একটি রেশম শাড়ির আভিজাত্য একটি দামি সুন্দর পোশাকের চেয়ে অনেক বেশি। রেশম শাড়ি বিত্ত, সভ্যতা, বাঙালি রমণীর ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক। সিল্কের বিভিন্ন নমুনা এবং ডিজাইনের জন্য বাংলা ভাষায় বিশেষ বিশেষ নাম প্রচলিত, যেমন গরদ, মটকা, বেনারসি প্রভৃতি। বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর জীবনে রেশমের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। রেশম মূলত, বমবিকস মোরি বর্গভুক্ত রেশমপোকার গুটি থেকে তৈরি সুতা দিয়ে বোনা একপ্রকার সূক্ষ্ম ও কোমল তন্তু। বাংলাদেশে চার ধরনের রেশম তৈরি হয়ে আসছে: মালবেরি, এন্ডি, মুগা এবং তসর। রেশমগুটি বা কোকুন দেখতে অনেকটা কবুতরের ডিমের ন্যায়। কোকুনের সুতা অবিন্যস্ত, কিন্তু ভেতরে ৫০০ মিটারেরও বেশি লম্বা একটি মাত্র সুতা সমকেন্দ্রীয়ভাবে বিন্যস্ত থাকে। কোকুন তৈরি হতে তিনদিন সময় লাগে। ৮ দিনের মধ্যে গুটির ভেতর শুককীট পিউপায় পরিণত হয়। পিউপায় পরিণত হওয়ার পূর্বেই কোকুন গরম পানিতে সিদ্ধ করে ভেতরের পোকাটি মেরে ফেলতে হয়। এই কোকুন থেকেই রেশম সুতা সংগ্রহ করা হয়। ২ থেকে ৬টি গুটির ভেতরের সুতা একত্রিত করে একটি রিল তৈরি করা হয়। রেশম চাষের তিনটি পর্যায় রয়েছে: তুঁত গাছ চাষ, রেশমপোকা পালন এবং কাপড় তৈরির জন্য রেশমগুটির সুতা পৃথক করা। রেশম থেকে প্রথমে হ্যান্ডলুম কিংবা পাওয়ার লুমে থান কাপড় প্রস্তুত করা হয়।
রেশম থেকে প্রস্তুত পোশাকের মধ্যে শাড়ি ছাড়াও রয়েছে: কামিজ, থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, ওড়না, সার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্কার্ফ, রুমাল, টাই, বেবি ওয়্যার ইত্যাদি অন্যতম। শাড়ি এবং অন্যান্য তৈরি পোশাকে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের নকশা করা হয়। এসকল নকশায় রং, রঙিন সুতা, জরি, পুতি, কাঁচ, প্লাস্টিক নানাবিধ উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেশমের ঐতিহ্যবাহী এবং অতি জনপ্রিয় শাড়ির নাম গরদ। রাজশাহী অঞ্চলে বুনানো এই শাড়ি রেশমের স্বাভাবিক রঙের জমিনের বিপরীতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লাল বা সবুজ এবং কখনও সোনালী জড়ির কাজ করা পাড় থাকে। রেশমের তৈরি অপর একটি জনপ্রিয় শাড়ির নাম ঢাকার কাতান।
রেশম শিল্পের অতীত-বর্তমান:
খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ বছর পূর্বে চীন দেশে চানতং প্রদেশে সর্ব প্রথম রেশমকীট থেকে গুটি এবং গুটি থেকে সুতা উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। রেশম চাষের জন্য কলাকৌশল চীনারা প্রথম দিকে গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত তা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ১৪১০ অব্দে তিব্বত থেকে হিমালয়ের পাদদেশে এর বিস্তৃতি ঘটে। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে ভারতবর্ষে রেশমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। সেই সময়ই রাজশাহীতে রেশম চাষ শুরু হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে ১৯১৪ সালে অবিভক্ত বাংলায় রেশম উন্নয়নের জন্য আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তৎকালীন রেশম কার্যক্রম শিল্প দফতরের অধীনে ন্যস্ত ছিল। তখন উত্তরবঙ্গের মীরগঞ্জে (রাজশাহী) ও বগুড়ায় দুটি রেশম বীজাগার গড়ে তোলা হয়। বিগত দিন থেকেই সারা বিশ্বে রাজশাহীর রেশমের একটি সুখ্যাতি ছিল এবং এখন পর্যন্ত দেশে রেশম চাষ ও রেশম শিল্পের বিকাশ বৃহত্তর রাজশাহীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। সে কারণে ১৯৬২ সালে রেশম শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারেগপ্রই) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অধিকতর সুসংবদ্ধ নীতি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া এই শিল্প বৈদেশিক সাহায্য এবং কারিগরি সহায়তা লাভ করে। ১৯৮০-র দশকের শেষদিকে এসে দেশে তুঁতচাষ এলাকার পরিমাণ ছিল তিন হাজার হেক্টর এবং রেশম খাত ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল। সে সময় বাংলাদেশের রেশম উৎপাদনের পরিমাণ সারা ভারতের রেশম উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক ছিল।
