নতুন বছরে ক্যারিয়ারটাকে বদলাতে কে না চান। ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে নতুন বছরে ক্যারিয়ারটাকে নতুনভাবে সাজাতে সবাই আগ্রহী থাকেন। ক্যালেন্ডার বদলের সঙ্গে থাকে নতুন প্রত্যাশা। ফেলে আসা বছরের ব্যর্থতা ভুলে, সাফল্যের জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়া।
সৌভাগ্যবান না হলে এই চাকরির বাজারে খুব কম মানুষ আছেন যে, বেকারত্বের যন্ত্রণা সহ্য না করেই চাকরি পেয়েছেন। জুতার সুকতলা খইয়ে, কপালে ভাঁজ ফেলে, সার্টিফিকেটগুলোকে আরও মলিন করে কত কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে তবেই না জোটে ‘সোনার হরিণ’। এ বছর কর্মক্ষেত্র নামক যুদ্ধের ময়দানে নামার আগে স্টাটিং লাইন থেকে পাখির চোখে ফিনিশিং লাইনের দিকে যারা চেয়ে আছেন, তাদের জন্য ২০১৭টা ছিল হতাশার একটা বছর। কর্মপ্রার্থীদের আশা, ২০১৮ সালে কাজের সুযোগ ও সমৃদ্ধি বাড়বে। নতুন বছর প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা, তা নির্ভর করবে কতগুলো মূল কর্মক্ষেত্রের ওপর। এফএমসিজি, রিটেইল, ফার্মার মতো ক্ষেত্রগুলোয় কাজের সুযোগ তৈরি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
অনেকের মতে, গেল বছরের মতো এ বছরও রিয়েল এস্টেট, অবকাঠামো কিংবা টেলিকমের মতো সেক্টরে কাজের সুযোগ কমতে পারে। তবে আইটিতে ক্যারিয়ার গড়ে দক্ষতা আনতে পারলে সাফল্যকে খুঁজতে হবে না, সাফল্য খুঁজে নেবে। আজ নতুন ব্যবসার উদ্যোগ নিল এগ্রো প্রডাক্ট। বিদেশে কর্মসংস্থানের অবস্থা যে খুব একটা ভালো তাও নয়। মধ্যপ্রাচ্যের এখন ১০ রিয়ালের কাজ ৮ রিয়ালে করতে হচ্ছে। তাই প্রবাসী হওয়ার আগে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চাকরি বদলানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তারাই সফল হন, যারা গোটা প্রক্রিয়া আলাদা আলাদা পদক্ষেপে সম্পন্ন করেন। যেমন তারা সিভিটি এক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুত করেছেন। পরবর্তী সপ্তাহ বা ছয় মাস ধরে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন ইত্যাদি। যদি পরিকল্পনা নিয়ে থাকেন, তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগোতে থাকুন। প্রয়োজনে পরিবারের অভিজ্ঞজনের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আগামী বছরও চাকরির বাজার কিংবা বিজনেস সেক্টর খারাপই থাকবে। আশঙ্কার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থা পাল্টানোর সম্ভাবনাও কম দেখা যাচ্ছে। তাই এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে আপনার বর্তমান অবস্থা খারাপ হয়। তাই আপনার ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিতেই হবে। ২০১৮ সালে আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতিকল্পে তাই রইল বেশ কিছু পরামর্শ।
নতুন করে আবিষ্কার করুন নিজেকে : নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবুন, নতুন কাজে হাত দিন। অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করুন। আপনার প্রাত্যহিক জীবনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসুন। দেখবেন পুরনো সবকিছু আপনার কাছে নতুন হয়ে উঠেছে। এমনকি এর ফলে অনেক সুযোগও আসবে আপনার কাছে। হয়তো এমএস-এক্সেলের ফর্মুলা দিয়ে যোগ-বিয়োগ বুঝতেন না; সময় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। যখনই শিখে ফেলবেন দেখবেন কত সহজ ছিল। এখন দেখুন আপনার দক্ষতার মুকুটে যোগ হলো আরেকটা পালক।
সুখ বিষয়ে পরিকল্পনা : আমরা যখন ইতিবাচক চিন্তা করি, তখন বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়। এ সময় দুশ্চিন্তার পথগুলোকে আমরা অন্যদিকে পরিচালিত করি। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, সৃষ্টিশীলতা তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সুখের অপেক্ষায় থাকেন। অথচ যে কোনো মুহূর্তের নানা উৎসকে অর্থপূর্ণ করে সুখী হওয়া যায়। এর জন্য মেডিটেশনের নানা প্রক্রিয়া বেশ কাজের। কাজেই চিন্তার প্রয়োগ একটু এদিক-ওদিক করেই সুখের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
তৈরি থাকুন সব সময় : ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।’ টার্গেট জব ছিল এক, করতে চাচ্ছেন আরেকটা। সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছেন তাহলে দেরি কেন? পরবর্তী ইনিংসের জন্য প্রস্তুতি নিন। যদিও একঘেয়ে শোনাবে, তবুও বেশিরভাগ সময়েই ইন্টারভিউ টেবিলে কর্মপ্রার্থী উপযুক্ত হোমওয়ার্ক না করেই উপস্থিত হন। এ ধরনের হঠকারী কাজ নিজেরই ক্ষতি করবে। উল্টো ভাগ্যকে দোষারোপ।
নমনীয় হন : রাজনৈতিক ডামাডোল আর অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে পেশা নির্বাচনে একান্ত নমনীয় হওয়া দরকার। ‘আমার মামা-চাচা নেই’ – এই মেনে নিয়ে নামতে হবে আপনাকে মাঠে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে এমন মানসিকতা তৈরি করতে হবে, যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সহজেই মানিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ব্যক্তি হিসেবেও এই মানসিকতা আপনাকে সাফল্য এনে দেবে। তাই বলে আত্মসম্মান বাজারে বিকিয়ে দেওয়া যাবে না। এমন করলে টাকা আসবে সম্মান নয়।
বাড়ান যোগাযোগ : জব মার্কেটে টিকে থাকার জন্য যোগাযোগ তৈরি করা একান্ত দরকার। তাই মেলামেশা শুরু করুন সমমনষ্কদের সঙ্গে। এর ফলে যেমন আপনার জানা-বোঝার পরিধি বাড়বে, তেমনই আপনার সাফল্য এনে দেবে। সুযোগ যে কোনো সময়ে যে কোনো দিক থেকে উপস্থিত হতে পারে।
সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা : আপনার প্রতিষ্ঠানের সেলস যদি খারাপ অবস্থা থেকে বের করে আনতে চান, তবে পরিকল্পনা ও আবেগের সমন্বয় করুন। খরচের দিকে খেয়াল রাখুন। আর যদি চাকরিজীবী হন, তবে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঞ্চয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন। আয়, ব্যয়, ব্যয়ের বিভিন্ন খাত আলাদা করে ভাগ করে নিন।
ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুতি : যদি নতুন বছরের পরিকল্পনা প্রণয়নে সময় বেঁধে দেন এবং আপনি ব্যর্থ হন, তাহলে মোটেও হতাশ হবেন না। এমনটা ঘটতেই পারে। আবারও একই পরকল্পনায় নতুন করে সময় বেঁধে দিন।
আশা করি, ২০১৮ সালটা আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে সৌভাগ্য আর সাফল্যের।
সূত্র
- নতুন বছরে ক্যারিয়ার প্রস্তুতি 🔗
Leave a Reply