বিসিএসের পরে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সরকারি চাকরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদটি। দেশের অর্থনীতি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের কাছে তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত।
বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সাধারণ ব্যাংক নয়, এটি অন্যান্য সকল ব্যাংকের মত মূলধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে জড়িত নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রেগুলেটরি সংস্থা এবং কার্যতঃ ‘ব্যাংকসমূহের ব্যাংক’। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিনির্ধারণী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিরূপিত হয়। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে। ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার কাগুজে নোট ব্যতীত সকল কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া এটি সরকারের কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কনিষ্ঠ কর্মকর্তার পদটি হচ্ছে সহকারী পরিচালক বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর।
দায়িত্ব
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ঢাকার সদরঘাটে এর একটি শাখা আছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি করে শাখা আছে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, রংপুর, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ শহরে। প্রধান কার্যালয়ে মোট ৩১টি বিভাগ আছে। এসব বিভাগ এবং শাখা কার্যালয়সমূহের প্রধান হচ্ছেন একজন নির্বাহী পরিচালক অথবা মহাব্যবস্থাপক। একজন সহকারী পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর ৯ টি শাখায় কাজ করেন। একজন সহকারী পরিচালকের কাজ কর্মরত শাখার উপর নির্ভর করে। তবে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজের চাপ তুলনামূলক কম। কিছু বিশেষ শাখা যেমন প্রকৌশল, লাইব্রেরি, পরিসংখ্যান, গবেষণা ও অন্যান্য পেশাগত শাখা ব্যতীত সকল শাখাতেই সহকারী পরিচালক (জেনারেল) কাজ করেন। শাখাভেদে একজন সহকারী পরিচালককে অর্থনৈতিক সমীক্ষা, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, নীতি প্রণয়ন, বিভিন্ন নথিপত্র নিরীক্ষা সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়।
দক্ষতা ও জ্ঞান
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই দেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকে কাজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। হিসাব-নিকাশে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। এর সাথে সাথে থাকতে হবে বিশ্লেষণী দক্ষতা এবং নথিপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের দক্ষতা। অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর সঙ্গে ব্যাংক প্রশাসন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাস হতে হবে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোয় ন্যূনতম দুটিতে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। কোনো পর্যায়েই তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি/সমমানের গ্রেড পয়েন্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। পেশাগত সহকারী পরিচালক যেমন প্রকৌশল, গবেষণা, মেডিকেল, পরিসংখ্যানসহ অন্যান্যদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। বয়স হতে হবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থী ব্যতীত সব প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
আবেদনপদ্ধতি
আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (www.erecruitment.bb.org.bd) অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণের মাধ্যমে। দরখাস্ত করার সময় ফরম পূরণ করার নিয়ম ও অন্য শর্তাবলি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। অনলাইনে আবেদন করার পর সিভি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, ট্র্যাকিং নম্বর ও পাসওয়ার্ডটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে কোনো কাগজপত্র প্রেরণ করতে হয় না। বিবাহিত নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত প্রার্থীদের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের জন্য বিগত বছরগুলোতে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় ফোকাস রাইটিং ইন ইংলিশ, ক্রিয়েটিভ রাইটিং ইন ইংলিশ, ইংলিশ কম্প্রিহেনশন, ফোকাস রাইটিং ইন বাংলা, অনুবাদ—বাংলা থেকে ইংরেজি , ইংরেজি থেকে বাংলা ও গণিতের উপরে প্রশ্ন থাকে। প্রিলিমিনারিতে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, ইংরেজি ও গণিত থেকে প্রশ্ন করা হয়।
আয়
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) গ্রেড-৯ পদের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা ও অন্যান্য সুবিধা পান। কাজে যোগদানের সময় ইনক্রিমেন্ট এবং অন্যান্য ভাতা সহ বেতন ৩৫-৩৭ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এ গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন মাসিক ৫৩ হাজার টাকা।
ক্যারিয়ার গ্রাফ
সহকারী পরিচালকের উপরের পরবর্তী পদ গুলো যথাক্রমে ডেপুটি ডিরেক্টর, জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডেপুটি জেনারেল ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যানেজার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ডেপুটি গভর্নর এবং একদম শীর্ষে গভর্নর। সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পর ব্যাংকিং ডিপ্লোমা শেষ হলেই সাধারণত আড়াই থেকে চার বছরের মধ্যে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি হয়। এর ৪-৭ বছরের মাথায় জয়েন্ট ডিরেক্টর।এর ৭-৮ বছরের মাথায় ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) পদে পদোন্নতি পান। চাকুরী জীবনের শুরু থেকে ২৩-২৭ বছরের মাথায় জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পদে পদন্নোতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ও অর্থনীতিতে গভীর জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যাংকিং নীতিমালা ও আইনে সম্পর্কে যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে।
Leave a Reply