এই দশকে একটি মূল্যায়ন দলের অভিমত অনুসারে সেরিকালচার বা রেশমগুটির চাষ সরকারের একটি গৌণ খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইতোমধ্যে কতিপয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেশম উৎপাদনে এগিয়ে আসে। স্থানীয়ভাবে কিছু সাফল্য অর্জিত হলেও অধিকাংশ উদ্যোগই নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। রেশম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ড সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল রেশম চাষ ও শিল্পের উন্নয়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের কল্যাণ সাধন করা। কিন্তু এ বোর্ড ২০০২ সালে রাজশাহী রেশম কারখানা ও ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ করে দেয়। ফলে এ কারখানায় জড়িত হাজার হাজার জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়ে।
বর্তমানে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ এ শিল্পর সাথে জড়িত। এর মধ্যে এক লাখ কোকুন উৎপাদকারী, বাকিরা সিল্ক রিলিং, স্কিনিং, ওয়েভিং , ডাইয়িং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও বিক্রয় কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। দেশে বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৮০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি রেশম কারখানা আছে এবং এগুলোর বার্ষিক সাড়ে ২৫ মিলিয়ন মিটার কাপড় তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের ব্যক্তি মালিকাধীন দশ হাজার তাঁতের ৩০ মিলিয়ন মিটার রেশমি কাপড় তৈরির ক্ষমতা রয়েছে।
আয়:
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ (জুলাই-জানুয়ারি) অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ২৫ হাজার ১৪ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল চার লক্ষ ১৬ হাজার ৯৪ দশমিক শূন্য নয় মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল এক লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৫১ দশমিক ৩৭ মার্কিন ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে রেশম পণ্য রপ্তানি আয় কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৬১ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলারে। ৩১ হাজার ৫৬৩ দশমিক তিন মার্কিন ডলার ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। ২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ এই দুই বছরে রেশম পণ্য রপ্তানি আয় এক লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৮৭ দশমিক ৬১ মার্কিন ডলারে অপরিবর্তিত ছিল।বাংলাদেশের রেশম বাজার পুরোপুরি স্থানীয়। কখনও কখনও স্থানীয় সরবরাহের বাইরেও রেশমের চাহিদা দেখা যায় এবং বৈধ ও অবৈধ উপায়ে প্রধানত ভারত থেকে রেশমবস্ত্র আমদানি হয়ে থাকে।
প্রতিবন্ধকতা:
ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের এ বিপর্যয়কর অবস্থা হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাব আর একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে মন্দায় পড়েছে শিল্পটি। এছাড়া ১৯৮৮ সালে নেয়া সরকারের রেশম সুতা আমদানির সিদ্ধান্ত এ শিল্পের দুরবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সে সময় দেশে বছরে রেশম সুতার উৎপাদন ছিল ৪৫০ টন। রেশমচাষীরা প্রতি কেজি সুতায় দাম পেতেন ২ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ ওই সময় চীন থেকে আমদানি করা রেশম সুতা পাওয়া যেত প্রতি কেজি ৭০০ টাকায়। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়েন স্থানীয় সুতা উৎপাদকরা। বন্ধ হতে থাকে রেশম চাষ ও সুতা উৎপাদন। স্থানীয় উৎপাদন কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার বাড়তে থাকে আমদানি করা সুতার দাম। আগে জাপান, কোরিয়া, কাজাখিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সুতা আসত। এ দেশগুলো থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে রেশম ব্যবসায়ীরা চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এখন চীন থেকে সুতা আমদানিও প্রায় বন্ধ।
দুই দশকের ব্যবধানে দেশে রেশম সুতার উৎপাদন কমেছে ৯৩ শতাংশ। বর্তমানে বিদেশী সুতা আসা কমে যাওয়ায় এর দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে। এ সুযোগে বিদেশ থেকে সিল্কের কাপড় আমদানি করা হচ্ছে। কর কম থাকায় কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী এ সুবিধা নিচ্ছেন। সর্বোপরি ক্রমান্বয়ে সুতার দাম বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত না হওয়ায় একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ‘সিল্ক সিটি’খ্যাত রাজশাহীতে এক সময় ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছিল প্রায় ৭২টি রেশম কারখানা। হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা ছাড়া বাকি সব রেশম কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি রেশম কারখানাও।
