ক্যারিয়ার হিসাবে ডেটাইঞ্জিনিয়ারিং

ক্যারিয়ার হিসাবে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং

বর্তমানে প্রযুক্তির অবাধ বিকাশের ফলে সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির এই উন্নয়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে তথ্য বা ডেটার ক্ষেত্রে। কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে এখন ডেটা বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এই কাজটির পেছনে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান অপরিসীম। ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং হলো ডেটা প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ। তারা ডেটা সংগ্রহ করে, পরিষ্কার করে এবং তা ডেটা সায়েন্টিস্ট বা বিশ্লেষকদের কাছে বিশ্লেষণের জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ওপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Forbes এবং World Economic Forum এর তথ্য মতে, অটোমেশনের ফলে অনেক চাকরি হারিয়ে গেলেও নতুন অনেক চাকরি তৈরি হবে। বিশেষ করে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাহিদা আগামীতে অনেক বেশি বাড়বে। ফলে, ক্যারিয়ার হিসেবে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নেওয়া একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে।

ডেটা ইঞ্জিনিয়ার কী এবং তাদের কাজ কী?

ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ডেটা এনালাইসিসের পূর্বের ধাপ। ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রধান কাজ হল বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করা, সেগুলো পরিষ্কার করা এবং একটি নির্দিষ্ট ডেটা স্টোরেজে সংরক্ষণ করা। তাদের কাজগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. ডেটা আর্কিটেকচার ডিজাইন মেইনটেইন করা: ডেটা সংগ্রহের জন্য কোন ধরনের ডেটাবেজ ব্যবহার করা হবে, ডেটা কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হবে তা নির্ধারণ করা।
  2. ডেটা পাইপলাইন ডিজাইন: ডেটা পাইপলাইন তৈরি করে বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা সংগ্রহ, প্রসেসিং, এবং স্টোরেজের পদ্ধতি নির্ধারণ করে।
  3. API তৈরি করা: ডেটা ইঞ্জিনিয়াররা প্রসেস করা ডেটা অন্য টিমদের ব্যবহারের জন্য API ডিজাইন করে।
  4. অটোমেশন: প্রতিদিন/ দিনে কয়েকবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিকভাবে ডেটা সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা।
  5. ডেটার সঠিকতা নিশ্চিত করা: যেহেতু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলি এই ডেটার উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়, তাই সঠিক ডেটা সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।

ডেটা ইঞ্জিনিয়ার হতে কী যোগ্যতা প্রয়োজন?

ডেটা ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে বেশ কিছু টেকনিক্যাল স্কিল দরকার। এর মধ্যে অন্যতম:

  1. কোডিং দক্ষতা: SQL, Python, Java, Scala, বা R এর মতো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা থাকতে হবে।
  2. ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম: সঠিকভাবে ডেটা পরিচালনার জন্য ডেটা স্ট্রাকচার এবং অ্যালগরিদম সম্পর্কে জ্ঞান প্রয়োজন।
  3. ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম ডিজাইন: বড় পরিসরের সিস্টেম ডিজাইন করতে হবে এবং বিতরণকৃত ডেটা পরিচালনা করতে হবে।
  4. বিগ ডেটা টুলস এবং ফ্রেমওয়ার্ক: হাডুপ, স্পার্ক, বা Kafka এর মতো বিগ ডেটা টুলস ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে।
  5. ডেটা স্টোরেজ এবং ডেটাবেস সিস্টেমের জ্ঞান: MySQL, MongoDB, Cassandra ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ডেটাবেস নিয়ে কাজ করতে হবে।
  6. ক্লাউড কম্পিউটিং: ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম যেমন AWS, Google Cloud, এবং Azure এর ওপর দক্ষতা থাকতে হবে।

বাংলাদেশে কী কী কোর্স রয়েছে?

বাংলাদেশে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেশন কোর্স করতে পারে। কিছু জনপ্রিয় কোর্সের মধ্যে রয়েছে:

  1. বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE): বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ডিগ্রি পড়ানো হয়, যেখানে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর ভিত্তি করে বিশেষ কিছু কোর্স থাকে।
  2. ডিপ্লোমা ইন ডেটা সায়েন্স এবং ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং: বাংলাদেশের কিছু প্রাইভেট ইনস্টিটিউট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ডিপ্লোমা কোর্স পাওয়া যায়, যেখানে বিগ ডেটা এবং মেশিন লার্নিং এর ওপর দক্ষতা অর্জন করা যায়।
  3. অ্যাডভান্সড ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স: বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যেমন Datavinci Academy, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর বিশেষায়িত সার্টিফিকেশন কোর্স করতে পারেন। এ ছাড়াও Udemy, Udacity, Coursera, এবং edX-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোও ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ওপর ভালো কোর্স অফার করে।

ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের আয়রোজগার

বাংলাদেশে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতনভুক্তির হার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত একটি এন্ট্রি লেভেল ডেটা ইঞ্জিনিয়ার মাসে প্রায় ৪০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা বেতন পান। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই বেতন ১ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।

আন্তর্জাতিকভাবে: আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করলে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন অনেক বেশি হয়। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোম্পানিতে কাজ করলে একজন ডেটা ইঞ্জিনিয়ারের বাৎসরিক আয় প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।

শেষ কথা

ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং একটি দ্রুত বর্ধনশীল পেশা যেখানে দক্ষতা এবং জ্ঞানের চাহিদা বাড়ছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ডেটা ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের পরিধি আরও বাড়বে। বাংলাদেশেও ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করার ভালো সুযোগ রয়েছে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *