তাপমাত্রা যখন সর্বনিম্ন!

তাপমাত্রা যখন সর্বনিম্ন!
আস্তে আস্তে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের এমন ভাবে শীত পড়ছে যার শীতল আবহাওয়ার কথা মাথায় আসলেই শীত লাগতে শুরু করবে…

অ্যান্টার্কটিকা
নিঃসন্দেহে আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা মহাদেশ। এই মহাদেশের ৯৮% অংশ গড়ে ১.৯ কিলোমিটার (১.২ মাইল) পুরু বরফাবৃত। এখানে বাস্তবসম্মতভাবে বাস করা অসম্ভব। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের শুষ্কতম মহাদেশ এবং এর গড় উচ্চতা ও বায়ুপ্রবাহবেগও মহাদেশ গুলির মধ্যে সর্বাধিক। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মিমি. হওয়ায় এই মহাদেশকে শীতল মরুভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মহাদেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন রেকর্ড মাইনাস ৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ১২৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত পৌঁছেছে, যদিও বছরের শীতলতম সময়ে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ৮১ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এই মহাদেশে কোন স্থায়ী বাসিন্দাগেূ না থাকলেও সারা বছর প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ এই মহাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে অবস্থান করেন।

ভোস্টক: অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত রাশিয়ার গবেষণাকেন্দ্র ভোস্টক। এখানে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। আগস্ট মাসেই শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয় মাইনাস ১২৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

প্লাটিআউ স্টেশন : ভোস্টকের পরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে ভোস্টকের রেকর্ড রয়েছে। এখানে জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১১৯.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেকর্ড করা হয়।

  
রাশিয়া
বসবাসের একটি খুব ঠাণ্ডা দেশ। মাত্র ২ মাসের জন্য সূর্যের মুখ দেখতে পাওয়া যায় এই দেশে। যেখানে জানুয়ারিতে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দেশের অধিবাসীদের গা গরম রাখতে সোয়েটার নয় প্রয়োজন ভদকা।

ওইমিয়াকন: ২০১৮ সালরে ১৮ জানুয়ারি রাশিয়ার সাইবেরিয়ান তুন্দ্রা অঞ্চলের ওইমিয়াকন গ্রামের তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পৃথিবীর শীতলতম গ্রামে এই তাপমাত্রায় চোখের পাতায়ও জমে যাচ্ছে বরফ। এত কম তাপমাত্রা ডিজিটাল থার্মোমিটার ধারণ করতে পারে না, অর্থাৎ ভেঙে যায়৷ কেননা, এই থার্মোমিটারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেয়া আছে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯২৪ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী সার্জে ওব্রিচেভ এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস মাইনাস ৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেন। মানুষের বসতি আছে এমন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড এটি৷ ২০১৩ সালে ওয়াইমায়াকনে সর্বকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ওই বছর সেখানে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল মাইনাস ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গ্রীষ্মের সময়ে আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, ২০১০ সালে সেই তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ আবহাওয়ার দিক থেকে বসবাসের অযোগ্য হলেও এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও ওইমিয়াকন গ্রামে মানুষ বাস করে। সবমিলিয়ে এই গ্রামে মানুষের সংখ্যা ৫০০ জন।

ভারকোয়ানস্ক : নিম্ন তাপমাত্রার আবহাওয়ার জন্য রাশিয়ায় ভারকোয়ানস্ক এলাকাটি পরিচিত। বিশ্বের নিম্ন তাপমাত্রার জন্য ভারকোয়ানস্কের সঙ্গে ওইমিয়াকন এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে এ এলাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৯৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এখানে কলম দিয়ে লেখা যায় না কারণ তা জমে থাকে, গ্লাসে পানি খেতে গেলে তা মুহূর্তে জমে যায়। গাড়ি সবসময় স্টার্ট দিয়ে গরম রাখতে হয়। মারাত্মক ঠাণ্ডার কারণে মোবাইল কাজ করে না। ফলে নেটওয়ার্কও নেই।

কানাডা
শীতের দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডায় ২০১৮ সালে শুরুতেই মাইনাস ৪৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। যা বিশ্বের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি দেশটির কুইবেকের লা গ্রান্ডেতে সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তীব্র শীত ও তুষারের কারণে দেশটিতে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ফ্লাইট অ্যাওয়ার নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার তথ্যমতে, শুধু টরন্টো বিমানবন্দরেই প্রায় ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয় । জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অনেক শহরগুলির একটি বিশাল দেশ কানাডা। সারা বছরই এই দেশে তীর্যকভাবে আলো দেয় সূর্য। বছরের ৫টা মাসই শীতকাল অনুভূত হয় কানাডাতে। যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য গরমকালে তাপমাত্রার কোনও হের ফের হয় না বললেই কিন্তু চলে।

স্ন্যাগ, ইউকোন: যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা মহাসড়ক থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কানাডার ইউকোনে অবস্থিত। জানুয়ারিতে এখানকার তাপমাত্রা সবচেয়ে কম। এখানকার রেকর্ড করা সবচেয়ে কম তাপমাত্রা হলো মাইনাস ৮১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

ফোর্ট সেলক্রিক, ইউকোন: এটি কানাডা নদীর পারে অবস্থিত। ১৯৫০ সালের আগে এটি মরুভূমি ছিল। বর্তমানে এখানে আবার বসতি স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এখানে প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। বেশিরভাগ লোক নৌকা বা বিমানযোগে এখানে আসে। জানুয়ারিতে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা থাকে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নিউইয়র্ক শহরের তাপমাত্রা নামে ১৯ ডিগ্রিতে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ২৪ ডিগ্রি – সেটাও ১৯৪০ সালের। সিকাগোর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯৬৯ সালের ৫ ডিগ্রির রেকর্ড ভেঙে ১ ডিগ্রিতে। ২০০১ সালে চার্লসস্টন, সাউথ ক্যারোলিনার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রি – এবছর সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৪ ডিগ্রিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দেশের সবচেয়ে উত্তরের অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় ঠাণ্ডা তাপমাত্রা প্রায় নয়টি মাস ধরে চলে। সবচেয়ে কম তাপমাত্রা মাইনাস ৬২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং এই তাপমাত্রার সাথে সামান্য বাতাসে ঘরের বাইরে থাকা কেউ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অত্যধিক কম তাপমাত্রার প্রভাব পরে এখানকার অধিসীদের ত্বকের ওপরেও।

প্রসপেক্ট ক্রিক, আলাস্কা: প্রসপেক্ট ক্রিকে ছোট আকারের বসতি আছে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

রজার পাস, মন্টানা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে রজার পাসের উচ্চতা ৫৬১০ ফুট উঁচু। ১৯৫৪ সালে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

গ্রিনল্যান্ড
পৃথিবীর সব থেকে বড় দ্বীপ হল গ্রিনল্যান্ড। সূর্যের আলো এই দ্বীপে প্রায় আসে না বললেই চলে। বছরের প্রতিটা মাসই বরফ দিয়েই ঢাকা থাকে এই দ্বীপ। গরমকালের সব থেকে উষ্ণতম তাপমাত্রা হল মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ইসমিটি : জার্মান শব্দ ইসমিটির অর্থ বরফকেন্দ্র। পুরো এলাকা বরফজুড়ে থাকে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নর্থ আইস: নর্থ আইস গ্রিনল্যান্ডের গবেষণাকেন্দ্র। এলাকাটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৬.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *