আগুন লাগলেই যাদের কথা মনে পড়ে, তারা হলেন অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী, ইংরেজিতে ফায়ার ফাইটার, ফায়ার ব্রিগেড অথবা ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু বাংলা ভাষায় এর পরিচিতি দমকল কর্মী হিসেবে। ২৪ জানুয়ারি ২০২১ সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর “ ফায়ারম্যান “ পদের নাম পরিবর্তন করে “ ফায়ার ফাইটার “ রাখা হয় ।
পেশা হিসাবে ফায়ার ফাইটার
একজন ফায়ার ফাইটার ও দমকল বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস আমাদের জীবন ও সম্পত্তি সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ফায়ার সার্ভিস কাজে একজন ফায়ারফাইটার হিসেবে যুক্ত হওয়ার পূর্বে নিজের মধ্যে মানবসেবা ও দেশপ্রেমের লক্ষণ রয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখুন।
কারণ এই পেশায় নির্দিষ্ট ডিউটির সময় ছাড়াও আপনাকে গভীর রাতেও ডিউটি করতে হতে পারে। কারণ কখন কোথায় দুর্ঘটনা ঘটবে তা কেউই জানেনা তাই একজন ফায়ার ফাইটারকে সর্বদাই প্রস্তুত থাকতে হয়।
গভীর রাতে হাসপাতালে, কলকারখানায়, বা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন লাগলে খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত সেখানে ছুটে যেতে হবে। তাই ফায়ার সার্ভিস বা দমকল বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পূর্বে চিন্তা করে নিন আপনার মধ্যে সে পরিমাণ ডেডিকেশন ও এনার্জি রয়েছে কিনা।
অন্যান্য চাকরি করে আপনি হয়তো ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন কিন্তু একজন ফায়ারফাইটার বা ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেশের মানুষের দুঃখ কষ্টের মুহূর্তে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিয়ে তাদের পাশে থাকতে পারবেন।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর (বাংলাদেশ দমকল বাহিনী ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম জনগণের সেবায় নিবেদিত। প্রথম সাড়া প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে এ বিভাগের কর্মীরা অগ্নি নির্বাপণ, অগ্নি প্রতিরোধ, উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে প্রেরণ ও দেশী-বিদেশী ভিআইপিদের অগ্নি নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকারী সংস্থা হিসেবে সব ধরনের প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্ঘটনার উদ্ধারকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।
ফায়ার ফাইটারের যোগ্যতা
অভিজ্ঞতা: পুর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। যোগদানের পর প্রশিক্ষণ সেল কার্যক্রমের আওতায় স্বেচ্ছাসেবক বৃদ্ধিকরণ প্রশিক্ষণ, সাইকো সোশ্যাল প্রশিক্ষণ, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
বয়স: বিজ্ঞপ্তির বছরের ১লা জানুয়ারী পর্যন্ত ১৮-৩০ বছর।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: বাংলাদেশের যে কোন স্বীকৃত স্কুল থেকে মাধ্যমিক বা তার সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে কেউ আবেদন করতে পারে।
অন্যান্য যোগ্যতা:
- ফায়ারম্যান অথবা ফায়ার ফাইটার হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই অবিবাহিত এবং ত্রুটিমুক্ত শরীর গঠনের অধিকারী হতে হবে ।
- উচ্চতা : পুরুষদের ক্ষেত্রে = ৫ফুট ৬ ইঞ্চি ( সর্বনিম্ন ) , মেয়েদের ক্ষেত্রে = ৫ফুট ২ ইঞ্চি ।
- বুকের মাপ : ৩২ ইঞ্চি ( সর্বনিম্ন ) , মেয়েদের ক্ষেত্রে = ৩০ইঞ্চি ।
ফায়ার ফাইটারের দায়িত্ব
একজন যোগ্য-দক্ষ অগ্নি নির্বাপণকারীর প্রধান দায়িত্ব জনসাধারণের জরুরী পরিস্থিতিতে সহায়তা করে। তারা জনগণের বিভিন্ন ধরনের আহ্বানে সাড়া দেয়, যেমন: গাড়ি দুর্ঘটনা, রাসায়নিক দুর্ঘটনা, বন্যাদূর্গতদের উদ্ধার , সাধারণ উদ্ধার এবং আগুন নির্বাপণ ইত্যা্দি। এছাড়া তাঁরা এই কাজগুলো করে থাকেন-
