২০১৪ সালের সর্বাধিক আলোচিত ১০টি ঘটনা

১. ইবোলা ভাইরাস: এর বছরের সব চেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল ইবোলা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  তথ্য মতে, প্রাণঘাতী এই  ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পশ্চিম আফ্রিকায় তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার মানুষ। ডাব্লিউএইচও জানায়, ইবোলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে লাইবেরিয়ায়। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এক হাজার আটশ’ মানুষ মারা গেছেন। এদিকে, বিষয়টিকে ‘বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইবেরিয়া ছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন, গায়ানায় ইবোলা ভাইরাসে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলাভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (ইভিডি), ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার (ইএইচএফ), শুধু ইবোলা অথবা এবোলা হল ইবোলা ভাইরাস ঘটিত মনুষ্য রোগ। এই রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে, ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি নয়তো, ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডদেওয়া হয়। এই রোগে মৃত্যু হার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে।
২. আইএস: এ বছর উত্থান ঘটে কট্টর এই জঙ্গি সংগঠনটির। ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী বিশাল অঞ্চল দখলে নিয়ে নেয় তারা। জুন মাসের ২৯ তারিখে তারা বিশ্বব্যাপী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। আবু বকর আল বাগদাদিকে এই খেলাফতের খলিফা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১১ অক্টোবর আইএস ইরাকের অনেক বড় শহর দখল করা শেষে রাজধানী বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এমনকি বাগদাদ বিমানবন্দরের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে। এর মধ্যেই শুরু হয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলা। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বহু দেশ এ হামলায় অংশ নেয়। প্রথমে এ হামলা ইরাকে সীমাবদ্ধ থাকলেও, ক্রমেই সিরিয়ায়ও তা ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা হামলায় আইএস নির্মূল না হলেও, আগের চেয়ে শক্তি হ্রাস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইএস-এর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গণহত্যা, জোর করে ধর্মান্তরকরণ, সংখ্যালঘু হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিয়ে, দাসপ্রথা, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, অপ্রাপ্তবয়স্ক যোদ্ধা, সাংবাদিকদের উপর হামলা, বিদেশী নাগরিকদের শিরশ্ছেদ, মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা, কালোবাজারে তেলখনির তেল বিক্রি  করাসহ হাজার অভিযোগ রয়েছে।
৩. মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের: এ বছরে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যেসব ঘটনা ছিল, তার মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া এয়ারলাইনের ফ্লাইট ৩৭০ বিমানটির অন্তর্ধান। বোয়িং ৭৭৭-২০০ইআর বিমানটি ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর এক ঘণ্টারও কম সময় পর দক্ষিণ চীন সাগরে সর্বশেষ অবস্থান রেকর্ড করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। এরপর থেকেই যেন লাপাত্তা বিমানটি। বিমানটিতে ১৫টি দেশের ১২ জন কর্মী ও ২২৭ জন যাত্রীসহ মোট ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন যাদের অধিকাংশই চীনা। অনেক ব্যয়বহুল এবং আধুনিক পদ্ধির্ততে বিমানটির অনুসন্ধান চললেও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি বিমানটির, আবিষ্কৃত হয়নি ধ্বংসাবশেষ। অতঃপর মালযেশিয় সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে বিমানটি গভীর সমুদ্রে নিপতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে, যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই। এই ঘটনার কয়েক দিন পরই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমানের ভাগ্যে নেমে আসে দুর্ভাগ্য। নেদারল্যান্ডসের দুই শতাধিক যাত্রীসহ আরও যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনের আরেকটি ফ্লাইট এমএইচ ১৭ ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। ইউক্রেনের সরকারের ও রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। বিমানের সকল যাত্রী মারা যান।
