধিকারসূত্রে। ১৯০৭ সালে লিলিয়ানের রসায়নবিদ বাবা ইগুইনি স্কুয়েলার তৈরি শুরু করেন চুলের নানা রঙের কলপ। কিছুদিন পর বানানো শুরু করেন চুল ধোয়ার শ্যাম্পু আর সাবান। এভাবেই যাত্রা শুরু লরেলের। ১৫ বছর বয়সে বাবার সহকারী হিসেবে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন লিলিয়ান। বাবা মারা গেলে সাবান উৎপাদন বন্ধ করে প্রসাধনী উৎপাদন করায় মনোযোগ দেন। ১৯৬৩ সালে আকার বেড়ে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপ লাভ করলেও লরেলের উত্তরাধিকারসূত্রে সবচেয়ে বড় অংশ শেয়ারের মালিকানা থেকে যায় লিলিয়ানের।
Leave a Reply