প্রায় সংবাদপত্রে কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মিডিয়া ম্যানেজারদের কথা বলতে দেখা যায়। কারণ, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি বহুমাত্রায় বহুক্ষেত্রে আজ ব্যাপক হারে বিস্তৃত।
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টিভি আবার ডিজিটাল মিডিয়া – যেমন স্যোশালনেটওয়ার্ক। এখন অনভিজ্ঞ কিংবা আনাড়ি ব্যক্তির পক্ষে পার্টটাইম ভাবে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন ডেডিকেটেড পারসন। এ জন্য এই প্রচারের যুগ প্রচার পাওয়ার জন্য সকলেই মিডিয়া ম্যানেজারদের দ্বারস্থ।
প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সামাজিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে মিডিয়া ম্যানেজাররা। প্রতিষ্ঠানটির কাঙ্ক্ষিত মানুষদের কাছে নানা খবর আকর্ষণীয়ভাবে পৌঁছানো, প্রতিষ্ঠানের সুনাম, ভাবমূর্তি গড়ে তোলা ও ধরে রাখা, গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান এ সবই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ।
প্রচারের যুগ প্রচার পাওয়ার জন্য সকলেই মিডিয়া ম্যানেজারদের দ্বারস্থ। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সামাজিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে মিডিয়া ম্যানেজাররা।
মিডিয়া ম্যানেজার কে?
পণ্যের মিডিয়া ইমেজ তৈরি করেন একজন মিডিয়া ম্যানেজার। পণ্য সম্পর্কে ভোক্তাসাধারণকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্যটির প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করে থাকেন তিনি। পণ্যের সঙ্গে ক্রেতার একটা সম্পর্ক স্থাপন করেন। পণ্যের নানা গুণাগুণ এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ভোক্তাকে অবহিত করেন। মূলত এই কাজটি পুরোটাই নির্ভর করে একজন মিডিয়া ম্যানেজারের মেধা, চিন্তা এবং স্বকীয় আদর্শের উপর। এই চিন্তার প্রলেপেই গড়ে উঠে পণ্যের পরিচিতি। পেশা হিসেবে মিডিয়া ম্যানেজারের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
মিডিয়া ম্যানেজারের কাজগুলো হলো
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন (Planning)
২. সাংগঠনিক কাজ ও প্রযু্ক্তির সমন্বয় (Organizing Work and Technology)
৩. আর্থিক ব্যবস্থাপনা (Financial Management)
৪. বিভিন্ন লোকের সাথে কাজ করা (Working with People)
৫. নেতৃত্ব (Leadership)
মিডিয়া ম্যানেজারের দায়িত্ব
প্রধানত তিন ধরণের কাজ মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী একক ব্যক্তি বা টিম কাজ করে থাকে।
মিডিয়া প্লানার
বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক রম্য লেখক মার্ক টোয়েইন (
Mark Twain) বহুদিন আগে বলেছিলেন, বহু ছোট জিনিস বড় করে তোলা যায় শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের দ্বারা। (Many a small thing has been made large by the right kind of advertising.) বিজ্ঞাপন দারা মানুষকে বিভিন্ন বার্তা দেওয়া যায়। বিজ্ঞাপন দ্বারা কোন শিল্পজাত দ্রব্য, বাণিজ্যিক পণ্য বা কোন সামাজিক বিষয়কে জনসাধারণের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। যে কোনও সংস্থার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন লক্ষ্য অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। মিডিয়া প্লানারা বিজ্ঞাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস বা জায়গা সংগ্রহ করেন। কীভাবে কোনও পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে সেটা মিডিয়া প্লানারের কাজ।
মিডিয়া স্ট্রাটেজিস্ট
কৌশল নির্ধারণ না থাকলে লক্ষ্য অর্জনটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মিডিয়া স্ট্রাটেজিস্ট মিডিয়াতে প্রচার পদ্ধতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করেন, যাতে কোম্পানির বা সংস্থার পণ্য বিক্রয় বা তথ্য,সংবাদ বা সচেতনতা প্রসার ও প্রচার সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। কোন তথ্যকে যদি জনগণের কাছে প্রচার করতে হয়, সেটিও এই স্ট্রাটেজিস্টরা পরিকল্পনা করেন। প্রচারের গতি প্রকৃতি কী রকম হবে, সেটা ঠিক করাও এদের কাজ। অর্থাৎ রণকৌশল নির্ধারণ করে মিডিয়া স্ট্রাটেজিস্ট।
মিডিয়া ম্যানেজার
ম্যানেজার যা করে তাই ম্যানেজমেন্ট। মিডিয়া ম্যানেজারদের কাজ প্রচার সংক্রান্ত পুরো কাজটির তদারকি করা। বলা বাহুল্য এই তদাকরি প্রচারের লক্ষ্য অনুযায়ী করতে হবে। আমি কাদের কাছে পৌঁছাতে চাই, কীভাবে পৌঁছানো যায়, প্রকৃতভাবে যাতের কাছে পৌঁছাতে চাওয়া হচ্ছে, তা পৌঁছচ্ছে কিনা, এই বিষয়টি পূনর্মূল্যায়ন করা ও সেই অনুযায়ী প্রচার পদ্ধতিতে সংশোধনী আনা, সবই মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞাপন, কোনও ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠান বা ব্রান্ডটি যাতে লোকের মনে থাকে দীর্ঘদিন ধরে, তার জন্য অনুরূপ ও উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল বার করা। এর জন্য জানা দরকার মিডিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি, বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা, ভোক্তার রুচি আয় প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। কী ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সরাতে কী ধরণের কৌশল অবলম্বন করতে হবে- এই পুরো কাজটি মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট দেখভাল করে।
প্রস্তুতি
মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের বিশেষত মার্কেটিং, পাবলিক রিলেশন বা অ্যাডভারটাইজিংয়ে ডিগ্রি থাকা অবশ্যিক। মিডিয়ার মৌলিক বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি জানতে হবে। প্রেজেন্টেশনের স্মার্ট কৌশল রপ্ত করা। দেশে-বিদেশের কোনো জায়গায় কাজ করার মতো মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে কমিউনিকেশন স্কিল ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ছাড়া টিকে থাকা যাবে না। তাই যারা এই পেশায় কাজ করতে আগ্রহী তাদের উচিত শিক্ষাজীবনেই ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল আনা। কম্পিউটার স্কিল, প্রেজেন্টেশন স্কিল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এসবে দখল বাড়ানো।
মিডিয়া ম্যানেজারের আয়-রোজগার
এই পেশায় আয়-রোজগারের সাথে সাথে রয়েছে মিডিয়ায় হাইলাইটেড হওয়ার গ্লামার। প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির মুখপাত্র হওয়ার সুবর্ণসুযোগ। সাধারণ স্টাটিং স্যালারি ১৫-২০ হাজারের মধ্যেয় হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার সাথে সাথে বেতন-ভাতার অংক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান ভেদে থাকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
Leave a Reply