৪. বিশ্বকাপ ২০১৪: এ বছরের সব চেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল ‘গ্রেটেস্ট শো অফ ওয়ার্ল্ড’ ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ। ১৩ জুন থেকে ১৩ জুলাই পুরো ৩২ দিন সারা পৃথিবী বিভোর হয়ে তাকিয়ে ছিলো ফুটবলের তীর্থভূমি ব্রাজিলের দিকে। গোল বন্যার বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে অসংখ্য রেকর্ড। জন্ম দিয়েছে নতুন তারকার। সেরায় সেরায় লড়াইটা যেমন জমজমাট হয়েছে, তেমনি অঘটনেরও কমতি ছিলো না কোন। আসর শুরুর আগের বিক্ষোভ শঙ্কা ভুলিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপকে দিচ্ছে ইতিহাসের অন্যতম সেরা আয়োজনের মর্যাদা। আনন্দযজ্ঞের শেষে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরেছে জার্মানি। আয়োজন থেকে শুরু করে দলগুলোর পারফরমেন্স, প্রাপ্তির পূর্ণতায় ফুটবল পিয়াসিদের মনে চিরস্থায়ী আসন নিয়েছে এবারের আয়োজন। মার্সেলোর দেয়া আত্মঘাতী গোলে টুর্নামেন্টের শুরু। ফাইনালে আর্জেন্টিনার জালে মারিও গোৎজের দেয়া গোলটি টুর্নামেন্টের ১৭১তম। যা কিনা ছুঁয়েছে ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে সাবেক তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি, ইংল্যান্ড এবং  ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন স্পেন। বিগ শটদের হতাশার আসরে আলো ছড়িয়েছে কোস্টারিকা, কলম্বিয়া ও চিলির মতো নতুন শক্তিরা। নিজভূমের বিশ্বকাপে একরাশ হতাশাই সঙ্গী হয়েছে ব্রাজিলের। ফুটবল পাগল দেশটি এবার হজম করেছে সবচেয়ে বেশি ১৪টি গোল। সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের পরাজয় ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে রেকর্ড। সেমিফাইনালে এতো গোল খাওয়ার রেকর্ড নেই আর কোন দলের। আসরে অঘটনের ঘটনা নেহাত কম নয়। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আলো ছড়িয়েছেন হামেস রদ্রিগেজ ও কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড হামেস রদ্রিগেজ ছয় গোল করে পেয়েছেন গোল্ডেন বুট। একের পর এক সেভ করে কোস্টারিকার গোলরক্ষক কেইলর নাভাস তিনবার হয়েছেন ম্যাচ সেরা। বিতর্কও কম ছিলো না বিশ্বকাপ ঘিরে। হুয়ান জুনিগার আঘাতে কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়ে গেছে নেইমারের বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাটির জন্ম দিয়েছেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুই সুয়ারেজ। ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েল্লিনিকে কামড়ে দিয়ে হয়েছেন চার মাসের জন্য নিষিদ্ধ। আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপার হতাশা না কাটলেও গোল্ডেন বল জিতে নিয়েছেন লিউনেল মেসি।
৫. ইউক্রেন/ ক্রিমিয়ার সংঘর্ষ: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও ইউক্রেন রাশিয়ার প্রভাবের বাইরে আসতে পারেনি দেশটি। গত বছর থেকে দেশটিতে শুরু হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দেশটির অন্তর্ভুক্তির পক্ষে আন্দোলন। রাশিয়া বারবার এর বিরোধিতা করে হুমকি দিয়ে যায়। অবশেষে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০১০ সালে নির্বাচিত হওয়া রাশিয়াপন্থি ইউক্রেনিয়ান প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতন ঘটে। পশ্চিমাপন্থি সরকার অধিষ্ঠিত হয় ক্ষমতায়। রাশিয়া একে সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থবিরোধী হিসেবে বিবেচনা করে। এক পর্যায়ে ইউক্রেনে প্রবেশ করে রাশিয়ান সেনারা। দখল করে নেয় রুশভাষী অধ্যুষিত ক্রিমিয়া। ক্রিমিয়া প্রথমে গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন হয়, এরপর যুক্ত করে নেয়া হয় রাশিয়ার অংশ হিসেবে। এরপর ইউক্রেনের রুশভাষী অধ্যুষিত অন্যান্য অঞ্চলে শুরু হয় সশস্ত্র বিদ্রোহ। পশ্চিমা