সিরামিক শিল্প

সিরামিক শিল্প
দেশে এখন দ্রুত বর্ধনশীল একটি খাত সিরামিক। সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার—তিনটি শিল্পকে একত্রে সিরামিক খাত বলা হয়। গত দেড় দশকের ব্যবধানে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি, হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়, লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল এক সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিয়েছে এই শিল্প। সম্ভাবনাময় সিরামিক শিল্পের আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখছেন শামস্ বিশ্বাস

ফিরে দেখা:
মৃৎকর্ম সম্ভবত মানব সভ্যতার সবচেয়ে পুরাতন শিল্প। প্রথমদিকে মাটি দিয়ে শিল্পকর্ম শুরু হয়ে পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অন্যান্য মাধ্যম, যেমন কাঠ, পাথর, ঝিনুক, ধাতব পদার্থ ইত্যাদির শিল্পকর্মে রূপ লাভ করে। সিরামিকের যুগ শুরু হওয়ার পূর্বে বাংলাও এ সমস্ত স্তর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে আধুনিক সিরামিক শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, বগুড়ায় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এর উৎপাদন অত্যন্ত সীমিত ছিল। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠিত হয় প্রধানত স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কারখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বিদেশ থেকে সিরামিক পণ্য আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। তখন চীন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকেই এসব পণ্য আসত। পরে আশির দশকে দেশের উদ্যোক্তারা সিরামিক পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। ২০০০ সালের দিকে এ খাতে মোটামুটি বিপ্লব ঘটে যায়। উন্নতমানের সিরামিক পণ্য উৎপাদন করে মুন্নু, শাইনপুকুর, পিপলস, আরএকে, সিবিসি, ফার, স্ট্যান্ডার্ড, বেঙ্গল ফাইন সিরামিকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একবিংশ শতকের শুরুতে, এ দেশে সিরামিক টাইলস ব্যবহারের ব্যাপক বিস্তৃতি বা প্রচলন ঘটে ২০০০ সালের দিকে। বহুগুণ বেড়ে যায় টাইলস বিক্রি। অর্থাৎ ব্যবসাও বাড়ে। শুধু সিরামিক পণ্য বিক্রির জন্যই গড়ে ওঠে হাজার হাজার দোকান। আছে এসবের শো-রুমও। এর খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা শুরু হয় জেলা, এমনকি থানা পর্যায়েও। সিরামিক শিল্প প্রসার লাভ করে মূলত দেশে আবাসন শিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই। দেশে নতুন তৈরি ভবনগুলো দেখলে সহজেই সিরামিকের প্রসার সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। এ শিল্প প্রথম দিকে একটু ধীরে প্রসার পেলেও পরবর্তী সময়ে এর বিকাশ ঘটে খুবই দ্রুত। সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানের পণ্যসামগ্রী তৈরি করছে। বৈচিত্র্যময়তায়ও পিছিয়ে নেই। এখন স্থানীয় চাহিদার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই পূরণে সক্ষম। এ কারণে আমদানি হ্রাস পাওয়ায় বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে।

বর্তমান চালচিত্র:
বর্তমানে সম্ভাবনাময় সিরামিক শিল্প এগিয়ে চলেছে বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে। সিরামিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডব্লিউএমএ) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন সিরামিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০। এর মধ্যে সিরামিক টেবিলওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ১৪টি, টাইলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ২০টি ও স্যানিটারি উৎপাদনকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিরামিকের তৈজসপত্র, ছয় কোটি ৪০ লাখ বর্গমিটার টাইলস ও ২১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন সেনিটারি পণ্য উৎপাদন করে। এর বেশিরভাগই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ইপিবি’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের প্রথম ১০ মাসে সিরামিক খাতে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। ওই সময় আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ৫ বছরে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে ২০০ শতাংশ। সারা বিশ্বে সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস ও সেনেটারি পণ্যের প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের বাজার আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ জোগান দেয়।

