পনজি স্কিম এক ধরনের অর্থনৈতিক প্রতারণা। এই ধরণের প্রতারণার সময় বিনিয়োগকারীদের সামান্য বিনিয়োগের বিপরীতে বিশাল অংকের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু আদতে, নতুন বিনিয়োগকারীদের থেকে আদায় করা টাকা থেকেই পুরনো বিনিয়োগকারীদের টাকা দেওয়া হয়। পনজি স্কিমের উদ্দেশ্য একটাই—প্রথমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে তারপর তাদের বিনিয়োগের সর্বস্ব আত্মসাৎ করা। অর্থের প্রবাহ যতক্ষণ চলে, এই পনজি চক্রও ততক্ষণ চলে। অল্প সময়ে বিনা পরিশ্রমে শর্টকাটে টাকা কামানোর প্রলোভরের ফাঁদে পড়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়।
পনজি স্কিম
পনজি স্কিম হচ্ছে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা কিছু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি অথবা প্রস্তাবনা যার মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ পুরনো বিনিয়োগকারীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ ধরনের ফান্ডে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা পরিশোধ করা হয়। পনজি স্কিমে কোনো প্রকৃত পণ্য, সেবা বা ব্যবসায়িক কাঠামো থাকে না। পনজি স্কিমের কাঠামো সাধারণত পিরামিড আকৃতির হয়। এ পিরামিডের একেবারে চূড়ায় থাকে মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থাৎ স্কিমের হোতা। এরপর থাকে প্রাথমিক সদস্যরা। এই প্রাথমিক সদস্যরা নতুন সদস্য সংগ্রহ করেন। এভাবে পুরনো সদস্যের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ চলতে থাকে। এই পিরামিডের যত নিচের দিকে নামবেন, এর আকার তত বাড়বে—অর্থাৎ সদস্য বাড়বে। যখন অর্থপ্রবাহ কমে যায়, তখনই প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ে।
নানা সময়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপায়ে বারবার লোক ঠকানোর পন্থা হিসাবে ‘পিরামিড স্কিম’ ফিরে এসেছে। নাম, পন্থা ভিন্ন হলেও সব পনজি স্কিমেরই কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন: ১. অল্প বিনিয়োগে বিশাল মুনাফার আশ্বাস, ২. আয়ের প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনার স্পষ্ট না করা, ৩. অতিরিক্ত ধারাবাহিক রিটার্ন, ৪. অনিবন্ধিত বিনিয়োগ ৫. প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের টাকা বিশাল মুনাফাসহ ফেরত দিয়ে তাদেরকে আরও বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা।
এই পিরামিড স্কিমের নামকরণ চার্লস পনজির নামে করা হলেও এরকম প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড কিন্তু তিনিই প্রথম শুরু করেনি। তার আগেও বেশ কয়েকজন এরকম প্রতারণা করেছেন। ১৮৭৯ সালে সারাহ হাউই প্রথম এ ধরনের স্কিম চালু করেন।
পনজি স্কিম শুরুটা যেভাবে
চার্লস পনজি (Charles Ponzi) প্রতারণার শিক্ষা নেন লুইজি জারোচ্চি নামের এক ইতালীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ব্যাংক মালিকের কাছে। ১৯০৭ সালে মন্ট্রিয়লে গিয়েছিলেন। সেখানে চাকরি নেন জারোচ্চির ব্যাংক—বানকো জারোচ্চিতে। এই ব্যাংক তাঁর আমানতকারীদের ৬ শতাংশ সুদ দিত। সেই সময় যেটি ছিল অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ফলে রাতারাতি এই ব্যাংকে আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং রিজার্ভ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। নতুন যে আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখছেন বেশি মুনাফার আশায়, তাঁদের টাকা থেকেই লাভ দেওয়া হচ্ছে পুরোনো গ্রাহকদের। আসলে ব্যাংক তাঁর বিনিয়োগের লাভ থেকে এই কাজ করছে না। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। নতুন গ্রাহকের সংখ্যা কমে আসতে বাধ্য। ব্যাংকে ধস নেমে এল। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলেন জারোচ্চি। এই বুদ্ধিটা পনজি পরে কাজে লাগিয়েছেন পনজি স্কিমে।
১৯২০-এর দশকে মাত্র ৪৫ দিনে ৫০ শতাংশ এবং ৯০ দিনে ১০০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভনে সাড়া দিয়ে চার্লস পনজির হাতে কোটি মার্কিন ডলার তুলে দিয়েছিল বোস্টনের হাজার হাজার মানুষ। পোস্টাল রিপ্লাই কুপন কেনাবেচার ব্যবসা থেকে এ রিটার্ন আসছে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
ওই সময় বিভিন্ন দেশের ডাক বিভাগ চিঠিপত্র বিনিময়ের জন্য আন্তর্জাতিক কুপন ব্যবহার করত। এসব কুপনের স্থানীয় মুদ্রামান একই থাকলেও দেশভেদে মুদ্রার বিনিময়মূল্যের ওঠানামার কারণে বাইরের দেশেও এই মান ওঠানামা করত। এসব কুপনের বিনিময়ে ডাকটিকিট নেওয়ার সুযোগ ছিল। পরে একসময় দেশে দেশে ডাকটিকিটের দামও ওঠানামা করতে শুরু করে।