দেশগুলো ও ইউক্রেনের সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। অবরোধের লক্ষ্যবস্তু হয় রাশিয়ার জ্বালানি ও অস্ত্র খাত। এতে অবনতির দিকে চলে যায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা। এ ঘটনাকে স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় সংকট বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৬. গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন: এ বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনে ৫১৩ জন শিশুসহ ২ হাজার ২০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যাদের বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। আহত হয় প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। মূলত ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি এলাকা থেকে তিন ইসরাইলি কিশোর অপহৃত হওয়ার ঘটনায় অশান্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। ইসরাইলি উগ্রবাদী সংগঠনগুলো এ ঘটনায় হামাসকে দায়ী করে। হামাস ঘটনা অস্বীকার করে। এরপর ইসরাইলি পুলিশের অভিযানে শ’ শ’ ফিলিস্তিনি আটক হয়। অপরদিকে উগ্রবাদী ইহুদীদের হামলায় নিহত হয় কয়েকজন ফিলিস্তিনি। এরপর থেকে আটককৃতদের মুক্তি দাবিতে হামাস ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায়। এর বেশির ভাগই ধ্বংস করে দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুড়ঙ্গপথে হামাসের হামলা ও রকেট হামলা থামানোর অজুহাতে ইসরাইল হামলা করে ফিলিস্তিনের গাজায়। প্রথমে বিমান হামলা দিয়ে শুরু। কেবলমাত্র আগস্ট মাসেই প্রায় ২০ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষিপ্ত হয়েছিল গাজার বুকে। এ হামলায় ৫ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার মানুষের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হয়। প্রায় ১৭ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনির বাড়িঘর সমপূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল, আংশিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়েছে ৩৭ হাজার ৬৫০টি বাড়ি। মিশরের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে এক চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ যুদ্ধ। যুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আসে ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
৭. স্কটিশ গণভোট: রাষ্ট্রটি চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েল্স্ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড-এর সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্ম প্রকাশ করতে চাইলে ১৮ সেপ্টেম্বর এখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। বহু প্রতীক্ষিত এই ঐতিহাসিক গণভোটে অংশ নিয়ে ‘স্বাধীনতা’ প্রত্যাখ্যান করে স্কটিশরা। এ ভোটে স্কটল্যান্ডের মোট ভোটারের ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ (36 লক্ষ 19 হাজার 915) ভোটার অংশ নেন। যার মধ্যে ৫৫ দশমিক তিন শতাংশ (2 লক্ষ 1 হাজার 926) ভোটার বৃহত্তর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একীভূত থাকার পক্ষেই মত দেন। এ গণভোটকে কেন্দ্র করে নির্ঘুম রাতযাপন করেন ব্রিটিশ ও স্কটিশ রাজনীতিকরা। গোটা বিশ্বও তাকিয়ে ছিল ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সর্ব শেষ ভাঙন কিংবা অখণ্ডতা দেখার জন্য। স্কটিশ গণভোট ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হলে ইউরোপের অনেক দেশে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। আবার যুক্তরাজ্যের বাকি অংশকেও দুর্বল করে তুলতে পারতো। এখানে উল্লেখ্য যে, স্কটল্যান্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কোনও কলোনি নয়, তারা পাশাপাশি দুটি পৃথক রাজ্য ছিল। ১৬০৭ সালে বোঝাপড়ার মাধ্যমে একত্রীভূত হয়েছিল এই দুই রাজ্য। 