রেশম একটি শ্রমঘন কৃষিভিত্তিক শিল্প। কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ে রেশমের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলে। দেশে বর্তমানে ৪৮ মিলিয়ন টাকা মূল্যের ৪০ টন কাঁচা রেশম উৎপাদন হয়, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে রেশম সুতার চাহিদা ৩৫০ টন। সিল্কের মূল উপাদান রেশম সুতার অভাবই সংকটে ফেলে দিয়েছে শিল্পটিকে। এ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ায় এর সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রেশম শিল্পের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিষ্ক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। রেশম একধরনের কৃষিকাজ হলেও কোনো কৃষি ঋণ চাষিরা পান না। এ ভাবে চলতে থাকলে রেশম শিল্প অতীত ইতিহাসের পাতায় ঠাঁয় নিবে।
সম্ভাবনা:
বর্তমানে চীন রেশম চাষ সঙ্কোচন করায় আন্তর্জাতিক বাজারে রেশম সুতার দাম বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত ও ভিয়েতনাম রেশম চাষ সম্প্রসারণ করছে। বাংলাদেশও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেশম চাষে ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে। এ জন্য যুগোপযোগী গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দরকার। রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দেশের ৩৬টি জেলার ১৯০টি থানায় রেশম চাষের বিস্তার ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ রেশম গবেষণা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারেগপ্রই) – এরই মধ্যে ৯টি উচ্চফলনশীল তুঁতজাত উদ্ভাবন করেছে। ফলে রেশম গুটির গড় উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে, রেশম সুতার পরিমাণ।
রেশম শিল্প উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। রেশম বোর্ড ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে দেশের ১০৪টি উপজেলায় রেশম চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে তুঁত চাষ বৃদ্ধিসহ রেশম শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটানো যাবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের উচ্চ ফলনশীল তুঁত বাগান তৈরি এবং উন্নতমানের রেশম গুটি উৎপাদনে সহায়তা প্রদানসহ তাদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মডেল হিসেবে ২০টি রেশম পল্লী (পাঁচটি আশ্রয়ণ, আবাসন ও ১৫টি আইডিয়াল রেশম পল্লী) স্থাপন, রেশম শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই হাজার ৫৩০ জনকে রেশমের আধুনিক কলাকৌশলের ওপর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৫০ হাজার হতদরিদ্র লোক বিশেষ করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা রেশম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তা সত্ত্বেও রেশম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান অনেক নিচে। দেশের রেশম শিল্পের অগ্রগতির জন্য রেশম বোর্ডের পাশাপাশি আরও দুইটি সংস্থা, যেমন- বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
চাই যে সব পদক্ষেপ:
বিশ্ববাজারে রেশম আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেজন্য খাতটির প্রতিটি স্তরে সৃষ্ট সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে এবং উত্তরণের চেষ্টা চালাতে হবে। রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেমন— রেশমচাষীদের স্বল্প বা বিনা সুদে ঋণ দেয়া, রেশম চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, মানসম্মত গুটি উৎপাদন, উন্নত ডিম সরবরাহ, উৎপাদিত গুটির দামের ব্যাপারে লক্ষ রাখা, মানসম্মত সুতা উৎপাদন, সুতা চোরাচালান বন্ধ প্রভৃতি। সর্বোপরি রেশম নগরী রাজশাহীর ৭২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য রেশম বোর্ডের সহযোগিতায় ২৩টি রেশম প্রকল্পের মাধ্যমে সুতা সংগ্রহ, কুপন তৈরি ও সুতা উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সুতা সংকট নিরসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা রেশমের তৈরি লালপাড় গরদ শাড়ি, গরদের পাঞ্জাবি, আর মটকা শুধু দেশে জনপ্রিয় নয়, বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই রেশম চাষ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। এ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন বৃদ্ধি করা যায়, তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ শিল্পই হতে পারে বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করার মাধ্যম।
Leave a Reply