- নিয়মিত আগুন নির্বাপণের দায়িত্ব পালন।
- জরুরী ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা (প্রধানত আগুন, কিন্তু চিকিৎসা সমস্যা ইত্যাদি ও হতে পারে) এবং সহায়তা প্রদান করা।
- নিজস্ব সরঞ্জামের সাহায্যে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা এবং সঠিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা।
- আগুন প্রতিরোধে স্থানীয় মানুষের মধ্যে জনসচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
- প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, স্ব-শিক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরো পেশাদারি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা।
- অগ্নি দপ্তরের দৈনন্দিন কাজের জন্য অন্যান্য জবাবদিহিমূলক রেকর্ড আপডেট রাখা।
- নিরাপত্তা কর্মী নীতি অনুসরণ এবং রিপোর্টিং।
- পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা কর্মীদের সঙ্গে কাজ করা।
- শারীরিক এবং অ্যাকাডেমিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।
- অগ্নি নির্বাপক গাড়িসমূহ, সরঞ্জাম, হাইড্রেন্টস এবং জল সরবরাহ চেক এবং তত্ত্বাবধান করা।
দক্ষতা ও জ্ঞান
- প্রাসঙ্গিক মেডিকেল সরঞ্জাম ব্যবহারের সামর্থ্য।
- কম্পিউটার এবং সংশ্লিষ্ট সফ্টওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা।
- সিপিআর এবং অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা প্রদানের দক্ষতা।
- ইউনিট ফায়ার কোড জ্ঞান থাকা।
- অগ্নিনির্বাপক সম্পর্কিত রিপোর্টং, রেকর্ড রাখা, কম্পিউটার, এবং পেপারওয়ার্ক দক্ষতা।
- ফায়ার-ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহন এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি পরিচালনার দক্ষতা।
- পাবলিক ইউটিলিটি অবকাঠামো, যেমন গ্যাস, প্লাম্বিং এবং বৈদ্যুতিক লাইন, শিল্প জ্বালানি ট্যাংক এবং জ্বলন্ত রাসায়নিক এবং অন্যান্য সম্ভাব্য বিপজ্জনক পদার্থ সম্পর্কিত জ্ঞান।
- বিভিন্ন ধরনের আগুনের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে আপ টু ডেট জ্ঞান থাকা – বন্য আগুন, শিল্প ও বাণিজ্যিক, যানবাহন চলাচল, বিমান এবং বিমানবন্দর, আবাসিক, বিস্ফোরক বা জ্বলন্ত বস্তু, এবং অন্যান্য।
ফায়ার ফাইটারের কাজে ক্ষেত্র ও সুযোগ
আজকের গণমাধ্যম এবং প্রযুক্তির নতুন জগতে একজন ফায়ার ফাইটার যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সবার আগে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা অগ্রগণ্য। একজন ফায়ার ফাইটার দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগের ইউনিটে কাজ করে থাকেন।
ক্যারিয়ার গ্রাফ
বর্তমান বাংলাদেশে ফায়ার ফাইটাররা চাকরি গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম সেবামূলক কাজ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। এই চাকরিতে দ্রুততর অগ্রগতি হতে পারে, অনেক জুনিয়র কর্মকর্তাকে দুই থেকে চার বছরের মধ্যে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদে উন্নীত করা হয়।
আয়রোজগার
ফায়ারম্যান বা ফায়ারফাইটারকে ১৭ তম গ্রেডের স্কেলে বেতন দেয়া হয় । যা একজন পুরুষ ফায়ার ফাইটার এর ক্ষেত্রে প্রায় ৯,০০০ টাকা থেকে ২১,৮০০ টাকা র্পযন্ত হয় ।ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত একজন ফায়ারফাইটারের শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে তাদের বেতন নির্ধারণ ও পরিবর্তন হয়ে থাকে । ২০২২ সালে একজন ফায়ার ফাইটার এর সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৫ হাজার ৭২৮টিএল । এবং বিপরীতে ২০২২ সালে একজন ফায়ারম্যান এর সর্বোচ্চ বেতন ছিল ৫হাজার ৯৪৯ টিএল ।
ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ফায়ার ফাইটারম্যান এর জন্য বেতনের বাহিরে ৪ ইউনিট রেশন এবং দেশেবিদেশে ভ্রমণ করার ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে ।
Leave a Reply