৮. ফার্গুসন: ৯ আগস্ট  দুপুরবেলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মিসৌরির সেন্ট লুইস শহরের উপকণ্ঠে ফার্গুসন নামক কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় আঠেরো বছরের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক মাইকেল ব্রাউন পুলিশের শ্বেতাঙ্গ কর্মী ড্যারেন উইলসনের গুলিতে মারা যায়। পুলিশের ভাস্য, ঘটনার দিন মাইকেল ব্রাউন স্থানীয় এক দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে দাম না দিয়ে বেরিয়ে যান। তখন ডাক পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তাদের দাবি, ব্রাউন নিরস্ত্র থাকলেও পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করেছিলেন। নিরস্ত্র ব্রাউনকে বিনা প্রয়োজনে গুলি করার অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী তখনই এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। ব্রাউন বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ তোলে বিক্ষোভকারীরা। ঐ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করে ওই বিক্ষোভ কার্যত পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে, একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রান্ডজুরি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় যে পুলিশ কর্মকর্তার কোনো অপরাধ তারা দেখতে পাননি। গ্রান্ডজুরির সিদ্ধান্ত আসার পরপরই ফার্গুসন সহিসংস বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশ জুড়ে শুরু হয়, উত্তাল প্রতিবাদ।উল্লেখ্য যে,থেকে থেকেই মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ ওঠে।
৯. পাকিস্তানের স্কুলে তালেবান হামলা: গত ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশাওয়ারে সেনাবাহিনীর পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবান বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর পর ১৩২জন স্কুল শিশু, এবং নয়জন স্কুল কর্মী প্রাণ হারিয়েছে এবং সাতজন হামলাকারীও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীদের বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, যাদের অনেকেই সেনা কর্মকর্তার সন্তান। জঙ্গি হামলায় একই বয়সী আরও অন্তত ১২১ স্কুলশিশু আহত হয়েছে। জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকেই তারা নির্বিচারে গুলি করতে শুরু করে। এর পরে প্রত্যেকটি ক্লাস রুমে ঢুকে ছাত্রদের হত্যা করে। জঙ্গি হামলার সময় স্কুলটিতে ১১শর মতো শিক্ষার্থী ছিল। সে সময় সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল স্কুল ছাত্রদের ফার্স্ট এইডের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান এ হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পরে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং এর সাথে পাকিস্তান জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক জঙ্গি দমন কর্মসূচি।
১০. অস্কার পিস্টোরিয়াসের বিচার: এই বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্প হত্যা মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকার দৌড়বিদ অস্কার পিস্টোরিয়াসের বিচারের রায়। ব্লেড রানার হিসেবে পরিচিত প্যারালিম্পিয়ান পিস্টোরিয়াসকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। সে দিনের সেই পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে; যেটি এ যাবত কালের ইতিহাসের সব চেয়ে বেশি দর্শকের দেখা বিচার কার্যক্রম বলেই পরিগণিত হয়েছে। তবে এই বিচার প্রক্রিয়া টেলিভিশনে প্রচার করার যে সিদ্ধান্ত, তা বিশ্বব্যাপী প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারণ, এতে সাক্ষীরা প্রভাবিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে প্রেমিক পিস্টোরিয়াসের বাসভবনে খুন হন দক্ষিণ আফ্রিকার মডেল ও অভিনেত্রী রিভা স্টিনক্যাম্প। নিজ বাড়িতে স্টিনক্যাম্পকে শট গানের উপর্যুপরি গুলিতে হত্যা করেন পিস্টোরিয়াস। এ সময় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ বাথরুমে অবস্থান করছিলেন স্টিনক্যাম্প। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পিস্টোরিয়াস বলে আসছেন, বাথরুমে চোর মনে করে গুলি ছুঁড়েছেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী দুপাবিহীন দৌড়বিদ পিস্টোরিয়াস ২০১২ সালে লন্ডন প্যারালিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক জেতেন। এ ছাড়া তিনি অলিম্পিক গেমসেও অংশ নিয়েছেন।

Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *