ফ্যাক্টরি ম্যানেজার/প্রোডাকশন ম্যানেজার মাঝারি-বড় মাপের যে কোন ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় কাজ করেন। বাংলাদেশর অর্থনিতির ব্যাপক অগ্রগতির সাথে সাথে ব্যপক কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে শিল্প কারখানায়। ফলে দিন দিন বাড়ছে এ ক্ষেত্র দক্ষ ব্যক্তির চাহিদা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন: শামস্ বিশ্বাস
ফ্যাক্টরি ম্যানেজার কে?
একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার বা কারখানা ব্যবস্থাপক কারখানায় সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাপের গুণগত পণ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করার সাথে সাথে সমগ্র উৎপাদন প্রক্রিয়ার তদারকি, বিভিন্ন দলের মধ্যে সমন্বয় এবং সমগ্র ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
কাজের সুযোগ
একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার/প্রোডাকশন ম্যানেজার মাঝারি-বড় মাপের যে কোন ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় কাজ করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ছিল ১৭.৩১ শতাংশ। ২০১৮ সালের তথ্যানুসারে শিল্প খাতে বাংলাদেশের জিডিপি ৩৩.৬৬%। বাংলাদেশে বর্তমানে শিল্পবিপ্লব চলছে। পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, চামড়া শিল্প, সিমেন্ট শিল্প সহ স্থানীয় বাজারে এখন বহুজাতিক কোম্পানি গুলো উৎপাদন করছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা(EPZ), বিসিক শিল্প নগরী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এসব কারখানার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার জন্য ফ্যাক্টরি ম্যানেজার অপরিহার্য। কাজের দেশেই শিল্পায়নের সাথে সাথে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে কাজের সুযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দায়িত্ব
- কারখানার দৈনিক রুটিন পরিকল্পনা এবং প্রতিটি বিভাগে কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করা
- নতুন কারখানার কর্মীদের স্ক্রিনিং, নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ।
- সম্পূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়ার তদারকি এবং কারখানার কার্যক্রম মনিটরিং করা।
- যটতা সম্ভব উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ
- উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান যাচাই
- উৎপাদন প্রক্রিয়ার গুণমানবজায় রাখা
- গ্রাহকের প্রত্যাশা এবং চাহিদা পূরণ।
- উত্পাদনজনিত সমস্যা সনাক্ত এবং দ্রুত সমাধান।
- প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উৎপাদন কৌশল বাস্তবায়ন।
- উৎপাদনের সাথে জড়িত বিভাগগুলোর কাজের মধ্যে সমন্বয় করা
- উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের তালিকা তৈরি ও যথাযথ সরাবরাহ নিশ্চিত করা
- উৎপাদন যন্ত্রের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের তদারকি করা
- প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করা
- কারখানার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মিলে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরো দক্ষ করার লক্ষ্যে কাজ করা
- কারখানা-সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা সমাধান করা।
- উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তাবিধির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা
- প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- কারখানার কর্মীদের কর্মক্ষমতার উপর রিপোর্ট তৈরি করা
- কারখানার কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
- শিল্পকারখানা অডিটের সময় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা
- কর্মীদের মাঝে শৃঙ্খলা রক্ষা করা
- কারখানার কর্মীদের কারখানার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে নিয়মিত অনুপ্রাণিত করা।
- মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ অপারেটিং পদ্ধতি বাস্তবায়ন.
- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন।
- ক্লায়েন্টদের সাথে একটি ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের চাকুরিক্ষেত্রে সাধারণত হিউম্যান রিসোর্স/অ্যাকাউন্টিং/ম্যানেজমেন্টে বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে এই পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স/যন্ত্রপ্রকৌশলে ব্যাচেলর ডিগ্রি চাওয়া হয়। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে সাধারণত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং/ রেডিমেইড গার্মেন্টসে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীদের সুযোগ দেওয়া হয়।
দক্ষতা ও জ্ঞান
- সুষ্ঠ পরিকল্পনা করার দক্ষতা
- সাংগঠনিক ক্ষমতা
- কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান
- প্রতিষ্ঠানের পলিসি এবং উৎপাদন মান সম্পর্কে জানা
- কারখানার কর্মী বা উৎপাদন ব্যবস্থা সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সহজ, উপযুক্ত ও দ্রুত নিষ্পত্তি করার দক্ষতা
- উৎপাদন ব্যবস্থা এবং উৎপাদিত পণ্যের খুঁটিনাটি নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
- অধিক চাপের মধ্যে কাজ করার মানসিকতা
- যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা
- মাইক্রোসফট অফিসের সকল অ্যাপ্লিকেশনে দক্ষ।
- মাল্টিটাস্ক করার ক্ষমতা।
- টাইম ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা।
- চমৎকার বিশ্লেষণাত্মক এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা।
- শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা।
- কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা।
পড়াশোনা
দেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে বিবিএ/এমবিএ পড়বার সুযোগ আছে। এছাড়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং যন্ত্রকৌশল পড়ার সুযোগ রয়েছে
আয়রোজগার
প্রতিষ্ঠানের ধরন এবং কর্মক্ষমতা অনুযায়ী একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের বেতনে অনেক ভিন্নতা আছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোতে বেতন সাধারণত ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। কিছু বড় আকারের দেশী কোম্পানি এক লাখ বা এর থেকে বেশি বেতন দেয়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে বেতন সাধারণত এক-দেড় লাখ টাকা। তবে বড় বড় কারখানাগুলোতে যেখানে অধিক দক্ষ ও বহু বছরের অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয় সেখানে বেতন কয়েক লক্ষ টাকা হয়ে থাকে। এর সাথে থাকে আরো নানা ধরণের সুযোগসুবিধা
ক্যারিয়ার গ্রাফ
ফ্যাক্টরি ম্যানেজার/প্রোডাকশন ম্যানেজার অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদ। সাধারণত কর্মজীবনের শুরুতে সহকারী প্রকৌশলী বা এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করে ধীরে ধীরে পদন্নোতির মাধ্যমে প্রথমে সহকারী ফ্যাক্টরি ম্যানেজার এবং পরবর্তীতে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার/প্রোডাকশন ম্যানেজার হওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে কাজে দক্ষতার সাথে সাথে ব্যক্তিত্বও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিলে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের যে কোন শীর্ষ পদে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।
Leave a Reply