ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প
ভূমিকম্প কেন হয়?
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায়পীরনের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হটাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভেও কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়শই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক/দু-মিনিট স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয়, তা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বিশ্বের ভয়াবহ যত ভূমিকম্প
২২ ডিসেম্বর ৮৫৬, দামহান, ইরান
দেশটির তৎকালীন রাজধানীতে ৮ দশমিক শূন্য মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায় এবং গোটা শহরটির পার্শ্ববর্তী স্থানগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। দামহান পার্শ্ববর্তী বিখ্যাত বাস্তাম নগরী পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিলিয়ে যায় এই ভূমিকম্পে।
২৩ মার্চ ৮৯৩, ইরান
আরদাবিলের এই ভূমিকম্পে জীবন যায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের। ১৯৯৭ সালেও এই এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনার ঘটে।
৯ আগস্ট ১১৩৮, সিরিয়া
ঐতিহাসিক নগরী সিরিয়ার আলেপ্পোয় তখন মাত্র ভোর হতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই ৮ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প প্রায় তিন গিগাট্রন শক্তি নিয়ে নাড়িয়ে দেয় আলেপ্পোকে। ভূমিকম্পের ইতিহাসে এই ভূমিকম্পটিকে বলা হয় চতুর্থ ভয়ংকর দুর্যোগ। ওই ভূমিকম্পে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মারা যায় এবং গোটা একটি শহর মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
২৩ জানুয়ারি ১৫৫৬, চীন
শানসি (সাবেক সেনসেই) প্রদেশের এই ভূমিকম্পটিকে বলা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ভূমিকম্প। চীনের শানসি প্রদেশকে কেন্দ্র করে এই ভূমিকম্পটি মোট ৯৭টি দেশে একযোগে আঘাত হেনেছিল। বেশ কয়েকটি দেশের সমতল ভূমি প্রায় ২০ মিটার দেবে গিয়েছিল। ৮ দশমিক শূন্য মাত্রার এই ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা এক গিগাট্রন হওয়া সত্ত্বেও এতে প্রায় সাড়ে আট লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। শানসি প্রদেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই এই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল। এই ভূমিকম্পে ব্যাপক ভূমিধ্বস হয়। শহরের বড় বড় সব ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
১১ জানুয়ারি ১৬৯৩, ইতালি
সিসিলির ৭ দশমিক ৪ মাত্রার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পটি ইতালিসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মোট ৭০টি শহর এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়। ইতালির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর ভূমিকম্প।
১৩ আগস্ট ১৮৬৮, পেরু (বর্তমানে চিলির অংশ)
আরিকার ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জীবন যায় ২৫ হাজার মানুষের। বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
১৩ জানুয়ারি ১৯০৬ ইকুয়েডর-কলম্বিয়ায়: ৮ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫শ থেকে ১৫ শত নিহত হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ১ থেকে দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়। ওই সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রান্সিসকো উপকূল থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, এমনকি জাপান পর্যন্তও।
৬-৭ ডিসেম্বর ১৯২০, চীন
৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে নিংজিয়ার হাইজুয়ান অঞ্চলে। হাইজুয়ানে নিহত হয় ৭৩ হাজার। গুয়ান কাউন্টিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ হাজারে। লংদি এবং হুইজিয়াংয়ের প্রায় সব ভবনই ধ্বংস হয়ে যায়।
১১ নভেম্বর ১৯২২, চিলি ও আর্জেন্টিনা
এই দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে চিলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩, রাশিয়া
দেশটির কামচাটকায় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের ঘটনায় সুনামির সৃষ্টি হয়।
১ সেপ্টেম্বর ১৯২৩, জাপান
কান্তোর ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে নিহত হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ জন। ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয় ৩ লাখ ৮১ হাজার। ৬ লাখ ৯৪ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়।
১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ ইন্দোনেশিয়া
বান্দা সাগরের কাছে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে ছোট আকারের সুনামির সৃষ্টি হয়।
৬ অক্টোবর ১৯৪৮, তুর্কমেনিস্তান
