বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। নতুন কোনো উদ্যোগ কিংবা ব্যবসার শুরুতেই ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’ শব্দটি মাথায় আসে। কিভাবে পণ্য বা সেবা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন, সেটাই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। এই পেশায় চাকরির এবং কাজের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং কি? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য বা ব্র্যান্ডের প্রচার। ইন্টারনেট ডিজিটাল মার্কেটিং এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এছাড়া অন্যান্য মাধ্যমগুলো যেমন: তারবিহীন টেক্সট মেসেজিং, মোবাইল ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড, ডিজিটাল টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং হল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য বা ব্র্যান্ডের প্রচার।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ধরণ
মার্কেটিংয়ের চ্যানেল ও কন্টেন্টের ধরনের ভিত্তিতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ধরন আলাদা হয়। প্রায় সময় এগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত হবার কারণে সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যায় ডিজিটাল মার্কেটিংকে ভাগ করা যায় না। হবে সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয় ভাগগুলো হল:
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)
- ইমেইল মার্কেটিং
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- মোবাইল মার্কেটিং
কাজের সুযোগ
সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটার নিয়োগ হয় প্রাইভেট ফার্ম বা কোম্পানিতে। তবে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রজেক্টে ডিজিটাল মার্কেটিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়।
কাজের ধরণ
- একজন একজন ডিজিটাল মার্কেটার ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করে থাকেন।
- নতুন গ্রাহক বা ক্রেতা সন্ধান;
- প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিসকে কীভাবে অনলাইনে ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে নতুন ধারণা দেয়া;
- বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা, ব্যবসার সুযোগ এবং সম্পর্ক তৈরি করতে নিয়মিত যোগাযোগ করা
- পণ্য বা সার্ভিসের বিক্রি বাড়ানোর জন্য অনলাইন ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনা করা;
- ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, রিসোর্স সংগ্রহ, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ইত্যাদির ব্যবস্থা করা এবং টার্গেট অর্জন করা।
- পণ্য বা সার্ভিসের ওয়েবসাইট থাকলে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ফলাফল দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া;
- পণ্য, সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের জন্য কন্টেন্ট প্রস্তুত করা;
- অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের অগ্রগতি পর্যবক্ষেণ করা ও এর উপর রিপোর্ট তৈরি করা;
- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেলস ও মার্কেটিং টিমের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা;
- নতুন কাস্টমারদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করা।
- প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মার্কেটে অব্যাহতভাবে নতুন গ্রাহক তৈরি করতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কার্যকর কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করা।
- মার্কেটিং এবং আইটি রিলেটেড কর্মসম্পাদন ছাড়াও ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত অন্য যে কোন কাজ সম্পাদন করা।
- কার্যকর মেন্টরিং কোম্পানির লক্ষ্য পৌঁছানো বা টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে টীম সদস্যদের কার্যকর ভাবে পরিচালনার জন্য তাদেরকে তত্ত্বাবধান ও গাইড করা।
- উচ্চ পর্যায়ের কর্পোরেটের সকল অংশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ (ফোন) ও তথ্য উপস্থাপন।
উল্লেখ্য যে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ধরন অনুযায়ী কাজের দায়িত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে।
যোগ্যতা
প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সার্ভিস ভেদে যোগ্যতার ধরন আলাদা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এ পদের জন্য ন্যূনতম ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে আপনার। তবে আইটি বা মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়া হয়।
বয়স: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত আপনার বয়স কমপক্ষে ২২ বছর হতে হবে।
অভিজ্ঞতা: এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণত ১-২ বছরের ডিজিটাল মার্কেটিং সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা কাজে আসে।
দক্ষতা ও জ্ঞান
মূলত প্রতিষ্ঠানের চাহিদার উপর দক্ষতা ও জ্ঞান দরকার হয়। সাধারণত নিচের টেকনিক্যাল দক্ষতাগুলো থাকলে প্রায় সব জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাবেন:
- কোম্পানির বিপণননীতি বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) সম্পর্কে ভালো জ্ঞান;
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং সম্পর্কে (SEM) পরিষ্কার ধারণা;
- দক্ষতার সাথে ওয়েব অ্যানালিটিক্সের টুল ব্যবহার করতে পারা;
- ওয়েব কন্টেন্ট তৈরি করার দক্ষতা;
- গ্রাফিক ডিজাইনে পারদর্শিতা;
- কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারে দক্ষতা;
- ভালোভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে পারা।
- অনলাইন ও অফলাইনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর খোঁজখবর থাকা;
- সন্তোষজনক যোগাযোগ দক্ষতা
- বাংলা ও ইংরেজি – দুই ভাষাতেই ভালো যোগাযোগ করতে পারা;
- কঠোর পরিশ্রমী এবং দূরদর্শী হওয়া
- কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা;
- তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারা।
আয়রোজগার
মাসিক আয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে এন্ট্রি লেভেলের চাকরি শুরু হতে পারে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ টাকা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য নিজের কাজের খুব ভালো পোর্টফোলিও থাকা ছাড়া বিকল্প নেই।
ক্যারিয়ার গ্রাফ
সাধারণত মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে বা ডিজিটাল মার্কেটিং টিমে এন্ট্রি লেভেলে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর পরে এক্সিকিউটিভ। অভিজ্ঞতা এবং কাজের দক্ষতা অনুযায়ী এসিস্টেন্ট ম্যানেজার, ম্যানেজার হিসাবে পদন্নতি হকে থাকে। টানা খুব ভালো পারফর্মার করতে পারলে সবচেয়ে উঁচু পদ হেড অফ মার্কেটিং কিংবা মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক হিসাবেও পদন্নতি পাওয়া যাবে।
Leave a Reply