এসব কুপন কম দামে কেনার জন্য ইউরোপে কিছু এজেন্ট নিয়োগ দেন চার্লস পনজি। মুদ্রার মান নেমে গেলেই কুপন কিনে রাখত তারা। সস্তায় কেনা এসব কুপনের সঙ্গে দামি ডাকটিকিট বিনিময় শুরু করেন পনজি। এর ফলে বড় অঙ্কের লাভ পকেটে আসে তার। এখানে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হতেন মুনাফার জন্য। সে সময় ব্যাংকে টাকা রাখলে বার্ষিক মুনাফা মিলত ৫ শতাংশ।
এতদিন আইনসম্মত উপায়ে ব্যবসা করলেও এবার বড় মতলব আঁটেন চার্লস পনজি। ‘সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’ নামের একটা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের মুনাফার লোভ দেখালেন তিনি মানুষকে। তার অফিসের সামনে প্রতিদিনই বড় হচ্ছিল আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের লাইন, যাদের দেয়া নতুন তহবিল থেকে পূর্ববর্তী বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুত রিটার্ন দিয়ে যাচ্ছিলেন চার্লস পনজি। অবিশ্বাস্য হারে রিটার্ন আসছে, মানুষ তার হাতে সব তুলে দিচ্ছে, প্রতিদিন গ্রাহক বাড়ছে। আরো রিটার্নের আশায় পুরনোরা পুনর্বিনিয়োগ করছে। নানা কারণে নতুন পুঁজির প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই ধসে যায় পনজির স্কিম। সর্বস্ব হয় হাজার হাজার সাধারণ মার্কিনি।
১০. পিটার লম্বার্ডি
পিটার লম্বার্ডির কেলেঙ্কারিটি সম্ভবত সবচেয়ে দূষিত কারণ এই পনজি স্কিমের ক্ষতিগ্রস্তরা এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ছিল। লম্বার্ডি মিউচুয়াল বেনিফিট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করেন।
স্পষ্টতই, ধারণাটি ছিল ওষুধ কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে এইচআইভি রোগীদের মামলার তহবিল। ২০০৩ সালের মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’র অভিযানে পিটার লম্বার্ডির ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় এবং বিচারে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পিটার লম্বার্ডি এতটাই ধূর্ত ছিলেন যে তার আত্মসাৎ করা অর্থের অর্ধেকের বেশি খুঁজে পায়নি।
০৯. স্কট রথস্টাইন
এই বিশেষ পনজি স্কিমটি সবচেয়ে বিখ্যাত কারণ এটি এখন পর্যন্ত কোন আইনজীবীর সাজানো সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার সেই সময়ের সম্মানিত আইনজীবী স্কট রথস্টাইন বহু বছর ধরে এই প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে পনজি স্কিম তৈরি করেছিল।
তিনি তার বিলাসবহুল লাইফস্টাইল দিয়ে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করে পথে বসায়। এই কেলেঙ্কারির জন্য, স্কট রথস্টাইন বর্তমানে ৫০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে। মার্কিন সরকার অনুমান করে এক দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে স্কট রথস্টাইন।
০৮. টম পেটার্স
মার্কিন বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে তৃতীয় বড় অংকের কেলেঙ্কারির মামলায় ৫০ বছরের জন্য জেল খাটছে টম পেটার্স।
টম পেটার্স একাধিক শিল্পের সাথে অত্যন্ত সংযুক্ত ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন, পাশাপাশি তিনি তার পিটার্স গ্রুপ ওয়াল্ডওয়াইল্ড (পিডব্লিউআই)-এর সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ছিলেন। সেই সময় লোকে তাকে চিনতো একজন ভাল এবং দয়ালু মানুষ হিসাবে। কিন্তু আসলে পিডব্লিউআই ভুয়া ক্রয়াদেশ ও স্টেটমেন্ট দেখিয়ে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ মূলধন জোগাড় করেছিল। কিছু টাকা প্রথম দিকের অল্প সংখ্যক বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়, বাকি টাকা যায় পেটার্সের পকেটে। এসব ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রচারণা চালানো হতো পিটারসের নিজস্ব ম্যাগাজিনের মাধ্যমে।
২০০৮ সালে টম পেটার্সের পিটার্স গ্রুপ ওয়াল্ডওয়াইল্ড হোল্ডিংয়ের মালিকানার ছিল ৬০টি কোম্পানি। ২০০৭ সালে ৪ মহাদেশ থেকে আয় ছিল দুই দশমিক তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকায় একেরপরএক কোম্পনি মোটা অংকে কেনা এবং মুনাফা দেয়ার দেখে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি), ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তদন্ত নামে কিন্তু ধূর্ত টম পেটার্সের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছি না। এই সময় এগিয়ে আসে পিডব্লিউআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিয়ানা কোলম্যান। আদালতে তার জবানবন্দি ফাঁস হয় টম পেটার্সের তিন দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার পনজি স্কিম।
০৭. অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড
মার্কিন মুল্লুকে যে এভাবে প্রতারণা হতে পারে তা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য অনেক সময় কল্পনাকেও হার মানায়। অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর এবং শিল্পপতি লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ডের উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং মনভোলানো চটকদার কথাবার্তায় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে তাদের টাকা অ্যান্টিগুয়া এবং অন্যান্য দেশে তার নিজস্ব ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড তার এই ‘পানজি স্কিম’ লুকাতে অসংখ্য মার্কিন রাজনীতিককে ঘুষ দিয়ে ছিল। কিন্তু এতেও রক্ষা হয়নি অ্যালেন স্ট্যানফোর্ডের। ১১০ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে এখন জেলে।
০৬. বার্নার্ড ম্যাডফ
সাম্প্রতিক সময়ে পনজি স্কিম ও বার্নার্ড ম্যাডফ— এই দুটি শব্দ প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে। এই শতাব্দীরই প্রথম দশকে একটা গোটা আর্থিক ব্যবস্থাকে ধরে পড়তে দেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার নেপথ্যে ছিল ক্যারোলিনার লগ্নিদানব বার্নার্ড ম্যাডফ। তিনি ছিলেন ওয়াল স্ট্রিটের পোড় খাওয়া স্টকব্রোকার এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইলেক্ট্রনিক-স্ক্রিন ভিত্তিক শেয়ার বাজার এবং বাজার মূলধনের দিক থেকে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম শেয়ার বাজার ন্যাসড্যাক-এর চেয়ারম্যান। তার হাত ধরে সংঘটিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পনজি স্কিম।
২০০৮ সালে ধসের সময় এসে জানা গেল, ম্যাডফ বিনিয়োগকারীদের এক টাকাও কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করেননি। সব টাকা ব্যাংকে রেখে দিতেন। চার্লস পনজির মতো তিনিও শুধু নতুন গ্রাহকদের টাকায় পুরনোদের রিটার্ন দিতেন। পাশাপাশি আইনি স্বচ্ছতার প্রমাণস্বরূপ বহু ভুয়ো ফান্ড তৈরি করেছিলেন তিনি খাতায়-কলমে। মার্কিন শেয়ারে তাদের কোনো বাস্তবিক অস্তিত্ব না থাকলেও, কেবলমাত্র লগ্নিকারীদের কাছেই পেশ করা হত তা। অন্যদিকে তাঁর গ্রাহকের তালিকায় ছিলেন পরিচালক স্টিফেন স্পিলবার্গ, অভিনেতা কেভিন বেকনের মতো তারকারা। ফলে তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই এগিয়ে আসত সাধারণ মানুষ। আর ব্যবসার পরিধি ছড়িয়ে পড়েছিল পাঁচটি মহাদেশে!
ধরা পড়ার সময় তার স্কিমে প্রায় মানুষের মূলধন জমা ছিল ১৭-১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ম্যাডফের কেলেঙ্কারির আকার ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।
ম্যাডফকে ১১টি ফেডারেল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারে তাকে ১৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু গত এপ্রিলে ৮২বছর বয়সে বার্নার্ড ম্যাডফ মারা যায়।
জেফারি স্কিলিং
জেফ স্কিলিং মার্কিন এনারর্জি কোম্পনি এনরন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে লাভজনক অবস্থান পেয়েছিলেন। এর পরে পরিচালনা পর্ষদে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন যারা হিসাব বিজ্ঞানের বিভিন্ন ফাঁক-ফোকর দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেনা বিনিয়োগকারীদের থেকে লুকিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। হিসাবের বিভিন্ন মারপ্যাঁচ ও ভূতুরে প্রভিশন তৈরীর মাধ্যমে দেনা ও দায় লুকানোর কাজটি তারা সম্পন্ন করেন। আর্থিক প্রতিবেদনে দায়-দেনা কম প্রদর্শন করায় বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন এবং এভাবে এনরন কর্পোরেশন ভুয়া হিসাব দেখিয়ে শেয়ার বাজার থেকে ব্যাপক পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করে। হাজার হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীতে পথে বসিয়ে ২০০১ সালে ‘এনরন’ দেউলিয়া এবং অবলুপ্ত হয়। এনরন কেলেঙ্কারির মূলহোতা জেফারি স্কিলিং ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলে ছিলেন। এনরন কেলেঙ্কারি হিসাব বিজ্ঞানের ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত হিসাব জালিয়াতি।
Leave a Reply