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশে তুর্কমেনিস্তানের আসগাবাত অঞ্চলে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ঘটনায় প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায়। আসগাবাত সংলগ্ন বেশ কয়েকটি শহরের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আশগাবাতের বিভিন্ন গ্রাম মোটামুটি ধ্বংস হয় বিশেষ করে ইটের তৈরি ঘর সবই ধ্বংস হয়ে যায়।
১৫ আগস্ট ১৯৫০, চীন-ভারত
ভারতের আসামে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত করে। বিধ্বংসী এ ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ভূমিধ্বস হয়। পার্শ্ববর্তী চীনের তিব্বতের পূর্বাঞ্চলে নিহত হন ৭৮০ জন। আসামে বহু মানুষের প্রাণহানির আশংকা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি ।
৪ নভেম্বর, ১৯৫২, রাশিয়া
৯ দশমিক ০ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটির কামচাটকায়। এতে হাওয়াই দ্বীপে ৩০ ফুট উঁচু ঢেউয়ের সুনামি আছড়ে পড়ে। এতে নিহত হওয়ার কোনো খবর না পাওয়া গেলেও লাখ লাখ ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়।
৯ মার্চ, ১৯৫৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আলাস্কার একটি দ্বীপে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে সুনামির সৃষ্টি হয়। এই সুনামির সময় ৫২ ফুট উঁচু ঢেউ উপকূলে আঘাত হানতে থাকে।
২২ মে ১৯৬০, চিলি
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ৯ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে সুনামির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গবেষকরা জানিয়েছিলেন যে, ওই ভূমিকম্পটির শক্তিমত্তা ছিল প্রায় ১৭৮ গিগাট্রন। ভূমিকম্পটি ভালদিভিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হাওয়াই দ্বীপেও আঘাত হেনেছিল। প্রাথমিক ধাক্কাতেই প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যায় এই ভূমিকম্পে এবং এক বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। তবে ভূমিকম্প পরবর্তীতে আঘাতপ্রাপ্ত আরও অনেক মানুষ মারা যায়। ২০ লাখ লোক বাস্তুহারা হন।
২৮ মার্চ, ১৯৬৪, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রিখটার স্কেলে ৯ দশমিক মাত্রার ভূমিকম্পে প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ডে নিহত হয় ১২৮ জন। ৩১১ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় আলাস্কায়।
২২ মে ১৯৬৭, চিলি
৯ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। সুনামিতে পোর্ট অব পুয়েত্রো বন্দর প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।
২৮ জুলাই ১৯৭৬, চীন
প্রায় সাত লাখ মানুষ মৃত্যুর জন্য দায়ী এই ভূমিকম্প। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই তাংসান এবং হেবেই অঞ্চলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি আড়াই গিগাট্রন শক্তিমত্তা নিয়ে আঘাত হানে। মাত্র দশ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে পুরো একটি অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। এতে নিহতের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৫ হাজার।
২৬ জানুয়ারি ২০০১, ভারত
গুজরাট রাজ্যে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৫ হাজার লোক নিহত ও দেড় লাখের বেশি আহত হয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে মহারাষ্ট্রের এক ভূমিকম্পে সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়। ১৯৯১ সালের ২০ অক্টোবর উত্তর প্রদেশে ৬ দশমিক মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যান আরও ৭৬৮ জন।
২৬ ডিসেম্বর ২০০৩, ইরান
ঐতিহাসিকর বাম শহরে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩১ হাজারের বেশি নিহত ও ১৮ হাজার লোক আহত হন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৩, চীন
সন চিয়াং উইগুর জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চিয়া শি বা ছু-তে রিক্টার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২শ’ ৬৮জন নিহত হয়।
২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ ইন্দোনেশিয়া
৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ভারত মহাসাগরে সুনামির সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে এর প্রভাবে সুনামি হয়। এতে বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানির দিক থেকে বিশ্বে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ১৭ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। আনুমানিক সাত বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে পরবর্তী সময়ে বিশ্লেষকরা জানান যে, ভূমিকম্পটি আট মিনিট থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
২৮ মার্চ ২০০৫, ইন্দোনেশিয়া
সুনামির আঘাত সারিয়ে উঠতে না উঠতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ সুমাত্রায় ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় এক হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়।
৮ অক্টোবর ২০০৫, পাকিস্তান
দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশ এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রাথমিক ধাক্কাতেই ৮৫ হাজার মানুষ নিহত এবং ৬৯ হাজার আহত হয়। পাশাপাশি জম্মুতে এই ভূমিকম্পের কারণে মারা যায় আরও ১৪ হাজার। চীনের একাংশ এবং তাজিকিস্তানেও এই ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয় এতে। পাকিস্তানের ইতিহাসে ভয়াবহতম এ ভূমিকম্পে ৩৫ লাখের বেশি লোক উদ্বাস্তু হয়।
২৭ মে ২০০৬, ইন্দোনেশিয়া
দেশটির ইয়োগিয়াকারটা ও মধ্য জাভা অঞ্চলে রিক্টার স্কেলে ৫.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৬ হাজার নিহত, প্রায় ২০ হাজার আহত এবং ২ লাখ লোক গৃহহীন হয়।
১২ জানুয়ারি ২০১০, হাইতি
ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পে আড়াই লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে আহত হয় আরও ৩ লাখের বেশি লোক।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০, চিলি
৮ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫২১ জন নিহত হন। এছাড়া ৫৬ জন নিখোঁজ ও ১২ হাজার মানুষ আহত হন। আট লাখেরও বেশি মানুষ বাড়ি-ছাড়া ও ১৮ লাখের বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, যা আর্থিক ক্ষতির দিক থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
১১ মার্চ ২০১১, জাপান
এই ভূমিকম্পে ১৫ হাজার ৮৭৮ জন মানুষ মারা যায়, আহত হয় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার এবং আরও তিন হাজার মানুষকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। থোকো শহরের প্রায় দেড়লাখ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে এই ভূমিকম্পের ফলে দেশটির একটি পারমাণবিক স্থাপনা মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ভয়ানক তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুতে ছড়িয়ে যায়। দূরবর্তী কানাডা এবং হাওয়াইয়েও এই ভূমিকম্পের কিছুটা ছোঁয়া লাগে। ফুকুশিমার দাইচি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধসে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্ম দেয় এ ভূমিকম্প। সুনামির পর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক আবারও সামনে চলে আসে। সমুদ্রতলের এ ভূমিকম্পে জাপানের মতো প্রযুক্তি শক্তিসম্পন্ন দেশের প্রায় সমগ্র উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় উপকূল লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
১১ আগস্ট ২০১২ ইরান
দেশটির তাবরিজ শহরে ৬.৩ থেকে ৬.৪ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে ৩ হাজার ৬ জন নিহত ও ৩ হাজারেরও বেশি আহত হয়।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প
এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের যে তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায় যে, ১৯০০ সালের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০’রও বেশি ভূমিকম্প; তারমধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ সালের পরে। এ থেকে এই বিষয়টা পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়েছে। ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প। দেশের সর্বচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পরে মধ্যে রয়েছে: ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই মানিকগঞ্জের ৭ মাত্রার ভূমিকম্প। ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই শ্রীমঙ্গলের ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৩০ সালের ২ জুলাই ধুবড়ির (আসাম, ভারত) ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প। ১৯৩৪ সালের ১৫ জানুয়ারি বিহারের (ভারত) ৮.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৩৪ সালের ৩ জুলাই আসামের (ভারত) ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আসামের (ভারত) ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৯৭ সালের ২২ নভেম্বরও চট্টগ্রামের ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প, ১৯৯৯ সালের জুলাইতে মহেশখালী দ্বীপে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প, ২০০২ সালে চট্টগ্রামে ৪০ বার ভূমিকম্প হয়, ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই রাঙামাটির বরকল উপজেলা ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মানমন্দিরে জানুয়ারি ২০০৬ থেকে মে ২০০৯ পর্যন্ত ৪ বছরে, রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূ-কম্পনও ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে মে ২০০৭ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫-এর উপরে, এবং সেগুলোর ৯৫ শতাংশই উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। অতীতের এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ভূমিকম্পের হার বেড়েছে, অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞর মতে, অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরণের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, যেকোনো সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।
Leave a Reply