আমদানিনির্ভর কাঁচামাল
বাংলাদেশে সিরামিক পণ্য উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি করলেও এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সিরামিক পণ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে সাদা মাটি ও বালি। সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নির্ভর হলেও টাইলসের জন্য মাটি ও সিলিকা বালু যথাক্রমে ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে পাওয়া যায়। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ সাদামাটির বৃহৎ মজুত আবিষ্কৃত হয় ময়মনসিংহের বিজয়পুর এলাকায়। উক্ত এলাকায় সাদামাটির রিজার্ভ-এর পরিমাণ নিরূপিত হয় দুই দশমিক সাত মিলিয়ন টন। সিলেটের জাফলং এলাকাতেও সাদামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত এলাকাসমূহে মাটি বা বালি পরিশোধনের কোন প্লান্ট নেই।

বিনিয়োগ ও বাজার:
বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য প্রস্তুতকারী সমিতি (বিসিডব্লিউএমএ)-র সূত্র মতে, সিরামিক শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিসিডব্লিউএমএ সূত্রে জানা যায়, এ খাত থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় বাজারও প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে সিরামিক পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার। এতে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ প্রায় ৬৫ শতাংশ। ইপিবি’র তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সিরামিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিলো ১৯ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৫ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৭ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৭ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলারের সিরামিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

মেড ইন বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়ে থাকে তুরস্কে। গত অর্থবছরে দেশটিতে পণ্য রফতানি হয় ৫ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার ৯৩০ মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিরামিক রফতানি হয় ৫ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার ৫২০ লাখ মার্কিন ডলারের। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯ হাজার ১৮ মার্কিন ডলার, নরওয়েতে ২ কোটি ২৬ লাখ ৩ হাজার ৭১ মার্কিন ডলার, জার্মানিতে ১ কোটি ৯ লাখ ৯ হাজার ১২২ মার্কিন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার ৩৮০ মার্কিন ডলার এবং ইতালি ১ কোটি ৯৩ লাখ ২৭৪ মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। এছাড়া আর্জেন্টিনা, অ্যাঙ্গোলা, অষ্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, ব্রুনাই, কানাডা, কলম্বিয়া, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক,  ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরান, আয়ারল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, জর্ডান, কোরিয়া, কুয়েত, লিবিয়া, লেবানন, মেক্সিকো, মিসর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, পাকিস্তান, পেরু, ওমান, কাতার, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানসহ ৫৪টি দেশে সিরামিক পণ্য রফতানি হয়।

সিরামিক পণ্য:
সিরামিক শিল্প  মাটি থেকে প্রস্ত্ততকৃত  প্রয়োজনীয় এবং শোভাবর্ধক পণ্যসামগ্রী। সিরামিক শিল্প প্রধানত মৃৎপাত্র উন্নয়ন এবং ব্যাপক অর্থে উচ্চ তাপমাত্রায় অধাতব পদার্থকে কঠিন বস্ত্ততে পরিণত করে যেকোনো পণ্য তৈরির সাথে জড়িত। শিল্পে ব্যবহৃত ধাতব বা অর্গানিক শক্ত মালামাল সিরামিকের অন্তর্ভুক্ত। সিরামিক পণ্যের মধ্যে আছে গ্লাস, পোড়ামাটির বাসনপত্র, চীনামাটির বাসন, চীনামাটির এনামেলস, ডিনার সেট, টি সেট, কফি সেট, স্যুপ সেট, ফলের সেট, বাসন, পেয়ালা, ফুলদানি, মগ এবং বিভিন্ন ধরনের স্যুভেনির জাতীয় পণ্য। অধিকাংশ সিরামিক পণ্যই ওভেনপ্রুফ ও ডিশওয়াশার প্রুফ এবং এসবের কোন রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব নেই। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত সিরামিকের তৈজসপত্র ছাড়াও ইটের টাইলস, টেরাকোটা, রিফ্রাকটরিজ, সিমেন্ট, চুন এবং জিপসামসহ সেনিটারির যেকোনো পণ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে বাংলাদেশের সিরামিক কোম্পানিগুলো।

কর্মসংস্থান:
প্রতিবছরই উৎপাদনক্ষমতা ও বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে এ খাতে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এখাতে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই নারী। এসব প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কর্মরত আছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকছাড়াও উৎপাদননির্ভর শিল্প হিসেবে কারখানা পরিচালনার জন্য প্রকৌশলী, ব্যবস্থাপক, সিরামিস্ট, কেমিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার, আইটি খাতের কাজ জানেন—এমন লোকদের কাজের সুযোগ আছে। পাশাপাশি বিপণনে দক্ষ লোকের ভালো চাহিদা আছে। এখাতের উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ জন্য অনেক সময় চীন, ভারত থেকে লোক এনে কারখানা চালাতে হয়।

প্রতিবন্ধকতা:
নানামুখী সমস্যায় দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী সিরামিক শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) সুবিধা বাতিল ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে খাতটির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর বাজারে সিরামিক খাতে ডিউটি ফ্রি ব্যবসা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু জিএসপি সুবিধা বাতিল করায় এখন ২৫ শতাংশ ডিউটি ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এছাড়া এ খাতে চাহিদানুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। প্রতিটি সিরামিক কারখানায় দিনে গ্যাসের প্রয়োজন হয় ১৫ পিএসআই, সেখানে গ্যাস, দেয়া হচ্ছে ৪ থেকে ৬ পিএসআই। পাশাপাশি দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে এ খাতে। কর্মরতদের বেশিরভাগই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। যে কারণে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় চালুর দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সিরামিক শিল্পে ভালো মানের উৎপাদন এবং শিল্প প্রকৌশলীর অভাবসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের অভাবে এখাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
পাশাপাশি টানা হরতাল-অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। হরতাল-অবরোধের কারণে, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সময়মত পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারীরা। মূল্যছাড়, উচ্চমূল্যে বিমানে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজার কিছুটা ধরে রাখলেও নতুন বাজার সৃষ্টিতে তা বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের সিরামিক শিল্পের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ আরো অনেক দেশ। তবে এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। তাতে শ্রমিকরা কাজে আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী। তবে কিছু কিছু কোম্পানির ব্যয় বেড়ে গেছে তাতে। ফলে বিশ্ববাজারে সিরামিক রফতানিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছে।
এই সকল সমস্যার সাথে যোগ হয়েছে সিরামিক পণ্য আমদানি সমস্যা। সিরামিক কারখানাগুলোর কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির পরও দেশে এর চাহিদা মেটাতে তা আমদানি করতে হয় ২০-২২ শতাংশ। এর কারণ সম্পর্কে জানা যা, আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত সিরামিকের মান শুধু ভালোই নয়, বিশ্বমানের। এ জন্য উৎপাদন খরচও তুলনামূলক বেশি। অনেকে সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে কম দামের বিদেশি বিশেষ করে চীন দেশের সিরামিকের টাইলস ক্রয় করেন। এ কারণেই চীন থেকে টাইলস আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে চীনা তৈজসপত্র ছাড়াও চীনা টাইলসের বিক্রি ও ব্যবহার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। এসব টাইলস ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুই ধরনের ভবনেই। এছাড়া অসাধু কিছু ব্যবসায়ী আন্ডার ইন ভয়েসের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সিরামিক পণ্য আনছেন। এতে সরকার যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশীয় উদ্যোক্তারাও সংকটে পড়ছেন।

সম্ভাবনা:
বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সঠিক মান বজায় রাখা এবং সুনাম ধরে রাখার জন্য উন্নতমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে। এসবের মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি আধুনিক এবং উন্নত মানের। প্রতিটি সিরামিক ইউনিটের নিজস্ব ল্যাবরেটরি সুবিধা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সিরামিক ব্যবসার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। মধ্য-পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে বাংলাদেশের সিরামিকের চাহিদাও ব্যাপক। যদিও সিরামিক শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা মাত্র কয়েক দশকের। তারপরও বাংলাদেশে উৎপাদিত সিরামিকের মান অত্যন্ত উন্নত এবং বিশ্বের বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। কয়েক দশকের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে সিরামিক শিল্প বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সিরামিক একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প এবং তাই এ শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনাও অত্যন্ত ব্যাপক।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *