আগামী ৩ মে (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পিএসসির ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে একযোগে শুরু হবে এই পরীক্ষা। ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দুই ঘণ্টাব্যাপী চলবে। হাতে বাঁকি আর মাত্র কয়েটা দিন। শেষ মুহূর্তের ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে রইলো কিছু পরামর্শ।
৪০তম বিসিএস
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ৪০তম বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস)র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। আবেদন গ্রহণ শুরু হয় ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থীর আবেদন জমা হয়। এবারের পরীক্ষার মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ক্যাডার অনুসারে প্রশাসনে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবণ্টন
বিসিএসের প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারিতে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ৩৫তম বিসিএস থেকে এমসিকিউ পরীক্ষা ২০০ নম্বরের এবং সময় দুই ঘণ্টা। হিসেব করে দেখলে বোঝা যায় প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য গড়ে ৩৬ সেকেন্ড করে সময় পাওয়া যায়। পরীক্ষা হবে ১০টি বিষয়ে – বাংলায় ৩৫ নম্বর, ইংরেজিতে ৩৫, বাংলাদেশ বিষয়ে ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২০, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০, সাধারণ বিজ্ঞানে ১৫, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে ১৫, গাণিতিক যুক্তিতে ১৫, মানসিক দক্ষতায় ১৫ নম্বর ও নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে থাকবে ১০ নম্বর। ভুল উত্তরের জন্য প্রতি প্রশ্নে ০.০৫ নম্বর করে কাটা যাবে। খেয়াল রাখা দরকার, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শুধু পাস নম্বর তোলাই মূল লক্ষ্য; সবকিছু পারার এবং শতভাগ উত্তর দেয়ার চেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই না। এই কারণেই একেবারে নিশ্চিত না হয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াই ভালো।
মাথায় রাখুন
● ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে তাই সিলেবাস অনুযায়ী পরিকল্পনামাফিক কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। বিক্ষিপ্তভাবে পড়াশোনা না করে, প্রস্তুতির শুরুতেই সিলেবাসের বিষয়াবলী অনুযায়ী বিগত বিগত ৫ বছর অর্থাৎ ৩৫-৩৯ পর্যন্ত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতার দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
● কোনও একটি বিশেষ বিষয়কে গুরুত্ব না বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য সমস্ত বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। না হলে কোনও একটি অংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
● প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রবল মনোযোগ দরকার। অন্য কোনও পরীক্ষার বিষয়ে এই সময় মনোযোগ না দেওয়াই ভালো।
● সিলেবাস অনুযায়ী পুরোটা পড়া উচিত। সাজেশন ভিত্তিক পড়া নয়। সময় থাকতে গোটা সিলেবাসটি ভালো করে জেনে নিতে হবে। তারপর মূল অংশগুলো ভালো করে পড়তে হবে। প্রথমেই বাদ দিয়ে পড়ার অভ্যাস একেবারেই কাজের কথা নয়।
● বিসিএসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক পড়াশোনা বিপুল মাত্রায় প্রয়োজন। নিয়মমাফিক পড়াশোনা না করলে অল্প সময়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়া মুশকিল। পরীক্ষা সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত দরকারি।
নিয়মমাফিক পড়ুন, হিসেব করে পড়ুন। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি টিপস
যেভাবে আসবে সাফল্যের সিঁড়ি
● বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করা মূলত নির্ভর করে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলা—এ চারটি বিষয়ের ওপর। এ চারটি বিষয় জোর দিয়ে পড়ুন। যে প্রশ্নগুলো কঠিন মনে হবে, সেগুলো একাধিকবার পড়ুন। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিগত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সমাধান করে ফেলুন। এতে করে আপনার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে।
● ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে সার্বিকভাবে বিগত বছরগুলো প্রশ্নের ধারা বিবর্তন দেখতে চাইলে একটি বিসিএস প্রশ্নব্যাংক কিনতে পারেন। তবে এটা খুব জরুরী নয়।
● এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নজর দিতে হবে। বাংলা ব্যাকরণ অংশে ভুল সংশোধন বা শুদ্ধিকরণ, সমার্থক-বিপরীতার্থক শব্দ, সন্ধি, প্রত্যয়, সমাস, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ ও বাক্য সংকোচন থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলা সাহিত্যের প্রধান লেখকদের সব বইয়ের নাম ও বিষয় সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। এ থেকে প্রশ্ন আসে। প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, জব সলিউশন, নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ডের ব্যাকরণ বই, হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা, ড. হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা বিষয় বাংলা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা। এছাড়া যে কোনো পাবলিকেশনের বাংলা প্রস্তুতি গাইড।
● প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজি অংশের উত্তর করতে যথেষ্ট সচেতন ভাবে। কেননা এগুলোতে কনফিউশনে পড়ে অনেক সময় ভুল হয়ে যায়, ফলে, নেগেটিভ মার্কস গুনতে হয়। ইংরেজি গ্রামার অংশে ভালো করতে হলে এতে ভালো দখল থাকতে হবে। লিটারেচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়কাল, খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের উক্তি, কবিতার লাইন, জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা পড়তে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের গ্রামার বই সহায়ক হতে পারে। ভোকাবুলারির জন্য ভালো কোন বইয়ের সহায়তা নিতে পারেন। বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন – বিগত সালের প্রশ্ন থেকে কমন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
● সাধারণ জ্ঞানের সিলেবাস অনেক বড়। যেসব টপিক থেকে প্রায় বছরই প্রশ্ন আসে, সেগুলো রাখতে হবে পড়ার তালিকায়। রোজকার খবর রাখুন। সংবাদপত্র ভীষণ মন দিয়ে পড়ুন। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য পত্রিকা পড়া জরুরি। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই সহায়ক হবে। পত্রিকার উপসম্পাদকীয় ও কলামগুলো পড়লে অনেক তথ্য জানা যায়, সমসাময়িক ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। নিয়মিত চোখ রাখুন ইন্টারনেটে।
● গণিতে যারা ভালো তাদের জন্য প্রিলিমিনারি পাস করা কঠিন কিছু নয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত এমন সব অংকই থাকে, যা শর্টকাটে সমাধান করা যায়। ভালো করার মূলমন্ত্র বারবার অনুশীলন। পুরনো সিলেবাসের বইয়ের অংক সমাধান করলেও কাজে দেবে। অন্তত বিগত ১২ বছরের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। এতে প্রশ্ন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা হবে। বিভিন্ন গাইড বইয়ের মডেল টেস্টগুলো দিতে হবে। গাণিতিক যুক্তির জন্য অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির গণিত বইগুলো চর্চা করা দরকার। নিয়মিত গণিত চর্চার বিকল্প নেই।
● সব বিষয় গভীরভাবে পড়ুন। কেবলমাত্র সাজেশনের উপর ভরসা করবেন না। কেননা শেষ কয়েক বছরের ইতিহাস বলছে কেবল মাত্র সাজেশন-ভিত্তিক পড়াশোনা সমস্যায় ফেলে দিতে পারে পরীক্ষার্থীদের। রিভিশন দিতে হবে বা মনে থাকে না, এমনটা কখনও মনে আনবেন না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার পড়ুন, এতে করে এমনেই রিভিশন হয়ে যাবে।
● একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নতুন সংযোজিত বিষয়, যেমন: ভূগোল, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, মানসিক দক্ষতা সম্পর্কে কিন্তু আগেও প্রশ্ন আসত। বর্তমানে শুধু বিষয়বস্তুগুলো আলাদা করে নম্বর বণ্টন করা হয়েছে। অতএব, প্রস্তুতি একইভাবে নিলেই চলবে। পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য নবম-দশম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইটি বেশ কাজে দেবে।
● সাধারণ বিজ্ঞানে ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন থাকে। গুরুত্ব বুঝে বইয়ের প্রায়োগিক বিষয়গুলো দাগিয়ে পড়লে কাজে দেবে। বোর্ডের সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বই পড়তে হবে। এই বইগুলো ভালোমতো পড়লে প্রিলিমিনারির জন্য বাড়তি তেমন কিছু না পড়লেও চলে। তবে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। বাড়তি প্রস্তুতির জন্য এসব বই দেখতে পারেন।
সর্বশেষ
৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে স্ট্র্যাটেজিক পড়াশোনা বিপুল মাত্রায় প্রয়োজন। কেননা বিপুল সিলেবাসে নিয়মমাফিক পড়াশোনা না করলে অল্প সময়ে একে সামলানো মুশকিল। তাই ব্যর্থ হলে হলে দমে যাওয়া উচিৎ নয়। একবার পরীক্ষা দিয়ে থেমে না গিয়ে, বার কয়েক পরীক্ষা দেওয়াই যেতে পারে। সাধারণ মানের ছাত্রদের কম করে ৩ বছর নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। কেননা সঠিক পরিমাণে পড়াশোনা না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।
Leave a Reply