‘আপনার সম্পর্কে বলুন?’

‘আপনার সম্পর্কে বলুন?’

ইন্টারভিউতে ‘কমন’ প্রশ্ন-‘আপনার সম্পর্কে বলুন’। এই প্রশ্নটি কর্মপ্রার্থীকে নিজের সম্পর্কে বলার একটা সুযোগ করে দেয়। এই অভিব্যক্তি মূলত একজনকে আরেকজনের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অবগত করতে সাহায্য করে।

নিজেকে উপস্থাপন করা সহজ নয়। আর যখন সেটা হয় ইন্টারভিউ। তখন তা আরো কঠিন হয়ে যায়। তাই চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে এই গুগলি কে ওভার বাউন্ডারি বানানো যেতে পারে।

প্রশ্নটা ‘পানির মতো সহজ’ হলেও আদতে অনেক কঠিন একটা প্রশ্ন। কয়েকটা বাক্যের মধ্যে নিজেকে উপস্থাপন করা। উত্তর এমন হতে হবে যা, চাকুরীদাতার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।

এই প্রশ্নের ভুল উত্তর নেই – এ ক্ষেত্রে কর্মপ্রার্থী যে উত্তর দেবেন সেটাই সঠিক। তাই বলে, যা খুশি তাই বলা যাবে না। সংক্ষিপ্ত আকারে সর্বোচ্চ পাঁচ-সাতটি বাক্যে উত্তর দিন। কারণ বেশি বড় উত্তর শোনার জন্য সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন, যা বেশির ভাগ ইন্টারভিউতে থাকে না।

এই ‘সরল’ প্রশ্নটির মাধ্যমে চাকরিদাতা মূলত কর্মপ্রার্থীর সৃজনশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। দেখতে চায় কত ভালোভাবে গুছিয়ে বলতে পারে। ‘নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন’ এই প্রশ্নের মানে – প্রশ্নকর্তা জানার চেষ্টা করছে যে, আপনি নিজেকে কিভাবে দেখেন? আপনার নিজের সম্পর্কে নিজস্ব ভাবনাটা কি? সোজা বাংলায় বলতে গেলে কি মনে করেন নিজেকে? নিয়োগদাতা দেখতে চায় – আপনার ভেতরে বিনয় এবং দক্ষতার লেভেল কতটা!

তাই এ প্রশ্নের উত্তরে আপনার যা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদের জন্য আপনি কেন উপযুক্ত সেসবই হলো এই প্রশ্নের যথাযোগ্য উত্তর। আপনার জীবনবৃত্তান্তের যে তিনটি অথবা চারটি বিষয় তাদের স্মরণ করাতে চান সেগুলো তুলে ধরুন এবং ঐগুলো সম্পর্কে কথা বলুন। চাকরিদাতার কাছে নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্ন বলার ঝোঁক সংযত করুন। কোথায় পড়াশোনা করেছেন, ইন্সটাগ্রামে কত ফলোয়ার, কী খেতে পছন্দ করেন – এসব বলে সময় নষ্ট না করাই ভালো। আপনার নিজের সম্পর্কে বলা মানে আপনার পছন্দ বা অপছন্দের বিষয় সম্পর্কে নয়, বরং আপনি কী ধরনের কর্মক্ষেত্র পছন্দ করেন বা কী বিষয় নিয়ে আপনি পড়াশোনা করেছেন। সম্ভব হলে, আপনার উত্তরের শেষে প্রাসঙ্গিক কোনো প্রশ্ন জুড়ে দিন।

উত্তরটি ৩ ভাগে ভাগ করুন:
(১) আপনি এখন কে?
২) এখনকার আপনি কীভাবে এই ‘আপনি’ হয়েছেন?
৩) আপনি ভবিষ্যতে কী হতে চান?
উত্তর দেয়ার সময় মাথায় রাখতে হবে যে, আপনার ক্যারেক্টারের সবগুলো পজিটিভ ও শক্তিশালী দিক ফুটে উঠছে এবং আপনি নিজেকে একজন আন্তরিক , দায়িত্বশীল ও দক্ষ কর্মী হিসেবে উপস্থাপন করছেন!

সহজ ভাষায়, প্রশ্নকর্তা যা জানতে চাইছেন, আপনাকে তাই-ই জানাতে হবে। উত্তরে আপনার পারদর্শিতা ফুটিয়ে তুলুন। উত্তরটি এমন ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবেন যাতে প্রশ্নকর্তা আপনার সঙ্গে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। এতে তার পছন্দ-অপছন্দ, প্রয়োজন সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। নিয়োগদাতা এমন একজনকে খুঁজছেন যে তার দুর্বলতা এবং ক্ষমতাসমূহ সম্পর্কে অকপটে বলতে পারে।

দুর্বলতা ব্যাখ্যা এমনভাবে দিন যেন সেটি আপনার ভালো দিকই তুলে ধরে। যেমন বলুন, আপনার দুর্বলতা হচ্ছে আপনি খুব কাজপাগল – কাজ করতে গেলে দিন-রাতের হুঁশ থাকে না।

আপনার সম্পর্কে বলতে সর্বোচ্চ এক মিনিট সময় নিন। কারণ অনেক লম্বা উত্তর কোনো প্রশ্নকর্তাই পছন্দ করেন না। আপনার সব পারদর্শিতা ও দক্ষতা পাঁচ-সাতটি বাক্যে ও সর্বোচ্চ এক মিনিটে শেষ না হলে, এই চাকরিটিতে যদি কোন বিশেষ রিক্যুয়ারমেন্ট চাওয়া হয়ে থাকে তবে তা বলুন। চাকরি সম্পর্কিত কোনো বড় অর্জন বা দক্ষতা থাকলে তা সুন্দর করে তুলে ধরুন।

ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে এই উত্তরটা কাগজে লিখে প্রস্তুতি নিন। প্রশ্নটার উত্তর নিজে নিজে বলুন এবং ভাবুন আপনি যদি চাকরিদাতা হতেন তাহলে উত্তরটা আপনার কাছে কতটা যথাযথ হতো। উত্তর যদি আপনারই পছন্দ না হয়, নিয়োগদাতারও পছন্দ হবে না। সে ক্ষেত্রে উত্তরটা আরও ভালো করে তৈরি করার চেষ্টা করুন।

‘নিজের সম্পর্কে বলা’টা খুব কঠিন প্রশ্ন হিসেবে না দেখে – সহজ ভাবে দেখুন। দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে – এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবুন এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন। দেখবেন সেরা উত্তর দিয়ে ‘বেলা বোস’ কে ফোন দিচ্ছেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *