যোগ্যতার সাথে সাথে যেভাবে বাড়াবেন দক্ষতা

স্বপ্ন হল সেটা যেটা বাস্তবায়ন করা হয়। না হলে স্বপ্ন আর সত্যির মধ্যে একটু ফারাক থেকে যায়। হাতের নাগালে সাফল্য এলেও তাকে মুঠোবন্দি করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন অনুসারে নিজেকে আর একটু মেজেঘষে তৈরি করে নেওয়া। জন্মগতভাবে মেধা-যোগ্যতা যতই প্রখর হোক, দক্ষতা উন্নয়ন বা স্কিল ডেভেলপমেন্ট এমন একটা জিনিস যেটা শিখে নিতে হয়। নইলে মেধা বা যোগ্যতা কাজে লাগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় – ‘আমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা।’ ‘আমি তো কিছুই পারিনা।’ কিংবা ‘আমার ভাগ্যটাই খারাপ।’ যে চোখে এক সময় ছিল আশার আলো; সেই চোখে নেমে আসে দুনিয়া জোড়া হতাশা। কম্যুনিকেশন বা পাবলিক রিলেশন স্কিলের অভাবে মনে মনে বলতে হয়, ‘আমার তো মামা-চাচা নেই’ ভেবে ঘরের কোনে পড়ে থাকা। শুধু যোগ্যতা-ই যদি যথেষ্ট হত তবে তামিম-সাকিব-মেসি-নেইমারকে প্র্যকটিসে এত ঘাম ঝরাতে হতো?

তরুণ বা অভিজ্ঞানদের তাই হীনম্মন্যতায় ভোগার কিছু নেই। তাঁদের যোগ্যতার কোনও অভাব নেই। কমতি শুধু দক্ষতা উন্নয়নের। কোনও কিছু পারদর্শিতার সঙ্গে করার ক্ষমতা তাঁরা রাখেন। সেগুলি কীভাবে করতে হয় সেটা জেনে রপ্ত করে ফেললেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না। স্মার্টনেস, কর্মতৎপরতা, উপস্থিত বুদ্ধি, একাধিক ভাষায় দক্ষতা, লেখালেখির অভ্যাস ইত্যাদি গুণাবলী একজন চাকুরীপ্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে অকেখানি এগিয়ে রাখে। কোনও ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকলে তার মানে এই নয় যে আগামী দিনে তা আর অর্জন করা যাবে না। প্রয়োজন সংকল্প আর পরিশ্রম। চাকুরি সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন হয়ে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজন মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার মাধ্যমে একজন অনভিজ্ঞ তরুণও খুব ভালো একটি চাকুরীর মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে। এ জন্য কলেজ-ইউনিভার্সিটি টপকানোর আগে যদি নিজেকে দক্ষ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায় চাকরির র‌্যাট রেসে নিজেকে শক্তিশালি প্রতিদন্দ্বি হিসাবেই আবিষ্কার করবেন। কোন না স্কিলটা একটু ডেভেলপ করতে পারলেই অভিজ্ঞতা না থাকলেও আত্মবিশ্বাসী-উদ্যমী তরুণের সামনে, ‘স্কাই ইজ দি লিমিট!’

ইংরেজির দক্ষতা

এসএসসি আর এইচএসসিতে জোড়া এ প্লাস থাকা ছাত্রকেও দেখা যায় ইংরেজিতে কথা বলতে গিয়ে আটকে যায়। কারণ, আর কিছুই না, ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে সড়গড় না হওয়া। অনেকেই ইংরেজিটা ভালো পড়াতে পারে, লিখতে পারে, গ্রামারের যে কোনও প্যাঁচ সমাধান করে দিতে পারে। শুধু পারেনা ভাষাটা স্বচ্ছন্দ, অনর্গল বলতে। এ জন্য ম্যাল্টিন্যশনাল অরগানাইজেশনের জব ইন্টারভিউতে ভালো-ভালো ছাত্র আত্মবিশ্বাস হারিয়ে, খালি হাতে ফিরে আসে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অসাধ্য সাধন করতে হবে না। শ্রেফ প্রাক্টিস করতে হবে। এর জন্য পরিবারের কোন সদস্য, বন্ধুবান্ধব বা সহপাঠির সাথে নিময়তি ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্ট করতে হবে। এ ভাবে যুতসই মনে না হলে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ ক্লাব আছে; সেগুলয় যোগ দেয়া যেতে পারে। আরো রয়েছে বাণিজ্যিক ইংরেজি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এগুলো ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের বই, টিউটোরিয়াল অডিও-ভিডিও এবং ওয়েসসাইট। ইংরেজির দক্ষতাটা প্রতিষ্ঠানিক স্বিকৃতি পর্যয়ে নিতে চাইলে রয়েছে আইএলটিএস পরীক্ষা।

কম্পিউটারের দক্ষতা

এখন অফিসিয়াল সব কর্মকাণ্ড হয়ে পড়েছে কম্পিউটার নির্ভর। তাই কম্পিউটারের উপরে দক্ষতা না থাকলে, চাকুরী জুটানো অনকেটা অসম্ভব ব্যাপার। কম্পিউটারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দেশের আনাচে কানাচে রয়েছে প্রচুর কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট। এগুলোর মধ্য থেকে মানসম্মত কোন একটা বেছে নিতে হবে। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ বই, ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং ওয়েসসাইট। বাড়াতে হবে টাইপিং স্কিল, জানতে হবে অফিস সফটওয়ারের ব্যবহার, ওয়েব ব্রউজিং অত্যান্তগুরুত্বপূর্ণ ব্যপার, ধারণ রাখতে হবে প্রাধমিক হাডওয়্যার ট্রাবুলশুটিংয়ের উপর। এই বিষয়গুলো ঠিকমত রপ্ত করতে পারলে ইন্টারভিউতে কিংবা পরীক্ষায় হীনম্মন্যতায় ভুগতে হবে না। মাথা উঁচু করে আত্মবিশ্বস নিয়ে দিতে পারবেন একের পরে এক উত্তর।

ড্রাইভিং

ড্রাইভিং শেখাটা এখন অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুণ চাকুরী প্রাথিদের জন্য। বেশকিছু চাকুরী রয়েছে যেখানে আবেদন করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে ড্রাইভিং জানা। ম্যাল্টিন্যশনাল অরগানাইজেশনের ক্ষেত্রেও অনাভিজ্ঞ প্রর্থীদের মধ্যে যারা ড্রাইডিং জানেন তাদের অগ্রধিকার দেওয়া হয়।

সংগঠন

যেসব তরুণ চৌকস, যোগাযোগবান্ধব, আত্মবিশ্বাসী, সিদ্ধান্ত নিতে তৎপর, শেখার আগ্রহ আছে; চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরাই এক ধাপ এগিয়ে থাকে। আর এই সবগুনাবলি অর্জন করা যায় বিভিন্ন সংগঠনে টিমওয়ার্কের মাধমে। উন্নতর প্রযুক্তির এই যুগে অনেক কিছু পাল্টে গেছে, যেমন, এখন একক ব্যক্তির চেয়ে এখন টিম ওয়ার্কের সফল্যের হার বেশি। তাই নিয়োগ কর্তার সংগঠনিক দক্ষতা এবং টিমওয়ার্কের অভ্যস্ত তরুণদের অগ্রধিকার দিয়ে থাকে। এছাড়া সামজিক বা সমাজ সেবা মূলক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকাটা ব্যাক্তির মানবিকতার পরিচয়ও বহন করে। তাই ছাত্র অবস্থায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা সময় নষ্ট নয়, সময়রে উপযুক্ত ব্যবহার করা।

পারটাইম জব

অনেক চাকুরীতে অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। তবে সেখানে সাধারণত অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্যমী, পরিশ্রমী ও প্রত্যয়ী তরুণদের জন্য অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ সম ক্ষেত্রে যে সব তরুণ পড়াশুনার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের পার টাইম জবের সথে জড়িত থাকে তারা অগ্রাধিকার পায়। এ জন্য তাই তরুণদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি যেকোনো বা পার্টটাইমার হিসেবে কাজ করা। এ জন্য চাকুরীর জন্য সবাইকে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে এবং শিক্ষাজীবন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে তা কর্মজীবনের জন্য অবশ্যই সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। আর নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতায় দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে পারলে যেখানে সুযোগ আছে, সেখানে অভিজ্ঞদের সাথেও সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *