আমাদের খদ্যতালিকায় অত্যান্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হল লবন। দেশের উপকূলিয় অঞ্চলে সুপ্রচীন কাল থেকে উৎপাদন হয় লবনের। দেশের জন্য অত্যান্তগুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময় এই শিল্প
লবণের শুরুটা:
প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের লবণের চাষ শুরু হয়। ‘মুলঙ্গী’ নামে খ্যাত চট্টগ্রামের এক শ্রেণির লোক অতীতকাল থেকে সমুদ্রের পানি সিদ্ধ করে লবণ উৎপাদন করত। তাদের লবণ উৎপাদন ক্ষেত্রকে ‘তোফল’ বলা হতো। মুগল আমলে ‘নিমক জায়গীর মহাল ও নিমক এয়জ মহাল’ নামক দুটি সরকারি বিভাগ এই শিল্প নিয়ন্ত্রণ করতো। নিজামপুর, জুলদিয়া ও বাহারছরা এই তিনটি চাকলার অধীনে মোট ৩৯টি লবণ সংগ্রহ ক্ষেত্র ছিল। ষোড়শ শতকে লবণ উৎপাদনকারীদের সরকারিখাতে মাশুল দিতে হতো। মুগল আমল পর্যন্ত লবণ শিল্পে সরকারের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। এর ব্যবস্থাপনা ছিল জমিদার শ্রেণীর হাতে, তারা লবণ চাষিদের দিয়ে লবণ উৎপাদন করার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাদন প্রদান করত। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ সালের মধ্যে অনেক ইংরেজ প্রত্যক্ষভাবে ও বেনিয়াদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে লবণ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। লবণ শিল্পে ব্রিটিশদের উদ্যোগে ১৭৬৫ সালে বণিক সমিতি গঠিত হয় এবং এতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা লাভবান হয়। পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংস লবণ শিল্পের ওপর সরকারের একচেটিয়া আধিপত্য প্রয়োগ করে লবণ চাষের জন্য সর্বোচ্চ দরদাতাকে লবণ উৎপাদনের জমি পাঁচ বছরের জন্য লিজ দিতে শুরু করেন। ১৭৭৭ সাল নাগাদ এ পদ্ধতি রহিত হয়ে বার্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হতে থাকে। এ পদ্ধতি ১৭৮০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। কোম্পানি তখন এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি লবণ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় জড়িত হয় এবং যৌথ নিলামের আয়োজন করে বাজারজাতকরণেও সম্পৃক্ত হয়। ১৮৬২ সাল পর্যন্ত কোম্পানির এই আধিপত্য চলতে থাকে। কোম্পানি কর্তৃক আরোপিত কর প্রশাসন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি এবং ভারতে লবণ উৎপাদন নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির শাসনের প্রথম দিকে চট্টগ্রামে ৭৯-৯৯ হাজার মণ লবণ উৎপাদিত হতো। তখন কোম্পানির কর্মচারীরা চট্টগ্রামে উৎপাদিত লবণের ব্যবসা করত। পরবর্তীকালে লিভারপুর থেকে লবণ আমদানির কারণে প্রকৃতিজাত এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রিটিশ সরকার সামুদ্রিক লবণ উৎপাদন করা বেআইনি ও দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করে এবং স্বদেশী লবণের উপর অতিমাত্রায় কর আরোপ করায় এই শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রামের বহু মুলঙ্গী পেটের দায়ে গোপনে অল্প লবণ প্রস্ত্তত করে জীবন ধারণ করত এবং ধরা পড়ে শাস্তিও ভোগ করত। এভাবে নির্যাতন চালিয়ে চট্টগ্রামের প্রাচীন লবণ শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছিল। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে মহাত্মা গান্ধীর লবণ আন্দোলনের প্রভাবে লবণ উৎপাদন আবার শুরু হলেও নতুন লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশদের প্রবল বিরোধিতা ছিল। ১৯৪৭-এর পর থেকে এই লবণ শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত হলেও এখানকার উৎপাদিত লবণের উপর অধিক আবগারী শুল্ক ধার্য করায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত খনিজ লবণের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রামে উৎপাদিত লবণ পিছনে পড়ে যায়। স্বাধীনতার পরে এই অবস্থার উন্নতি ঘটে।
সরকারি সহায়তা:
দেশে সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬১ সালে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সরকারের মূখ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে লবণ উৎপাদন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বিসিক নিজস্ব কর্মসূচি হিসেবে নিয়মিত জনবল দ্বারা ১৯৬০-৬১ অর্থবছর থেকে লবণ শিল্পসংক্রান্ত কার্যক্রম আরম্ভ করে এবং ১৯৮৫ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়। ১৯৬৪ সালে লবণ উৎপাদনকারী ইউনিটসমূহের একটি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। শুমারি সর্বমোট ১৬,৫৪১টি লবণ উৎপাদনকারীর ইউনিট, লবণ উৎপাদনের আওতায় মোট ১১,৭৬৯ একর জমি এবং এই শিল্পে মোট ৫০,৮৫৪ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রেকর্ড করে। উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ০.৩ মিলিয়ন টন এবং এর মূল্যমান ছিল ২০ মিলিয়ন টাকা। লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলি ছিল চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল এবং খুলনা জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহ। প্রাকৃতিক জলবায়ুর তারতম্য, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং জমি লিজ প্রদানের শর্তাদির ওপর প্রতি বছর এর উৎপাদন ওঠা-নামা করত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন লবণ শিল্প উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য ১৩ মিলিয়ন টাকার প্রকল্প গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউনিসেফের কাছ থেকে ২২.৬ মিলিয়ন টাকা অর্থসাহায্য পাওয়া যায়। স্বাধীনতার আগে কখনও বাংলাদেশে লবণ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়নি। ১৯৯০ সালে ৩,৭৭৫.০০ লক্ষ (সংশোধিত) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় বিসিক বিশেষ উন্নয়ন ও উৎপাদন শীর্ষক ৩টি কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মধ্যে একটি উপ-প্রকল্প ছিল লবণ শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কিত এবং এর প্রাক্কলিত ব্যয় ১,১৮৯.০০ লক্ষ (সংশোধিত) টাকা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, গুণগত মান বৃদ্ধি, উৎপাদনকারীদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, লবণ চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং লবণের চাহিদা, সরবরাহ ও উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করা। প্রকল্পটি জুলাই ১৯৯০ হতে জুন ২০০০ এবং সংশোধিত জুলাই ১৯৯০ হতে জুলাই ২০০৫ পর্যন্ত সরকারি প্রকল্প হিসেবে লবণ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে এ প্রকল্পটি সরকারের রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কেন্দ্রগুলির অবস্থান কক্সবাজার জেলার ৭টি থানা যথা: সদর, রামু, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানা এলাকার ১২টি কেন্দ্র। লবণের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো এবং আপদকালীন সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করে দাম স্থিতিশীল রাখতে এ প্রকল্পটি ভূমিকা রাখছে। জনসংখ্যা, গবাদিপশু এবং শিল্প কারখানা বৃদ্ধির সাথে সাথে লবণের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণের বর্ধিত চাহিদা মেটানো এবং উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার লক্ষে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাশাপাশি বিকল্প লবণ উৎপাদন এলাকা তৈরির জন্য বিসিক ১৯৯৩-৯৫ মেয়াদে খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১৩৫.৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ এবং দাকোপ উপজেলার বেতকাশি এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়ি গোয়ালিনী ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাবনগর এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ১৮.৩২ একর জমি লিজ নিয়ে ৪টি লবণ প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৯৭-২০০২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ১৯৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে জুলাই ২০০৫ হতে ২০০৮ এবং সর্বশেষ জুন ২০০৯ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ২৮৮ লক্ষ টাকা। এখানে পর্যায়ক্রমে ৩০,০০০ একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাটের সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা ছাড়াও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া ও সদ্বীপ এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে লবণ চাষের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
বর্তমান অবস্থা:
দেশে গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি শিল্প রয়েছে ‘লবণ শিল্প’ তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতি বছর লবণ শিল্পের অবদান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। যে কারণে বাড়ছে লবণ উৎপাদন ও চাষির সংখ্যা। আমাদের দেশের গুটি কয়েক অঞ্চলে লবণের চাষ হয়ে থাকে। এসব অঞ্চলের চাষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আবাদ করছে লবণ।শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে লবণ চাষে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার চাষি। আর সমুদ্রের নোনা পানিতে সাদা সোনার উৎপাদন এবং এর ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০-১৫ লাখ মানুষ।প্রতি বছর লবণ চাষের মৌসুমে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়ে থাকে। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ৬৭,৭৫১ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে লবণ শিল্পখাত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। সৌর পদ্ধতিতে (প্রচলিত পদ্ধতি ও মৌসুমভিত্তিক) লবণ উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ১৩.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টনের বিপরীতে ১৭.০৭ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বর্তমানে লবণের চাহিদা রয়েছে ১৫ লক্ষ ৬ হাজার মেট্রিকটন, আর উৎপাদনের টার্গেট ছিল ১৫ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন। গত দশ বছরে দেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়েছে দেশীয় এ শিল্পটি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার কখনোই চাষিদের প্রয়োজনীয় মূলধন যোগান ও লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি। লবণ চাষিদের সহায়তার কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। এতে চাষিদের পক্ষ থেকে লবণ বোর্ড গঠন, উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লবণ উৎপাদন ও বিক্রির দাবি বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে।
আগেকার মানুষ সমুদ্রের পানি কাঠের চুলায় জ্বাল দিয়ে বা রোদে শুকিয়ে (সৌর পদ্ধতিতে) লবণ উৎপাদন করতো যা নিকট অতীত পর্যন্ত চালু ছিল। ২০০০-২০০১ মৌসুম হতে নতুন পদ্ধতিতে (পলিথিন পদ্ধতি) লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে একর প্রতি লবণের উৎপাদন ছিল ১৭.২৫ মেট্রিক টন এবং নতুন পদ্ধতিতে প্রতি একরে লবণ উৎপাদিত হয় প্রায় ২১ মেট্রিক টন। নতুন পদ্ধতিতে সনাতন পদ্ধতির তুলনায় ৩৫ শতাংশ অধিক ও আন্তর্জাতিক মানের লবণ উৎপাদিত হয়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। মাঠ থেকে লবণ সংগ্রহ করে মিলে পরিশোধন এবং আয়োডিন মিশ্রণ করে বাজারজাত করা হয়।
ফের ষড়যন্ত্র:
লবণ শিল্পকে ধ্বংস করতে চর্তুমুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি প্রভাবশালী মহল। একদিকে চাষীদের লবণ চাষে নিরুৎসাহিত করতে বাজারের দর পতন করেছে। অন্যদিকে দেশীয় লবণের গুনগত মান ঠিক নয় এমন প্রচারণা চালিয়ে মায়ানমার ও ভারত থেকে লবণ আমদানীর পাঁয়তারা শুরু করেছে এই সিন্ডিকেট। বিসিক সূত্র জানায়, চাষীরা স্বচ্ছ , পরিপক্ক ও দানাদার লবণ উৎপাদন করছে না। তারা ছোট দানার লবণ উৎপাদন করছে। আর এ লবণের ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এটিকে কাজে লাগিয়ে একটি কুচক্রীমহল লবণের দর পতণ করছে। যাতে চাষীরা নিরুৎসাহিত হয়। সূত্রটি আরো জানায়, গ্লোডার লবণ উৎপাদনের চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। খামার পদ্ধতিকে সাদা ও দানাদার লবণ উৎপাদনের জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু একটি স্বার্থনেষী মহল বিসিকের এ কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। বিসিকের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে লীজ নেওয়া জমি বাতিলের জন্য প্রশাসনের ধারে ধারে ধর্ণা দিচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ লবণ শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কতিপয় চোরাকারবারী। এসব চোরাকারবারীরা টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে এবং ভারত থেকে চোরাই পথে লবণ এনে দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আয়োডিনযুক্ত লবণ
আয়োডিন মিশ্রিত লবণ তৈরি কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়োডিন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে জুলাই ১৯৮৯ হতে জুন ২০০০ মেয়াদে সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্প (সিআইডিডি) হাতে নেওয়া হয়। সরকার ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন ১৯৮৯ জারি করেন। এ আইনের আওতায় ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৫ তারিখ থেকে দেশে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণ ব্যতীত কোনো ভোজ্যলবণ উৎপাদন, বিপণন ও গুদামজাত নিষিদ্ধ করা হয়। ইউনিসেফ-এর কারিগরি সহায়তায় বিসিকের মাধ্যমে ২৬৭টি কারখানায় আয়োডিন সংমিশ্রণ মেশিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় এবং তদারকির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০০টি আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কারখানা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৪% মানুষ আয়োডিন মিশ্রিত লবণ ব্যবহার করছে।
Leave a Reply